শহিদজননী জাহানারা ইমাম যদি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন না করতেন, তা হলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সমমনা কট্টরপন্থি দলগুলো এখনকার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী থাকত বলে মন্তব্য করেছেন তরুণ ব্লগার, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও রাজনীতিবিদরা।
শুক্রবার (৩ মে) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাহানারা ইমামের আন্দোলনে তরুণদের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এই মন্তব্য করেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে শহিদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। জাহানারা ইমামের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার শুরু হয়।
শুক্রবার দিনের অনুষ্ঠানসূচি শুরু হয় সকাল ৮টায় মিরপুরে শহিদজননী জাহানারা ইমামের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে। পরে বিকেলের আলোচনা সভায় ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র কেন্দ্রীয় আইটি সেলের সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তপন পালিতের সভাপতিত্বে এবং অনলাইন বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’-এর সহকারী সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী সুশীল মালাকারের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ব্লগার লেখক মারুফ রসূল।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আইটি সেলের সভাপতি শহিদসন্তান আসিফ মুনীর, নির্মূল কমিটির আইন সহায়ক কমিটির সদস্য ড. খন্দকার তানজির মান্নান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাত জাহান, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট শামস রাশীদ জয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আশেক মাহমুদ সোহান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ছাত্র ও জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তী।
চলচ্চিত্র নির্মাতা ইসমাত জাহান বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার পরও একাত্তরের ঘাতকরা কিন্তু থেমে নেই, তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে। কারণ তারা সংগঠিত। তাদের অর্থের অভাব নেই। সদস্যেরও অভাব নেই। দেশের সরকারি বেসরকারিসহ প্রায় ক্ষেত্রেই তাদের সদস্যদের ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং নীরবে বিভিন্নভাবে মানুষের চিন্তাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে তারা। তাদের কারণে মানুষ অনেক বেশি অপরাধপ্রবণ, অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। তাই নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা, তোমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস কর, তবে তোমাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’
মূল প্রবন্ধে ব্লগার লেখক মারুফ রসূল বলেন, ‘শহিদজননী জাহানারা ইমাম মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে চিনতে শিখিয়েছিলেন আতশকাচ দিয়ে। একটি অসাম্প্রদায়িক ও বিজ্ঞানমনস্ক রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য জনমানসিকতায় যে সংবেদনশীলতা প্রয়োজন জাহানারা ইমাম তা শনাক্ত করেছিলেন।’