![এইচএসসির সমাজকর্ম ২য় পত্রের অনুধাবনমূলক ও সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর](uploads/2024/04/18/1713420870.a.jpg)
প্রথম অধ্যায়
মৌলিক মানবিক চাহিদা
অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: বস্তি সমস্যার ফলে বাংলাদেশ কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: ঢাকাসহ দেশের সব শহরের অন্যতম একটি সমস্যা হলো বস্তি। দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আজ বস্তিতে বসবাস করছে। বস্তির বিস্তারের ফলে স্বাস্থ্যহীনতা, অপুষ্টি, নিরক্ষরতা, অপরাধ প্রবণতা, মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদি নানা ধরনের জটিল সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও নারীরা। বস্তি সমস্যা সুস্থ নাগরিক গড়ে তোলার অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন: মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে শিল্পায়নের ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে শিল্পায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা শিল্পায়নের ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়, বেকারত্ব দূর হয়, মানুষের উপার্জনের রাস্তা প্রশস্ত হয়। তাছাড়া ব্যাপক শিল্পায়নের ফলে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, পাশাপাশি দেশের আয় বাড়ে। এতে দেশের মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায়। ফলে জনগণ তাদের মৌলিক চাহিদাগুলো খুব সহজেই পূরণ করতে সক্ষম হয়। তাই বলা যায়, জনগণের মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণে শিল্পায়নের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-১
ছকটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
(ক) জীবন রক্ষার জন্য কোন মৌল মানবিক চাহিদার প্রয়োজন?
(খ) মৌলিক মানবিক চাহিদা হিসেবে চিকিৎসার গুরুত্ব লেখ।
(গ) উদ্দীপকে কোন মৌলিক মানবিক চাহিদাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) উক্ত মৌলিক মানবিক চাহিদার বর্তমান পরিস্থিতি আলোচনা করো।
উত্তর: (ক) জীবন রক্ষার জন্য মৌল মানবিক চাহিদা খাদ্যের প্রয়োজন।
(খ) জীবন চলার পথে মানুষ বিভিন্ন কারণে অসুস্থ, রোগগ্রস্ত ও আহত হয়ে থাকে। এ অবস্থায় প্রয়োজন দেখা দেয় চিকিৎসা, খাদ্য ও পরিচর্যার। সুস্থ জীবনযাপনের প্রথমেই দরকার শারীরিক সুস্থতা। কেননা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে না পারলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব হয় না। ফলে আমাদের স্বাভাবিক সামাজিক জীবন ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। আর শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত চিকিৎসা, খাদ্য ও পরিচর্যার।
(গ) উদ্দীপকে মৌলিক মানবিক চাহিদা বস্ত্রের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। মানবসভ্যতার ধারক ও বাহক বলা হয় বস্ত্রকে। মানুষের সূচনালগ্ন থেকেই সম্ভ্রম রক্ষার নিদর্শনস্বরূপ বস্ত্র কেবল মানবজাতিতেই বিদ্যমান। তাই বস্ত্রকে মানবসভ্যতার প্রতীকও বলা হয়। লজ্জা নিবারণের মাধ্যমে সমাজে নৈতিক ও সভ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে বস্ত্রের ভূমিকা সর্বাগ্রে। পোশাকের মাধ্যমে যে জাতি সভ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারেনি, তারা নৈতিক চরিত্র শূন্য হয়ে পড়েছে। আবার শীত, গ্রীষ্ম, ধুলা-ময়লা, রোগজীবাণু ইত্যাদি প্রতিকূলতা থেকে দেহকে রক্ষার জন্য বস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের ছকে উপস্থাপিত তথ্যাবলি বস্ত্র চাহিদার বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তাই বলা যায় উদ্দীপকে ইঙ্গিত করা চাহিদাটি বস্ত্র।
(ঘ) মৌলিক মানবিক চাহিদা বস্ত্রের চাহিদা পূরণের বর্তমান অবস্থা স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ক্রমশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক গড় কাপড়ের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন কম হলেও অতীতের তুলনায় বাংলাদেশ বস্ত্র খাতে অনেক এগিয়েছে। বেসরকারি ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত হয় দেশের অনেক বস্ত্র কারখানা। দেশের বর্তমান কটন স্পিনিং মিলের সংখ্যা ৪২৯টি। এর মধ্যে সরকারি খাতে ২২টি ও বেসরকারি খাতে মিল ৪০৭টি। এসব মিলে সুতা উৎপাদন ক্ষমতা ২১০৬ মিলিয়ন কেজি। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দেশের উৎপাদন দ্বারা মেটানো অসম্ভব। ফলে প্রতি বছরই বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ কাপড়, সুতা ও কাঁচা তুলা আমদানি করতে হয়। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকায় কাপড়ের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ঊর্ধ্বে। ফলে স্বল্পমূল্যে বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় আমদানি করে অভ্যন্তরীণ ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করা হয়। তাই আমদানি কমিয়ে এনে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখে এর সুষ্ঠু সমন্বয় করা জরুরি।
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-২
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
বেকার স্বামী নিয়ে রোকেয়া অভাব-অনটনে দিন অতিবাহিত করে। জীবিকা নির্বাহ করতে তাকে গৃহকর্মীর কাজ করতে হয়। এক দিন সে যে বাসায় কাজ করে তার কর্তা ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় কি না জানতে চাইলে সে জানায়, পাঁচ সন্তানকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান ও অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যেখানে সম্ভব হয় না সেখানে স্কুলে পাঠানো এক প্রকার বিলাসিতারই নামান্তর।
(ক) মানবিক চাহিদা কী?
(খ) চিত্তবিনোদন বলতে কী বোঝায়?
(গ) উদ্দীপকে রোকেয়ার যেসব মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত মৌল মানবিক চাহিদা অপূরণে নেতিবাচক প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: (ক) সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য যেসব চাহিদা পূরণ একান্ত অপরিহার্য সেগুলোই হলো মানবিক চাহিদা।
(খ) নির্মল আনন্দ ও আমোদ-প্রমোদ লাভের পন্থাই হলো বিনোদন। বিনোদনের মাধ্যমে মানুষের চিত্ত জাগ্রত হয়। তাই বিনোদনকে অনেক সময় চিত্তবিনোদন বলা হয়। চিত্তবিনোদন এমন এক কার্যক্রম, যা আনন্দ ও তৃপ্তিদায়ক অভিজ্ঞতা অর্জন এবং সৃজনশীল অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ দান করে।
(গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত রোকেয়ার পরিবারের খাদ্য, চিকিৎসা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না। বেকার স্বামী ও পাঁচ সন্তানের জন্য জীবিকা নির্বাহ করতে রোকেয়াকে গৃহকর্মীর কাজ করতে হয়। তাতেও বেশ অভাব-অনটনের মধ্য দিয়েই পরিবার নিয়ে সে দিনাতিপাত করে। প্রথমত রোকেয়ার পরিবারের খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। খাদ্য হলো সেই জৈব উপাদান, যা গ্রহণের মাধ্যমে জীবদেহের গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন, তাপ ও শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিক থাকে। খাদ্যহীন মানুষ স্বাস্থ্যহীনতায় ভোগে। দ্বিতীয়ত রোকেয়ার কথায় তার পরিবারে চিকিৎসার অভাব পরিলক্ষিত হয়। সীমিত আয়ের মাধ্যমে সে তার সন্তানদের সুচিকিৎসা দিতে সক্ষম নয়। দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক মঙ্গলজনক অবস্থা নির্ভর করে স্বাস্থ্যের ওপর। তৃতীয়ত রোকেয়ার ভাষ্য অনুযায়ী পাঁচ সন্তানকে দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের সংস্থান এবং অসুস্থ হলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যেখানে সম্ভব হয় না, সেখানে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো এক প্রকার বিলাসিতারই নামান্তর। যদিও শিক্ষা সবার জন্যই আবশ্যক। ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি নির্ভর করে শিক্ষার ওপর। মানুষের দেহ, মন ও আত্মার বিকাশ শিক্ষার মাধ্যমেই ঘটে। সুতরাং বোঝা যায়, রোকেয়ার সন্তানদের খাদ্য, চিকিৎসা এবং শিক্ষার মতো মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না।
(ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে নানাবিধ অন্তরায় বিদ্যমান। প্রথমত বাংলাদেশের জনগণের মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে প্রধান অন্তরায় অধিক জনসংখ্যা। জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই সবার চাহিদা পূরণ হয় না। দ্বিতীয়ত দারিদ্র্যের কারণে মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে অনেকেই ব্যর্থ হয়। তাদের আয় কম হওয়ায় তারা দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ। তৃতীয়ত বেকারত্বের কারণে জনগণের একটি বড় অংশ তাদের উপার্জন থেকে বঞ্চিত। ফলে তারা তাদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে, যা সমাজে সমস্যা তৈরি করে। চতুর্থত বাংলাদেশ অর্থনীতিতে ক্রমশ উন্নতির দিকে অগ্রসরমান হলেও কৃষিনির্ভরতা এখনো বিদ্যমান। কৃষিকাজে বিভিন্ন প্রভাবের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয়। যেমন- খরা, অতিবৃষ্টি, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বৃদ্ধির ফলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো ব্যাপক আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন অতিবাহিত করে। ফলে তারা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। পঞ্চমত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষকে তাদের জীবনযাপনে হিমশিম খেতে হয়। ষষ্ঠত সম্পদ ও আয়ের অসম বণ্টনের ফলে সমাজের গরিবরা তাদের জীবনের সব মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণে আমাদের সমাজে বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।
লেখক: প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
জাহ্নবী