![মৌমাছির অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল মধু](uploads/2024/02/09/1707463673.c.jpg)
মৌমাছি কেবল একটি পতঙ্গই নয়, প্রকৃতির এক অমূল্য দান। মধু তৈরির জন্য মৌমাছিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। মৌমাছি ফুল খোঁজা থেকে মধু সংগ্রহ পর্যন্ত অনেক কাজ করে থাকে। অনেক মৌমাছি মিলে এক চামচ মধু তৈরি করে। ফুলের রস থেকে মধু বানানোর সময় নির্ভর করে ফুলের রসে পানির পরিমাণ, মৌচাকে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার পরিমাণ, মৌচাকে কর্মী মৌমাছির সংখ্যা এবং ফুলের রসের সরবরাহের ওপর। গড়পড়তা একটি কর্মী মৌমাছি তার সারা জীবনে এক চা চামচের ১২ ভাগের ১ ভাগ মধু সংগ্রহ করে।
বিশেষ ধরনের ফুলের সন্ধান
মৌমাছি সব ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে না। মধুর জন্য তারা নির্দিষ্ট কিছু ফুলের রস সংগ্রহ করে। তারা খুব যত্ন নিয়ে সেসব ফুলের সন্ধান করে, যেটা থেকে তারা মধু সংগ্রহ করতে পারে। মৌচাকের মৌমাছিরা মধু সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে যায়। কিছু মৌমাছি পরাগ সংগ্রহ করে, আবার কেউ রস সংগ্রহ করে। আরেক দল মৌমাছি পানি সংগ্রহ করে।
মৌমাছিরা নিজেদের খাদ্য হিসেবে ফুলের মধুগ্রন্থি থেকে সংগ্রহ করে এক প্রকার মিষ্টি তরল পদার্থ। যাকে বলা হয় নেক্টার বা মধুরস। মৌচাকের দেড় দুই কিলোমিটারের কাছাকাছি ফুল না পেলে এই রস সংগ্রহের জন্য মৌমাছি ৭ থেকে ৯ কিলোমিটারেরও বেশি দূরে যেতে পারে।
কর্মী মৌমাছি ফুলের কাছে গিয়ে হুল দিয়ে রস শোষণ করে। যখন একটি মৌমাছি ফুলের রস সংগ্রহ করে, তখন সেই রস তার পেটে জমা হয়। তাদের পেটে ‘হানি স্টমাক’ নামে একটি থলি থাকে। যেখানে তারা ফুলের রস জমা রাখে। এই হানি স্টমাক মৌমাছির পেটের ভেতর থাকে, যা অন্য সব অংশ থেকে আলাদা। এর ধারণক্ষমতা প্রায় ৭০ মিলিগ্রাম।
পাকস্থলী পূর্ণ হলে এর ওজন প্রায় মৌমাছিটির সমান হয়। এই পাকস্থলী পূর্ণ করতে মৌমাছিকে ১০০ থেকে ১৫০০ ফুল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে হয়। আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে এই রসে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পানি থাকে। আর মিষ্টি অংশ পুরোটাই চিনি বা সুক্রোজ।
দুই ধরনের রস সংগ্রহ
মৌমাছি ফুল থেকে দুই ধরনের রস সংগ্রহ করে। প্রথমটি হলো অমৃত, যা ফুলের মধ্যভাগ থেকে সংগ্রহ করা হয়। দ্বিতীয়টি হলো পরাগ, যাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। মৌচাকে ফেরার পথেই, পেটে এনজাইমের সহায়তায় মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ সুক্রোজ-ফ্রুক্টোজ ও গ্লুকোজে রূপান্তরিত হতে থাকে।
মৌচাকে ফিরে পেটের রস প্রথমে ৪ থেকে ৫টি কর্মী মৌমাছির মুখে দিয়ে দেয়। তারা প্রত্যেকে আবার সেগুলো ৮ থেকে ১০টি করে অল্পবয়স্ক মৌমাছির মাঝে বণ্টন করে। এবার সবাই মিলে আধা ঘণ্টা ধরে সেই রস চিবুতে থাকে। এই ধাপ শেষে তা মৌচাকের প্রকোষ্ঠে ঢালতে থাকে।
সেখানেই চলে মধু তৈরি হওয়ার শেষ কাজটা। প্রকোষ্ঠগুলো সব ভরে গেলে এর আর্দ্রতা ১৪ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসতে হয়। তাই কর্মী মৌমাছিরা রাতদিন ডানা ঝাপটিয়ে বাতাস করতে থাকে। বজায় রাখে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা।
মৌ-রসের পানি বাষ্প হয়ে উড়ে যেতে থাকে। তখন এনজাইমের ক্রিয়ায় সুক্রোজের পরিমাণ ৫ শতাংশে পৌঁছে। তারপরও একটি দল আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডানা ঝাপটাতেই থাকে।
এর পর তারা মৌচাকের ওপর মোম তৈরি করে। যেন মৌচাক থেকে রস বের না হয়। মৌমাছিদের এই কায়িক পরিশ্রমের ফল মধু। মধু সংগ্রহে মৌমাছিদের অক্লান্ত পরিশ্রম ভাবলেই মুগ্ধ হই।
এ.জে/ জাহ্নবী