শহিদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের চাবি জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শনিবার (৪ মে) সকালে জাতীয় জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে জাহানারা ইমামের ছোট ছেলে সাইফ ইমাম জামি শহিদ জননীর নামাঙ্কিত জাদুঘরের চাবি জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানের কাছে হস্তান্তর করেন।
ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে জাহানারা ইমামের বাড়ি কণিকায় স্থাপিত জাদুঘরের দেখভাল এখন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষই করবে।
শনিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
শহিদ জননীর পরিবারের তরফে জাদুঘরটিকে ‘দানমূল্যে' লিখে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
শহিদ জননী জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি জাতীয় জাদুঘরের নবম শাখা জাদুঘর। ২০০৭ সালে পারিবারিক উদ্যোগে জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। জাদুঘরটি স্থাপন করেছিলেন জাহানারা ইমামের ছেলে ও শহিদ রুমীর ছোট ভাই সাইফ ইমাম জামী।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে এসে জামী স্মরণ করেন জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাফি ইমাম রুমীর সহযোদ্ধা, পারিবারিক বন্ধু ও স্বজনদের সহযোগিতার কথা। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জামী।
জামী বলেন, ‘একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর মেজর হায়দার আমাদের বাড়িতে আসেন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। সেখানেই শেষ হয় ‘একাত্তরের দিনগুলি’। এরপর প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোণা লেগেই থাকত। আমি তো বিদেশে থাকতাম। আমার মা বিধবা রমণী থেকে কিভাবে দেশের মানুষের কাছে শহিদ জননী হয়ে উঠলেন তা আমি বুঝতে পারিনি। ৯৪ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তার মরদেহ যখন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নেওয়া হলো, তখন আমি মায়ের প্রতি এ দেশের মানুষের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারি।’
শহিদ জননী জাহানারা ইমামের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ ইমামের কথা স্মরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। একাত্তরের ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী সড়কের নির্মাণ কাজে শরীফ ইমামদের প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল। নাসির উদ্দীন ইউসুফ এই সড়কগুলোতে কোথায় কতটি ব্রিজ আছে, তার মানচিত্র চেয়ে নেন শরীফ ইমামের কাছে। সেই সূত্রে জাহানারা ইমামের স্নেহধন্য হয়ে উঠেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।
শহিদ জননী স্মরণে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন একটি বিনষ্ট সময়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তখন ‘বিচিত্রা’, ‘সচিত্র সন্ধানী’-তে নিয়মিত ছাপা হতে লাগল ‘একাত্তরের দিনগুলি’। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন বয়ান জরুরি ছিল। এই মহিয়সী নারী আমাদের মানবতা ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রার কথা বলেছেন। তিনি ১৯৯২ সালে গণআদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে যে বিজয় নিশান উড়িয়েছেন তার পথ ধরে ২০ বছর পরে গণজাগরণ মঞ্চের তরুণরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করেছে। গণআদালত আর গণজাগরণ এই দুই মঞ্চ আমাদের ইতিহাসের বড় অংশ।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে যুদ্ধাপরাধীদের আগ্রাসন যখন ক্রমশ বাড়ছিল, তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন শহিদ জননী জাহানার ইমাম। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গড়ে তুলে তিনি গণআদালত গড়ে তুলেছিলেন। তার দেখানো পথে আমরা মফস্বলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। তার সেই আন্দোলনে সফলতা এসেছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব মা তাদের সন্তান হারিয়েছেন আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই মায়েদের ত্যাগ, তিতিক্ষার কথা জাতির সামনে তুলে ধরবো।
জয়ন্ত সাহা/ইসরাত চৈতী/অমিয়/