![সুদানের জনগণের দুর্দশা উপেক্ষা করা উচিত নয়](uploads/2024/02/28/1709095585.D.-Mojid.jpg)
সুদানের সংঘাত প্রায় ১০ মাস হতে চলল, যা ভয়ানক মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে। দেশের অভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশী দেশের লাখ লাখ মানুষের ওপর গভীর দুর্ভোগ বয়ে নিয়ে এসেছে। এই যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া বিশেষ করে নারী ও শিশুদের সংকটাপন্ন করে তুলেছে। সুদানের দুর্দশা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশা দূর করার জন্য সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার দাবি রাখে।
সুদানে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শিশু স্থানচ্যুতি সংকটের কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সুদানে নিয়োজিত কেয়ারের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মেরি ডেভিড বলেছেন, ‘জীবনহানি, ব্যাপক স্থানচ্যুতি, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, ক্ষুধা, কলেরা সবই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।’ সংঘাত আক্রান্ত এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হাসপাতাল অকেজো হয়ে পড়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আরও মনোযোগ এবং তহবিল দরকার।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের তথ্যমতে, সুদানে সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০.৭ মিলিয়ন মানুষ, যার মধ্যে ৯ মিলিয়ন দেশের মধ্যেই রয়েছেন। এই সংস্থাটি অবিলম্বে মানবিক সাহায্য বাড়াতে এবং বাস্তুচ্যুতি সংকট মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার অনুরোধ করেছে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ১.৭ মিলিয়ন প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় চেয়েছে, যাদের অধিকাংশই (৬২ শতাংশ) সুদানি।
বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে চাদ ৩৭ শতাংশ, দক্ষিণ সুদান ৩০ শতাংশ এবং মিসরে ২৪ শতাংশ রয়েছে। এ ছাড়া ইথিওপিয়া, লিবিয়া এবং মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র অবশিষ্ট শরণার্থীদের বহন করছে। এই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি গভীর সমস্যায় জর্জরিত অঞ্চলে মানবিক চাহিদার বিশেষ প্রয়োজন।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের মহাপরিচালক অ্যামি পোপ বলেছেন, ‘বিশ্বে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত প্রতি আটজনের মধ্যে একজন সুদানে রয়েছে।’ তিনি খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্যানিটেশন ঘাটতিসহ বাস্তুচ্যুত মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো তুলে ধরেন। এর কারণে তাদের রোগ, অপুষ্টি এবং সহিংসতার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। চরম মানবিক পরিস্থিতিতেও তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে না। লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত লোকের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া উচিত না।
সুদানে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত সাধারণ নাগরিকদের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের কারণে অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবহন নেটওয়ার্ক এবং বিদ্যুৎ ও পানির মতো প্রয়োজনীয় উপযোগী ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সৃষ্ট ঘাটতি শুধু রোগের প্রাদুর্ভাব, ক্ষুধা এবং অপুষ্টিই বৃদ্ধি করেনি; বরং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা আরও বেড়ে গেছে। নারী ও মেয়েরা চলমান বিশৃঙ্খলায় ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এর জন্য মানবিক হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজন।
দক্ষিণ দারফুর রাজ্যের নিয়ালা শহরের ২০ বছর বয়সী এক নারী মানাল অ্যাডাম ইউসিফ জাতিসংঘকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমাদের বাড়ি এবং আশপাশের অন্য সব বাড়িতে ডাকাতি হয়। আমার পরিবারের অন্যদের জন্য খুব ভয় হচ্ছে। আমরা যে জামাকাপড় পরা অবস্থায় ছিলাম, তা নিয়েই পালিয়ে এসেছি।’ শীতকালের কারণে অনেক রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, তার ছেলে এবং অন্য অনেক শিশু অসুস্থ। ইউসিফ তার আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমার কাছে (আমার ছেলেকে) হাসপাতালে নেওয়ার মতো টাকা নেই। আমি আশা করি যুদ্ধ অচিরেই বন্ধ হবে। দেশে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা থাকবে, যাতে আমরা আমাদের বাড়ি ও পরিবারের কেছে ফিরে যেতে পারি।’
আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে অবিলম্বে টেকসই সহায়তা প্রদান করা দরকার। বাস্তুচ্যুতদের চাহিদা মেটাতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা সরবরাহ এবং আশ্রয়সহ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোয় জনগণের প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নারী ও মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তুচ্যুত শিশুরা যাতে শিক্ষার সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করার জন্য অস্থায়ী শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।
সংঘাতের অবসান ঘটাতে জোরালো কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং আলোচনা দরকার। সুদানের ভয়াবহ সংঘাতের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে ব্যাপকভাবে ফেলেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ব্যাপকভাবে সমন্বিত সহযোগিতা জরুরি প্রয়োজন।
লেখক: আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত: সানজিদ সকাল