বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাত দিন দিন বড় হচ্ছে। যদিও দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনও লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহারে আগ্রহী রয়েছে। আর এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায় নেতৃবৃন্দের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৮ মে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, বাংলাদেশে লাইসেন্সকৃত সফটওয়্যারের ব্যবহার বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সফটওয়্যার বিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা দ্য সফটওয়্যার এলায়েন্স বা বিএসএ। সাইবার ঝুঁকি এড়াতে লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলে মনে করছে সংস্থাটি।
বিএসএ-এর সিনিয়র ডিরেক্টর তরুণ সাওনি বলেন, লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারের ব্যবহার তথ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। যার ফলে সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ, তথ্য চুরি ও ম্যালওয়্যার আক্রমণের শঙ্কা বেড়ে যায়। এসব ঘটনা গ্রাহক, অংশীদার ও সহযোগীদের বিশ্বাস ও আস্থা নষ্ট করতে পারে। এছাড়া এটি যে কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য আইনী ঝুঁকি তৈরির পাশাপাশি সুনাম নষ্টের কারণ হতে পারে। আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যারের ব্যবহার কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন, যার ফলে যে কোন সংস্থা বা সংগঠন মামলা, জরিমানা অথবা আইনি জরিমানার সম্মুখীন হতে পারে।
বিএসএ-এর তথ্যে উঠে এসেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতের অনেক কোম্পানিই লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। যার মধ্যে আছে উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, খুচরা ও বড় ব্যবসা, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট, ভোগ্যপণ্য, ব্যাংকিং, আর্থিক পরিষেবা এবং স্থাপত্য ও প্রকৌশলসহ অন্যান্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
বিএসএ-এর সিনিয়র ডিরেক্টর বলেন, ‘লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষতি শুধু আর্থিক ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর কারণে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয় এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনও বাধাগ্রস্ত হয়।’
বিএসএ বাংলাদেশের বড় আকারে ব্যবসায়িক কাজে যাতে বৈধভাবে সফটওয়্যারগুলো ব্যবহার করা হয়, সে জন্য বাংলাদেশের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির মতো সরকারি সংস্থার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
লাইসেন্সবিহীন সফটওয়্যার সংক্রান্ত ঝুঁকি তুলে ধরে বাংলাদেশের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটি সাইবার হুমকির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। শুধুমাত্র ঝুঁকি কমানোর জন্য নয় বরং একটি নিরাপদ ও বিপদমুক্ত সাইবার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাগুলোর উচিত বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দেয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার এই সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমরা নিয়মিতই ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোকে বৈধ সফটওয়্যার ব্যবহার ও নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন করার পরামর্শ দিই। বিএসএ-এর মতো সংস্থাগুলোর সহযোগিতা এই বিষয়ক সচেতনতা এবং বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। এসব উদ্যোগ কার্যকরভাবে সাইবার নিরাপত্তার হুমকি কমাতে ভূমিকা রাখবে।’
২০১৯ সাল থেকে সংস্থাটি প্রায় ১০ লাখ পিসিতে বৈধ ও নিরাপদ সফটওয়্যার ইনস্টল করার জন্য ‘লিগ্যালাইজ অ্যান্ড প্রোটেক্ট’ নামের আঞ্চলিক প্রচারভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। অবৈধ সফটওয়্যারের ব্যবহার এখনও চালু থাকায় ব্যবসায়িক সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে সচেতন করতে, বিশ্বব্যাপী বিএসএ তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চায় সংস্থাটি।
বিএসএ বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছে ও আন্তর্জাতিক বাজারে সফটওয়্যার খাতকে তুলে ধরতে শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা হিসেবে পরিচিত। এর সদস্যদের মধ্যে আছে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলো। যারা যে কোন ধরণের ছোট-বড় ব্যবসার আধুনিকায়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সফটওয়্যারভিত্তিক সমাধান তৈরি করে। সংস্থাটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে। ৩০ টিরও বেশি দেশে বিএসএ’র কার্যক্রম চালু রয়েছে।