বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি এই যুগে জন্মাতেন, তাহলে পরিস্থিতি কেমন হতো? সেটাই জানাচ্ছেন মো. রাকিব
ফেসবুকে তার এক বা একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকত! অল্প দিনেই ফেসবুক চ্যাট, স্ট্যাটাস দেওয়া, বিভিন্নজনের ছবিতে লাইক দেওয়া এবং অসংখ্য গ্রুপের সদস্য হতেন। তার প্রকাশিত লেখার কাটিং বিভিন্ন বন্ধুকে ট্যাগ করতেন। এই করতে করতে সময় কেটে যেত। আসল কাজ লেখালেখি তেমন একটা হতো না! বড়জোর নির্মলেন্দু গুণের মুঠোফোনের কাব্যের আদলে ফেসবুক কাব্য লেখার চেষ্টা করতেন!
তার ভক্ত ও অনুরাগীরা সরকারের কাছে দাবি জানাত, রবীন্দ্রনাথের নামে একটি সড়কের নামকরণ করার জন্য। কিন্তু সরকার কিছুতেই এ দাবি মেনে নিত না। ফলে ভক্তরা কঠোর আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। ভক্তদের একাংশ হতাহত হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই নিত। পরদিন দৈনিকের পাতায় শিরোনাম হতো- পুলিশের হাতে মার খেল রবি ঠাকুরের ভক্তরা!
সোনার তরীর মতো লেখা পড়ে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠত- রবীন্দ্রনাথ নির্ঘাত আওয়ামী লীগ করেন। নইলে তিনি এই নামে বই লিখলেন কেন। তবে নৌকাডুবি প্রকাশ হওয়ার পর তাদের ক্রোধ কিছুটা মিটত।
কবিতা লিখলে মোটামুটি ১৪ লাইনে আর গল্প ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ শব্দে লিখতে বাধ্য করতেন পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকরা। শব্দসংখ্যা বেড়ে গেলে সেই লেখা কেটেছেটে বনসাই স্টাইলে ছোট করতেন অথবা অনন্তকালের জন্য ঝুলিয়ে রাখতেন। সম্পাদক দয়ালু হলে কিঞ্চিৎ বড় গল্পটাই ঈদসংখ্যায় উপন্যাস হিসেবে চালিয়ে দিতেন!
ফ্ল্যাপ লিখে দেওয়ার জন্য তার বাসায় নব্য লেখকরা ভিড় জমাতেন। তরুণীরা চেষ্টা করতেন, রূপের মায়াজালে গুরুর মন ভজাতে!
প্রতি বছর ঈদ ও পূজা সংখ্যায় কমসে কম তার ১০টি উপন্যাস ও ৩০টি কবিতা ছাপা হতো! বেশি লিখতে গিয়ে যে পুনরাবৃত্তি করে ফেলতেন, তা নিজেও টের পেতেন না!
কাগজ-কলমের দিন শেষ। এখন কম্পিউটারের যুগ। তাই তিনিও লিখতেন কম্পিউটারে। কিন্তু কম্পিউটার ভাইরাস অ্যাটাকজনিত কারণে যখন বিগড়ে যেত, তখন বলতেন- দাও ফিরে সেই অরণ্য, লও এই সভ্যতা!
গল্প-কবিতায় সাময়িক ইস্তফা দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য ধারাবাহিক নাটক, এক ঘণ্টার নাটক ও টেলিফিল্মের চিত্রনাট্য নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। কখনো কখনো চরিত্র ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নিজেই শুটিং স্পটে হাজির হতেন!
বিভিন্ন সংগঠন তাকে পদক দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগত। তিনিও এসব পদক সংগ্রহ করে ভাঁড়ার ঘরে রেখে দিতেন। পরে সাক্ষাৎকারে এবং বইয়ের ফ্ল্যাপে যখন পুরস্কারপ্রাপ্তির তালিকায় নামগুলো থাকত না, পদকদাতারা মনে মনে গোস্বা হতেন!
তার নামের আগে নানা বিশেষণ যুক্ত হতো- শক্তিশালী কবি, জীবনঘনিষ্ঠ ঔপন্যাসিক, মননশীল প্রাবন্ধিক, চিন্তাশীল গবেষক...!
সকাল বিকেল টেলিভিশন ভবনে ছুটতে হতো স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করার জন্য। কবিতা আবৃত্তি করতেন ঠিকই, কিন্তু টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ অনারিয়ামের চেক দিতে গড়িমসি করত!
তার গান এবং কবিতার মিউজিক ভিডিও হতো। কখনো সখনো তিনি নিজেই মডেল হতেন!
বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় নিয়মিত আসতেন। বইতে অটোগ্রাফ দিয়ে বই বিক্রিতে বড়সড় প্রভাব রাখতেন!
সতীর্থ লেখকরা ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে তার নামে কুৎসা রটাত- ছ্যা ছ্যা, তিনি নাকি কবিগুরু! আরে তার তো বাক্যই হয় না। ব্যাকরণেরও তোয়াক্কা করেন না! তার মতো লেখকের জানা উচিত, ব্যাকরণ না জেনে লেখা ঠিক না!
ছাত্রদল-ছাত্র লীগের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি তাকে পীড়িত করত। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় জ্বালাময়ী কলাম লিখতেন। তা পড়ে ছাত্রনেতারা কবিগুরুকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করতেন!
রঙ্গব্যঙ্গর মতো ফান পেজগুলোর জন্য রম্যগল্প নিতে তার বাসায় ভিড় জমত।
কলি