![ভারতে ভোটের হার কম, আতঙ্ক মোদি শিবিরে](uploads/2024/05/13/Dipankar-1715575860.jpg)
লোকসভা নির্বাচনের প্রথম তিন দফাতেই ভোটের হার কম থাকায় ‘অশনিসংকেত’ দেখছে বিজেপি। বিজেপি শিবিরের আশঙ্কার কারণ, সাম্প্রতিক অতীতে একমাত্র ১৯৯৯ সালের নির্বাচন ছাড়া যতবারই কম ভোট পড়েছে, প্রতিবার সরকার বদল হয়েছে। এবার যে ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের মতো ‘মোদি হাওয়া’ নেই, তা বিজেপি নেতৃত্ব আগেই টের পেয়েছিল। তার ওপরে প্রথম তিন দফায় মোট ২৮৩টি লোকসভা কেন্দ্রেই ভোটের কম হার বিজেপি শিবিরের চিন্তা বাড়িয়েছে। বিজেপি সূত্র বলছে, লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়ে গেছে। এই ২৮৩টি আসনের মধ্যে এনডিএ খুব বেশি হলে শ দেড়েক আসনে জিততে পারে। ফলে ‘৪০০ পারের’ সম্ভাবনা এখনো দূর অস্ত। উল্টো দিকে কংগ্রেস দাবি করেছে, প্রথম দুই দফার ভোটের মতো তৃতীয় দফায় ভোট হওয়া ৯৩টি আসনের সিংহভাগ আসন ইন্ডিয়া জোটই পেতে চলেছে। তেলেঙ্গানায় নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছেন, তিন দফায় ভোটের পরে ইন্ডিয়া জোটের ‘ফিউজ উড়ে গেছে’। বিজেপির নেতৃত্বে এনডিএ জয়ের দিকে এগোচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। কিন্তু বিজেপি সূত্র বলছে, তৃতীয় দফায় যে ৯৩টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ হয়েছে, তার মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ভোটের হার কিছুটা বাড়লেও বিহারে ভোটের হার কমেছে।
কংগ্রেসের সাংগঠনিক সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল বলেছেন, তৃতীয় দফায় ভোট গ্রহণের পর সব আসন থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে স্পষ্ট, বিজেপি ঐতিহাসিক হারের মুখে পড়তে চলেছে। প্রথম দুই দফায় ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির ভুয়া জিনিসপত্র নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। হিন্দুত্বের ধুয়া তোলা থেকে কংগ্রেস মঙ্গলসূত্র, মোষ ছিনিয়ে নেবে বলে আতঙ্ক তৈরি করছিলেন। বেণুগোপাল বলেন, “এসব মোদির মরিয়াভাবের প্রমাণ। উনি দেখতে পাচ্ছেন, পায়ের তলা থেকে জমি সরে যাচ্ছে। এর পরে উনি আরও মিথ্যে বলবেন। বিদ্বেষ ছড়াবেন। ‘ইন্ডিয়া’র তরফে ঢেউ উঠেছে।” বিজেপি অবশ্য আশা করছে, এখনো চার দফার ভোট বাকি। মোদির পক্ষে হাওয়া ওঠার সময় এখনো রয়েছে।
ভারতের ভোট নিয়ে আমেরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ রাশিয়ার
ভারতে লোকসভা ভোট চলছে। সেই সময়ে অভিযোগের আঙুল তুলল রাশিয়া। তাও আবার খোদ আমেরিকার দিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের লোকসভা নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ভারসাম্যহীন’ করার চেষ্টা করছে।
ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে। জাখারোভা বলেন, ভারতের জাতীয় মানসিকতা, ইতিহাস সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বোঝার অভাব রয়েছে। আমেরিকা ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে ‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ করে চলেছে। এটি ভারতের কাছে অসম্মানজনক, এই কথাও বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর মার্কিন কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ের লঙ্ঘনের অভিযোগে ভারতের সমালোচনা করেছে। এটি ‘ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারের, বিশেষ করে গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত।’ এ জন্য ভারত এবং অন্যান্য ১৬টি দেশকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে মনোনীত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
মহাসংকটে এয়ার ইন্ডিয়া
টাটা গোষ্ঠীর বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস পড়েছে মহাসংকটে। গণছুটিতে চলে গেছেন কেবিন ক্রুরা। যার জেরে বুধবার একাধিক ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস। এবার এই ঘটনায় এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের থেকে রিপোর্ট চাইল ভারত সরকার। অন্যদিকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অধিকারসংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে শ্রমিক কমিশন।
গত মঙ্গলবার রাত থেকেই কর্মীসংকটে ভুগছে এয়ার ইন্ডিয়া। বাতিল হচ্ছে একের পর এক এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের ফ্লাইট। অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে প্রায় ৩০০ জন কেবিন ক্রু আচমকাই ছুটি নিয়েছেন। এমনকি তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ। কোনোভাবেই কেবিন ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই অগত্যা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা বাতিল করতে বাধ্য হয় এয়ার ইন্ডিয়া। একের পর এক বিমান বাতিল হতে শুরু করে। কাল থেকে আজ অবধি ৮০-এর বেশি বিমান বাতিল হয়েছে।
এয়ার ইন্ডিয়াকে টাটা অধিগ্রহণ করার পর থেকেই নানা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে বলে দাবি তুলেছিলেন কর্মীরা। তাদের অভিযোগ ছিল, ইন্টারভিউতে যে পোস্টের কথা বলা হচ্ছে, আদৌ সেই পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। অনেক কর্মীকেই নিচু পদে নিয়োগ করছে সংস্থা। তা ছাড়া কোম্পানির অন্দরে তলে তলে কর্মী ছাঁটাইও চলছিল। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা অসন্তোষ দেখাচ্ছেন। গণছুটিতে যাওয়া প্রতিবাদের অংশ বলেও মনে করছেন অনেকে।
এই পরিস্থিতিতে এয়ার ইন্ডিয়ার মুখপাত্র সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, এভাবে এতজন কর্মী অনুপস্থিত হয়ে পড়ায় আর পরিস্থিতি সামলানো যায়নি। শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে এয়ার ইন্ডিয়াকে।
লেখক: কলকাতা প্রতিনিধি, খবরের কাগজ