চট্টগ্রাম নগরে সুনশান নীরবতা, মানুষ ছুটেছেন গ্রামে। নগরে নেই কোলাহল। প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে শুক্রবার সকাল ৮টায়। সরকারি ছুটি থাকায় বৃহস্পতিবার থেকেই মানুষ শহর ছাড়তে শুরু করেন। এর মধ্যেই শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বিএনপি হরতাল ডাকায় ছুটির আমেজ আরও দীর্ঘ হয়েছে। মানুষের মধ্যে একদিকে ভোটের উৎসব থাকলেও অন্যদিকে রয়েছে হরতালের আতঙ্ক।
তবে কিছু কিছু প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন। আবার কেউ কেউ নির্বাচন থেকে সরে গেছেন- এমন গুজবও রটে যায়। আবার কিছু প্রার্থীর কর্মীরা ভোটার নম্বর বিতরণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকে নির্বাচনে বহিরাগত সন্ত্রাসী দিয়ে কেন্দ্র দখলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংবাদ সম্মেলন করে।
নগরের নাসিরাবাদ সুগন্ধা আবাসিকে বসবাস করেন ব্যবসায়ী ফরিদুল আলম। তিনি চার সন্তান ও পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন দিনের ছুটি থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে গেছেন ফটিকছড়ির গ্রামের বাড়িতে। একই সঙ্গে তিনি গ্রামের ভোটারও। ভোট শেষে আবার শহরে ফিরবেন। তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন নগরে কী না কী ঘটে, তাই নিরাপদে গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছি।’
এদিকে গুজব ঠেকাতে প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন ও অনলাইনে ব্রিফিং করছেন। চট্টগ্রাম নগর ও উপজেলায় বেশ কয়েকজন প্রার্থী সংবাদ সম্মেলন ও অনলাইনে ব্রিফিং দিয়ে শঙ্কার কথা উল্লেখ করেছেন। অনেক প্রার্থী কেন্দ্র দখল করে জোর করে ভোট নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। বিভিন্ন মামলার আসামিও বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে এমপি মোস্তাফিজের কর্মীকে গ্রেপ্তার করলে পুলিশের হাত কাটার হুমকি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হুমকি ও পাল্টা হুমকি এবং মামলার ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনা ঘটেছে পটিয়া আসনেও। এভাবে চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১১টিতে উত্তেজনা পরিলক্ষিত হয়েছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে বিএসপি চেয়ারম্যান ড. সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী সংবাদ সস্মেলন করেছেন নিজ এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ফটিকছড়ি পৌরসভার কলেজ সেন্টার, কেএমটেক, আতুরিয়া, রাঙ্গামাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নানুপুর ও পাইন্দং ইউনিয়নের সব কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।
এসব কেন্দ্রে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। ফটিকছড়ির বেশ কিছু কেন্দ্রে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারে। এ ছাড়া ফটিকছড়িতে বিভিন্ন মামলার আসামিরা এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছে। প্রশাসন চাইলে এসব সমস্যা দূর করতে পারে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।’
এদিকে চট্টগ্রাম-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুচ ছালাম নির্বাচন থেকে সরে গেছেন- এমন গুজব সোশ্যাল মিডিয়ায় রটে যায়। ফলে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, ‘আমি নির্বাচন বর্জন করিনি। আমার প্রার্থিতা রয়েছে। আমি নির্বাচনে আছি। ৭ জানুয়ারি রবিবার আমাকে আমার মার্কায় ভোট দেবেন। কেউ ষড়যন্ত্র করে ফেসবুকে চালিয়ে দিয়েছে, আমি বর্জন করেছি। কিন্তু আমি নির্বাচনে আছি। নির্বাচন করব। গুজবে কারও কান দেওয়ার দরকার নেই।’
আবদুচ ছালাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি সরে গেছি, এমন খবর ফেসবুকে দেখতে পেয়েছি। ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতিপক্ষরা এমন গুজব ছড়িয়েছে। তাদের জবাব দেওয়ার জন্য আমাকে লাইভে এসে কথা বলতে হয়েছে। ষড়যন্ত্রকারীরা এসব করছে। আমি ভোটে আছি তাই জানিয়ে দিয়েছি।’