তিন মাস আগে বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখার অভিযোগে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। সে মামলার রায়ে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রবিবার (৫ মে) চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল আজিজ ভূঁইয়া এ আদেশ দেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, আসলাম চৌধুরী কুমিল্লা কারাগারে ছিলেন। দুদকের মামলার শুনানির জন্য আজ তাকে কুমিল্লা কারাগার থেকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিতে আসলাম চৌধুরীর পক্ষে আইনজীবী তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন। আদালত সেটা নাকচ করে দেন। এরপর আইনজীবী আসলাম চৌধুরীর জামিনের আবেদন করেন। আদালত সেটাও নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
জানা গেছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখার অভিযোগে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৭ (১) ধারায় আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। গত ২৮ এপ্রিল আসলাম চৌধুরীকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন দুদকের এই তদন্ত কর্মকর্তা।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, দুদক অনুসন্ধানে তথ্য পেয়েছে, আসলাম চৌধুরী ২০০১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি, সলিমপুর, সোনাইছড়ি, মসজিদ্দা, ভাটেরখীল, টেরিয়াইল, গুলিয়াখালীসহ বিভিন্ন এলাকা এবং চট্টগ্রাম নগরের কাটগড়, মুরাদপুর ও বোয়ালিয়া মৌজায় সবমিলিয়ে ১৪৬টি সাফ কবলার মাধ্যমে মোট ১৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯১ হাজার ১৮৫ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এ ছাড়া ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যবসায় ও অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যাংক-বিমা প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ, আসবাবপত্র ও স্বর্ণালঙ্কার মিলিয়ে ৩৬২ কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন।
১৯৯৭-৯৮ সাল থেকে ২০২২-২৩ সাল পর্যন্ত তিনি আয়কর নথিতে ২৭ কোটি ৫০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩১ টাকা আয় দেখিয়েছেন। পারিবারিকসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় দেখিয়েছেন ৮ কোটি ২০ লাখ ৫৫ হাজার ৯১ টাকা। ফলে তার প্রদর্শিত সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৯ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৭৪০ টাকা। কিন্তু তিনি ঘোষিত সঞ্চয়ের মধ্যে এক কোটি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪০ টাকার আয়ের সপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ দুদককে দেখাতে পারেননি। এর ফলে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা।
আসলাম চৌধুরীর নিট সম্পদ ৩৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৭ হাজার ৬১৬ টাকা। এর বিপরীতে গ্রহণযোগ্য আয় ১৮ কোটি ২৭ লাখ ৮৫ হাজার ২০০ টাকা। সে হিসাব করলে আসলাম চৌধুরীর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকা। ২০০১ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুনের এ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেপ্তার হন। দুর্নীতি, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে আট বছর ধরে কারাবন্দি আছেন তিনি।
ইফতেখারুল/জোবাইদা/অমিয়/