রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে ভোটারদের আলোচনায় উঠে এসেছে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রাশেক রহমানের নাম। নৌকাতেই আস্থা রাখতে চায় উন্নয়নকামী প্রান্তিক মানুষ। তবে এই আসন থেকেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকির হোসেনও তার বিজয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের কাছে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে চান। গতকাল শুক্রবার ৮টায় প্রচার শেষ করছেন দলীয় দুই মিত্র। সঙ্গে ছিলেন তাদের কর্মী ও সমর্থকরা। তবে প্রচারে পিছিয়ে ছিলেন না জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনিছুর রহমান আনিছও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনীতিতে পুরোনো হলেও সরাসরি এবার ভোটে নবীন রাশেক রহমান। প্রার্থীর তালিকায় নবীন হলেও রাজনীতিতে পোক্ত এই আওয়ামী লীগ নেতা ভোটের খেলায় ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছেন। জয়ের ব্যাপারে নির্ভার এই রাজনীতিকের সঙ্গে প্রধান আলোচনায় জাকির হোসেন। হাটে-মাঠে, চায়ের দোকান থেকে আড্ডাখানা সব জায়গায় এই দুই প্রার্থীর আলোচনা।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, রাশেক রহমানের বাবা এইচ এন আশিকুর রহমান একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। মিঠাপুকুর থেকে পাঁচ বারের সংসদ সদস্য। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আশিকুর রহমান এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ও প্রবীণ এই রাজনীতিক বয়সের ভারে ন্যুব্জ হওয়ায় এবার নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন ছেলে রাশেক রহমানকে। তাই হ্যাভিওয়েট পিতার চেয়ারে বসবেন ছেলে, এমন আলোচনা আছে সর্বত্র।
তবে আলোচনা আছে জাকির হোসেন সরকারকে নিয়েও। একাধিকবার উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকায় প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন জাকির। তাই তার নামও আছে বড় আলোচনায়। সমানতালে দুই প্রার্থী আলোচনায় থাকায় শেষ পর্যন্ত নিজের পক্ষে ভোটারদের রাখার শেষ চেষ্টা করেছেন ওই দুই প্রার্থী।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুর এখন আলোকিত। অন্য যেকোনো আসনের চেয়ে উন্নয়নে আলোচিত। এই আসনে এইচ এন আশিকুর রহমান টানা ৫ বারে সংসদ সদস্য হওয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। একটি কলেজ, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়ানো আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স-সংযোগ ও আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদানসহ যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। উপজেলা শহর থেকে গ্রামের প্রত্যন্ত পাড়া-মহল্লায় এখন পাকা সড়ক। খরা-বন্যা মৌসুমে যেসব এলাকায় মানুষ চলাচল করতে পারত না, সেসব এলাকার সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ করা হয়েছে। মডেল মসজিদ, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য তাদের মন্দির সংস্কারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সামাজিক নিতাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সব কাজ করা হয়েছে। যাতে প্রান্তিক পর্যায়ের খেটে খাওয়া মানুষ নিশ্চিন্তভাবে দিনাতিপাত করতে পারে। ভূমিহীনদের জন্য সরকারিভাবে ঘর বরাদ্দ এবং তা তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটারদের সাধারণ জরিপে এগিয়ে আছেন রাশেক রহমান। সভা, পথসভায় ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে ভোটারদের।
পায়রাবন্দের শাহিন মণ্ডল নামে এক ভোটার জানান, রাশেক রহমানের বাবা এমপি থাকায় এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। প্রার্থীদের মিছিল-সমাবেশে অনেক লোক হলেও রাশেক রহমানের ভোট আছে নীরবে। এই এলাকার উন্নয়নে তার বাবার বড় অবদান আছে। এ জন্য এবারও আমরা নৌকায় ভোট দেব।
বড়দরগা এলাকার নাসিমুল ইসলাম বলেন, এবারও আমরা রাশেক ভাইকে চাই। এলাকার উন্নয়নে তার বড় প্রয়োজন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক এলাকায় জাকির হোসেন সরকারও ভোটারদের আস্থা অর্জন করেছেন। তিনিও আছেন ভোটের আলোচনায়।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী রাশেক রহমান জানান, আমার বাবা এই এলাকার ৫ বারে সংসদ সদস্য ছিলেন, বর্তমানেও আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। আমি সেই পথে কাজ করছি। আমার বিজয় নিশ্চিত করতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মিঠাপুকুর জনসভা করেছেন। আমার জন্য ভোট চেয়েছেন। আমি এই এলাকার সন্তান, আমি মাঠে-ময়দানে কাজ করছি। আমি বিশ্বাস করি, এলাকার উন্নয়নে আমার বাবার অবদানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের মহাসড়কে থাকতে মানুষ ভুল করবেন না। আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হব, এটা সাধারণ মানুষই বলছেন।
এ নিয়ে জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক দীর্ঘদিনের। একাধিকবারের উপজেলা চেয়ারম্যান। আমি সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছি। তারা তাদের এমপিকে কাছে পেতে চায়, পাশে পেতে চায় এ জন্য তারা আমাকেই নির্বাচিত করবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি যেখানেই যাই ভোটাররা বলেন আপনি বিজয়ী হবেন, কোনো সমস্যা নেই। আমি ভোটারের ওপর আস্থা রেখেছি। আমি নিশ্চিত জিতব। তবে আমি বলতে চাই, আমার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, যা উচিত নয়।’
জানা গেছে, রংপুর-৫ আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ৩৩৫ জন। এই আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ৮ জন প্রার্থী। রাশেক রহমান, জাকির হোসেন সরকার ছাড়াও অন্যরা হলেন, মো. আনিছুর রহমান (জাতীয় পার্টি), মো. আব্দুল বাতেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট), আব্দুল হালিম মণ্ডল (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ), মো. এনামুল হক (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ), মো. জাকির হোসেন সরকার (স্বতন্ত্র), মো. মাহবুবুর রহমান (বাংলাদেশ কংগ্রেস), মো. আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি)।
রংপুর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে আমরা অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সব প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে বিজিবি ও সেনা মোতায়েন হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্তসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবে।’