ঢাকা ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

নবাবী আমলের গল্প

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২ পিএম
নবাবী আমলের গল্প

–আজ কিসের গল্প শুনবি?
–চোরের
–কী রকম চোর?
–দারুণ। মানে যেরকম চোর আজকাল আর দেখা যায় না, যেরকম চুরি এখন আর কোথাও হয় না। বেশ আলাদা ধরনের কিছু চাই!
–হুঁ, তাহলে তো দেখছি একেবারে নবাবী আমলে চলে যেতে হয়। আচ্ছা, তাই সই। কিন্তু কেবল চোরের গল্পই বলতে হবে? চোর ধরার কথা শুনতে চাসনে?
–বারে! চোর যদি ধরাই না পড়ল, তবে আর চোরের গল্প কিসের?
–আচ্ছা, ঠিক আছে। শোন– এক যে ছিল পান্তা-চোর, তার জ্বালায় কেউ ঘরে পান্তা ভাত রাখতে পারত না। রান্নাঘরের দরজা যত শক্ত করেই বন্ধ থাক, খেয়ে সে যাবেই। আর জানিস তো, সেই নবাবী আমলে সবাই রাত্তিরে পান্তা ভিজিয়ে রাখত, আর সকালে হুসহাস করে নেবু আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সেই ভাত খেত। এখন হয়েছে কী, এক বুড়ি–
–এই থাম, আর গল্প বলতে হবে না। রামোঃ, শেষে পান্তাবুড়ির গল্প আরম্ভ করলি? সেই ক্ষুর, গোবর, শিঙিমাছ…
–মোটেই না, কে বলেছে 
পান্তাবুড়ির গল্প?
–তা ছাড়া আর কী! পান্তা-চোর এসেছে, বুড়ি এসেছে, পান্তাবুড়ির আর বাকি রইল কী?
–তাই বুঝি? তবে উঠে পড় এখান থেকে, কেটে পড় এক্ষুনি। তাদের মোটে গল্প বলবই না। বুড়ি আর পান্তো থাকলেই পান্তাবুড়ি? এতই যদি মগজ, তাহলে আমার কাছে কেন এসেছিস গল্প শুনতে?
–আচ্ছা আর কোনো কথা বলব না। তুই 
বলে যা।
–মনে থাকে যেন হুঁ! এখন হয়েছে কী, জানিস? এক বুড়ির পান্তো তো চোরে হামেশা খেয়ে যাচ্ছে। বুড়িও গল্পের মতোই গোবর রাখল, শিঙিমাছ রাখল, ক্ষুর পাতল–কিন্তু চোরের কিচ্ছুটি হল না। সে হাঁড়ি থেকে শিঙিমাছটা নিয়ে গেল রান্না করে খাবে বলে, আর ক্ষুরটা নিয়ে গেল দাড়ি কামানোর জন্যে। আর যাওয়ার সময় বুড়ির ঘরের দোরে খড়ি দিয়ে লিখে গেল: আমাকে গল্পের সেই চোর পাও নাই যে ইচ্ছা করিলেই বোকা বানাইতে পারিবে।–কী রে, কেমন শুনছিস?
–বেড়ে।
–পান্তাবুড়ির গল্পের মতো লাগছে?
–না না, কে বলে! কিন্তু তারপর?
–হুঁ, দাঁড়া না। নবাবী আমলের গল্প কিনা, অনেকদিন হয়ে গেছে, একটু ভেবে-চিন্তে বলি। হাঁ, মনে পড়েছে। বুড়ি তো রেগে-কেঁদে খুব দাপাদাপি করল, শাপশাপান্ত করল, কিন্তু তাতে চোরের কী আর হবে বল দিকি? শেষকালে বুড়ি নিরুপায় হয়ে, গিয়ে হাজির হল কাজী সাহেবের কাছে।
–কাজী সাহেব?
–হ্যাঁ-হ্যাঁ, নবাবী আমলে ওঁরাই তো ছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা–এসব ওঁরাই দেখাশুনো করতেন। তাই বুড়ি কাজীর কাছে গেল। বুদ্ধিমান আর দয়ালু বলে কাজী সাহেবের খুব নামডাক ছিল, তিনি পান্তো চোরের গল্প শুনলেন, অনেক বার বললেন, ওয়াহ-ওয়াহ, একবার বললেন, বহুত মসিব্বত, তারপর চোখ বুজে নিজের মেহেদী রাঙানো শাদা দাড়িতে হাত বুলাতে লাগলেন।
–এই, মুসিব্বত মানে কী রে?
–বোধহয়, ঝঞ্জাট। কিন্তু ও-সব নবাবী আমলের শব্দ, আমি অত-শত মানে জানব কী করে? তোরা বরং ইস্কুলের মৌলবী সাহেবকে জিজ্ঞেস করিস। যাই হোক, কাজী সাহেব মেহেদী রাঙানো দাড়িতে হাত বুলিয়ে কখনও বলতে লাগলেন, ইয়াহ, কখনও বললেন, ওয়াহ, একবার বললেন, বহুত পোঁচদাগী, আবার বললেন, জালিম, শেষে চোখ খুলে বললেন, ফতে!
–ফতে? মানে?
–মানে ফিনিশ।
–কে ফিনিশ হল?
–আঃ, থাম না, সবটা শুনেই নে আগে। অত বকর বকর করিস কেন?
–আচ্ছা, মুখ বন্ধ করেছি। বলে যা।
কাজী সাহেব খুশি হয়ে বললেন, ওয়াহ ফতে। শোনো বুড়ি, কাল তোমার পান্তার হাঁড়ি আমার এখানে নিয়ে আসবে। আমি 
তাতে ওষুধ মিশিয়ে দেব। ধন্যবাদ বলে বুড়ি 
চলে গেল।
–বুঝেছি, আর বলতে হবে না। কাজী সাহেব পান্তো ভাতে বিষ মিশিয়ে দিলেন, আর তাই খেয়ে চোরটা…
–উঁহু, উঁহু! অর্ধেকটা কেবল বুঝেছিস। বুড়ির হাঁড়ি খেয়ে চোরটা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, ধরাও পড়েছিল, কিন্তু কাজী সাহেব ওষুধ মেশাননি, কোনও বিষও নয়। সেই নবাবী আমলে মানুষ এত ছোটলোক ছিল না, তা জানিস?
–বিষ নয়, ওষুধ নয়, তবে চোরটা অজ্ঞান হল কী খেয়ে?
–কেন? পান্তোর সঙ্গে কাজী সাহেব মিশিয়ে দিয়েছিলেন এক মুঠো ঘি-চপচপে মোগলাই পোলাও। রাজা বাদশারা যা খেয়ে থাকে।
–সে তো অতি চমৎকার। তাই খেয়ে?
–হুঁ, তাই খেয়ে। আরে, পান্তো-খাওয়া চোরের নাড়িতে মোগলাই জর্দা-পোলাও সহ্য হয় কখনও? মুখে দিয়েই চোরের মাথা ঘুরে গেছে, তিন দিন পরে তার জ্ঞান হয়। আনাড়িরা যদি জর্দা কিংবা দোক্তা খেতে যায়, তাহলে তার যা হয়, তাই।
–যাঃ, বাজে কথা। গল্প তো নয়, স্রেফ গুল। 
–গুল? তবে শুনছিলি কেন বসেবসে? পালা পালা এক্ষুনি এখান থেকে গেট আউট!

কলি 

আজকের সেরা জোকস: বীমার লোক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
আজকের সেরা জোকস: বীমার লোক
ছবি এআই

◉ বীমার লোক: আপা, যতগুলো পলিসির কথা বললাম, আমার মনে হয় একটা হাত আর একটা পা ভাঙলে পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ পাওয়া যাবে—এই পলিসিটাই আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
মহিলা: তাইলে আমারে এই পলিসিটাই কইরা দেন। তার আগে একটা প্রশ্নের জবাব দেন—আমার ভাঙা হাত, পা নিয়া আপনারা কী করবেন?

 

◉ লোক: এখানে মাছ ধরা নিষেধ—আপনি এই লেখাটা দেখেন নাই?
শিকারি: আমি মাছ ধরি না তো, কেঁচোটারে গোসল করাচ্ছি।
লোক: তাইলে বড়শিতে আটকাইছেন ক্যান?
শিকারি: যদি ভাইগা যায়!

সেতারা বেগমের পরিবার

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০৪ পিএম
সেতারা বেগমের পরিবার

মিসেস বিলকিস এ মাসেই নতুন ফ্ল্যাটে উঠেছেন। কিছুদিন আগে পাক্কা ২ কোটি টাকা খরচ করে ফ্ল্যাটটা কিনেছেন তিনি। চার বেড, ড্রইং ডাইনিং, সঙ্গে দুটো বারান্দা। টয়লেট তিনটি। পরিবারের সবাই দুই দিন ধরে ফ্ল্যাটের মালামাল গোছগাছ করছেন। কোনটা কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে মতবিরোধ হলে টস করে সমাধান করা হচ্ছে। 
কিছুক্ষণ আগে সোফা রাখা হয়েছে। মিসেস বিলকিস পরবর্তী পরিকল্পনা করতে যাবেন, ঠিক এমন সময় কলিংবেলটা বেজে উঠল। 
দরজা খুলতেই মোটা মতো নারী হাসতে হাসতে বললেন, ‘আমি সেতারা বানু, আপনাদের পাশের ফ্ল্যাটেই থাকি।’ 
প্রতিবেশীকে পেয়ে মিসেস বিলকিস খুশিই হলেন, ‘আরে আসুন আসুন। কয়েকদিন হলো আমরা উঠেছি। এখনো কারও সঙ্গে পরিচিত হতে পারিনি।’
সেতারা বানু বললেন, ‘তাড়াহুড়োর কী আছে। আস্তে আস্তে সবার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। তা আপনারা কে কে থাকবেন এখানে?’ 
মিসেস বিলকিস হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। ওদের বাবা আর আমি। সব মিলিয়ে আমরা পাঁচজন।’ 
সেতারা বানু বললেন, ‘আমিও ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে আর তার জামাইকে নিয়ে থাকি।’
মিসেস বিলকিস একটু অবাক হলেন, ‘মেয়ের জামাইও আপনাদের সঙ্গে থাকে! এটা আবার কেমন কথা?’ 
সেতারা বানু বললেন, ‘ওভাবে বলবেন না। আমার মেয়ের জামাই খুব ভালো। সকালে মেয়ের জন্য নাশতা বানিয়ে বিছানায় দিয়ে আসে। অফিস থেকে ফিরে রান্নাঘরে ঢোকে। রাতে বিছানার মশারিটাও টাঙায়।’
মিসেস বিলকিস হেসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাই নাকি? আর ছেলের বউ?’ 
সেতারা বেগম মুহূর্তেই হতাশ হয়ে গেলেন, ‘বউটার কথা আর বলবেন না। অলসের এক শেষ। ডাইনি আমার ছেলের হাড়-মাংস জ্বালিয়ে খেল। সকালে ঘুম থেকে উঠার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে গিয়ে বেড টি দিয়ে আসে। অফিস থেকে ফেরার পরও নিস্তার নেই। রান্নাঘরে ঢুকে। আর নবাবজাদি পায়ের ওপর পা তুলে বসে বসে টিভি দেখে, ফোনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে।’

ঘুম আসে না

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০৮ পিএম
ঘুম আসে না
ছবি এআই

ঘুম আসে না। কোনোভাবেই ঘুম আসে না। রহিম বাদশা অস্থির হয়ে উঠলেন। টানা তিন মাস না ঘুমালে শরীর কী রকম হতে পারে তা যে কেউ বুঝবে। রহিম বাদশার অবস্থা হয়ে উঠল সে রকম। একটা ঘণ্টা ঘুমানোর জন্য দিন-রাত বিছানায় গড়াগড়ি করেন কিন্তু কিছুতেই ঘুম হয় না। এরকম পরিস্থিতিতে সবাই পরামর্শ দিলেন ডাক্তারের কাছে যেতে। 
পাশের ভবনে একজন ডাক্তার বসেন। রহিম বাদশা পরের দিনই সেখানে হাজির হলেন। সমস্যা শুনে ডাক্তার এন্ডোসকপি, এক্স-রে, ইসিজি, কিডনির বায়োপসি, ব্লাড, ইউরিন, স্টুলসহ চোখের তিনটি পরীক্ষা দিলেন। সাত দিন পর সব পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে আবার উপস্থিত হলেন ডাক্তারের চেম্বারে। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বললেন, ‘রিপোর্টে তো কিছুই পেলাম। আপনার শরীর একদম ফিট। তারপরও কয়েকটা ওষুধ লিখে দিচ্ছি। আশা করি ঘুম আসবে।’
ওষুধ খাবার পর সাত দিন কেটে গেল। তবু ঘুমের দেখা নেই। রহিম বাদশা আবার ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার বললেন, কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছে না, তখন ভেড়া গুনুন। বুদ্ধিটা পুরোনো। তবে মাঝে মধ্যে কাজে লাগে। ১০০টা ভেড়া গুনলেই হবে। দুদিন পরে বাদশা মিয়া এল ডাক্তারের কাছে।
ডাক্তার সাহেব, ‘আগে মাঝে মাঝে তন্দ্রা ভাব আসত। ভেড়া গোনার পর তো সেটাও গেছে।’ 
ডাক্তার বললেন, ‘কেন? ভেড়া গুনে কাজ হয়নি?’ 
রহিম বাদশা বললেন, ‘রাত দেড়টার মধ্যে ১০০ ভেড়া গোনা শেষ। সারা রাত পড়ে আছে। ভাবছি ভেড়াগুলো নিয়ে কী করা যায়? মহা ঝামেলা! রাত ২টার দিকে ভেড়াগুলোর গা থেকে পশম সংগ্রহ করলাম। তারপর উলের ফ্যাক্টরি দিলাম। ভোর পৌনে ৪টার দিকে আমেরিকা থেকে সোয়েটারের অর্ডারও পেলাম। কিন্তু শিপমেন্ট পাঠানোর সময় বন্দরে ঝামেলা লেগে গেল। শ্রমিক আন্দোলন। কোটি টাকার শিপমেন্ট আটকে আছে ডাক্তার সাহেব। এ অবস্থায় ঘুমাই কীভাবে?’

দুটি ঘটনা

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
দুটি ঘটনা
ছবি এআই

▶ রাতের খাবারের পর এক খিলি পান খাওয়া মোকসেদের পুরোনো অভ্যাস। সেই মোতাবেক হাকিমপুরি জর্দা দিয়ে বানানো পানটা মুখে চালান দিতেই চোখজুড়ে রাজ্যের ঘুম নেমে এল তার। পান খেতে খেতে টিভিতে খবর দেখতে ভালোবাসেন, কিন্তু আজ আর সেটা করতে ইচ্ছে করছে না। নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে জোগালির কাজ করেন তিনি। নিচ থেকে উপরে ইট, সিমেন্ট রড আনা-নেওয়া করতে হয়। সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করার কারণে শরীরটা বিশ্রাম নিতে চাইছে। মোকসেদ দেরি করলেন না। মশারি টাঙিয়ে বাতি বন্ধের সুইচটা টিপে দিলেন। 
চোখ দুটো সবে লেগে এসেছে ঠিক তখনই শব্দটা শুনতে পেলেন মোকসেদ। এক নাগারে ডেকে চলেছে কুকুরগুলো। সেই শব্দে ঘুমের বারোটা বেজে গেল।
একই ঘটনা ঘটল পরপর কয়েক রাত। ঠিকমতো ঘুমাতে না পেরে শরীর ভেঙে যেতে শুরু করল মোকসেদের। কাজে মন লাগাতে পারলেন না। উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। বাসার পাশেই একজন ডাক্তার বসেন। চমৎকার রোগ সারাতে পারেন বলে এলাকায় নাম-ডাক আছে তার। মোকসেদ পরদিন সকালেই ডাক্তারের চেম্বারে হাজির হলেন।
ডাক্তারকে সব খুলে বললেন তিনি, ‘বাসার পাশের রাস্তায় কুকুরগুলো রোজ রাতে নিয়ম করে হল্লা করে। কিছুতেই ঘুমাতে পারি না।’ 
ডাক্তার বললেন, ‘এই ঘুমের বড়িটা নতুন এসেছে। খুব ভালো কাজ দেয়। নিয়ে যান। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করবেন।’
মোকসেদ ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। তবে এক সপ্তাহ না যেতেই আবার হাজির হলেন ডাক্তারের চেম্বারে, ‘এখনো আমার ঘুমের সমস্যা হচ্ছে ডাক্তার সাব।’
উদ্বিগ্ন হয়ে ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, ‘কিন্তু ওষুধটা তো বেশ ভালো। অনেকেরই কাজ হয়েছে।’ 
মোকসেদ আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘ভালো-মন্দ বুঝবারই তো পারলাম না। সারা রাত কুকুরগুলোকে ধাওয়া করে একটা যদিও ধরতে পারি, কিছুতেই বদমাশটাকে ওষুধ গেলানো যায় না। ওষুধের মোজেজা কেমনে বুঝুম, কন?’

 

▶ ক্লাস শেষের ঘণ্টাটা বাজতেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন নীতু। জাভেদ স্যারের ক্লাস এতটাই বোরিং যে, ভার্সিটির কেউই তার ক্লাস করতে চায় না। কিন্তু পাস তো করতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই সময় মতো হাজির হন আর অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন শেষ হবে এই বোরিং লেকচার।
ক্লাস থেকে বেরিয়ে সোজা শিমুল গাছের নিচে এসে দাঁড়ালেন নীতু। কিছুক্ষণের মধ্যে রিনি এসে পড়বেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে কয়েকটা রেফারেন্স বই দেখে নোট করতে হবে তাদের। নীতু একা একা করতে পারতেন কাজটা, কিন্তু সঙ্গে একজন ভালো স্টুডেন্ট থাকলে নোটটা যেমন ভালো হয় তেমনি গল্পে গল্পে সময়টাও কেটে যায় দ্রুত।
বলতে না বলতে রিনি এসে হাজির হলেন শিমুল গাছের নিচে। তারপর আর দাঁড়িয়ে থাকা মানায় না। দুজনে হাঁটতে শুরু করলেন লাইব্রেরির দিকে। ঠিক এমন সময় অপরিচিত নাম্বার নীতুর মোবাইলে ফোন এল। রিসিভ করতেই আচমকা পাশ থেকে প্রশ্ন এল, ‘আপনার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?’ 
থতমত খেয়ে নীতু বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে, আপনি কে?’ 
‘আমি তোমার বড় ভাই! খবর আছে তোমার! ওয়েট করো, বাসায় এসে নিই আমি!’ জবাব এল ওপাশ থেকে।
‘ভাইয়া’ বলেই নীতু ভয়ে অস্থির হয়ে গেল। 
কিছুক্ষণ পর নীতুর মোবাইলে আরেকটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এল, ‘তোমার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে?’ 
এবার নীতু ভুল করলেন না, ‘না না, কেউ নেই! আমি সিঙ্গেল!’ 
‘কী? আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড মামুন, তুমি চিনতে পারোনি? মানুষকে তাহলে এই বলে বেড়াও?’ 
রাগ হয়ে বললেন কেউ ওপাশ থেকে। ‘না না, মামুন, আই অ্যাম সরি। আমি ভেবেছি তুমি আমার বড় ভাই! রাগ করে না, প্লিজ!’ বললেন নীতু। 
অপর প্রান্তের ভদ্রলোক বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি ঠিক ধরেছ! আমি তোমার বড় ভাই! দাঁড়াও বাসায় আসতেসি!’

রিফাতের সংসার

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ০৫:৪৬ পিএম
রিফাতের সংসার
আঁকা মাসুম

বিপাশা বাজারের ব্যাগ হাতড়াতে হাতড়াতে বলল, এইটা কী?
রিফাত বলল, মুরগির ডিম।
আমি তো ভাবছিলাম চড়ুইপাখির ডিম। এত ছোট কেন? ডিম কি তুমি নিজে পাড়ছিলা? ডিম পাড়তে খুবই কষ্ট হচ্ছিল? কী মাছ আনছ? 
ইলিশ মাছ। 
বিপাশা ব্যাগ থেকে মাছ বের করে নাড়াচাড়া করে বলল, তুমি নিজেই তো ডিমপাড়া পাবলিক, ডিমওয়ালা ইলিশ আনছ কোন আক্কেলে? ডিমওয়ালা ইলিশ কেউ খায়? কী উৎকট গন্ধ আসছেরে বাবা! এই মাছ তো মনে হচ্ছে আওরঙ্গজেবের আমলে ধরেছিল, বেচতে না পেরে তোমাকে গছিয়ে দিয়েছে। এমন পচা মাছ আনলা কী ভেবে? বেগুনও তো আনছ পোকায় খাওয়া। 
রিফাত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, মাছওয়ালা তো বলছে টাটকা মাছ...!
মাছওয়ালা বুঝে গেছে তুমি পৃথিবী বিখ্যাত বলদ, এজন্য এই মাছ তোমাকে গছিয়ে দিয়েছে। আর কখনো এই মাছওয়ালার ধারেকাছেও যাইবা না, মনে থাকবে? আর বেগুন ফেরত দিয়ে আসবা। যারা তোমাকে ঠকায়, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিয়া দিবা।
রিফাত ভালো করে জানে, সবকিছুতে জামাইয়ের ভুল ধরা বিপাশার অভ্যাস। জিনিস ভালো হলেও।
সে মিনমিনে গলায় বলল, কী বলো এসব? তোমার বাবাও তো আমাকে ঠকাইছে। ভালো মেয়ে বলে তোমাকে গছিয়ে দিয়েছে। আমি কী তোমার বাবার সঙ্গে সম্পর্ক বাদ দিছি? 
কথা শুনে বিপাশা আগুন চোখে জমাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইল। 
বিপাশা রিফাতকে পৃথিবীর সেরা অপদার্থ মনে করে। সে বিশ্বাস করে অপদার্থদের নোবেল পুরস্কার দিলে সবার আগে তার জামাই পাইত, শুধু একটুর জন্য ফসকে যাচ্ছে। 
মাছ কুটতে কুটতে প্রায় ৪০ মিনিট ভাঙা রেডিওর মতো বাজিয়ে গেল। তার ব্যাটারি সহজে শেষ হয় না, গালিও থামে না। এর মধ্যে রিফাত জেনে গেল, তার বংশে কার চরিত্র কেমন, কে কার চেয়ে বেশি খারাপ! সব ইতিহাস বিপাশা গড়গড় করে বলে গেল। 
রিফাত জবাব না দিয়ে তব্দা খেয়ে বসে রইল। 
জামাইয়ের কাছে কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে তার কথার স্টক শেষ হয়ে গেল। এবার শুরু করল কান্না। এই কান্না মিসাইলের চেয়েও ভয়ংকর। কাঁদতে কাঁদতে বলল, তোমার মতো অপদার্থ আমি জীবনে দেখি নাই। বাবা যে কী দেখে এমন বলদ পছন্দ করেছে কে জানে। এত বোকা মানুষ হয়! একটা কাজও ঠিকঠাক পারে না। 
রিফাত সান্ত্বনার সুরে বলল, থাক, নিজের বাপকে নিয়ে আর টানাটানি কইরো না, তুমি তার জায়গায় থাকলে বুঝতে পারতা, লোকটা কতটা বিপদে পড়ে আমার মতো অপদার্থের ঘাড়ে তোমাকে গছিয়ে দিতে পারে। তোমার যোগ্যতা নিয়ে তার কতটা ভয় ছিল বুঝে নাও। বেশি টেনশন কইরো না, আমি বেশিদিন বাঁচব না। আমি মরে গেলে তুমি সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবা।
বিপাশা কান্না থামিয়ে প্রশ্ন করে, তুমি মরে যাবা মানে কী?
রিফাত হাসতে হাসতে বলল, না মানে বলছিলাম কী, ভালো মানুষ তো বেশিদিন বাঁচে না, তাই।
কে বলেছে তুমি ভালো মানুষ? 
তোমার বাবা বলেছে। সেজন্যই তো হাতেপায়ে ধরে তোমার মতো অচল মাল আমার ঘাড়ে তুলে দিয়েছে। কী আর করা। সুখী হওয়ার মতো ভাগ্য আমার হাতের রেখায় নাই। মনে হয় ছোটবেলায় আচার খাওয়ার সময় চেটেপুটে খেয়ে ফেলেছি।
তুমি একটা বদ, তুমি একটা খচ্চর, তুমি, তুমি...
তাদের ঝগড়া শুনে রিফাতের মা এগিয়ে এলেন কী হয়েছে তা জানার জন্য। বিপাশাকে ডেকে বললেন, কী হয়েছে বউমা?
বিপাশা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, আম্মা, আপনার ছেলের তো অনেক দোষ, কয়টা বলব?
রিফাতের মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, জানি তো মা, আমার ছেলের অনেক দোষ, সেজন্যই তো তাকে কোনো ভালো মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে পারি নাই। 
বলেই তিনি হনহন করে চলে গেলেন। 
রিফাতও বেরিয়ে যাচ্ছিল, বিপাশা ডেকে বলল, যাও কই?
নরকে যাই।
তাহলে সঙ্গে ব্যাগ নিয়ে যাও।
রিফাত রেগে গিয়ে বলল, নরকে যাইতে হলে ব্যাগ লাগে নাকি!
তা লাগে না, তবে যদি কোনোকালে নরক থেকে ফিরে আসতে মন চায় তাহলে সঙ্গে করে দুই কেজি আলু নিয়ে আসবা। ঘরে একটাও আলু নাই।
রিফাত ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেল।