রবীন্দ্রসংগীত থেকে দূরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম! । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

রবীন্দ্রসংগীত থেকে দূরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম!

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১১:০৯ এএম
রবীন্দ্রসংগীত থেকে দূরে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম!
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মানবসেবা, প্রকৃতিপ্রেম কিংবা সমাজ সংস্কারের পথে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, রচনাবলি তারুণ্যকে শাশ্বত-সুন্দর সত্যের পথ দেখিয়েছে। সামাজিক প্রেক্ষাপটে দিগভ্রান্ত বহু তরুণ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছেন রবীন্দ্রনাথে। বিশ্বকবির সুর-বাণীতে মন্ত্রমুগ্ধ সেই তরুণরা নিজেদের সমর্পণ করেছেন মানবকল্যাণের পথে। আজ বুধবার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকীর প্রেক্ষাপটে এসে তরুণ প্রজন্ম বলছে, সব কূপমণ্ডূকতা মুছে ফেলে সমাজ সংস্কারের পথে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতায় তারা খুঁজে চলেছেন মানবমুক্তির পথ। তবে আধুনিকতার বলয়ে পপ, ফোক বা পাশ্চাত্যের সংগীতের জোয়ারে গা-ভাসানো তরুণ প্রজন্ম দিনে দিনে রবীন্দ্র সংগীতকে ধারণ ও চর্চা করা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। যেখান থেকে এই প্রজন্মকে রবীন্দ্র চেতনতায় ফেরানোর কাজ করে যাচ্ছেন শিল্পী-সংগঠকরা।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী অনামিকা রায় বলেন, ‘যাপিত জীবনের প্রতিটি পর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার কাছে একেকটি চরিত্র হয়ে যেন এসেছেন। রবীন্দ্রনাথকে কখনো প্রভাবশালী রাজপুত্র, কখনো ধ্যানমগ্ন যোগী, কখনো সর্বহারা এক বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে দেখেছি। কবিগুরুর প্রেম, প্রকৃতি ও পূজা পর্যায়ের গানগুলো প্রাত্যহিক জীবনে আনে নতুন ভাবনার খোরাক।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা প্রকৃতি সাহা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছে। জীবনের আনন্দ-বেদনা, উৎসব কোন পর্বে নেই রবীন্দ্রনাথ! যাপিত জীবনের প্রতিটি অধ্যায়েই তিনিই তো সবচেয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।’

তরুণ নৃত্যশিল্পী ও চিকিৎসক স্মিতা দে ঘোষ বেশ কয়েক বছর ধরে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’য় নাম ভূমিকায় পারফর্ম করছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘চণ্ডালিকা’ নৃত্যনাট্যে মুখ্য চরিত্রে তুলে ধরেছেন নিম্ন বর্ণের এক নারীর জীবন। আমি সাধারণ শহুরে জীবনে অভ্যস্ত। রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য বরাবরই কঠিন। চণ্ডালিকা চরিত্রকে ধারণ করা আমার জন্য মোটেও সহজ ছিল না। আর চিকিৎসা পেশায় আমাকে দিন-রাত সজাগ থাকতে হয়; কখনো অবসাদ এসে ঘিরে ধরে আমাকেও। আমি তখন নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে ভরসা খুঁজি রবীন্দ্র সংগীতে।’

তরুণ প্রজন্মের সংগীতপ্রেমীদের সবাই যে রবীন্দ্রসংগীত ভালোবাসেন এমনটি নয়। পপ, ফোক বা পাশ্চাত্যের সংগীতে মজে থাকা তরুণদের কজনের সঙ্গে কথা বলে খবরের কাগজ। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী মাহরুবা রহমান বলেন, রবীন্দ্রসংগীতের প্রতিটি শব্দ তার ভীষণ পছন্দের। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষার্থী নাদিয়া সুলতানা বলেন, মানসিক অবসাদ কাটাতে তিনি রবীন্দ্রসংগীত শোনেন। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নাদিয়া আহমেদ বলেন, ‘আমি হার্ড রক, মেটালিক ভালোবাসী। রবীন্দ্রসংগীত খুব ধীর লয়ের গান। আমার এসব শুনতে ভালো লাগে না।’

তরুণ প্রজন্মের রবীন্দ্র ভাবনা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃত্যকলা বিভাগের চেয়ারম্যান মনিরা পারভীন বেশ আশাবাদী। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘১৬৩ বছর কেটে গেছে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা, ছোটগল্প বা প্রবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। সংস্কৃতিমনা মানুষ এখনো তার ওপর নির্ভরশীল। সেই জায়গাটি থেকে যারা এখন রবীন্দ্রনাথের গান বা নৃত্যনাট্য নিয়ে চর্চা করছেন, তারা রবীন্দ্রনাথের বার্তা আত্মোপলব্ধি করেই কিন্তু চর্চা করছেন। ‘শ্যামা’, ‘চণ্ডালিকা’, ‘নটীর পূজা’ বা ‘চিত্রাঙ্গদা’ নৃত্যনাট্য নিয়ে যে তরুণরা কাজ করছেন; তারা রবীন্দ্রনাথের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ছেন, রবীন্দ্রনাথকে অন্তরে ধারণ করেই তারা রবীন্দ্রচর্চা করছেন।’

তবে উল্টো চিত্রও আছে। তরুণ প্রজন্মের অনেকে রবীন্দ্র সংগীত শিখতে এলেও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সর্বনাশ ডেকে আনছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থার সভাপতি সাজেদ আকবর। তিনি বলেন, ‘অভিভাবকরা বুঝতে চাইছেন না, কোনো শর্ট কোর্স করে, দু-চারটি গান শিখে রাতারাতি শিল্পী হওয়া যায় না। আর অনেক তরুণ রবীন্দ্রসংগীত শিখেও তা সঠিকভাবে চর্চা করেন না। তাই তারা হারিয়ে যাচ্ছেন।’

ঢাকার নাট্যমঞ্চে একসময় রবীন্দ্রনাথের নাটক বেশ সাড়া ফেললেও তরুণ নাট্যকারদের মধ্যে এখন রবীন্দ্র নাটক নিয়ে নিরীক্ষা বেশ কম। ঢাকার নাটকের দলগুলো ‘রক্তকরবী’, ‘মুক্তধারা’, ‘বিসর্জন’, ‌‘আমি ও রবীন্দ্রনাথ’, ‌‘রাজা ও অন্যান্য’-এর মতো নাটকগুলো মঞ্চে এনে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল। তবে তরুণ নাট্যকাররা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নিরীক্ষায় বেশ পিছিয়ে রয়েছেন।

এ বিষয়ে ‘মঞ্চসারথি’ আতাউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথকে অনেকেই মনে করেন, তিনি একজন ঋষি কবি। কিন্তু তার সমাজ সচেতনতা বা রাজনীতিবিষয়ক ভাবনার কথা কি তরুণরা ভাবছেন? জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে রবীন্দ্রনাথ যে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলেছেন ‘মুক্তধারা’ নাটকে, সে দিকগুলোর কথা নিয়ে তরুণরা খুব বেশি জানেন বলে মনে হয় না।’

ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে রবীন্দ্রনাথকে পরিত্যাজ্য করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। সেটি পারা যায়নি বাঙালির প্রবল প্রতিবাদে। এখন দেখা যাচ্ছে, সমাজে পবিত্র ধর্মের নামে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করার প্রয়াস চলছে। সেখানে আমরা প্রচেষ্টা করছি রবীন্দ্রনাথের সুর বাণী নিয়ে সর্বজনের কাছে যেতে। তবে কেবল সঠিক সুরে রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে দর্শকদের মোহিত করলাম, তাতে কিন্তু চলবে না। রবীন্দ্রনাথের গানের বাণী তো আগে অন্তরে ধারণ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাংলাদেশে এসেই সমাজ সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দরিদ্র জনের সঙ্গে তার সংযোগ এই বঙ্গেই। সে কথা তরুণদের অনুধাবন করতে হবে।’

জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লিলি ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুধু রবীন্দ্রসংগীত শেখানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। রবীন্দ্রনাথের বাণীই তো আসল, সুর তার অনুষঙ্গ। সেই বাণী নিয়ে যাচ্ছি তরুণদের কাছে। কবিগুরুর বাণীতে তরুণদের উজ্জ্বীবিত করে তাদের শুদ্ধ, পরিশীলিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে কাজ করছি আমরা।’

সংকটে রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রেম উত্তরণের নিয়ামক

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্য প্রেরণাশক্তি। রবীন্দ্রনাথ শেষ জীবনে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে প্রাচ্যদেশ থেকে এক মহামানবের আগমন প্রত্যাশা করেছিলেন, সবসংকট-সমস্যায় যিনি হবেন কাণ্ডারি। তিনি আর কেউ নন- স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে মহান ভাবাদর্শে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল অঙ্গীভূত।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে চলমান যুদ্ধ-বিগ্রহপূর্ণ পরিস্থিতিতে রবীন্দ্রনাথের মানবপ্রেম হতে পারে উত্তরণের নিয়ামক শক্তি। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও সাহিত্যের মধ্যেই আমরা পেতে পারি মানসিক শান্তি ও কাঙ্ক্ষিত অনুপ্রেরণা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান বিষয় অসাম্প্রদায়িক চেতনা, বিশ্বমানবতাবোধ ও মানুষে মানুষে মিলন। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার রচনা আলোক শিখা হয়ে বাঙালিকে দেখিয়েছে মুক্তির পথ। মহান মুক্তিযুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গান হয়ে উঠেছিল মুক্তিকামী বাঙালির চেতনা সঞ্চারী বিজয় মন্ত্র।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ-সংঘাত, হিংসা-হানাহানি আর সাম্প্রদায়িকতার নগ্ন উল্লম্ফন তা নিরসনে রবীন্দ্রনাথ হতে পারেন প্রধান নিয়ামক শক্তি।’

দেশব্যাপী নানা আয়োজন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু।’ এ বছর রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান হবে ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি। আজ সকাল ১১টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল হলে তিন দিনব্যাপী আয়োজনের উদ্বোধন করবেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানের সভাপতিত্বে স্মারক বক্তব্য দেবেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। তিন দিনের অনুষ্ঠানে থাকবে স্মারক বক্তব্য। দ্বিতীয় দিনের অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তব্য দেবেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও অধ্যাপক ফকরুল আলম। তৃতীয় দিন বক্তব্য দেবেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহ আজম। তিন দিনের অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর্ব থাকছে।

জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিশ্বকবির স্মৃতিবিজড়িত নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসরে, কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ী, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর এবং খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হবে।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে ছায়ানটের দু-দিনব্যাপী রবীন্দ্র-উৎসব শুরু হবে আজ সন্ধ্যা ৭টায়। এই উৎসবে পরিবেশিত হবে একক ও সম্মিলিত গান, নৃত্য, পাঠ-আবৃত্তি। অনুষ্ঠানে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও আমন্ত্রিত শিল্পী ও দল অংশ নেবেন।

‘বিমল আনন্দে জাগো’ শিরোনামে তিন দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা। আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। তিন দিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে গান, কবিতা ও নৃত্যের সমন্বয়ে। ১১ মে সন্ধ্যায় এই আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীতের একজন গুণী শিল্পীকে দেওয়া হবে কলিম শরাফী স্মৃতি পুরস্কার।  

লাল মিয়া থেকে শিল্পী সুলতান

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৪, ১০:০৮ এএম
লাল মিয়া থেকে শিল্পী সুলতান
শিল্পী এস এম সুলতান

শিল্পী এস এম সুলতানকে জানতে হলে ঘুরতে হবে পুরো ভারতবর্ষ। তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর মাটির মানুষ। মাটির সঙ্গে ছিল তার নাড়ির যোগ, মাটির সঙ্গেই ছিল আজন্ম বসবাস। তিনি শুধু একজন চিত্রশিল্পীই নন, তিনি ছিলেন ঋষি, দার্শনিক। ছিলেন এক ক্যারিশম্যাটিক চরিত্র। জয়নুল আবেদীন আর এস এম সুলতান ছিলেন একই আদর্শের ধারক ও বাহক। এমনকি তিনি ছিলেন চমৎকার রসবোধসম্পন্ন একজন মানুষ।

শনিবার (১৮ মে) ‘লাল মিয়া থেকে শিল্পী সুলতান কিছু খণ্ডচিত্র’- এই শিরোনামে শিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে বেঙ্গল শিল্পালয়ের আয়োজনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনদের আলোচনায় বারবার উঠে আসে, শিল্পীর অসাধারণ ‘সাধারণ’ জীবনযাপন, তার মনস্তত্ত্ব, জীবনবোধ এবং সারা জীবন ছবি আঁকার সংগ্রাম। 

আলোচনা সভার মূল বক্তা ছিলেন শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী। আলোচক হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন এবং ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম। এ সময় শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভীর ক্যামেরায় তোলা এস এম সুলতানের কিছু দুষ্প্রাপ্য ছবি প্রদর্শন করা হয়।

শিল্পী নাসিম আহমেদ নাদভী বলেন, ‘আমি যখন প্রথম চারুকলায় তাকে দেখি, তার পরনে ছিল একটি গেরুয়া রঙের শাড়ি, বড় চুল। আমার মনে হয়েছিল, এখানে পড়লে আমাকেও কি এমন বেশ নিয়ে থাকতে হবে? আবার পরবর্তী সময়ে দেখি তিনি তার বেশ পরিবর্তন করেছেন। সুলতান আসলে এত বিনয়ী একজন মানুষ ছিলেন যে তিনি নিচ থেকে সবাইকে ওপরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি সব সময় সাধারণ মানুষের কথা বলে গেছেন।’

সুলতান সম্পর্কে আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন বলেন,‘ সুলতানের একেকটি ছবি স্বাধীনতার মেনোফেস্টো। তিনি যেভাবে তার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে ওই সময় যা দেখে গেছেন তা অকল্পনীয়। তাকে এক-দুই দিনে পাঠ করে জানা সম্ভব নয়। তাকে জানতে হলে পুরো ভারতবর্ষ জানতে হবে, ব্রিটিশ কলোনিয়াল সময় সম্পর্কে জানতে হবে, বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে হবে।’ 

ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম বলেন, ‘তিনি আকাশের চাঁদ, ধ্রুবতারা। তিনি এত সহজ একজন মানুষ ছিলেন যে তার কাছে যেই যেত তাকে তিনি আপন করে নিতেন। ঠিক ওই মুহূর্তে মনে হতো, ওই সময়টুকু সুলতান শুধু তার। এমনকি খুব বেশি দিন চেনেনও না, তার সঙ্গেও তিনি আপনজনের মতো কথা বলতেন।’ 

সুলতানের ছবিতে আমরা দেখি গ্রাম-বাংলার নতুন এক প্রতিচ্ছবি। একই সঙ্গে তার এ ছবিগুলোতে গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের শ্রেণি-দ্বন্দ্ব এবং গ্রামীণ অর্থনীতির ক্রূর বাস্তবতাও উঠে এসেছে।

এস এম সুলতান যাদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছিলেন, তারা আজও সক্রিয়। বাংলাদেশের অনেক তরুণ এস এম সুলতান হতে চান, এই যে জনপ্রিয়তা অনেক শিল্পীই মানতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশে এস এম সুলতান টিকে থাকতেই এসেছিলেন, তার কোনো সহায় নেই, সম্পত্তি নেই, কিন্তু তাকে নিয়ে আলোচনা আজও চলমান, তিনি ছিলেন মহামানব, ধরাবাঁধা স্কুলিং না থাকলেও তিনি ছিলেন অসামান্য মেধাবী। তিনি শুধু ছবি উপহার দেননি, সুলতান মিশে আছেন এ দেশের প্রকৃতি, জলবায়ুর সঙ্গে।

ব্রেইন ড্যামেজ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি লেখক হোসেনউদ্দিন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১০:০৬ এএম
ব্রেইন ড্যামেজ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি লেখক হোসেনউদ্দিন
লেখক হোসেনউদ্দিন হোসেন

‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’ প্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হোসেনউদ্দিন হোসেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে তার ব্রেন ড্যামেজ ধরা পড়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। 

হোসেনউদ্দিন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহনাজ রাহানা রত্না জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরে গল ব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়া তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। 

তিনি জানান, শুক্রবার (১৭ মে) বাবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বেশির ভাগ সময় সেন্সলেস (চেতনাহীন) থাকছেন। কেউ ডাকলে একটু-আধটু চোখ মেলে দেখছেন। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেছে। প্রতিদিন দুই ব্যাগ রক্ত লাগছে। তার ফুসফুসে পানি জমেছে।

‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ আলোচনা-মিলনমেলা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ আলোচনা-মিলনমেলা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ। ছবি : খবরের কাগজ

খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে ২০১৪ সালের ১৭ মে যাত্রা শুরু হয় ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’-এর। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বধ্যভূমিতে ৫০টি স্মৃতিফলক, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার ছবি ও অনেক স্মৃতিচিহ্ন রাখা হয়েছে। এই জাদুঘরই প্রথম ডিজিটাল জেনোসাইড ম্যাপ তৈরি করেছে।

শুক্রবার (১৭ মে) গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর-এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ শিরোনামে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও মিলনমেলা খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনের মাধ্যমে খুলনার সাউথ সেন্ট্রাল রোডে নতুন ভবনে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করছে গণহত্যা জাদুঘর। 

১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার নির্ভুল ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শন অন্বেষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিল গণহত্যা জাদুঘর। সকালে সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সেমিনার উদ্বোধন করেন। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। 

দ্বিতীয় পর্বে একাডেমিক সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক পুনম মুখার্জি এবং পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সাগর তরঙ্গ মণ্ডল। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মাহবুবর রহমান। বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘যে জাদুঘর জীবনের কথা বলে’ দশম শহিদ স্মৃতিস্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

তারেক খানের স্মৃতির প্রতি অনুশীলন নাট্যদলের শ্রদ্ধা

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
তারেক খানের স্মৃতির প্রতি অনুশীলন নাট্যদলের শ্রদ্ধা
চিত্রশিল্পী, থিয়েটার কর্মী ও অনুষ্ঠান প্রযোজক তারেক খান। ছবি : সংগৃহীত

চিত্রশিল্পী, থিয়েটার কর্মী ও অনুষ্ঠান প্রযোজক তারেক খানের প্রয়াণে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে অনুশীলন নাট্যদল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার (১৫ মে) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

সাবেক কর্মীর মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাজশাহীতে দলের সদস্যরা অনুশীলন নাট্যদল কার্যালয়ে শোকসভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি অধ্যাপক এস এম আবু বকর। 

সভার শুরুতেই প্রয়াত তারেক খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শোকাতুর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। 

সভায় তার কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন দলের সদস্যরা।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারেক খান বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন গাজী টিভির অনুষ্ঠান সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আগামীকাল শুক্রবার (১৭ মে)  বিকেল ৫টায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে তারেক খানের  স্মরণে সভার আয়োজন করেছে অনুশীলন নাট্যদলের প্রাক্তন সদস্যরা।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী: স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০১:০১ পিএম
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী: স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা
রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রয়াণবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জাতির দুর্দিনে পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী। 

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবন ও কর্ম স্মরণে স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকরা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে কালি ও কলম পত্রিকার আয়োজনে অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম, কবি পিয়াস মজিদ। 

মঙ্গলবার ছিল বাংলা একাডেমির প্রয়াত সভাপতি, শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকী। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি লেখালেখির মাধ্যমে তরুণদের জাগাতে চেয়েছিলেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণদের সেখানে ঘাটতি আছে। তাকে স্মরণ করে সেই কাজটাই আমরা করতে চাই। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন চিন্তা প্রসারিত করতে হবে। আমরা সকলেই মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী। আমরা সেই বিশ্বাসকে প্রসারিত করব।’

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম বলেন, নতুন প্রজন্মকে মানবিক, উদারতা, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা কর্মে অবদান রেখেছেন। রাজনৈতিক বিভাজন, ধর্মীয় উন্মাদনা, সন্ত্রাস, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় রোধে জাতীয় জাগরণের আশায় অনেককে একত্রিত করার নানা কর্মকাণ্ডে তিনি যুক্ত ছিলেন।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল আজিমপুর কবরস্থানে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা। একাডেমির পরিচালক ডা. মো. হাসান কবীরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে অংশ নেন একাডেমির বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, উপপরিচালক, সহ-পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।