শহিদ জননীর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরের চাবি হস্তান্তর । খবরের কাগজ
ঢাকা ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

শহিদ জননীর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরের চাবি হস্তান্তর

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
শহিদ জননীর স্মৃতিবিজড়িত জাদুঘরের চাবি হস্তান্তর
অনুষ্ঠানে কথা বলছেন অতিথিরা। ছবি: খবরের কাগজ

শহিদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘরের চাবি জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

শনিবার (৪ মে) সকালে জাতীয় জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে জাহানারা ইমামের ছোট ছেলে সাইফ ইমাম জামি শহিদ জননীর নামাঙ্কিত জাদুঘরের চাবি জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানের কাছে হস্তান্তর করেন।

ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে জাহানারা ইমামের বাড়ি কণিকায় স্থাপিত জাদুঘরের দেখভাল এখন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষই করবে।

শনিবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব মিলনায়তনে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

শহিদ জননীর পরিবারের তরফে জাদুঘরটিকে ‘দানমূল্যে' লিখে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।

শহিদ জননী জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি জাতীয় জাদুঘরের নবম শাখা জাদুঘর। ২০০৭ সালে পারিবারিক উদ্যোগে জাহানারা ইমাম জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। জাদুঘরটি স্থাপন করেছিলেন জাহানারা ইমামের ছেলে ও শহিদ রুমীর ছোট ভাই সাইফ ইমাম জামী।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে এসে জামী স্মরণ করেন জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শাফি ইমাম রুমীর সহযোদ্ধা, পারিবারিক বন্ধু ও স্বজনদের সহযোগিতার কথা। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন জামী।

জামী বলেন, ‘একাত্তরের ১৭ ডিসেম্বর মেজর হায়দার আমাদের বাড়িতে আসেন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। সেখানেই শেষ হয় ‘একাত্তরের দিনগুলি’। এরপর প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোণা লেগেই থাকত। আমি তো বিদেশে থাকতাম। আমার মা বিধবা রমণী থেকে কিভাবে দেশের মানুষের কাছে শহিদ জননী হয়ে উঠলেন তা আমি বুঝতে পারিনি। ৯৪ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তার মরদেহ যখন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে নেওয়া হলো, তখন আমি মায়ের প্রতি এ দেশের মানুষের ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পারি।’

শহিদ জননী জাহানারা ইমামের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ ইমামের কথা স্মরণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ। একাত্তরের ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী সড়কের নির্মাণ কাজে শরীফ ইমামদের প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল। নাসির উদ্দীন ইউসুফ এই সড়কগুলোতে কোথায় কতটি ব্রিজ আছে, তার মানচিত্র চেয়ে নেন শরীফ ইমামের কাছে। সেই সূত্রে জাহানারা ইমামের স্নেহধন্য হয়ে উঠেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ।

শহিদ জননী স্মরণে তিনি বলেন, ‘আমরা যখন একটি বিনষ্ট সময়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, তখন ‘বিচিত্রা’, ‘সচিত্র সন্ধানী’-তে নিয়মিত ছাপা হতে লাগল ‘একাত্তরের দিনগুলি’। ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন বয়ান জরুরি ছিল। এই মহিয়সী নারী আমাদের মানবতা ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রার কথা বলেছেন। তিনি ১৯৯২ সালে গণআদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে যে বিজয় নিশান উড়িয়েছেন তার পথ ধরে ২০ বছর পরে গণজাগরণ মঞ্চের তরুণরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করেছে। গণআদালত আর গণজাগরণ এই দুই মঞ্চ আমাদের ইতিহাসের বড় অংশ।’

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পঁচাত্তরের পরে যুদ্ধাপরাধীদের আগ্রাসন যখন ক্রমশ বাড়ছিল, তখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু করেছিলেন শহিদ জননী জাহানার ইমাম। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গড়ে তুলে তিনি গণআদালত গড়ে তুলেছিলেন। তার দেখানো পথে আমরা মফস্বলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম। তার সেই আন্দোলনে সফলতা এসেছে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেন।’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব মা তাদের সন্তান হারিয়েছেন আমরা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই মায়েদের ত্যাগ, তিতিক্ষার কথা জাতির সামনে তুলে ধরবো।

জয়ন্ত সাহা/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

ব্রেইন ড্যামেজ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি লেখক হোসেনউদ্দিন

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ১০:০৬ এএম
ব্রেইন ড্যামেজ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি লেখক হোসেনউদ্দিন
লেখক হোসেনউদ্দিন হোসেন

‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১’ প্রাপ্ত বরেণ্য প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও গবেষক হোসেনউদ্দিন হোসেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তিনি যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন। সিটিস্ক্যান রিপোর্টে তার ব্রেন ড্যামেজ ধরা পড়েছে। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার চিকিৎসা চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। 

হোসেনউদ্দিন হোসেনের ছোট মেয়ে শাহনাজ রাহানা রত্না জানান, ২০১৯ সালে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়। পরে গল ব্লাডারে পাথর ধরা পড়ে। এ ছাড়া তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। এর মধ্যে গত ১৪ মে বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিন তাকে যশোর শহরের কুইন্স হসপিটালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। 

তিনি জানান, শুক্রবার (১৭ মে) বাবার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বেশির ভাগ সময় সেন্সলেস (চেতনাহীন) থাকছেন। কেউ ডাকলে একটু-আধটু চোখ মেলে দেখছেন। রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেছে। প্রতিদিন দুই ব্যাগ রক্ত লাগছে। তার ফুসফুসে পানি জমেছে।

‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ আলোচনা-মিলনমেলা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৩৭ এএম
‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ আলোচনা-মিলনমেলা
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ। ছবি : খবরের কাগজ

খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে ২০১৪ সালের ১৭ মে যাত্রা শুরু হয় ‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’-এর। এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে বধ্যভূমিতে ৫০টি স্মৃতিফলক, মুক্তিযুদ্ধসংক্রান্ত প্রায় ৯ হাজার ছবি ও অনেক স্মৃতিচিহ্ন রাখা হয়েছে। এই জাদুঘরই প্রথম ডিজিটাল জেনোসাইড ম্যাপ তৈরি করেছে।

শুক্রবার (১৭ মে) গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর-এর দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণহত্যা জাদুঘরের এক দশক’ শিরোনামে দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও মিলনমেলা খুলনায় অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনের মাধ্যমে খুলনার সাউথ সেন্ট্রাল রোডে নতুন ভবনে নতুন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করছে গণহত্যা জাদুঘর। 

১৯৭১ সালে হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার নির্ভুল ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শন অন্বেষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছিল গণহত্যা জাদুঘর। সকালে সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সেমিনার উদ্বোধন করেন। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন। 

দ্বিতীয় পর্বে একাডেমিক সেশনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক পুনম মুখার্জি এবং পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সাগর তরঙ্গ মণ্ডল। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি বাংলাদেশের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. মাহবুবর রহমান। বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান এমপি।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘যে জাদুঘর জীবনের কথা বলে’ দশম শহিদ স্মৃতিস্মারক বক্তৃতা প্রদান করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি কবি তারিক সুজাত। সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

তারেক খানের স্মৃতির প্রতি অনুশীলন নাট্যদলের শ্রদ্ধা

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১০:৫০ পিএম
তারেক খানের স্মৃতির প্রতি অনুশীলন নাট্যদলের শ্রদ্ধা
চিত্রশিল্পী, থিয়েটার কর্মী ও অনুষ্ঠান প্রযোজক তারেক খান। ছবি : সংগৃহীত

চিত্রশিল্পী, থিয়েটার কর্মী ও অনুষ্ঠান প্রযোজক তারেক খানের প্রয়াণে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে অনুশীলন নাট্যদল। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বুধবার (১৫ মে) রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

সাবেক কর্মীর মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেলে রাজশাহীতে দলের সদস্যরা অনুশীলন নাট্যদল কার্যালয়ে শোকসভার আয়োজন করে। সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি অধ্যাপক এস এম আবু বকর। 

সভার শুরুতেই প্রয়াত তারেক খানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং শোকাতুর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়। 

সভায় তার কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন দলের সদস্যরা।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারেক খান বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন গাজী টিভির অনুষ্ঠান সমন্বয়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আগামীকাল শুক্রবার (১৭ মে)  বিকেল ৫টায় ঢাকার শিল্পকলা একাডেমিতে তারেক খানের  স্মরণে সভার আয়োজন করেছে অনুশীলন নাট্যদলের প্রাক্তন সদস্যরা।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী: স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০১:০১ পিএম
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ছিলেন গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী: স্মরণসভায় বিশিষ্টজনরা
রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রয়াণবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকরা। ছবি: খবরের কাগজ

রাজনীতিসচেতন ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আনিসুজ্জামান জাতির দুর্দিনে পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এবং গণতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ আন্দোলনের সহযাত্রী। 

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের জীবন ও কর্ম স্মরণে স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেছেন শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিকরা।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সন্ধ্যায় ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে কালি ও কলম পত্রিকার আয়োজনে অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম, কবি পিয়াস মজিদ। 

মঙ্গলবার ছিল বাংলা একাডেমির প্রয়াত সভাপতি, শিক্ষাবিদ-সাহিত্যিক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকী। 

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে কালি ও কলমের সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি লেখালেখির মাধ্যমে তরুণদের জাগাতে চেয়েছিলেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণদের সেখানে ঘাটতি আছে। তাকে স্মরণ করে সেই কাজটাই আমরা করতে চাই। তিনি আমাদের শিখিয়েছিলেন চিন্তা প্রসারিত করতে হবে। আমরা সকলেই মুক্তচিন্তায় বিশ্বাসী। আমরা সেই বিশ্বাসকে প্রসারিত করব।’

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাবেক সভাপতি মাহফুজা খানম বলেন, নতুন প্রজন্মকে মানবিক, উদারতা, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করাসহ নানা কর্মে অবদান রেখেছেন। রাজনৈতিক বিভাজন, ধর্মীয় উন্মাদনা, সন্ত্রাস, মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় রোধে জাতীয় জাগরণের আশায় অনেককে একত্রিত করার নানা কর্মকাণ্ডে তিনি যুক্ত ছিলেন।

অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের চতুর্থ প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল আজিমপুর কবরস্থানে তার সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা। একাডেমির পরিচালক ডা. মো. হাসান কবীরের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে অনুষ্ঠিত মোনাজাতে অংশ নেন একাডেমির বিভিন্ন বিভাগের পরিচালক, উপপরিচালক, সহ-পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

বরিশালে শেষ হলো বই বিনিময় উৎসব

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
বরিশালে শেষ হলো বই বিনিময় উৎসব
ছবি: সংগৃহীত

বৃহত্তর বরিশাল বইবন্ধু বই বিনিময় উৎসব (বরিশাল পর্ব-১) সফল ভাবে শেষ হয়েছে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে গত শুক্রবার (১০ মে) বরিশালের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইপ্রেমীদের মাঝে জ্ঞান ও ভালোবাসা বিনিময় করেছে বইবন্ধু। এর আগে ঢাকায় দুই বার এবং চট্টগ্রামে তিন বার বই বিনিময় উৎসব সফল ভাবে আয়োজন করেছিল বইবন্ধু। 

তাদের হিসেবে সেখানে প্রায় এক লাখ বই বিনিময় করেছেন পাঠকরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় দুই সহস্রাধিক বই টেবিলে সাজিয়ে রেখেছিলেন তারা। সেই বইগুলোর পরিবর্তে পাঠকরা তাদের ঘরে থাকা বই বদলে নিয়েছেন। 

হাজারো বইয়ের ভিড়ে নিজের পছন্দের বইটি খুঁজে পেতে একজন বইপ্রেমীর অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘক্ষণ।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী, লেখকসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয়েছিল জ্ঞানপিপাসুদের মিলনমেলায়। বইপ্রেমীদের উত্তেজনা ছড়িয়েছিল ঈদের আনন্দের মতো।

বইবন্ধুর এই আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল যেন সবাই বই নিয়ে উৎসাহ দেখায়।

বরিশালে প্রথমবারের মতো এই আয়োজন ইতোমধ্যে বইপ্রেমীদের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পাঠকদের অভিযোগ, কেন এই আয়োজন একদিন হয়েছে? তারা চেয়েছেন এই আয়োজন যেন প্রতি সপ্তাহে কিংবা মাসে আয়োজন করা হয়। 

এই উৎসবে বরিশালে বইবন্ধু প্রায় সাত হাজার বই বিনিময় করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সংখ্যাটা ছোট হলেও বরিশালের জন্য বিশাল। কারণ যাতায়াতের অসুবিধার জন্য জেলার দূরবর্তী স্থানে থাকা বইপ্রেমীরা অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই লক্ষ্যমাত্রা কাছাকাছি গিয়ে থেমে যেতে হয়েছে বইবন্ধুকে।

বইবন্ধু বই বিনিময় উৎসব (বরিশাল পর্ব-১) এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মনদীপ ঘরাই।

বেলা সাড়ে ১০টায় তিনি এই ব্যতিক্রমী উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং বই বিনিময় পর্বে অংশ নিয়ে একটি বই বিনিময় করেন। 

এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক মোরশেদ আলম হৃদয়।

লেখকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মানজুলুল হক, রেজওয়ান শুভ, রুদ্র শামীম, বিপ্রতীপ শাহ তন্ময়সহ অসংখ্য বইপ্রেমী।

বই বিনিময় উৎসব সম্পর্কে আয়োজক ও বইবন্ধু টিম ম্যানেজমেন্ট আরিফ হোসেন তাহসিন বলেন, ‘বাংলাদেশের পাঠকদের মধ্যে ইতোমধ্যে এই প্রোগ্রাম ঈদের মতো বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে। প্রতিটি বিভাগ ও জেলা থেকে প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে ফোন এবং মেসেজ আসে কবে তাদের ওখানে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করবে বইবন্ধু। সর্বোপরি বই বিনিময় উৎসব পাঠকদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করছে প্রতিনিয়ত।’ 

কেন এই ব্যতিক্রমী আয়োজন জিজ্ঞেস করলে বইবন্ধুর ভলান্টিয়ার ইব্রাহীম নিরব জানান, ‘আমরা এখন এতই ডিজিটাল হয়ে গেছি যে অবসর সময়টাতে অযথাই স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে থাকি। এতে ব্রেইন ও চোখের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা ধারণার বাইরে। ফলে আমাদের আজকাল বই পড়ে সময় কাটানো একদম হারিয়ে যাচ্ছে। বাড়িতে অনেক বই পড়ে থাকেন। সেই বইটি যদি অন্য কেউ পড়ে উপকৃত হয় তাহলে বিষয়টা একইসাথে দারুণ খবর ও আনন্দময়। আর বই পড়লে মানুষের চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজের কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি, উগ্রতা, মারামারি কমে আসে। কারণ একজন পাঠক সব সময় নিজেকে নম্র ভদ্র রেখে সমাজে চলাফেরা করে।’ 

বইবন্ধুর ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে আয়োজক ও বইবন্ধু টিম ম্যানেজমেন্ট আরিফ হোসেন তাহসিন বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে বইপ্রেমী মানুষদের মাঝে আন্তঃসম্পর্ক বাড়ানো, নতুনদের বই পড়ার অভ্যাস ও আগ্রহ তৈরি করা। বই বিনিময় উৎসব ছাড়াও আমরা নিয়মিতভাবে মানুষকে সাহিত্যের সাথে সংযুক্ত রাখতে টু আওয়ারস লাইব্রেরি, স্বশিক্ষা পাঠশালা, বইয়ের ইতিকথা, গণপরিবহন পাঠাগার, হাসপাতাল পাঠাগার, নৌ পাঠাগার ও পর্যটন পাঠাগারসহ বিভিন্ন আয়োজন করে যাচ্ছি। এগুলো ছাড়াও পরিবেশ রক্ষার্থে সিড ফর প্লাস্টিক নামে আমাদের কার্যক্রম রয়েছে।’  

ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে উপস্থাপনা করেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তনিমা রহমান। 

জাতীয় সংগীত, কুরআন থেকে তেলাওয়াত এবং গীতা পাঠ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে শেষ হয়ে বরিশাল টিমের সদস্যদের ক্রিয়েটিভ কার্যক্রমের পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে। 

এর মাঝে দিনব্যাপী একে অন্যের বই বিনিময়, বই আলোচনা, কবিতার আসর ও কবি, সাহিত্যিক ও গুণীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। 

অমিয়/