পূর্ব কথা...
এক কাঠুরিয়া বনে নিয়মিত কাঠ কাটতে যেতেন। তার উপার্জনের জন্য ব্যবহৃত কুড়ালটি একবার ছিটকে হ্রদের পানিতে পড়ে গিয়েছিল। অত্যন্ত মন খারাপ করে পানির ধারে কান্নাকাটি করাতে ওখান থেকে এক পরি উঠে এসে তার দুঃখের কথা জিজ্ঞেস করলেন। কাঠুরিয়া ইনিয়ে-বিনিয়ে তার কুড়াল হারানোর গল্প বললেন।
পরি আশ্বাস দিয়ে বললেন, তুমি দুঃখ করো না, আমি এই পানিতেই থাকি। দেখি তোমার কুড়াল খুঁজে দিতে পারি কি না।
এই কথা বলে তিনি ভুস করে পানির তলে ডুব দিলেন। একটু পরে হাতে করে একটি সোনার কুড়াল নিয়ে এসে বললেন, দেখ তো বাছা, এটা তোমার কি না?
কাঠুরিয়া মাথা নাড়েন, না হে পরি...এই সোনার কুড়াল আমার নয়।
এ কথা শুনে পরি আবার ডুব দিলেন এবং একটি রুপার কুড়াল নিয়ে এসে আগের মতো জিজ্ঞেস করলেন, দেখ তো বাছা, এটা তোমার কি না?
কাঠুরিয়া আবার মাথা নাড়েন, না পরি...এই রুপার কুড়াল আমার নয়।
পরি এবার ডুব দিয়ে কাঠুরিয়ার লোহার কুড়াল তুলে এনে কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করাতে, কাঠুরিয়া খুব খুশি হয়ে পরিকে কৃতজ্ঞতা জানালেন তার কুড়াল খুঁজে দেওয়ার জন্য।
পরি কাঠুরিয়ার সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে সোনা ও রুপার কুড়াল দুটি উপহার দিলেন।
পরের কাহিনি...
অবাক এবং কৃতজ্ঞ কাঠুরিয়া বাসায় ফিরে বউকে পুরো ঘটনা খুলে বললেন। বউ তো সোনা-রুপার কুড়াল দেখে আহ্লাদে আটখানা। বউয়ের পরামর্শে সেগুলো বিক্রি করে কাঠুরিয়ার ভালো লাভ হলো। ঘরবাড়ি ঠিক করালেন। কিছু জমি কিনে চাষাবাদের কাজে লাগালেন। তার দিন ঘুরে গেল। এখন আর তাকে আগের মতো একবেলা না খেয়ে থাকতে হয় না।
এদিকে বউ কাঠুরিয়াকে খালি বলে, অ্যাই, তুমি আবার বনে যাও, ওই পানিতে একটা বড় কিছু, মনে করো এই কাঠের আলমারিটা ফেলে কান্নাকাটি করো। তোমার ইনিয়ে-বিনিয়ে কান্না দেখলে আবার পরি আসবে, আবার তুমি সোনা-রুপার আলমারি পাবে। চিন্তা করো, ওগুলো বিক্রি করলে কত টাকা হবে। ওসব থেকে আমি নিজেও কিছু গয়না বানাব।
এহেন প্রতারণার পরামর্শে কাঠুরিয়া বউয়ের ওপর বড়ই নাখোশ হলেন। বললেন, এসব কাজ আমি করতে পারব না। এক কথা, দুই কথায় ভীষণ ঝগড়া লেগে গেল, কিন্তু কাঠুরিয়া কিছুতেই বনের হ্রদে যেতে রাজি হলেন না।
এদিকে বউও খুব সেন্টিমেন্টাল হয়ে গেলেন। আমার জন্য তোমার কোনো মায়া নাই...ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক আছে, তুমি না যাও আমিই ওখানে যাব। বলে হনহন করে ভারী একটা বাক্স নিয়ে তিনি বের হয়ে বনের দিকে গেলেন।
এদিকে কিছুক্ষণ পরে কাঠুরিয়ার গোস্সা কমে এলে তিনি বউয়ের খোঁজে বের হন এবং বনের ওই হ্রদের কাছে গিয়ে দেখেন যে বাক্স পানিতে ভাসছে, বউয়ের কোনো খোঁজ নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে কোথাও বউকে না পেয়ে আর বিভিন্ন আলামত দেখে তিনি নিশ্চিত হন যে বউ পানিতে পড়ে ডুবে গেছে। বউয়ের জন্য তার খুব খারাপ লাগতে লাগল। বিষণ্ন মনে তিনি আবার হ্রদের পাশে বসে কাঁদতে থাকলেন।
এবারও যথারীতি পরি উঠে এসে কাঠুরিয়াকে মধুর স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, আবার কী হলো বাছা?
কাঠুরিয়া বললেন যে তার বউ পানিতে পড়ে গেছে।
পরি এবারও বললেন, দুঃখ করো না বাছা, দেখি তোমার বউকে খুঁজে পাই কি না...বলে ডুব দিলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি অসম্ভব সুন্দরী ঐশ্বরিয়াকে নিয়ে উঠে এলেন। বললেন, দেখো তো বাছা, এটা কি তোমার বউ?
কাঠুরিয়া সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন, হ্যাঁ পরি, এটাই
আমার বউ।
কাঠুরিয়ার এহেন চরিত্র স্খলন দেখে পরি খুব রেগে গেলেন, তার চোখ জ্বলতে থাকল...বললেন, কী বললি?
তখন কাঠুরিয়া কাঁচুমাচু করে বললেন, অপরাধ নেবেন না পরি, আমি জানি আপনি অত্যন্ত দয়াবতী। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে যা জানি, আমি এই সুন্দরী কন্যাকে দেখে না বলব, আর আপনি তারপর তুলে আনবেন মাধুরিকে। আমি না বললে তারপর আনবেন আমার বউকে।
যখন আমি হ্যাঁ বলব, তখন আপনি আমার সততায় মুগ্ধ হয়ে আগের মতো তিনজনকেই আমাকে দিয়ে দেবেন। পরি, একটা বউকেই সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।
তাই এবার হ্যাঁ বলেছি যেন এ রকম তিনটি গছিয়ে দেওয়ার কোনো ক্ষেত্র সৃষ্টি না হয়। দয়া করো মা, আমাকে শুধু আমার যেমন-তেমন একমাত্র বউটাকে এনে দিন। তাহলেই আমি বেঁচে যাই। পরি খুশি হলেন এবং কাঠুরিয়ার আসল বউকে এনে দিলেন।
কলি