পঞ্চমবারের মতো নীলফামারী-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন নাট্যব্যক্তিত্ব ও সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। ভোটের মাঠে নির্বাচনি প্রচারে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। জেলার উন্নয়ন নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন খবরের কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেলা প্রতিনিধি ওয়ালি মাহমুদ সুমন।
খবরের কাগজ: আবারও নৌকা প্রতীক পেয়ে ভোট করছেন। কেমন লাগছে?
আসাদুজ্জামান নূর: দুটি বিষয়ের ওপর আমি জোর দিতে চাই। একটি হলো আমাদের দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। দলের একজন কর্মী হিসেবে তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আরও কৃতজ্ঞ নীলফামারীর জনগণের কাছে। তারা আস্থা রেখেছেন বলে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি। জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি। রাজনীতি করি জনগণের জন্য।
খবরের কাগজ: এই নির্বাচনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আসাদুজ্জামান নূর: আমার দৃষ্টিতে এই নির্বাচন শুধু ভোটে জেতার জন্য নয়, এমপি হওয়ার জন্য নয় বা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়ে আসার জন্য নয়। তার চেয়ে বড় কথা হলো, তার নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এই অগ্রযাত্রাকে নিশ্চিত করাটাই হলো আমাদের নির্বাচন করা।
আমি মনে করি, এই নির্বাচনে জয়লাভের জন্য আমরা যে লড়াইটি করছি, এর দুটি ফল আগামীতে আমাদের হাসিল হবে। একটি হলো উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখা; সেটি সম্ভব কেবল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আর দ্বিতীয়ত হলো সাম্প্রদায়িক শক্তির বিনাশ; যারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিরতার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই শক্তি একাত্তরের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।
খবরের কাগজ: বিগত দিনে আপনি নীলফামারীর জন্য কী কী করেছেন?
আসাদুজ্জামান নূর: প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারা দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় আমরা নীলফামারীতেও বেশ কিছু উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। নীলফামারীর জনগণ এগুলো জানেন। আমাদের ইপিজেড থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ, যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, কৃষির উন্নয়ন, গ্রামে গ্রামে অসহায় দুস্থ মানুষের জন্য ভাতার সুবিধা করে দিয়েছি। যেসব কাজ এখন হচ্ছে, তা অব্যাহত রাখব। এ ছাড়া যেসব এলাকায় রাস্তাঘাটের কাজ বাকি আছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাকা ভবন করা হয়নি সেগুলো করতে হবে। আমাদের যোগাযোগব্যবস্থাকে আরও বেশি উন্নত করতে চাই।
নীলফামারী শহরের দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে একটি রাস্তা গেছে, এটি একমাত্র রাস্তা। ভবিষ্যতে এটি সবার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য আমাদের বাইপাস রাস্তা দরকার। এটির কাজ নিবার্চনের পর শুরু হবে। আরেকটি চিন্তা করছি, সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী ঢোকার পথে আরেকটি বাইপাস রোড করার চিন্তা আছে। দুই দিক থেকে দুটি বাইপাস হলে শহরের ওপর চাপ কমবে। পলিটেকনিকের কাজ নির্বাচনের পর শুরু হবে। এ জন্য জায়গা নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার সম্প্রসারণে এখানে আরও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা যায় কি না, সেই ভাবনা আছে। আমি কোনো অগ্রিম প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। কোনো কিছুর সামান্য বাস্তবায়ন করতে পারলেই জেলাবাসীকে জানাব।
খবরের কাগজ: শিল্পায়নের বিষয়ে কিছু ভাবছেন?
আসাদুজ্জামান নূর: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আমরা শিল্পায়নের দিকেও নজর দেব। আমাদের এলাকায় গ্যাস চলে এসেছে, এটির কাজও চলমান রয়েছে। ইপিজেডের পাশে একটি ইকোনমিক জোন স্থাপনের প্রতিশ্রুতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। আশা করি সেটি খুব তাড়াতাড়ি শুরু হবে। ইকোনমিক জোন হলে গ্যাস লাইন সম্প্রসারণ করে নীলফামারী শহর পার করে উত্তর দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। আমরা ওখানেও একটি শিল্প এলাকা করতে চাই। কারণ শুধু কৃষিনির্ভর অর্থনীতি নিয়ে আমাদের মতো ছোট জনবহুল দেশে সব সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আমাদের শিল্পায়নের দিকে যেতে হবে। নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের পাশাপাশি জনগণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা আমাদের আগামী দিনের লক্ষ্য।
খবরের কাগজ: সাংস্কৃতিক সংগঠনের উন্নয়নে কি স্বপ্ন দেখছেন?
আসাদুজ্জামান নূর: বিষয়টি নিয়ে আমার নিজের মধ্যে হতাশা আছে। আমি নীলফামারীর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে ধরনের কাজ করতে চেয়েছি বা প্রত্যাশা করেছি, সেটি আমি পারিনি। জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরাও সেভাবে ভূমিকা রাখতে পারেননি। একা আমার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব না। আজকে যেমন আমাদের দলের সাংগঠনিক অবস্থা, সেটি তো আমি একা করিনি। এখানে দলের নেতারা করেছেন, কর্মীরা করেছেন, প্রত্যেকেরই এখানে একটি অবদান আছে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা যদি উদ্যোগী না হন, তারা যদি উৎসাহ না নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে আমি যতই এখানে সুযোগ-সুবিধা দিই না কেন, তারা সেটি ব্যবহার করতে পারবেন না।
উদাহরণ হিসেবে বলি, খেলাধুলার ক্ষেত্রে আমি যতটুকু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি, তার চেয়ে বেশি তারা করে দেখিয়েছেন। আমি যতটুকু সুবিধা দিয়েছি, তা গ্রহণ করে তারা তার চেয়ে বড় কাজ করেছেন। সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে সেটি আমরা করতে পারিনি। তবে আমরা এখন স্কুলের ছেলেমেয়েদের ছবি আঁকা, ছড়া লেখানো, বিতর্ক প্রতিযোগিতা করাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করছি। এই কাজগুলোকে আগামীতে আরও বেশি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই।
খবরের কাগজ: ভোটের মাঠে দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন?
আসাদুজ্জামান নূর: আমাদের সদরের কথা বলতে পারি। আমরা এখানে যথেষ্ট সংগঠিত আছি। দলীয় নেতা, নেতা-কর্মী, সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মিলে সাংগঠনিকভাবে আমরা যতটা তৎপর আছি তাতে জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা আগের চেয়ে বেড়েছে। ভোটের মাঠের অন্য দলের প্রার্থীদের আমরা স্বাগত জানাই। তারা থাকলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। এটি গণতন্ত্রের একটি ভিত্তি। এই প্রতিযোগিতাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।