বৃহত্তর বরিশাল বইবন্ধু বই বিনিময় উৎসব (বরিশাল পর্ব-১) সফল ভাবে শেষ হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শুক্রবার (১০ মে) বরিশালের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইপ্রেমীদের মাঝে জ্ঞান ও ভালোবাসা বিনিময় করেছে বইবন্ধু। এর আগে ঢাকায় দুই বার এবং চট্টগ্রামে তিন বার বই বিনিময় উৎসব সফল ভাবে আয়োজন করেছিল বইবন্ধু।
তাদের হিসেবে সেখানে প্রায় এক লাখ বই বিনিময় করেছেন পাঠকরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় দুই সহস্রাধিক বই টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন তারা। সেই বইগুলোর পরিবর্তে পাঠকরা তাদের ঘরে থাকা বই বদলে নিয়েছেন।
হাজারো বইয়ের ভিড়ে নিজের পছন্দের বইটি খুঁজে পেতে একজন বইপ্রেমীর অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখকসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয়েছিল জ্ঞানপিপাসুদের মিলনমেলায়। বইপ্রেমীদের উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ঈদের আনন্দের মতো।
বইবন্ধুর এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল যেন সবাই বই নিয়ে উৎসাহ দেখায়।
বরিশালে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন ইতোমধ্যে বইপ্রেমীদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পাঠকদের অভিযোগ, কেন এই আয়োজন একদিন হয়েছে? তারা চেয়েছেন এই আয়োজন যেন প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে আয়োজন করা হয়।
এই উৎসবে বরিশালে বইবন্ধু প্রায় সাত হাজার বই বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা ছোট হলেও বরিশালের জন্য বিশাল। কারণ যাতায়াতের অসুবিধার জন্য জেলার দূরবর্তী স্থানে থাকা বইপ্রেমীরা অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই লক্ষ্যমাত্রা কাছাকাছি গিয়ে থেমে যেতে হয়েছে বইবন্ধুকে।
বইবন্ধু বই বিনিময় উৎসব (বরিশাল পর্ব-১) এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই।
বেলা সাড়ে ১০টায় তিনি এই ব্যতিক্রমী উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং বই বিনিময় পর্বে অংশ নিয়ে একটি বই বিনিময় করেন।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক মোরশেদ আলম হৃদয়।
লেখকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মানজুলুল হক, রেজওয়ান শুভ, রুদ্র শামীম, বিপ্রতীপ শাহ তন্ময়সহ অসংখ্য বইপ্রেমী।
বই বিনিময় উৎসব সম্পর্কে আয়োজক ও বইবন্ধু টিম ম্যানেজমেন্ট আরিফ হোসেন তাহসিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে ইতোমধ্যে এই প্রোগ্রাম ঈদের মতো বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। প্রতিটি বিভাগ ও জেলা থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে ফোন এবং মেসেজ আসে কবে তাদের ওখানে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করবে বইবন্ধু। সর্বোপরি বই বিনিময় উৎসব পাঠকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত।’
কেন এই ব্যতিক্রমী আয়োজন জিজ্ঞেস করলে বইবন্ধুর ভলান্টিয়ার ইব্রাহীম নিরব জানান, ‘আমরা এখন এতই ডিজিটাল হয়ে গেছি যে অবসর সময়টাতে অযথাই স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে থাকি। এতে ব্রেইন ও চোখের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা ধারণার বাইরে। ফলে আমাদের আজকাল বই পড়ে সময় কাটানো একদম হারিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে অনেক বই পড়ে থাকেন। সেই বইটি যদি অন্য কেউ পড়ে উপকৃত হয় তাহলে বিষয়টা একইসাথে দারুণ খবর ও আনন্দময়। আর বই পড়লে মানুষের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজের কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি, উগ্রতা, মারামারি কমে আসে। কারণ একজন পাঠক সব সময় নিজেকে নম্র ভদ্র রেখে সমাজে চলাফেরা করে।’
বইবন্ধুর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়োজক ও বইবন্ধু টিম ম্যানেজমেন্ট আরিফ হোসেন তাহসিন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বইপ্রেমী মানুষদের মাঝে আন্তঃসম্পর্ক বাড়ানো, নতুনদের বই পড়ার অভ্যাস ও আগ্রহ তৈরি করা। বই বিনিময় উৎসব ছাড়াও আমরা নিয়মিতভাবে মানুষকে সাহিত্যের সাথে সংযুক্ত রাখতে টু আওয়ারস লাইব্রেরি, স্বশিক্ষা পাঠশালা, বইয়ের ইতিকথা, গণপরিবহন পাঠাগার, হাসপাতাল পাঠাগার, নৌ পাঠাগার ও পর্যটন পাঠাগারসহ বিভিন্ন আয়োজন করে যাচ্ছি। এগুলো ছাড়াও পরিবেশ রক্ষার্থে সিড ফর প্লাস্টিক নামে আমাদের কার্যক্রম রয়েছে।’
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে উপস্থাপনা করেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তনিমা রহমান।
জাতীয় সংগীত, কুরআন থেকে তেলাওয়াত এবং গীতা পাঠ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে শেষ হয়ে বরিশাল টিমের সদস্যদের ক্রিয়েটিভ কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে।
এর মাঝে দিনব্যাপী একে অন্যের বই বিনিময়, বই আলোচনা, কবিতার আসর ও কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
অমিয়/