![রিঅ্যাডমিশন ইফেক্ট](uploads/2024/03/05/1709615667.a1.jpg)
ছোটবেলা থেকেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস। তখন থেকে ইচ্ছা ছিল সাংবাদিক হব। সেই ইচ্ছা থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্স পড়ার স্বপ্ন দেখতাম। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর আমার প্রথম ঢাকায় আসা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করার উদ্দেশ্যে। স্কুল-কলেজ লাইফের ফাঁকিবাজির ধারা কোচিং টাইমেও বজায় রাখলাম। ভর্তি পরীক্ষার জন্য বাপের টাকার শ্রাদ্ধ করে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সবগুলো ভার্সিটির ফরম তুললাম। পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেশ ভ্রমণ করাও হলো। এতকিছুর ভিড়ে মূল কাজটাই হচ্ছিল না। প্রতিটি ভার্সিটির রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখতাম, আমার রোলটা ওয়েটিং লিস্টের লেজের দিকে। শেষ পর্যন্ত ঢাকাতেই এমন একটা সাবজেক্টে চান্স পেলাম, যেটাকে আমি আজীবন ভয় পেতাম।
মান বাঁচাতে ভর্তি হলেও মনের মধ্যে জিদ চেপে থাকল। বাংলাতে আমাকে পড়তেই হবে। তাই ক্লাসে সেভাবে উপস্থিত না হয়ে পরবর্তী সেশনে ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে থাকলাম। আমার ফাটা কপাল আরেকটু ফাটিয়ে নেক্সট ভর্তি পরীক্ষার আগে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম অ্যাডমিশনের নিয়মটাই তুলে দিল। ততদিনে আমি আমার অনার্সের রেগুলার কোর্স থেকে নন কলেজিয়েট হয়ে গেছি। কপালের পিণ্ডি চটকিয়ে অপছন্দের সেই বিষয়েই রি-অ্যাডমিশন নিতে বাধ্য হলাম।
নতুন জুনিয়র ব্যাচের সঙ্গে ক্লাস করতে হলেও নিজের সিনিয়র মুড ধরে রাখতাম সবার সঙ্গে। ওরা ফ্রেন্ডলি মিশতে চাইলেও নিজেকে বড় ভাই হিসেবে উপস্থাপন করতাম। এভাবেই আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সামনে চলে এল।
ক্লাসের পড়াশোনায় আমার মনোযোগ ঠিকঠাক কোনোকালেই ছিল না। তাই পরীক্ষার আগে টেনশনে আমার মাথা ঘুরাত, বমি পেত। হাতে-পায়ে শক্তি পেতাম না।
প্রথম পরীক্ষার দিন হলে ঢুকে পজিশনমতো একটা সিটে বসলাম। মানে যেখান থেকে অন্য কারও খাতা কপি করা সহজ হয়। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২০ মিনিট আগে একটা ছেলে খুব ফিটফাট হয়ে হাতে কয়েকটা পেপার নিয়ে পরীক্ষার হলে এল। প্রতি বেঞ্চে গিয়ে নিজের রোল খুঁজতে লাগল। একটু ভ্যাবলামতো দেখে আমার সিনিয়রিটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। একটু র্যাগ দিয়ে বাজিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো। আমি তাকে কাছে ডাকলাম, এই এদিকে আয়।
কাছে এলে বললাম, নতুন আইটেম নাকি রে? পড়াশোনা কিছু করেছিস? আমার পাশে বস। দুজন মিলিয়ে লিখব।
সে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বের হয়ে গেল। আমি ভাবলাম খুব ভয় পেয়েছে। আজ মনে হয় পরীক্ষা দেবে না।
আমাকে অবাক করে দিয়ে ছেলেটা একটু পরই রুমে ফিরে এল। এবার তার হাতে আমাদের জন্য অ্যান্সার স্ক্রিপ্ট এবং প্রশ্নপত্র। এসেই লেকচার ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ডিয়ার স্টুডেন্টস, আপনারা নির্দিষ্ট সিটে বসবেন দয়া করে। আমি এখনই আপনাদের পরীক্ষার খাতাগুলো দিয়ে দেব। আপনারা ঠিক ঠিক নাম এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখে ফেলবেন।
৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে আমি খিঁচ মেরে গেলাম। পুরো পরীক্ষার সময়টা খাতা থেকে চোখ তুলতে পারলাম না। পরে শুনলাম স্যার আমাদের লেকচারার হিসেবে জয়েন করেই এমফিল করার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। সাত দিন আগে দেশে ফিরেছেন।
জাহ্নবী