সদ্য সম্পন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারি, হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনায় করা মামলায় বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলকে রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী কাজলের বিরুদ্ধে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
রবিবার (১০ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত এই আদেশ দেন। এই মামলায় পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য সাত দিনের রিমান্ড নিতে আবেদন করে।
আদালতে শাহবাগ থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা ও পুলিশের উপপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন ফকির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সিআইডি ব্যারিস্টার কাজলকে আটক করে শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পল্টনে অবস্থিত নিজ চেম্বার থেকে গত শনিবার কাজলকে আটক করা হয়।’
এর আগে গত শুক্রবার রাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে মারামারি, হট্টগোল ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়। সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুর রহমান চৌধুরী সাইফ বাদী হয়ে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেন। এতে স্বতন্ত্র ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত সম্পাদক প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথী এবং আরেক সম্পাদক প্রার্থী কাজলসহ ২০ জনকে আসামি করা হয়।
সরকারি দল আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথী এবং ব্যারিস্টার কাজল ছাড়া এই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন মো. জাকির হোসেন ওরফে মাসুদ, শাকিলা রৌশন, কাজী বশির আহম্মেদ, উসমান, আরিফ, সুমন, তুষার, রবিউল, চৌধুরী মৌসুমী ফাতেমা কবিতা, সাইদুর রহমান জুয়েল, অলিউর, যুবলীগ নেতা জয়দেব নন্দী, মাইন উদ্দিন রানা, মশিউর রহমান সুমন, কামাল হোসেন, আসলাম রাইয়ান, তরিকুল ও সোহাগ। এ ছাড়া মামলায় আরও ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলায় সাইফুর রহমান চৌধুরী অভিযোগ করেন, আসামিরা ১ নং আসামির (যুথী) নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ৩ নং আসামি ১, ২ ও ৪ নং আসামির পরামর্শক্রমে সু-কৌশলে ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচতলার শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তন রুমের দরজা খুলে দিলে অস্ত্র হাতে জোরপূর্বক বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে অকথ্য ভাষায় আমাকেসহ নির্বাচন সাব-কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন। ৫ ও ৭ নং আসামিদ্বয়ের হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার মাঝ বরাবর আঘাত করলে আমি বাধা দিতে গেলে আমার বাম পাশের কানের ওপরে মাথার অংশে সজোরে আঘাত করলে আমি মারাত্মকভাবে জখম হই। অন্য আসামিরা কাঠের লাঠি, কাঠের ও প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে অতর্কিতভাবে এলোপাতাড়ি মারপিট করে ও পা দিয়ে আঘাত করে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে এবং আমার পরিহিত কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। ওই আসামিরা আমার সঙ্গীয় ব্যারিস্টার জাকারিয়া হাবিবকে মারপিট করে আহত করেন।
একপর্যায়ে সব আসামিসহ ১ নং আসামি নিজে অস্ত্রের মুখে নির্বাচন সাব-কমিটির প্রধান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করার জন্য বাধ্য করেন। নির্বাচন সাব-কমিটির সব সদস্য জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসিটিভি ফুটেজে ঘটনার বিষয়ে সব ধারণ করা আছে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ওই ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ভোট গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার কাজ আসামিরা সম্পন্ন হতে না দিয়ে ১ নং আসামিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করার অবৈধ দাবিতে তার নেতৃত্বে উপরোক্ত ঘটনা ঘটান।