দ্বিতীয় অধ্যায়
কোষ বিভাজন
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
এক প্রকার কোষ বিভাজনের মাধ্যমে উচ্চ শ্রেণির জীবের জনন কোষ সৃষ্টি হয়। ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোম বিশিষ্ট একটি জনন মাতৃকোষ বিভাজিত হয়ে চারটি অপত্য কোষ সৃষ্টি করে এবং অপত্য কোষগুলোর ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের ক্রোমোজোম সংখ্যার অর্ধেক হয়। এ কোষ বিভাজনের একটি দীর্ঘ ও জটিল পর্যায় রয়েছে।
ক. ক্রসিং ওভার কী? ১
খ. কোন ধরনের কোষে মাইটোসিস বিভাজন হয়? ২
গ. উদ্দীপকের শেষ উক্তি অনুযায়ী নির্দেশিত পর্যায়টির দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপধাপ চিত্রসহ বর্ণনা দাও। ৩
ঘ. জীবজগতে উদ্দীপকের কোষ বিভাজন না হলে কী হতো? ব্যাখ্যা করো। ৪
উত্তর: ক. এক জোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোমের দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে অংশের বিনিময় হওয়ার প্রক্রিয়াই হলো ক্রসিংওভার।
খ. মাইটোসিস বিভাজন সব জীবের অর্থাৎ সব প্রাণী ও উদ্ভিদের বিভাজন ক্ষমতাসম্পন্ন দৈহিক কোষে ঘটে থাকে। উদ্ভিদের কাণ্ড ও তার শাখা-প্রশাখার শীর্ষ, মূলের বর্ধিষ্ণু অঞ্চল, ক্যাম্বিয়াম প্রভৃতি অঞ্চলে মাইটোসিস বিভাজন হয়ে থাকে। প্রাণীর স্নায়ুকোষ ছাড়া সব দেহকোষ এ প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়। এমনকি জীবের জননাঙ্গের গঠন ও বৃদ্ধিও মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শেষ উক্তিটি দ্বারা মায়োসিস-১ কোষ বিভাজনের প্রোফেজ-১ পর্যায়কে বোঝানো হয়েছে।
প্রোফেজ-১ পর্যায়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপধাপ হলো যথাক্রমে জাইগোটিন ও প্যাকাইটিন। নিচে এ দুটি উপধাপের চিত্রসহ বর্ণনা দেওয়া হলো-
জাইগোটিন: এ উপপর্যায়ে হোমোলোগাস ক্রোমোজোম একটি জোড়ার সৃষ্টি করে। হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের মধ্যে পরস্পর আকর্ষণই এ জোড়া সৃষ্টির কারণ। জোড়া সৃষ্টির কাজ ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ারের মধ্যে শুরু হয়ে দুদিকে ক্রমান্বয়ে বিস্তার লাভ করতে পারে। দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের মধ্যে জোড় সৃষ্টি হওয়াকে সিন্যাপসিস (Synapsis) বলে। জোড়বাধা ক্রোমোজোম জোড়াকে বাইভ্যালেন্ট (Bivalent) বলে। এতে করে একটি কোষে যত সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে তার অর্ধেক সংখ্যক বাইভ্যালেন্ট সৃষ্টি হয়। নিউক্লিওপর্দা ও নিউক্লিওলাস তখনো অবিকৃত থাকে।
প্যাকাইটিন: এ উপপর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো আরও মোটা ও খাটো হয়। এ পর্যায়ে সর্বপ্রথম বাইভ্যালেন্টের প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ছাড়া অনুদৈর্ঘ্যভাবে দুটি ক্রোমোটিডে বিভক্ত হয়। ফলে প্রতিটি বাইভ্যালেন্টে চারটি ক্রোমাটিড দেখা যায়, এ অবস্থাকে বলা হয় টেট্রাড (Tetrad)। একই ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটিকে সিস্টার ক্রোমাটিড এবং একই জোড়ার দুটি ভিন্ন ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিড দুটিকে নন-সিস্টার ক্রোমাটিড বলে। এ উপপর্যায়ের শেষের দিকে বাইভ্যালেন্টের যেকোনো দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিড একই স্থানে ভেঙে গিয়ে আবার একটির সঙ্গে অন্যটির জোড়া লাগে। দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের ‘X’ আকৃতির এই জোড়াস্থলকে কায়াজমা (Chiasma) বলে। দুটি নন-সিস্টার ক্রোমাটিডের মধ্যে পরস্পর অংশের বিনিময়কে ক্রসিং ওভার (Crossing over) বলে। এ উপপর্যায়েও নিউক্লিওপর্দা ও নিউক্লিওলাস দেখা যায়।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কোষ বিভাজন প্রক্রিয়াটি হলো মায়োসিস কোষ বিভাজন। মায়োসিস কোষ বিভাজন না হলে জীবজগতে নানা রকম সমস্যা দেখা দিত। কারণ অধিকাংশ জীবের যৌন জনন প্রক্রিয়া এ পদ্ধতির মাধ্যমে হয়। এর ফলে ভ্রূণ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন জীব জন্মলাভ করে।
মায়োসিসের ফলে জননকোষ উৎপন্ন হয়, তাই যৌন জননক্ষম জীবে মায়োসিস না ঘটলে বংশবৃদ্ধি অসম্ভব। প্রজাতিতে বংশানুক্রমে ক্রোমোজোম সংখ্যা ধ্রুব রাখা কেবলমাত্র এ প্রক্রিয়ার জন্য সম্ভব হচ্ছে। হ্যাপ্লয়েড উদ্ভিদের জাইগোট এবং ডিপ্লয়েড উদ্ভিদের জনন মাতৃকোষে মায়োসিস না ঘটলে পিতা-মাতা থেকে সন্তান-সন্ততিতে ক্রমাগতভাবে পুরুষানুক্রমে ক্রোমোজোম সংখ্যা দ্বিগুণ (2n), চারগুণ (4n), আটগুণ (8n), ষোলোগুণ (16n), এভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জীবজগতে একটি আমূল পরিবর্তন ঘটে যেতো। মায়োসিসের ফলে জীবে ক্রোমোজোমের সংখ্যা সঠিক রাখার মাধ্যমে বংশানুক্রমে প্রতিটি প্রজাতির স্বকীয়তা রক্ষা পায়।
যৌন প্রজননক্ষম দুটি জীব কখনো হুবহু এক রকম হয় না। পৃথিবীর প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ একই প্রজাতিভুক্ত হয়েও একজন অন্যজন থেকে ভিন্নতর। মায়োসিস প্রক্রিয়ায় গ্যামিটে ক্রোমোজোমের স্বাধীন বিন্যাস এবং ক্রসিংওভারের ফলে পৃথিবীতে এ বৈচিত্র্যের সৃষ্টি হয়েছে। মায়োসিস কোষ বিভাজন বৈচিত্র্য আনে এবং এ বৈচিত্র্যের ফলে অভিব্যাক্তির ধারার সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া জনুক্রম আছে এমন জীবের জীবনচক্র মায়োসিস ছাড়া সম্ভব নয়। মায়োসিস বিভাজন জীবের জীবনচক্রে গ্যামিটোফাইটিক দশার সূচনা করে অর্থাৎ স্পোরোফাইটিক দশার সমাপ্তি ঘটিয়ে জনুক্রম ঘটাতে সাহায্য করে।
বংশগতিবিদ্যায় মেন্ডেলের সূত্রের গুরুত্ব অনেক। মেন্ডেলের বংশগতীয় সূত্রগুলোর ক্রোমোজোমীয় ব্যাখ্যা মায়োসিস দ্বারা স্পষ্ট হয়।
আর এসব কারণে বলা যায়, মায়োসিস বিভাজন না ঘটলে সমগ্র জীবজগতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে জীবজগৎ হুমকির মুখে পড়ে যেত।
আরও পড়ুন: জীববিজ্ঞান ২য় অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, ২য় পত্র
লেখক: প্রভাষক, জীববিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজ, ঢাকা
জাহ্নবী