দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ জনজীবনে শুধু অস্বস্তিই তৈরি করছে না, প্রাণঘাতীও হয়ে উঠেছে। এমন অসহনীয় গরমে একটু স্বস্তি পেতে রাজধানীর মধ্যবিত্ত এবং সচ্ছল মানুষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (এসি) কিনতে বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছেন। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক দিনে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে এসি বিক্রি। তবে ক্রেতারা বলছেন, মওকা পেয়ে ব্যবসায়ীরা এসির দাম বেশি রাখছেন।
রাজধানীর বাংলামোটরের সিঙ্গার মেগা শো-রুমে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে এসি কিনতে এসছেন খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, দেশে গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা যেমন বাড়ছে তাতে এসি বিলাসদ্রব্য নয় বরং প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে। তাই এসি কিনতে এসেছি।
বাসায় বাচ্চাদের গরম থেকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য এসি কিনতে এসেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এবারের গরম অসহ্য। বাসায় শিশু ও বয়স্করা কষ্ট পাচ্ছেন। তাই এসি কিনতে এসেছি। তবে এসির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।’
খালেকুজ্জামান এবং রফিকুলের মতো তীব্র গরম থেকে একটু স্বস্তি পেতে অনেকেই ভিড় জমাচ্ছেন এসির শো রুমগুলোতে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হয়। এবার বাসাবাড়ির জন্য সাড়ে ৬ লাখ এসি বিক্রি হতে পারে। বাসাবাড়িতে এক থেকে দুই টন এসির চাহিদা বেশি। তবে এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে দেড় টন ক্ষমতার বিদ্যুৎসাশ্রয়ী প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি।
বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রোমার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র্যাংগ্স, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, রোজার ঈদের পর থেকে সারা দেশে এসি বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিক্রি বেশি বেড়েছে। রাজধানী ঢাকায় এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এসির চাহিদা বেড়েছে।
রাজধানীর বাংলামোটর, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, মতিঝিল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। তবে দেশীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতে এসি ক্রেতার সংখ্যা বেশি।
বাংলামোটরে সিঙ্গার মেগা শোরুমের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আসলাম হোসাইন বলেন, আগের তুলনায় এসির চাহিদা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ কম। গরমের তীব্রতায় মানুষ ধারকর্জ করে হলেও এসি কিনছে শান্তিতে থাকার জন্য।
এসির দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চাহিদা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ-সংকটের কারণে গত বছরের তুলনায় এসির দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে।
দেশের বাজারে প্রতিবছর ৭ হাজার কোটি টাকার এসি বিক্রি হয়। প্রতিবছর শতকরা ১৫-২০ ভাগ হারে বাজার সম্প্রসারণ হচ্ছে। অর্থাৎ গড়ে শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি ধরলেও প্রতিবছর নতুন চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে ৭৫-৮০ হাজার ইউনিট। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, তারা চেষ্টা করছেন দামটা কমিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য আরও সহজলভ্য করতে।