![রমজানে যা খাবেন, যা খাবেন না](uploads/2024/03/14/1710394007.a7.jpg)
সময়ের আবর্তে আবারও এসে গেল পবিত্রতম মাস রমজান। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলিম প্রতি বছরের মতো এবারও রমজান পালন করছেন। এ সময়ে খাবারের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয়। বিবিসি অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
সাহরির খাবার
পুষ্টিবিদদের মতে রমজান মাসে দিনভর যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে, তা পূরণে সাহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ এবং যথেষ্ট পানি পান করতে হবে। এ সময় মূলত পুষ্টিকর কিন্তু খুব বেশি ভারী নয়, আবার পেট ভরবে এমন খাবারে গুরুত্ব দিতে হয়। যেমন- দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, শসা-টমেটোর সালাদ, ফলমূল, স্যুপ, অলিভ অয়েল অথবা কম তেলে রান্না করা সবজি খেতে পারলে ভালো।
এ ছাড়া মাছ, মাংস এবং সবজির পাশাপাশি ‘দই-চিড়া’র মতো খাবারও উপযুক্ত। দেহের পানির চাহিদা পূরণে ইফতারের সময় থেকে সাহরি পর্যন্ত অন্তত দুই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়ার পরামর্শ কমবেশি সবাই দেন।
পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলামের মতে, সাহরিতে জটিল ধরনের শর্করা খাবার খাওয়া ভালো, বিশেষত হোলগ্রেইন বা পূর্ণাঙ্গ শস্য। কারণ এসব খাবার ধীরে ধীরে শরীরে শক্তি সঞ্চার করে, যা সারা দিনের জন্য উপকারী। এক্ষেত্রে আরেকটি বিবেচনার বিষয় হলো, যেসব খাবারে ফাইবার বা আঁশ বেশি থাকে সেগুলো খাওয়া ভালো। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, মটরশুঁটি, শিম বা ছোলার মতো খাবার ভরপেট খাবার খাওয়ার মতো অনুভূতি ৩০ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দেয়।
আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে আরও রয়েছে ডাল জাতীয় শস্য, খোসাসহ রান্না করা আলু, শেকড় জাতীয় সবজি, বাদাম, তেলবীজ জাতীয় খাদ্য এবং ফলমূল। হোলগ্রেইন আটার রুটি ছাড়াও বাদামি চালেও আঁশ থাকে।
তবে লবণাক্ত খাবারের বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করেন পুষ্টিবিদ বেনেলাম। তিনি বলেন, লবণযুক্ত খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয় এবং যেখানে সারা দিন পানি পান করা যাবে না সে অবস্থায় তৃষ্ণার্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নিশ্চয়ই কেউ চাইবেন না। সাহরিতে ক্যাফেইন আছে তেমন পানীয় পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতারের খাবার
রোজা ভাঙার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট পরিমাণে তরল খাবারের পাশাপাশি শরীরে শক্তি পেতে এমন খাবার গুরুত্বপূর্ণ। যেমন খেজুর। শক্তি সঞ্চয় এবং দেহে পানির ঘাটতি পূরণে খেজুর এবং পানি রোজা ভাঙার খুবই উৎকৃষ্ট উপায়। এ ছাড়া ডাল, শিম বা মটরশুঁটির মতো বীজ, সবজি দিয়ে তৈরি করা স্যুপও উৎকৃষ্ট।
সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে খুব ভারী খাবার খেলে তা রোজাদারকে ক্লান্ত, অলস ও অসুস্থ বোধ করাতে পারে। দেশ ও সংস্কৃতি ভেদে ইফতারের খাবারের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন- বাংলাদেশে ভাজাপোড়া খাবার বেশ প্রচলিত, যা সাধারণত খুব একটা স্বাস্থ্যকর হয় না, বিশেষত তেলটা যদি ভালো না হয়। স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে দেবেন এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া কঠিন।
তাই তেমন খাবার পুরোপুরি বাদ না দিলেও পরিমিতি বজায় রেখে খাওয়ার কথা বলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। তবে ইফতারের খাবার ভারসাম্যপূর্ণ হওয়াটা প্রয়োজন। যেমন- স্টার্চসমৃদ্ধ বা শর্করাজাতীয় খাবার, আঁশসমৃদ্ধ সবজি-ফলমূল, দুগ্ধজাত খাবার, প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ-মাংস বা ডিমের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবার ভারসাম্য রেখে খাওয়া উচিত। মিষ্টি বা মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত, কারণ এতে করে ওজন বেড়ে যেতে পারে। কিছু পুষ্টিবিদ একবারে বেশি খাওয়ার পরিবর্তে ইফতারের খাবারকে দুটি ভাগে ভাগ করার পরামর্শ দেন, কারণ তা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বদহজমের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।
যুক্তরাজ্যের পুষ্টিবিদ এবং ডায়েটিশিয়ান নাজিমা কুরেশির মতে ইফতারিতে সপ্তাহে এক দিন বেশি খাওয়া হয়ে গেলে তেমন সমস্যা নেই, কিন্তু সেটা যেন প্রতিদিন না হয়।
তার মতে, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনি অনুভব করবেন যে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল বোধ করছেন এবং পরের দিনের রোজার জন্য উৎসাহ পাচ্ছেন না।
সেক্ষেত্রে তার পরামর্শ, পানি দিয়ে ইফতার শুরু করে খেজুর ও কিছু ফল খেয়ে প্রার্থনা শেষ করে নেওয়া। এরপর বাকি খাওয়া-দাওয়া করা। যে খাবারই হোক না কেন, সেখানে যেন প্রোটিন, শর্করা জাতীয় খাবার ও সবজি থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
জাহ্নবী