![হার্ট অ্যাটাক: অ্যানজিওগ্রাম যখন করাতে হবে](uploads/2024/03/07/1709790253.nire-jabe32.jpg)
হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ইসিজিসহ অন্যান্য পরীক্ষা করে হয়তো দেখা যায়, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। মানে হলো, হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচলের সবচেয়ে বড় ধমনিটি বন্ধ হয়ে গেছে। তখন এর সবচেয়ে কার্যকর চিকিৎসা হলো জরুরি ভিত্তিতে অ্যানজিওগ্রাম করে ব্লক অপসারণ করে স্ট্যান্ট বসিয়ে দেওয়া, যাতে হার্টের স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ পুনঃস্থাপিত হতে পারে।
কিছু ভুল ধারণা
বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সঙ্গে অ্যানজিওগ্রাম করার দরকার নেই। প্রাথমিক অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরে হয়তো অ্যানজিওগ্রাম করা যাবে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ একটি ভুল এবং আত্মঘাতী ধারণা। যদি কারও অ্যাপেনডিক্স পেটের মধ্যে ফেটে যায় তখন কি অপারেশন জরুরি নয়? হার্ট অ্যাটাকেও রক্তনালির চর্বির দলা ফেটে গিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে ধমনি বন্ধ হয়ে যায়। তাই এটি আরও মারাত্মক এবং প্রাণ বিনাশকারী।
হার্ট অ্যাটাকের ধরন
ইসিজির ধরন অনুযায়ী হার্ট অ্যাটাককে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
স্টেমি হার্ট অ্যাটাক: সাধারণত হার্টের একটি বড় রক্তনালি রক্ত জমাট বেঁধে বা রক্তের দলা দিয়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। রোগীর শরীর তখন দ্রুত খারাপ হতে থাকে। ওই সময় অতি দ্রুত বন্ধ হয়ে যাওয়া রক্তনালি খুলে না দিলে হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি স্থায়ীভাবে ধ্বংস হয়। হার্ট ফেইলিওর, কার্ডিয়াক অ্যারেস্টসহ বিভিন্ন মারাত্মক জটিলতায় পড়তে হয়।
নন-স্টেমি হার্ট অ্যাটাক: হার্টের কোনো না কোনো রক্তনালি সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ হয়ে মাংসপেশির ক্ষতিসাধন করে। এক্ষেত্রে সাধারণত এক বা একাধিক ব্লক থাকে এবং প্রায়শই কিছু না কিছু ন্যাচারাল বাইপাস তৈরি হয়ে থাকে। প্রথমোক্ত ধরন থেকে এই ধরনটি কিছুটা কম ভয়ংকর। চিকিৎসার ধরনও দুই রকম।
চিকিৎসা
স্টেমি হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনি যত দ্রুত সম্ভব খুলে দিতে হবে। রক্ত জমাট হয়ে বন্ধ হওয়া রক্তনালি খোলার বা সচল করার সবচেয়ে আধুনিক এবং কার্যকর উপায় হলো জরুরি ভিত্তিতে অ্যানজিওগ্রাম করে ব্লকের লোকেশন নির্ণয় করে ব্লক অপসারণ করা। ব্লক অপসারণ করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ধাতব জালের একটি সরু পাইপ বা স্ট্যান্ট, প্রচলিত ভাষায় যাকে রিং বলে, তা ধমনিগাত্রে অ্যানজিওগ্রাম করার সঙ্গে সঙ্গে বসিয়ে দেওয়া। এটাকে জরুরি বা প্রাইমারি অ্যানজিওপ্লাস্টিও বলা হয়। এর সাফল্য প্রায় ৯৫ ভাগ। এই পদ্ধতির চিকিৎসায় হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি রক্ষা হয়, হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বজায় থাকে। দূরবর্তী হার্ট ফেইলিওর থেকে রোগী রক্ষা পায়।
কিছু কার্যকর ওষুধ
জরুরি অ্যানজিওগ্রাম করার সঙ্গে সঙ্গে জরুরি অ্যানজিওপ্লাস্টি করার সুবিধা ঢাকার বাইরে অল্প কিছু হাসপাতালে আছে। তাই যেসব জায়গায় এই সুবিধা নেই অথবা সেসব কেন্দ্র থেকে রোগীর দূরত্ব দুই ঘণ্টার বেশি, সেক্ষেত্রে ওষুধ দিয়ে ব্লক খুলে দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে Tenectiplase সবচেয়ে কার্যকর ওষুধ যার সাফল্য ৮০ ভাগের ওপরে। তবে দাম বেশি হওয়ায় দরিদ্র জনগণের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। এর বিকল্প হলো Streptokinase, যা মফস্বল শহরেও এখন পাওয়া যায়। এই ওষুধের সাফল্যের হার ৬৫ ভাগের কাছাকাছি।
তবে অ্যানজিওগ্রাম করাতে হবে
Tenectiplase বা Streptokinase যা-ই ব্যবহার করা হোক না কেন, এগুলো পুশ করার ২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাছের হাসপাতালে গিয়ে অ্যানজিওগ্রাম করতে হবে। যদি ব্লকের উপস্থিতি ধরা পড়ে, তবে সঙ্গে সঙ্গে তা অপসারণ করে রিং প্রতিস্থাপন করতে হবে। নন-স্টেমি হার্ট অ্যাটাক তুলনামূলক কম ভয়াবহ। তবে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পুনরায় অ্যাটাক হতে পারে। তখন হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশির ক্ষতি বা হৃৎপিণ্ডের তাল কেটে ছন্দপতন বা এরিথমিয়া সৃষ্টি করতে পারে। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টসহ হঠাৎ মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
তাই এ ধরনের অ্যাটাকের ক্ষেত্রেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যানজিওগ্রাম করে ব্লকের লোকেশন, মাত্রা এবং ব্যাপ্তি নির্ণয় করে পরবর্তী চিকিৎসার ধাপ প্রয়োগ করতে হবে।
অ্যানজিওগ্রাম করার প্রস্তুতি
অ্যানজিওগ্রাম করার আগের মাঝ রাতের পর কোনো কিছু খাওয়া যাবে না। এমনকি পানিও না। ডায়াবেটিস থাকলে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে যে, অ্যানজিওগ্রামের আগে ইনসুলিন নেওয়া যাবে কি না। যদি অ্যালার্জি থাকে, তাহলে সে কথাও ডাক্তারকে জানাতে হবে। আগে কখনো ইন্ট্রাভেনাস কনট্রাস্ট মিডিয়াম (কিডনির এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানে ব্যবহার করা ডাই)-এর জন্য কোনো সমস্যা হয়ে থাকলে সেটা ডাক্তারকে অবশ্যই বলতে হবে।
হাতে বা কুঁচকিতে বড় আর্টারি ব্যবহার করে সাধারণত এই প্রসিডিওর করা হয় বলে রোগীর ওই জায়গার লোম কামিয়ে নেওয়ার কথা বলা হতে পারে। উদ্বেগ কাটানোর জন্য রোগীকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হতে পারে। অ্যাঞ্জিওগ্রাম করার আগে ডাক্তার শরীর পরীক্ষা করে দেখবেন এবং রোগীর ভাইটাল সাইন- যেমন রক্তচাপ, নাড়ি পরীক্ষা করবেন। সবশেষে রোগীকে মূত্রত্যাগ করে এসে হাসপাতালের গাউন পরে নিতে হবে। কনট্যাক্ট লেন্স, চশমা, গয়না ও চুলের পিন খুলে রাখতে হতে পারে। সূত্র: অ্যাপোলো হসপিটালস
সিসিইউ ইনচার্জ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল
অনুলিখন: হৃদয় জাহান
কলি