দ্বিতীয় অধ্যায়: ইবাদত
বর্ণনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: কোরবানি প্রচলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করো।
উত্তর: হজরত ইবরাহিম (আ.) ছিলেন একজন বিশিষ্ট নবি। আল্লাহতায়ালা তাকে অনেকবার পরীক্ষা করেছেন। তিনি সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। একদিন হজরত ইবরাহিম (আ.) স্বপ্নে দেখলেন, আল্লাহ তাকে প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে আদেশ করছেন। তিনি তার স্বপ্নের কথা ইসমাইল (আ.)-কে জানিয়ে বললেন, ‘হে বৎস! স্বপ্নে দেখলাম আমি তোমাকে জবাই করছি এখন তোমার অভিমত কী বল।’ উত্তরে ইসমাইল (আ.) বললেন, ‘হে আমার আব্বা, আপনি তাই করুন যা আপনাকে আদেশ করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ ইবরাহীম (আ.) আল্লাহর প্রতি তার পুত্রের এমন আনুগত্য, নিষ্ঠা ও সাহসিকতাপূর্ণ উত্তরে খুশি হলেন। তিনি প্রাণপ্রিয় পুত্রকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি করতে তার গলায় ছুরি চালালেন। পুত্র ইসমাইলও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ধারাল ছুরির নিচে মাথা পেতে দিলেন। কঠিন এ পরীক্ষায় পিতা-পুত্র উত্তীর্ণ হলেন। আল্লাহতায়ালা কোরবানি কবুল করলেন এবং ইসমাইলকে রক্ষা করলেন। তার পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে গেল। আল্লাহতায়ালার প্রতি হজরত ইবরাহিম (আ.) ও তার পুত্র ইসমাইল (আ.)-এর অপরিসীম আনুগত্য ও অপূর্ব ত্যাগের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এবং মুসলিমদের ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করার জন্য তখন থেকেই কোরবানির প্রচলন রয়েছে।
প্রশ্ন: ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: ধর্মীয় অনুশাসন পালনে তথা ইবাদতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা একান্ত আবশ্যক। নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে সালাত, সাওম, হজ ও জাকাতের মতো মৌলিক ইবাদতগুলো ইবাদত হিসেবে গণ্য নাও হতে পারে। যেমন- কেউ যদি এই উদ্দেশ্যে সালাত, আদায় করে যে লোকে তাকে নামাজি বলবে, এই উদ্দেশ্যে জাকাত দেয় যে লোকে তাকে দানশীল বলবে, এই উদ্দেশ্যে হজ করে যে লোকে তাকে আলহাজ আখ্যায়িত করবে তাহলে তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে না। উপরিউক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ধর্মীয় অনুশাসন পালনে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা না থাকলে কোনো সুফল পাওয়া যায় না। সুতরাং আমরা পূর্ণ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনগুলো যথাযথভাবে পালন করব।
প্রশ্ন: সব ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর প্রতি উদার, সহিষ্ণু ও সহনশীল হওয়ার গুরুত্ব বর্ণনা করো।
উত্তর: ইসলাম উদার মানবতাবোধ সম্পন্ন, পরমতসহিষ্ণু একটি জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সব ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর প্রতি উদার, সহনশীল ও শ্রদ্ধাশীল। ইসলামে যেমন আছে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় নীতিমালা, তেমনি আছে ন্যায়-নীতিভিত্তিক উদার, পরমতসহিষ্ণু, আন্তঃধর্মীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা। মানবতার ঐক্য, সংহতি, বিশ্বশান্তি ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা অপরিসীম। বিভিন্ন ধর্মের এবং ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পারস্পরিক সম্পর্ক কীরূপ হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা বিদ্যমান। ইসলাম এত উদার যে, মহানবি (সা.) ইহুদি, খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের মদিনা মসজিদে ইবাদত করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। নিজের ধর্ম অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অনুমতি ইসলামে নেই। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ধর্মে জবরদস্তি নেই।‘
হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরত করেই মদিনা ও তার আশপাশে বসবাসকারী গোত্রগুলোর সঙ্গে একটি বিশ্বখ্যাত সনদপত্র সম্পাদন করেন, যা ইতিহাসে ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এ সনদ সাম্যের মহান নীতি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জানমালের নিরাপত্তা, সব ধর্মের স্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঘোষণা ও রক্ষাকবচ। এ সনদের মাধ্যমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকার তথা মানবাধিকার স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে মহানবী (সা.) সব ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীর প্রতি উদার, সহিষ্ণু ও সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন।
লেখক: মাস্টার ট্রেইনার ও সিনিয়র শিক্ষক
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মধুবাগ, রমনা, ঢাকা
জাহ্নবী