রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচিন্তা । খবরের কাগজ
ঢাকা ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচিন্তা

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানচিন্তা
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আইনস্টাইন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) পেয়েছিলেন আশি বছরের আয়ু। এই দীর্ঘজীবনে তিনি সৃষ্টিশীল ভুবনের যেখানেই হাত দিয়েছেন, সোনা ফলিয়েছেন। অসামান্য কোনো মহৎ প্রতিভার পক্ষেই এ ধরনের অর্জন ও সিদ্ধিলাভ সম্ভবপর। কবি তার ছেলেবেলা থেকেই বিজ্ঞানমনস্ক ছিলেন। আগ্রহ, কৌতূহল ও অনুসন্ধিৎসা ছিল বিজ্ঞান বিষয়ে। তার বিচিত্রগামী প্রতিভার স্ফুরণ প্রতিফলন আছে যে বিপুল রচনাসম্ভারে, তার অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বিজ্ঞানচিন্তার ছাপ দেখতে পাই। বস্তুত শিশুকালেই তার মানসগঠন হয়েছিল বৈজ্ঞানিক আবহে। ক্রমে ক্রমে তা বিকশিত হয়েছে। পেয়েছে পরিণতি। রবীন্দ্র সৃষ্টিসম্ভার বিজ্ঞানের মোহন আলোয় উদ্ভাসিত, ঐশ্বর্যমণ্ডিত এবং কালজয়ী হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন শিশু, তখন থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছিল। পরিণত বয়সে তিনি লিখলেন বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ ‘বিশ্বপরিচয়’। এ বইয়ে আছে পরমাণুলোক, গ্রহলোক, ভূলোক, নক্ষত্রলোক নামের অধ্যায়। সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় তিনি বিজ্ঞানের জটিল সব তথ্য ও তত্ত্ব পাঠকসমীপে উপস্থাপন করেছেন। খুব সহজেই তিনি প্রবেশ করেছেন বিষয়ের গভীরে। তার রচনাশৈলীর যে অনন্য মুনশিয়ানা, তার বৈগুণ্যে বিজ্ঞানের জটিল সব অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে বোধগম্য এবং উপভোগ্য।

তার কালে, পিছিয়ে থাকা বাঙালি সমাজে কেমন করে অতটা বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি? ‘বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ভূমিকায় এ সম্পর্কে বিশদ লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। লিখেছেন আমাদের মন অবৈজ্ঞানিক, শুধু বিদ্যার বিভাগে নয়, কাজের ক্ষেত্রেও আমাদের অকৃতার্থ করে রেখেছে। ‘বিশ্বপরিচয়’ গ্রন্থে লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ,

‘…আমি বিজ্ঞানের সাধক নই সে কথা বলা বাহুল্য। কিন্তু বালককাল থেকে বিজ্ঞানের রস আস্বাদনে আমার লোভের অন্ত ছিল না। আমার বয়স বোধ করি তখন নয়-দশ বছর; মাঝে মাঝে রবিবারে হঠাৎ আসতেন সীতানাথ দত্ত [ঘোষ] মহাশয়। আজ জানি তাঁর পুঁজি বেশি ছিল না, কিন্তু বিজ্ঞানের অতি সাধারণ দুই-একটি তত্ত্ব যখন দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিতেন আমার মন বিস্ফারিত হয়ে যেত। মনে আছে আগুনে বসালে তলার জল গরমে হালকা হয়ে উপরে ওঠে আর উপরের ঠাণ্ডা ভারী জল নীচে নামতে থাকে, জল গরম হওয়ার এই কারণটা যখন তিনি কাঠের গুঁড়োর যোগে স্পষ্ট করে দিলেন, তখন অনবচ্ছিন্ন জলে একই কালে যে উপরে নীচে নিরন্তর ভেদ ঘটতে পারে তারই বিস্ময়ের স্মৃতি আজও মনে আছে। যে ঘটনাকে স্বতই সহজ ব’লে বিনা চিন্তায় ধরে নিয়েছিলুম সেটা সহজ নয় এই কথাটা বোধ হয় সেই প্রথম আমার মনকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তার পরে বয়স তখন হয়তো বারো হবে (কেউ কেউ যেমন রঙ-কানা থাকে আমি তেমনি তারিখ-কানা এই কথাটি বলে রাখা ভালো) পিতৃদেবের সঙ্গে গিয়েছিলুম ড্যালহৌসি পাহাড়ে। সমস্তদিন ঝাঁপানে করে গিয়ে সন্ধ্যাবেলায় পৌঁছতুম ডাকবাংলায়। তিনি চৌকি আনিয়ে আঙিনায় বসতেন। দেখতে দেখতে, গিরিশৃঙ্গের বেড়া-দেওয়া নিবিড় নীল আকাশের স্বচ্ছ অন্ধকারে তারাগুলি যেন কাছে নেমে আসত। তিনি আমাকে নক্ষত্র চিনিয়ে দিতেন, গ্রহ চিনিয়ে দিতেন। শুধু চিনিয়ে দেওয়া নয়, সূর্য থেকে তাদের কক্ষচক্রের দূরত্বমাত্রা, প্রদক্ষিণের সময় এবং অন্যান্য বিবরণ আমাকে শুনিয়ে যেতেন। তিনি যা বলে যেতেন তাই মনে ক’রে তখনকার কাঁচা হাতে আমি একটা বড়ো প্রবন্ধ লিখেছি। স্বাদ পেয়েছিলুম বলেই লিখেছিলুম, জীবনে এই আমার প্রথম ধারাবাহিক রচনা, আর সেটা বৈজ্ঞানিক সংবাদ নিয়ে।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বিভিন্ন কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, উপন্যাসেও আমরা পাব বিজ্ঞানচেতনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ও বর্ণচ্ছটা। আমরা জানি, বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ও জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে নিবিড় গভীর বন্ধুতা ছিল কবির। গ্রামোন্নয়ন ও কৃষির উন্নতির কথা শুধু ভাবেনইনি, এই কাজে রীতিমতো ব্রতী ও উদ্যোগী হয়েছিলেন। পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা নিতে পাঠিয়েছিলেন। রথীন্দ্রনাথের অধীত বিষয় ছিল কৃষি ও গো পালন। গ্রাম উন্নয়ন করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথই প্রথম চালু করেছিলেন সমবায় ব্যাংক। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শ্রীনিকেতনের কাছে কৃষি গবেষণাগার। সারা জীবন তিনি কৃষি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছেন। এক পত্রে তার প্রিয় বিজ্ঞানীবন্ধু জগদীশচন্দ্র বসুকে লিখছেন,

‘আমার চাষ-বাসের কাজও মন্দ চলিতেছে না। আমেরিকান ভুট্টার বীজ আনিয়েছিলাম- তাহার গাছগুলা দ্রুতবেগে বাড়িয়া উঠিতেছে। মান্দ্রাজি সরু ধান রোপণ করিয়াছি, তাহাতেও কোন অংশে নিরাশ হইবার কারণ দেখিতেছি না।’

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী বাংলা একাডেমি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে। উপস্থাপিত প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের বহু গল্পে বিজ্ঞান ভাবনার উজ্জ্বল উপস্থিতি রয়েছে। শেষ জীবনে তিনি বিজ্ঞানকে তার ভাবনার অন্যতম প্রধান উপজীব্য বিষয় করে তুলেছিলেন। ছিয়াত্তর বছর বয়সে তিনি ‘বিশ্বপরিচয়’-এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করেন। তিনি ‘সমগ্র’ দিয়ে বিজ্ঞানকে অনুভব করার কথা বলতেন।’

একই অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ‘জীবনকে যিনি বুঝতে ও উপভোগ করতে চান তার দরকার বিজ্ঞানচর্চা। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রায়োগিক বিজ্ঞানী। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ভালো কিছু করার চেষ্টা করতেন। তিনি মহাবিশ্ব, গ্যালাক্সি, সীমা-পরিসীমা সর্বোপরি বৃহতের সন্ধান করতেন। বিভিন্ন গ্রহের মধ্যে জীবের সন্ধান অনুধাবন করেন তিনি, যা নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচায়ক।’

এ সপ্তাহের নতুন বই

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০১:০৩ পিএম
এ সপ্তাহের নতুন বই
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

জ্ঞানসমুদ্রে পিপাশা নিবারণের অন্যতম  হাতিয়ার হলো বই। একটি ভালো বই মানুষের জানাশোনার পরিসরকেই বিস্তৃত  করে না বরং বাস্তব জীবনে এর প্রতিফলন ঘটিয়ে জীবনকে বদলে দিতে পারে। কবি ও ছড়াকার রেদোয়ান মাসুদ বলেছেন, ‘বই হচ্ছে জোনাকি পোকার মতো, চারদিকে অন্ধকার অথচ নিজে জ্বলে থাকে।’...

সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা 
যতীন সরকার
শ্রেণি: সাহিত্য ও সাহিত্যিক বিষয়ক প্রবন্ধ
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ১৫০; মূল্য: ৪০০ টাকা 

যতীন সরকার এ যুগের শীর্ষস্থানীয় চিন্তাবিদ। অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল ধরে তার শানিত লেখনী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন পাঠককে সমৃদ্ধ করে এসেছে। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান এই প্রাবন্ধিকের চিন্তাচর্চার পরিসর সুদূরবিস্তৃত। সংস্কৃতি, সমাজ, সাহিত্য ও রাজনীতি বিষয়ে তার ক্ষুরধার বিশ্লেষণ পাঠকের সামনে নতুন ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে। সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা তার গভীর মননচর্চার উজ্জ্বল দীপ্তিতে ভাস্বর। এই চিন্তানায়ক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে কোনো সংকটমুক্তির পূর্বশর্ত সাংস্কৃতিক জাগরণ। তিনি শুধু সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রত্যাশা করেননি, সে লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত উপায় নির্দেশ করেছেন। রুচির অবক্ষয়ের এ যুগে চিন্তাউদ্দীপক ও প্রসাদগুণসম্পন্ন প্রবন্ধ দুর্লভ হয়ে উঠেছে। শক্তিমান প্রাবন্ধিক যতীন সরকারের প্রবন্ধসম্ভার বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

লোনা মাটির ফসল 
মৃত্যুঞ্জয় রায় 
শ্রেণি: ফসল ও শাকসবজি চাষ
প্রকাশনী: অনিন্দ্য প্রকাশ, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ২৪০; মূল্য: ৬০০ টাকা 

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, এ কথা আমরা সবাই জানি। সমুদ্রের পানি বেড়ে যাওয়ায় তা উপকূলীয় অঞ্চলের নদী-খাল দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। সমুদ্রের পানি লবণাক্ত। তাই সেসব পানি ও জোয়ারের পানি এসব অঞ্চলের মাটিকে প্লাবিত করার ফলে মাটি দিন দিন অধিক লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর, কৃষি ও পরিবেশের ওপর। লোনা মাটিতে ফসল চাষ করতে হলে আগে লোনা মাটি ও লবণাক্ততার কারণ সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার। মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেন লবণাক্ততা বাড়ছে তা জানলে লবণাক্ততা কমানোর কিছু ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এই গ্রন্থে লোনা মাটি ও লবণাক্ততা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেওয়া হয়েছে, সে মাটির ব্যবস্থাপনা কী হবে, কী কী ফসল চাষ কীভাবে করা যাবে সেসব বিষয়ে আলোচনা আছে এ গ্রন্থে।...

জীব-জন্তু 
সুকুমার রায়
শ্রেণি: প্রাণী ও জীবজগৎ (বয়স ৪-৮)
প্রকাশনী: গ্রন্থিক প্রকাশন, ঢাকা
প্রকাশকাল: প্রথম প্রকাশ, ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ১০৮; মূল্য: ৩৩০ টাকা 

গরিলা থাকে আফ্রিকার জঙ্গলে। গাছের ডালপালার ছায়ায় সে জঙ্গল দিনদুপুরেও অন্ধকার হয়ে থাকে, সেখানে ভালো করে বাতাস চলে না, জীবজন্তুর সাড়াশব্দ নেই। পাখির গান হয়তো কচিৎ কখনো শোনা যায়। তারই মধ্যে গাছের ডালে বা গাছের তলায় লতাপাতার মাচা বেঁধে গরিলা ফলমূল খেয়ে দিন কাটায়। সে দেশের লোকে পারতপক্ষে সে জঙ্গলে ঢোকে না- কারণ গরিলার মেজাজের তো ঠিক নেই, সে যদি একবার ক্ষেপে দাঁড়ায়, তবে বাঘ ভালুক হাতি তার কাছে কেউই লাগে না। বড় বড় শিকারি, সিংহ বা গন্ডার ধরা যাদের ব্যবসা, তারা পর্যন্ত গরিলার নাম শুনলে এগোতে চায় না। পৃথিবীতে প্রায় সবরকম জানোয়ারকেই মানুষ ধরে খাঁচায় পুরে চিড়িয়াখানায় আটকাতে পেরেছে- কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বড় গরিলাকে মানুষ ধরতে পারেনি। মাঝে দু-একটা গরিলার ছানা ধরা পড়েছে, কিন্তু তার কোনোটাই বেশি দিন বাঁচেনি।...

সুন্দর মনের সর্বনাশে 
আদিল মাহমুদ 
শ্রেণি: কাব্যগ্রন্থ
প্রকাশনী: নালন্দা, ঢাকা
প্রকাশকাল: একুশে বইমেলা ২০২৪ 
পৃষ্ঠা: ৬৪; মূল্য: ২০০ টাকা 

এই কাব্যগ্রন্থের প্রত্যেকটি কবিতা তাসবি দানার মতো এক সুতোয় গাঁথা। কাছাকাছি সময়ে লেখা। এজন্য কবিতাগুলোর আর আলাদাভাবে নাম দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি কবি। তবে বৃষ্টি বা নদীর বয়ে যাওয়া পানির মতো একের পর এক কবিতা মিল রেখে সাজানো। এখানে আছে আপন আল্পনার আঁকা একটি কাল্পনিক প্রেমের অভ্যর্থনা, আলাপ, পরিচয়, ঘনিষ্ঠতা এবং তার শেষ পরিণতির উপাখ্যান। প্রেমের অন্তরঙ্গ রূপ এঁকেছেন তিনি নিবিড় সূক্ষ্মতায়। প্রেমানুরাগী মনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে, এমনটাই দেখতে পাবেন কবিতাগুলোর সর্বাঙ্গে।

The Garden
দ্য গার্ডেন
ক্লেয়ার বিমস
প্রকাশক: ডাবলডে, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র    
প্রকাশকাল: ৯ এপ্রিল ২০২৪  
পৃষ্ঠা: ৩০৪; মূল্য: ২২.৭৫ ডলার 

আমেরিকার তরুণ কথাসাহিত্যিক ক্লেয়ার বিমস এ মাসেই প্রকাশ করেছেন তার নতুন উপন্যাস ‘দ্য গার্ডেন’। এ উপন্যাসের কাহিনিতে বলা হয়েছে, প্রধান চরিত্র ইরিন উইলার্ডের চারবার গর্ভপাত হয়েছে। পঞ্চমবারের মতো গর্ভধারণ করার পর তার স্বামীর সঙ্গে যায় বার্কশায়ারের এক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। চিকিৎসক দম্পতি তাদের বাড়িতেই চালায় ডক্টরস হল নামের হাসপাতাল। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যায় ইরিন। এখানে আসার পর তার মনে পড়ে যায় অনেকদিন আগে ভুলে যাওয়া এক বাগানের কথা। অন্যদিকে ইরিনের জটিল অবস্থা সারানোর ব্যাপারে চিকিৎসক দম্পতির একাধিক চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ইরিন বুঝতে পারে, ওই বাগানের নিজস্ব শক্তিই তার শারীরিক অবস্থার উন্নতির পথে অন্তরায়। হাসপাতালের অন্যান্য রোগীর সঙ্গে পরামর্শ করে ইরিন সিদ্ধান্ত নেয়, তারা সবাই মিলে বাগানের অশুভ শক্তির প্রভাব তাদের ওপর থেকে দূর করে ফেলবে।

পাপেট

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
পাপেট
অলংকরণ: নিয়াজ চৌধুরী তুলি

নাতালীর বিদায়ের সময় বাবা যখন নাতালীর হাত সাইফের হাতের মধ্যে দিয়ে বলতে লাগলেন, বাবা আমাদের অতি আদরের নাতালীকে এতদিন আমরা খাইয়ে-পরিয়ে শিক্ষাদীক্ষায় বড়ো করেছি। আজ থেকে ওর ভরণ-পোষণের সব দায়িত্ব তোমার কাঁধে তুলে দিলাম। প্রাণভরে দোয়া করি তোমরা সুখী হও। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে থেকো। স্রষ্টা তোমাদের মঙ্গল করুন। বাবা খুব বেশি কথা বলতে পারলেন না। বাবা নাতালী আর সাইফের হাত ছেড়ে দিয়ে চোখের জল মুছতে লাগলেন। এই ফাঁকে নাতালী এক ঝটকায় সাইফের হাত থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিল। সাইফের মধ্যে ভাবোদয় হয়, নাতালী কী লজ্জা পেয়ে হাত সরিয়ে নিল! নাতালীর অস্থিরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে সাইফের চোখে। এত অস্থির হয়ে উঠছে কেন নাতালী? সাইফ গাড়িতে ওঠে। নাতালীর মামা একরকম জোর করেই নাতালীকে গাড়িতে সাইফের পাশে বাসিয়ে দেয়। বরের গাড়ি চলতে থাকে। নিরাপদ দূরুত্বে সরে বসে নাতালী। বর-কনের গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া অন্য কেউ নেই। সাইফ নাতালীর সান্নিধ্য পেতে চায়। কথা বলতে চায়। পেছনে বরযাত্রীদের গাড়ি। শহরের উপকণ্ঠে নাতালীদের বাড়ি। সেখান থেকে সাইফদের বাড়ির দূরত্ব পাঁচ-ছয় কিলোমিটার হবে। পাকা রাস্তা। শান্ত নিবিড় রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষাদি দাঁড়িয়ে আছে ছবির মতো। রাস্তার দুই পাশে বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ দেখা যায়। দিগন্তের কাছে নত হয়ে আছে সুনীল আকাশ। উত্তর দিকে নিঃসঙ্গ একটা রেলস্টেশন। স্টেশনের পাশে কৃঞ্চচূড়া গাছের নিচে ছোট্ট একটা বাজার। বাজারে মানুষের আনাগোনা। নাতালী কথা বলছে না দেখে নাতালীর দিকে আর না তাকিয়ে গাড়ির জনালা দিয়ে প্রকৃতির অবারিত সৌন্দর্য উপভোগ করছিল সাইফ। বেলা ডুবুডুবু করছে। গরম যেন কমছেই না। এসি ছেড়ে দিয়েছে ড্রাইভার। তারপরও ঘামছে নাতালী। ঘামছে সাইফ। নাতালীর মাথাটা ভারী হয়ে ওঠে। সাইফ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করে নাতালীর সাথে। নাতালী সেই-যে মুখ নিচু করে বসে আছে আর মুখ উপরে তুলছে না। সাইফের দিকে মিঠা নয়নে একনজর দৃষ্টি দেবে তাও দিচ্ছে না। সাইফ ভাবে, এ কেমন মেয়েরে বাবা, বিয়ের ফুল ফোটা থেকে শুরু করে স্বামীর সান্নিধ্য পাওয়া পর্যন্ত মেয়েদের মধ্যে যে এক ধরনের অবেগ-অনুভূতি কাজ করে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না! দুই বছর চাকরি করার পর বিয়ে করলাম। ত্রিশের কোঠায় বয়স। শুনেছিলাম সবুরে মেওয়া ফলে, এখন দেখছি মাকাল ফলতে শুরু করেছে। কোথাও কী ভুল হয়ে গেল! কী সব ছাইভস্ম ভাবছি!

গাড়ি চলছে। সাইফ আবারও নাতালীর গা ঘেষে বসার চেষ্টা করে। হাতটা নিজের হাতের মধ্যে টেনে নেয়। নাতালী তীর্যক নয়নে সাইফের দিকে নেত্রপাত করে। কর্কশ স্বরে বলে, হাত ছেড়ে দিয়ে সরে বসেন। আমার খুব খারাপ লাগছে। কালবিলম্ব না করে দ্রুতই হাত ছেড়ে দিয়ে সরে বসে সাইফ। সাইফ ভাবে, যে গরম পড়ছে তাতে খারাপ তো লাগতেই পারে। তারপরও ভাবনারা পিছু ছাড়ে না সাইফের। নতুন বউ বলে কথা! গলার স্বরটা একটু নিচু করেও তো বলতে পারত কথাটা। বেশ উঁচু গলায় কত সহজেই বলে ফেলল, হাত ছেড়ে দেন। ড্রাইভার কী শুনে ফেলেছে নাতালীর কথা?

সাইফের ভাবনার রেশ কাটতে না কাটতেই নাতালীকে নিয়ে বরযাত্রীরা মহা ধুমধামে নিশাপুরে সাইফদের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো। নতুন বউ দেখার জন্য গ্রামের নারী-পুরুষ উপচে পড়ে বাড়িতে। প্রাইভেটকার থেকে নামানো হলো বর-কনেকে। শরবত ও মিষ্টি খাইয়ে ছেলে ও ছেলের বউকে বরণ করে নিল সাইফের মা। এসব আয়োজন নাতালী আড়চোখে দেখে। মৃদু হাসে। উৎসুখ চোখজোড়া কী যেন খুঁজে ফেরে। ঈদের পর থেকেই প্রচণ্ড দাবদাহে অস্থির জনজীবন। নাতালীর মুখ ঘেমে বাজে একটা অবস্থা হয়েছে। মেকআপ করা মুখে কোথাও সাদা কোথাও ভেজা কাদার মতো লেপটে আছে বিউটিশিয়ানের পালিশ করা কালারফুল পাউডার। সাইফের মা শাড়ির আঁচল দিয়ে আলতো করে নাতালীর মুখের ঘাম, ভেজা পাউডার মুছে দিল। সাইফের মা-বাবা দুজনই স্কুলশিক্ষক। মা সাইফ আর নাতালীকে বুকের সঙ্গে আগলে নিয়ে একতলা বাড়ির বারান্দায় পাশাপাশি রাখা দুটো চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন নতুন বউ দেখে যাচ্ছে। এ ওর কাছে বলাবলি করছে, দেখো দেখো সাইফের বউ কি সুন্দর! ডাগর ডাগর চোখ। উঁচু নাক। গোলগাল মুখ। না মোটা না পাতলা। বাহ্ বাহ্, দুজনকে খুব মানিয়েছে!

প্রতিবেশী-স্বজনদের মুখে প্রশংসার কথা শুনে সাইফের মা কোমল কণ্ঠে বলেন, তোমরা আমার সাইফ আর বউমার জন্য দোয়া করো আল্লাহ যেন ওদের সংসারজীবন সুখে-শান্তিতে ভরিয়ে দেন। মায়ের এমন স্নিগ্ধ আবেগময় কথা শুনে সাইফের মনটা উতলা হয়। তার মনজুড়ে যেন বিষণ্ন সন্ধ্যা নামে।

ভানু সারা দিন তেজ দেখিয়ে ডুব মেরেছে। জোনাকজ্বলা রাত আসে সবুজ কলার পাতায়। বারান্দায় বসে আছে দুজন। স্ট্যান্ড ফ্যানের বাতাসও গরম। এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না সাইফের। মন ভালো নেই তার। সারা পথ নতুন বউ একটি কথাও বলেনি। কেবলই নিঝুম অস্থিরতা। বিয়ে বাড়ির ঝারবাতিগুলো জ্বলে উঠেছে। 

বাড়িতে প্রতিবেশীদের বিচরণ কমে এসেছে। সাইফের চাচাতো ভাবীরা নাতালীকে নিয়ে ঘরে যায়। বিয়ের শাড়ি পাল্টিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাতালী ভাবীদের সঙ্গে কথা বলে। সাইফও উঠে পোশাক পরিবর্তন করে হাত-মুখে পানি দেয়। সাইফের বড় চাচার বড় ছেলের বউ স্থানীয় একটি কলেজের বাংলার লেকচারার। ভীষণ মিশুক। অল্প সময়ে মানুষকে আপন করে নেয়। নাতালীর পাশে বসে সে মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে। নাতালীকে সে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে বলে, তোমার ভাগ্যটা খুব ভালো নাতালী, সাইফের মতো সৎ, স্মার্ট, ভদ্র, বিনয়ী, করিৎকর্মা বর তোমার কপালে জুটেছে। 

ভাবীর কথা শুনে নাতালী চোখ দুটো বড় বড় করে বলল, তাই! আমার তো কোনো গুণই নেই, তাহলে কেমন করে থাকব আপনার গুণধর দেবরের সঙ্গে!

কে বলেছে তোমার গুণ নেই, তোমার ঠোঁটের যে স্নিগ্ধ হাসি, সেটি দিয়েই তো তুমি সাইফের মাথা খারাপ করে দেবে। কথা বলেতে গেলে দুই গালে টোল পড়ে। এতে যে তোমাকে আরও বেশি মোহনীয় দেখায়, তা কি তুমি জানো?

এসব তো আমার জানার কথা নয়। যে আমাকে ভালোবাসবে সে জানলেই হবে।

তুমি তো সুন্দর করে কথা সাজিয়ে উত্তর করতে পার। শুনেছি তুমি মেধাবী মেয়ে।

আমার মতো বোকা মেয়ে এই ধরাধামে আর একটিও আছে বলে আমার মনে হয় না। বই পড়ে খাতায় লিখে ভালো রেজাল্ট করা এক বিষয় আর জীবনকে সাজিয়ে-গুছিয়ে চলা অন্য এক বিষয়। জীবনকে সাজাতে পারলাম না। গার্ডিয়ানের হঠকারী সিদ্ধান্তের বলী হয়ে আপনাদের বাড়িতে এলাম। কেন এলাম, কী করব, এখন কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

মধুময় শুভদিনে এমন করে হতাশার কথা বলছ কেন?

আপনাকে আমি ম্যামই বলি। ম্যাম, মানুষের জীবনে অনেক গল্প থাকে, কিন্তু আমার জীবনের গল্পটা একটু অন্যরকম।
তোমার জীবনের অন্যরকম গল্পটা শুনতে পারি-

আপনাকে বলা যাবে না ম্যাম। কষ্ট পাবেন। সাইফ সাহেবকে সব বলব।
সাইফ কষ্ট পাবে না?
জানি না ম্যাম। তারপরও তাকেই বলতে হবে। 

সাঈফের বড় ভাবী নাতালীর কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়ে। ভাবোদয় হয়, একটা সুবোধ ছেলের ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে! চোখের বর্ষায় ভিজল ভাবীর মায়াবী মুখের চারপাশ। দিন শেষে ক্লান্তির মধ্যে যে ভালোলাগাটুকু ছিল তাও মুহূর্তে উড়ে যায়। অবস্বাদে ভরে ওঠে মন। তাহলে কী সাইফের এতদিনের লালিত স্বপ্নগুলো সজনে পাতার মতো ঝরে যাবে!

বিয়ে বাড়ির হইচই থেমে গেছে। ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁইছুঁই করছে। একবুক হতাশা নিয়ে ভাবী নাতালীকে বাসর ঘরের খাটে বসিয়ে দিলেন। সাইফকে ঘরে পৌঁছে দিয়ে নিঃশব্দে বের হয়ে গেলেন।

ভাবী উঠোনে নেমে গেলে সাইফ বাসর ঘরের দরোজায় সিটকিনি লাগিয়ে খাটের দিকে এগিয়ে আসে। আবহমানকাল ধরে বাঙালি মেয়েরা খাট থেকে নেমে বরের পা ছুঁয়ে সালাম করে। নাতালী এসব করল না। সাইফ খাটের কিনারে বসতেই নাতালী নড়ে উঠল। সাইফ ভাবে, আনন্দময় দ্বিধা নিশ্চয় নাতালীর মধ্যে কাজ করছে। ঘেমে ভিজে গেছে নাতালীর শরীর। মাথায় ঘোমটা নেই। সাইফ অনেক কথা বলতে চায়। নাতালী আগের মতোই নীরব। সাইফ কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। কেউ যদি কথা না বলে তাকে তো বোঝাও মুশকিল। সাইফ বিরক্ত হয়ে বলল, কথা বলবেন না, ঠিক আছে আপনি ঘুমান আমি অন্য রুমে গিয়ে ঘুমাই। সাইফ ছিটকিনি খুলছিল। নাতালী ডাকল, দাঁড়ান-

সাইফ বলল, আমি তো সেই কখন থেকে দাঁড়িয়েই আছি।
ওই সোফাটায় বসুন।

সাইফ শান্ত ছেলের মতো একবুক আশা নিয়ে বসে। তার বুকটার মধ্যে বাকবাকুম রব ওঠে। এতক্ষণে বিবির মুখে কথা ফুটল!

নাতালী সাইফের মুখের দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, আমি আপনাকে কয়েকটি কথা বলব, শুনবেন?
অবশ্যই শুনব। বউয়ের কথা কেউ না শুনে পারে!

আমি তো আপনার বউ হইনি আর আপনি বউ বানিয়ে ফেললেন-
বরের সঙ্গে ফাজলামো করছেন, তিন শর্তে কবুল বলে বিয়ে করেছেন আর বলছেন বউ হননি। বাসর ঘরে বসে নাটক করছেন। বাসর ঘরে এসব কথা মানায়? আমার জীবনকে জীবন বলে মনে হচ্ছে না! আমি কি পাপেট?

নাতালী দেখল সাইফ রেগে যাচ্ছে। কথাগুলো এখনই বলতে হবে। কোনোরকম রাখঢাক না করে নাতালী বলল, আমি একটি ছেলেকে ভালোবাসি। তাকেই বিয়ে করব। আত্মহত্যা করব না বিধায় বাবা-মায়ের চাপে আপনার ঘরে ভুল করে চলে এলাম। ক্ষমা করবেন। আপনার অনেক ক্ষতি আমি করে ফেললাম। যার মাসুল আপনাকে অনেক দিন ধরে দেওয়া লাগবে। ক্ষমা করবেন। ওই যে আপনি বললেন, আমি তিন শর্তে কবুল বলেছি। আসলে আমি কবুল বলিনি।

রাগতস্বরে সাইফ বলল, তবে কী বলেছেন?
আবুল বলেছি আবুল। আ আস্তে বলেছি আর বুল জোরে বলেছি, তিনবারই বলেছি আবুল আবুল আবুল-
শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি আপনি আমাকে পাপেট বানিয়ে ছাড়লেন! আপনার কাছে আমি পাপেট! আমার এতদিনের স্বপ্ন-সাধ-আহ্লাদ, ভালোবাসা এক নিমেষেই ধুলিসাৎ করে দিলেন। শেষবারের মতো নাতালীর মুখের দিকে তাকিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো হাসতে হাসতে বাসর ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল সাইফ।

ভাবী এতক্ষণ না ঘুমানোর দলে ছিলেন। সাইফের পাগলা হাসির শব্দে দরোজা খুলে বাইরে বেরোতেই সাইফকে দরোজার সামনে দঁড়িয়ে হাসতে দেখেন। হতভাগা সাইফকে ভাবী কী বলে সান্ত্বনা দেবেন?
কেউ কারও সঙ্গে কথা বলতে পারল না।

পশ্চিম আকাশে কালবোশেখির ঝোড়ো মেঘ। গুড়ুম গুড়ুম শব্দ করে মেঘ ডাকছে। অবিরাম ডেকেই চলেছে।

পাখি

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:২৪ পিএম
পাখি
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

ডানা আছে বলেই উড়তে হবে নাকি 
                                       পাখি

এই যে পাতার সংসারে 
সবুজের ভেতর সুখ ডেকে ওঠে
সুরেলা সুরে,
খরকুটোর গল্পটা নীড়ের রন্ধ্রে ছড়িয়ে
সুগঠিত হয় রোদ-ছায়ার ফ্রেমে। 
হাওয়ার তালে জ্যোৎস্না দোলে
নদীর পাললিক অবয়বে। 

অফুরন্ত নীলের বিস্তৃত বুকে
যেখানে আকাশ নিজেই নোঙর ফেলে
বসতি গড়তে চেয়ে
নক্ষত্র জড়ো করে পাঁজরে,
রংধনুটা রঙের প্রতি বাঁকে
উড়াল রাখে ভিন্ন কারুকাজে। 

চোখের কোণে জমা মায়ার গোধূলি 
বিকেলের দিগন্ত থেকে কোন অংশে 
কম কী?

ডানা আছে বলেই উড়তে হবে নাকি 
                                         পাখি।

একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা
অলকরণ: নাজমুল আলম মাসুম
বিলেতি গাবের মতো মখমলে মোড়া
একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা
আমার প্রত্যাবর্তনে নিত্যদিন ফিরে আসে-
শৈশবের স্মৃতিধন্য অর্জুন ছায়ায়।
 
ওদের কণ্ঠে চঞ্চল উচ্ছ্বাস উল্লাস!
বিমূর্ত চিত্রকলার মতো সুবাসিত গান-
মায়াবতী সুরধারা যেন জলতরঙ্গের!
আমাকে নন্দিত করে ঋদ্ধ করে-
প্রেমময় খুনসুটি।
 
কার্পেটের মতো বোনা সবুক উঠোনে
পাখিগণ খুঁটে খায় নিজস্ব আহার
দিনান্তে নাচের মুদ্রা পায়ে উড়ে যায়
মেহগনি বুনো অন্ধকারে…
 
ওরা কোথা থেকে আসে, ফের 
কোথা চলে যায়-
একগুচ্ছ খয়েরি খঞ্জনা?

আজি হতে সহস্র বর্ষ পরে

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৭ পিএম
আজি হতে সহস্র বর্ষ পরে
অলংকরণ: নাজমুল আলম মাসুম

কবিসভা পথ হারাইয়াছে। সহস্র বছর ধরিয়া তাহারা পথ খুঁজিতেছে। ইতিমধ্যে কাফেলা দীর্ঘ হইতে দীর্ঘতর হইয়াছে। বড় অস্থির, তাই তাহাদের কণ্ঠের পারদ ক্রমাগত বাড়িয়া চলিয়াছে।

কত বিচিত্র সব কবি! একজন বলিলেন, আমি সম্মুখে এক মহাপর্বতের অস্তিত্ব অনুভব করিতেছি- যাহা আকাশ ভেদ করিয়া নীরবে দণ্ডায়মান। অন্যজন (যিনি নিরন্তর নিজেকে দেখিয়া এবং নিজ কণ্ঠসুধা পান করিয়া তাহাতে সমাধিস্থ হইয়া থাকেন) বলিলেন- জনাব, আপনার চোখের সমস্যা রহিয়াছে। যাহা দেখিতেছেন তাহা টিলারও যোগ্য নহে!

‘আমরা তো চতুর্দিকে কেবল অভ্রভেদী পর্বতই দেখিতেছি! স্নিগ্ধ, মৌন।’ -হাহাকার করিয়া উঠিলেন বিপন্ন কবিসভা। ‘তবে কি আমরা পথ হারাইয়াছি?’ সমাধিস্থ কবি গর্জন করিয়া উঠিলেন, যতসব মূর্খের দল! আমাকে অনুসরণ করুন। আমিই পৃথিবীর সর্বশেষ কবি ও পণ্ডিত! 

পর্বত হাসে। দিবসের প্রথম আলো তাঁহাকে সশ্রদ্ধ প্রণতি জানায়। টাইগার হিলের কনকনে ঠান্ডায় জমে যেতে যেতে অলৌকিক সেই আলোর আরতি দেখেন সহস্র বর্ষ পরের কোনো এক কবি।