জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক যদি সরকারি কোনো অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হতো তাহলে অবশ্যই যে ঘটনাগুলো ঘটত তা একটু কল্পনা করে নিই।
ডোমেইন নেম: ফেসবুকের বর্তমান ডোমেইন নেম www.facebook.com। ফেসবুক যদি সরকারের অধীনে থাকত তাহলে এর বর্তমান ডোমেইন নেমের পরিবর্তে আপনাকে ক্লিক করতে হতো www.facebook.gov.bd এই অ্যাড্রেসে।
পরিচালনা: ফেসবুক পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ভার দেওয়া হতো যুব এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী পদাধিকার বলে ফেসবুকের মহাপরিচালক (সিইও না) হিসেবে কাজ করতেন। ফেসবুক কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শেখার জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দেশব্যাপী ডিপ্লোমা কোর্স চালু করত।
হেড অফিস: স্বাভাবিকভাবে ফেসবুকের হেড অফিস হতো সচিবালয়ে। সেখানে ফেসবুকের জন্য দুটি কামরা বরাদ্দ দেওয়া হতো। তবে সার্ভার রাখার জন্য কারওয়ান বাজার কিংবা চানখারপুলে জমি কিনে ভবন বানানো হতো। এই জমি কিনতে গিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করতেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দুর্নীতি তদন্তে নামত দুদক।
সার্ভার কেনা: ফেসবুক ব্যবহারকারীদের লাখ লাখ ছবি, ভিডিও, গান রাখার জন্য প্রয়োজন হাজার হাজার সার্ভার। ফেসবুক যদি সরকারের হাতে থাকত তাহলে তারা গুটি কয় মান্ধাতার আমলের পুরোনো সার্ভার দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করত। ফলস্বরূপ ছবি কিংবা ভিডিও আপলোডে সমস্যায় পড়তেন ব্যবহারকারীরা। সংকট মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী নিজে হস্তক্ষেপ করতেন। জরুরি ভিত্তিতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে কুইক রেন্টাল সার্ভার দিয়ে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করা হতো।
অ্যাকাউন্ট খোলা: ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজন হতো দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার কর্তৃক সত্যায়িত), নমিনির ছবি (অ্যাকাউন্ট খুলতে আগ্রহী ব্যক্তি কর্তৃক সত্যায়িত), জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে পাসপোর্টের ফটোকপি, মহাপরিচালক-ফেসবুক বরাবর ২৫০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট এবং আয়কর শনাক্তকরণ নাম্বার। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেওয়ার ১০ কর্মদিবস পর পাওয়া যেত ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড।
ফুটপাথে উৎপাত: ফেসবুকের হেড অফিসের সামনে দালাল থাকত। স্বাভাবিকভাবেই এদের প্রধান হতেন ফেসবুক মহাপরিচালকের শালা কিংবা ভায়রা। দালালরা ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার বিনিময়ে দ্রুত নতুন ব্যবহারকারীকে ফেসবুক ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড বের করে দিত।
কঠোর আইন: ফেসবুকে ফেক আইডিধারীদের প্রতিরোধে কঠোর আইন করত সরকার। অপরাধীদের দ্রুত বিচার আইনে মামলা করা হতো। অপরাধ প্রমাণিত হলে ছয় মাস থেকে দশ বছর পর্যন্ত জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারত।
নতুন ফিচার: সরকার ফেসবুকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফিচার যোগ করতেন। এ ব্যাপারে আর্থিক সাহায্য নেওয়ার জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা এবং মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। বরাবরের মতো বিশ্বব্যাংক এই খাতে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থ দেওয়া থেকে বিরত থাকত।
মামলা: ফেসবুক টাইম লাইন কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে হাইকোর্টে রিট মামলা করা হতো। শুনানিকালে বিচারক কয়েকবার বিব্রত হতেন। ফলে মামলার ভাগ্য ঝুলে যেত। তবে ব্যাপারটায় খুশি হতেন উকিলরা। কারণ রায়ে যত দেরি, তত শুনানি, তত টাকা।
ভোগান্তি: ব্যান্ডউইথ কম থাকায় ফেসবুকের হোম পেজে ঢোকা হতো বিরাট কষ্টকর ব্যাপার। ইউআরএলে অ্যাড্রেস লিখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো হোম পেজের জন্য। যদিওবা কেউ ঢুকতে পারত তাহলে দেখত এর প্রোফাইলে ওর ছবি, ওর প্রোফাইলে তার ছবি বসিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ছবি সংক্রান্ত এই জটিলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন ফেসবুক দপ্তরে ঘোরাঘুরি করতে হতো।
টেন্ডারবাজি: ফেসবুকের যাবতীয় টেন্ডার পাওয়ার জন্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে চলত রেষারেষি। এরকম পরিস্থিতিতে ছাত্রশিবির কোনো টেন্ডার না পেয়ে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো ছটফট করত।
অর্থ সংগ্রহ: নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ফেসবুককে ব্যবহার করা হতো। প্রতিটি ছবি আপলোডের জন্য এক টাকা, প্রতিটি স্ট্যাটাসের জন্য ৫০ পয়সা এবং প্রতিটি কমেন্টসের জন্য ২৫ পয়সা হারে কর্তন করে ওই অর্থ দিয়ে সেতু বানানো হতো। বর্ণিত সব অর্থের সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হতো।
সাইট হ্যাকিং: ভারতীয় হ্যাকাররা বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করে মজা পায়। ফেসবুক সরকারের অধীনে থাকলে অন্যান্য সরকারি সাইটের সঙ্গে সঙ্গে তারা ফেসবুকও হ্যাক করত।
নির্বাচন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বলেই হয়তো ফেসবুকের মহাপরিচালক সবার মধ্যে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে যেতেন। ফলস্বরূপ তার মধ্যে আবির্ভাব হতো দেশপ্রেম করার বাসনা। ইতোমধ্যে দুর্নীতি করে ভালো পয়সা কামিয়েছেন তিনি। তাই দেরি না করে মাদারীপুর-৪ আসন থেকে এমপি নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যেতেন।
কলি