![অদ্ভুত রহস্যঘেরা মায়াস্বর](uploads/2024/02/09/1707463812.a1.jpg)
মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম এমন এক ধরনের কলা, যেখানে একজন ব্যক্তি তার কণ্ঠকে এমনভাবে ব্যবহার করে, মনে হয় যে শব্দটি অন্য কোনো উৎস থেকে আসছে। সাধারণত একটি পুতুলের মুখ থেকে শব্দ আসছে বলে মনে হয়। এই কলার মাধ্যমে মায়াস্বরী বা ভেন্ট্রিলোকুইস্ট এবং পুতুলের মাঝে মজাদার কথোপকথন হয়।
বিভিন্ন ধর্মে এই ভেন্ট্রিলোকুইজমের ব্যবহার দেখা যায়। মূলত প্ল্যানচেটে মৃত আত্মা হাজিরের কাজে ভেন্ট্রিলোকুইজম সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। ধীরে ধীরে বিদ্যাটি সবার কাছে জাদুবিদ্যা হিসেবে ধরা দেয়। এর পর থেকেই মূলত মঞ্চে মায়াস্বরের ব্যবহার শুরু হয়। চীনও এর জন্য খুব প্রসিদ্ধ ছিল। এখানে ‘কৌজি’ নামে এটি পরিচিত ছিল। মায়াস্বরের বিস্তার ও অগ্রগতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটেছে। ইউরোপে মায়াস্বর মূলত বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য ব্যবহার হয়েছে।
বিভিন্ন নথিপত্রে ১৭৫৩ সালে ইংল্যান্ডে ভেন্ট্রিলোকুইজম সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়। আধুনিক ভেন্ট্রিলোকুইজমের জনক হিসেবে ফ্রেড রাসেলকে মনে করা হয়। যিনি ১৮৮৬ সালে লন্ডনে পুতুলের সঙ্গে কথপোকথনের মাধ্যমে ভেন্ট্রিলোকুইজমের মঞ্চায়ন শুরু করেন।
এডগার বার্গেন তার প্রিয় পুতুল চার্লি ম্যাকার্থির সঙ্গে ১৯৩০-এর দশকে হাস্যরসাত্মক ভেন্ট্রিলোকুইজমের নতুন রূপ জনপ্রিয় করে তোলেন। জেফ ডানহাম ও শ্যারি লুইসসহ অনেক বিখ্যাত বিনোদন ব্যক্তিত্ব বর্তমানে ভেন্ট্রিলোকুইজমের সাথে যুক্ত রয়েছেন।
এই কলাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত হয়। ফ্রান্সে একে লা ভেন্ট্রিলোকুইজম, ইংল্যান্ডে ডামি অ্যাক্ট বলা হয়। এটি আমেরিকায় খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আমেরিকার মায়াস্বরীরা মানুষ, পশুপাখি, ফল, সবজি, বক্সসহ বিভিন্ন ধরনের পুতুল ব্যবহার করেন। এই পুতুলগুলো মায়াস্বরীর হাতে বা কোলে বসে থাকা ছাড়াও মায়াস্বরীর পাশে বা দূরে থাকে। এই কলার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন ও দর্শকদের বিনোদন দেন।
মায়াস্বরীর কলাকৌশল দক্ষতা ও অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। এই কলার জন্য মায়াস্বরীরা কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। তাদের কণ্ঠস্বর এমনভাবে পরিবর্তন করেন, যেন মনে হয় শব্দটি তাদের কণ্ঠ থেকে নয়, বরং পুতুলের কণ্ঠ থেকে আসছে। কণ্ঠস্বর পরিবর্তনের জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠস্বর ব্যবহার করেন। তাদের মুখের নড়া-চড়া কমানোর জন্য বিশেষ ধরনের দাঁত ব্যবহার করেন। তবে সমবসময় নয়। তাদের পুতুলের মুখ নাড়ানোর সমন্বয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পুতুল ব্যবহার করেন। মায়াস্বরীরা তাদের পুতুলের সঙ্গে কথোপকথন করার জন্য বিভিন্ন বিষয় ও চরিত্র নির্বাচন করেন। তাদের শব্দের উচ্চারণ সঠিক করার জন্য বিশেষ ধরনের শব্দ ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে নাসিক্য ধ্বনি ব্যবহার করা, উপসর্গ বা প্রত্যয়যোগে বেশি শব্দের ব্যবহার করা হয়।
মায়াস্বর বা ভেন্ট্রিলোকুইজম একটি অদ্ভুত ও মজার হলেও এর সম্পর্কে অনেকের কাছে কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। কিছু লোক মনে করেন মায়াস্বরীরা তাদের পেট থেকে কথা বলেন। কিন্তু এটি সত্য নয়। তাদের কণ্ঠ দিয়েই কথা বলেন। শুধু তাদের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে শব্দটি অন্য কোনো উৎস থেকে আসছে বলে মনে হয়।
জাহ্নবী