তখন অনেক রাত, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। রিতার ঘুম আসছে না। বৃষ্টির শব্দ শুনতে ভালো লাগছে। এমন সময় শব্দটা তার কানে গেল। কে যেন চিৎকার করে বলছে, ‘কে আছ ভাই? একটু ধাক্কা দাও।’
রিতা তার স্বামী রিপনকে ডেকে তুলে বলল, ‘আমার মনে হয় কেউ বিপদে পড়েছে। তোমার যাওয়া উচিত।’
রিপন: কিন্তু বাইরে অনেক বৃষ্টি। রাস্তায় কাদা।
রিতা: তোমার গত বছরের কাহিনি মনে নেই?
রিপন: আছে, মনে আছে কিন্তু এই ব্যাটার গলা শুনে তো মনে হচ্ছে পুরো মাতাল।
রিতা: তোমার গলা শুনে সেদিন কি অন্যরা মাতাল ভাবেনি?
গত বছর রিতার বাচ্চা হবে। রাতের বেলা হাসপাতালে নিয়ে যাবে। সেদিনও এমন বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেসে যাচ্ছে। তাদের গাড়িটা আটকা পড়েছিল কাদায়। অনেকক্ষণ ঠেলেঢুলেও রিপন গাড়িটা গর্ত থেকে বের করতে পারছিল না। এদিকে সময় হয়ে যাচ্ছে। বারবার রিপন ধাক্কা মারছিল কিন্তু গাড়িটা বের করে আনতে পারছিল না। একসময় হতাশ হয়ে সে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছিল আর বলছিল, ‘ধাক্কা দাও। কেউ একজন এসে ধাক্কা দাও।’
আশপাশের বাসা থেকে দুজন সহৃদয় মানুষ বের হয়ে এসেছিল। নিজেরা ভিজে, কাদায় মাখামাখি হয়ে গাড়িটা বের করে দিয়েছিল গর্ত থেকে। আর সেদিন রাতেই তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছিল।
আজকে, বছরখানেক পর, আরেক বৃষ্টির দিনে এক লোক চিৎকার করে বলছে, ধাক্কা দাও। আমাকে ধাক্কা দাও।
রিপন বের হয়ে এল। রাস্তার পাশের লাইটগুলোও নিভে আছে কেন জানি। বেশ অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার শোনা যাচ্ছে, ধাক্কা দাও।
রিপন বলল, ভাই আপনি কই?
পলাশ: এদিকে আসেন।
রিপন সামনে এগিয়ে যায়।
পলাশ: বাগানের ভেতর আসেন।
রিপন বাগানে ঢুকে পড়ে, ‘ভাই আপনাকে দেখছি না তো।’
পলাশ: ভাই, টবগুলোর পাশে আসেন।
রিপন টবের পাশে এসে দাঁড়ায়।
পলাশ: ভাই, আপনার মতো মানুষ হয় না। আসেন, একটু ধাক্কা দেন তো। অনেকক্ষণ দোলনায় বসে আছি। এত ডাকছি। কেউ ধাক্কা দিতে আসছে না।
কলি