সুনামগঞ্জে কবি সঞ্জয় বিরচিত মহাভারত নতুন সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
সোমবার (১৫ এপ্রিল) রাত ৮টায় শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে মোড়ক উন্মোচন হয়।
এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, শিল্পী-সাহিত্যিক, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, ব্যবসায়ীসহ বিশিষ্টজনরা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মোহাম্মদ সাদিক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল হুদা মুকুট, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্, স্থানীয় সরকার উপপরিচালক দেওয়ান মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ দীপক রঞ্জন দাশ, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রোকেস লেইস, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ, দেশের প্রথম নারী সলিসিটর, জুডিশিয়াল সার্ভিসের সিনিয়র জেলা জজ জেসমিন আরা বেগম, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ রামকৃষ্ণ আশ্রম প্রধান হৃদয়ানন্দ মহারাজ লালন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খলিল রহমান।
এ সময় বক্তারা বলেন, মহাকবি সঞ্জয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না গেলেও তার অনূদিত বাংলা মহাভারতের নিদর্শন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষিত আছে। গবেষকদের মতে, মহাকবি সঞ্জয় ছিলেন সুনামগঞ্জের অধিবাসী। তাহিরপুর উপজেলার লাউড় এলাকা ছিল তার জন্মস্থান। ভূবনবিখ্যাত জাত মহাকাব্য মহাভারতের সর্বপ্রথম বাংলায় অনুবাদ করেন মহাকবি সঞ্জয়। সংস্কৃত ভাষায় রচিত মহাভারতের অন্য কোনো ভাষায় এটিই প্রথম অনুবাদ। প্রায় পাঁচশ বছর আগে জন্ম নেওয়া মহাকবি সঞ্জয় বাংলায় মহাভারত অনুবাদের মাধ্যমে আদি জনক-ভাষা সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলা ভাষার সম্পর্ককে আরও ভাব-গাম্ভীর্যময় ও দৃঢ় করেন। মহাকবি সঞ্জয়ের সেই প্রয়াসকে এই স্মারকস্তম্ভে স্থাপত্যের ভাষায় প্রতীকায়িত করা হয়েছে।
বাংলায় মহাভারতের আদি অনুবাদক তাহিরপুর অর্থাৎ লাউড়ের মহাকবি সঞ্জয়। মহাকবি সঞ্জয়ের মহাভারতে লাউড়ের নিপতি রাজা ভগদত্ত এবং সৈন্যবাহিনীকে মহাভারতের যুদ্ধে অংশগ্রহণের পরিচয় পাওয়া যায় এবং তিনি রাজা ভগদত্তকে বহুবার ‘লাউড়-ইস্বর’ বলে সম্বোধন করেছেন, ‘অঙ্গবীর পড়িল সকলে দিল ভঙ্গ’। ত্বরিৎ গমন সব ভীমের আতংক॥ তাহা দেখি ভগদত্ত ‘লাউড়-ইস্বর’। চড়ি সুপ্রস্তিক হস্তি দাইল সত্বর।
সঞ্জয়-বিষয়ক এই গবেষণালব্ধ তথ্য বাংলা সাহিত্যচর্চা তথা মধ্যযুগের সাহিত্যের আদি নিদর্শনসমূহের একটি। অধ্যাপক ড. মুনীন্দ্র কুমার ঘোষ সম্পাদিত কবি সঞ্জয় বিরচিত মহাভারত ১৯৬৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত হয় এবং সেখানে গবেষক কবির পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, সঞ্জয় লাউড়ের এই বরদ্বাজগোত্রীয় বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন।
সঞ্জয়সংক্রান্ত এই গবেষণাকর্ম ভারতে সম্পাদিত হওয়ায় আমাদের দেশে এ-বিষয়ক আলোচনা এখনো সীমিত। আমাদের দেশে মহাকবি সঞ্জয়কে নিয়ে আরও গবেষণা আবশ্যক। সুনামগঞ্জের সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাচীন ইতিহাস আলো করে দাঁড়িয়ে আছেন মহাকবি সঞ্জয়।
অধ্যাপক ডক্টর মুনীন্দ্রকুমার ঘোষের সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। কবি সঞ্জয় বিরচিত মহাভারত সেই বইয়ের নতুন সংস্করণের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক ও ড. মোস্তাক আহমাদ দীন।
সিলেট অঞ্চল প্রাচীনকালে যে কয়টি রাজ্যে বিভক্ত ছিল তার অন্যতম লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল তাহিরপুরের হলহলিয়ায়। এখনো ওখানে রয়েছে প্রাচীন নিদর্শন। হলহলিয়া লাউড় এলাকার নিকটবর্তী। বর্তমান লাউড়ের গড়কে ঘিরে ভারত সীমান্তবর্তী যে বাংলাদেশি ভূখণ্ড বিস্তৃত রয়েছে, সেখানে শ্রীচৈতন্যের অন্যতম পারিষদ অদ্বৈত মহাপ্রভুর জন্মস্থান। মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব সাহিত্যের অনেক অমরকীর্তি এই এলাকায় এবং এলাকার মানুষের হাতে রচিত হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক পরিবর্তনের ফলে সেই সব ঐতিহাসিক নিদর্শন লুপ্তপ্রায়।
দেওয়ান গিয়াস/ইসরাত চৈতী/অমিয়/