ঢাকা ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
English

ঘটনাগুলো নজরুল-জীবনের

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ১২:১৯ পিএম
ঘটনাগুলো নজরুল-জীবনের
গান শেখাচ্ছেন নজরুল। ১৭ বছর বয়সে নজরুল

একবার এক ইংরেজ পরিবারকে ইংরেজিতে ঠিকানা বুঝিয়ে বলতে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল নজরুলের। সঙ্গে ছিলেন বাল্যবন্ধু শৈলজানন্দ। তখনই প্রতিজ্ঞা করলেন ইংরেজিতে কথা বলা শিখতে হবে। দুই বন্ধু মিলে শুরু করলেন ইংরেজি খবরের কাগজ পড়া। লাইব্রেরি থেকে ইংরেজি গল্পের বই এনে পড়া। সঙ্গে নিয়ে বসলেন ডিকশনারি। কয়েক দিন খুব চেষ্টা-টেষ্টা চলল। ডিকশনারি খুঁজে খুঁজে অর্থ বের করতে করতেই হাঁপিয়ে গেলেন তারা। এটা নয় ওটা। ওটা নয় সেটা। এমনি করে করে লাইব্রেরি থেকে মোটা মোটা ইংরেজি বই এনে লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা করে ফেললেন দুই বন্ধু। বন্ধু শৈল তো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এদিকে নজরুল কিন্তু লাইব্রেরি থেকে বই এনে পাতা উল্টিয়েও দেখলেন না। মোটা বইগুলো তার ডুগিতবলা বাজানোর জন্যই বেশি কাজে লাগতে থাকল। শেষে বই পড়ে ইংরেজি শেখার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললেন। তাই বলে ইংরেজিতে কথা বলা শেখার ভূত কিন্তু মাথা থেকে গেল না। নতুন বুদ্ধি আঁটলেন। ইংরেজিতে কথা বলতে হলে তাদের চাই একজন ইংরেজ। ইংরেজের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তারাও ইংরেজের মতো ঝরঝরে ইংরেজি বলবেন। খুঁজতে খুঁজতে মিস্টার শেকার নামে এক ইংরেজকে পেয়েও গেলেন। এত সহজে ইংরেজি শেখার সুযোগ থাকতে বই পড়ার কষ্ট করতে যাবেনই বা কেন? ব্যাস, ইংরেজ তো পাওয়া গেল। এবার শুধু খাতির করার পালা। খাতির করতে গিয়ে দুই বন্ধু ইংরেজিতে কথা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ইংরেজ কিন্তু সমানে বাংলায় কথা বলে চললেন। বাংলায় কথা বলতে পেরে ইংরেজ মোটেও ইংরেজি বলছেন না। মহা মুশকিলে পড়লেন দুই বন্ধু। ইংরেজ যখন, ইংরেজি তো বলবেই। এই ভেবে দুজনে তার সঙ্গে খাতির করে বেশ ক’দিন খুব ঘন ঘন তাদের বাড়ি গেলেন। সাহেবের পরিবারের মানুষগুলোর সঙ্গে আলাপ-সালাপও হলো অনেক। আলাপ পরিচয় খাতির সবই হলো, কিন্তু তারা যে সব কথাই বাংলায় বলে! ইংরেজিতে কথাই বলে না। নজরুল বললেন, এরা নিশ্চয় অন্য জাত। আর তা না হলে এরা বাংলাদেশে থেকে বাংলা শিখে ইংরেজি ভুলে গেছে।

নজরুল আর মুজফফর আহমেদ এক সময় বাড়ি ভাড়া নিলেন ৮/এ, টার্নার স্ট্রিটে। এটি ছিল নবযুগ অফিসের খুব কাছে। মাত্র দু-মিনিটের পথ। বাড়ির মাসিক ভাড়া ছিল দশ টাকার কিছু কম। মুসলমানদের বস্তি এলাকার মধ্যে তাদের বাড়িটিই ছিল একতলা পাকা বাড়ি। সেখানে নজরুল এলাকার বয়স্কা মহিলাদের সঙ্গে খাতির জমিয়ে ফেললেন। নানান রকমের খালা জুটে গেল নজরুলের। যাদের গায়ের রং ফর্সা, তারা আবার তার রাঙা খালা হয়ে উঠল। এই খালারা কিন্তু তাকে বেশ ভালোবাসত। প্রায়ই তারা রান্না করা তরকারি দিয়ে যেত।

কাজী নজরুলের অনেক গানই তখন আব্বাসউদ্দীনের গলায় রেকর্ড করা হয়েছিল। তিনি নজরুলকে ইসলামি গান লেখার জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করলেন এভাবে- “একদিন কাজিদাকে বললাম, ‘কাজিদা, একটা কথা মনে হয়। এই যে পিয়ারু কাওয়াল, কাল্লু কাওয়াল এরা উর্দু কাওয়ালি গায়, এদের গানও শুনি অসম্ভব বিক্রি হয়, এই ধরনের বাংলায় ইসলামি গান দিলে হয় না? তারপর আপনি তো জানেন কীভাবে কাফের কুফর ইত্যাদি বলে বাংলায় মুসলমান সমাজের কাছে আপনাকে আপাঙক্তেয় করে রাখবার জন্য আদা-জল খেয়ে লেগেছে একদল ধর্মান্ধ! আপনি যদি ইসলামি গান লেখেন তা হলে মুসলমানের ঘরে ঘরে আবার উঠবে আপনার জয়গান।’ কথাটা তার মনে লাগল।” নজরুল সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেও রাজি হলেন না গ্রামোফোন কোম্পানির রিহার্সাল ইন-চার্জ ভগবতী বাবু। তাকে রাজি করাতে অবশ্য ছয় মাস সময় লেগেছিল। ভগবতী বাবু রাজি হতেই শিল্পী আব্বাসউদ্দীন গান লেখানোর ব্যবস্থা করে ফেললেন। পাশের ঘরে কাজিদা আছেন- শুনেই আব্বাসউদ্দীন গিয়ে বললেন, ‘ভগবতী বাবু রাজি হয়েছেন।’ তখন সেখানে ইন্দুবালা গান শিখছিলেন নজরুলের কাছে। নজরুল বলে উঠলেন, ‘ইন্দু তুমি বাড়ি যাও, আব্বাসের সঙ্গে কাজ আছে।’ ইন্দুবালা চলে গেলেন। সঙ্গে সঙ্গেই আব্বাসউদ্দীন এক ঠোংগা পান আর চা আনতে পাঠালেন। পান আর চা নিয়ে দরজা বন্ধ করে আধঘণ্টার ভেতরই নজরুল লিখে ফেললেন, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ সঙ্গে সঙ্গেই সুরসংযোগ করে আব্বাসউদ্দীনকে শিখিয়েও দিলেন গানটি। পরের দিন ঠিক একই সময় আব্বাসউদ্দীনকে আসতে বললেন। পরের দিন লিখলেন, ‘ইসলামের ওই সওদা লয়ে এলো নবীন সওদাগর।’ তারপর থেকেই নজরুল একের পর এক ইসলামি গান লিখে চলেছেন। গান শুনলে যারা কানে আঙুল দিয়ে রাখত, তাদের কানেও গেল ‘নাম মোহাম্মদ বোল রে মন নাম আহমেদ বোল,’ ‘আল্লাহ আমার প্রভু আমার নাহি নাহি ভয়,’ ‘আল্লা নামের বীজ বুনেছি,’ ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়।’ এ রকম আরও অনেক ইসলামি গান মুগ্ধ হয়ে শুনতে শুরু করল কান থেকে হাত নামিয়ে বাংলার মুসলমানরা। বাংলার মুসলমানের ঘরে ঘরে জেগে উঠল নতুন এক উন্মাদনা।    
 
একদিন স্টুডিওতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন শিল্পী ও কবি। আড্ডার বিষয় ছিল, টাকা থাকলে প্রিয়ার জন্য কে কী করতেন? কেমন উপহার দিতেন? কত দামি অলংকার কিনতেন? আড্ডা বেশ জমে উঠেছে। এমন সময় কাজী নজরুল এলেন। আড্ডার গল্পসল্প শুনলেন কিছুক্ষণ। কিন্তু কিছুই বললেন না। হঠাৎ হারমোনিয়ামটা টেনে নিলেন। আর বাজাতে বাজাতে সুর তুলে নতুন এক গান গাইতে শুরু করলেন-
মোর প্রিয়া হবে এসো রানী
দেব খোঁপায় তারার ফুল।
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির
চৈতী চাঁদের দুল।
কণ্ঠে তোমার পরাবো বালিকা,
হংস-সারির দুলানো মালিকা।
বিজলী জরির ফিতায় বাঁধিব
 মেঘ-রং এলা চুল।
 জোছনার সাথে চন্দন দিয়ে
মাখাব তোমার গায়,
রামধনু হতে লাল রং ছানি 
আলতা পরাব পায়।
আমার গানের সাত-সুর দিয়া,
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া।
 তোমারে ঘেরিয়া গাহিব আমার
কবিতার বুলবুল।।
গান শেষে নজরুল সবার উদ্দেশে বললেন, কী? কয় টাকা লাগল বধূকে সাজাতে। 

জাহ্নবী

 

যেভাবে এল পরীক্ষা পদ্ধতি

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১২:১০ পিএম
যেভাবে এল পরীক্ষা পদ্ধতি
ছবি: সংগৃহীত

স্কুল, পড়াশোনা, বন্ধু-সহপাঠী এসবের কোনো কিছুই মন্দ নয়। তবে বছর বছর পরীক্ষা দেওয়ার পদ্ধতি কে বা কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল- এমন একটি প্রশ্ন স্কুল জীবনের কোনো না কোনো সময় প্রায় সবার মাথায় আসে। কখনোবা মনে হয় কিইবা ক্ষতি হতো পরীক্ষা নামক কিছু না থাকলে! কেউ আবার সরাসরি মনের রাগ প্রকাশ করে বসে পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তকের ওপর। তবে কে সেই পরীক্ষা পদ্ধতির আবিষ্কারক সেটি থেকে যায় প্রায় সবার কাছেই অজানা। 

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার শুরু থেকেই পরীক্ষা পদ্ধতির সম্পর্ক ছিল এমনটা নয়। স্কুল-কলেজে আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির আবিষ্কারক বলা হয় হেনরি ফিশেলকে। জার্মান-আমেরিকান এই অধ্যাপক ছিলেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক। তবে হেনরির পরীক্ষা প্রবর্তন ধারণারও অনেক আগে পরীক্ষা প্রবর্তনের ঘটনা ঘটেছিল চীনে। ৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে চীনের শুই রাজবংশের অধীনে প্রথম আয়োজিত হয় ‘ইম্পেরিয়াল এক্সামিনেশন।’ এটি ছিল বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা। তবে এটি কোনো স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছিল না। সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মী বাছাইয়ে সে সময় চীনের রাজা আয়োজন করেন এই লিখিত পরীক্ষার। চীনের বিখ্যাত দার্শনিক কনফুসিয়াসের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছিল বিশ্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক পরীক্ষার প্রশ্ন।

এর পরে ১২০০ থেকে ১৫০০ শতাব্দীর ভেতর অক্সফোর্ড, প্যারিস ও বলোনিয়ার মতো প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয় লাতিন ভাষায় শিক্ষার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার প্রচলন। তবে সেসময় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়বস্তু ছিল সীমিত। ১৬০০ থেকে ১৭০০ শতাব্দীর ভেতর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রথম যুক্ত করা হয় বিজ্ঞান এবং গণিতের মতো কঠিন, গুরুত্বপূর্ণ দুই বিষয়কে।

আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রথম দিকের উদাহরণ ১৮০৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের ‘সিভিল সার্ভিস এক্সামিনেশন’ এবং ১৯ শতকের ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট। সিভিল সার্ভিস এক্সামিনেশনটি ছিল মূলত ইংল্যান্ডে সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষা। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি, গণিত, ফরাসি, লাতিন, জার্মান, ভূগোল, ইতিহাস প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষা ও বিষয়ের সমন্বয়ে গঠিত আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতি। বর্তমান সময়েও বিভিন্ন দেশে পরীক্ষা পদ্ধতি তৈরিতে মাথায় রাখা হয় ক্যামব্রিজ অ্যাসেসমেন্টের ধারণাকে। ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করে ব্রিটিশরা। তবে সেটি ছিল অনেকটা চীনের প্রাচীন পরীক্ষা পদ্ধতির আদলে তৈরি। যোগ্য সরকারি কর্মচারী খুঁজে পাওয়াই ছিল তাদের প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতির উদ্দেশ্য।

আধুনিক পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তক হেনরি ফিশেল। ছবি: সংগৃহীত

 

আবার আসি হেনরি ফিশারের কথায়। সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে আধুনিক যে পরীক্ষার ধরন এখন প্রচলিত তার উদ্ভাবক কিন্তু এই অধ্যাপকই। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লেখা মূল্যায়ন করতে করতে ক্লান্ত অনুভব করছিলেন হেনরি। শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও শেখার দক্ষতাকে কীভাবে আরও সহজে আধুনিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় এমনটাই ভাবতে শুরু করেন তিনি। এর থেকে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, আধুনিক সিলেবাস ও যোগ্যতা যাচাইয়ের আধুনিক সংস্করণের ধারণা নিয়ে আসেন হেনরি।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি। তবে বর্তমানের পরীক্ষা পদ্ধতিও সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। তোমরাও হয়তো লক্ষ করেছ বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কারণে পরিবর্তিত হয় শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার কারিকুলাম। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের জন্য পরীক্ষার আদতেই প্রয়োজন আছে কি না এই নিয়েও আছে ভিন্নমত। ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা পদ্ধতি থাকবেই কি না, তাও কিন্তু নিশ্চিত নয়। এমনকি এর পরিবর্তে আসতে পারে মেধা যাচাই ও পড়াশোনার কোনো নতুন উপায়।

 

মাটির কারিগর

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:৩০ এএম
মাটির কারিগর

শীতের সকাল। সূর্যটা সবে কুয়াশা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে। বাড়ির উঠানে মাটির চুলার আগুনের পাশে বসে আছে বছর চারেকের এক বাচ্চা আর তার মা। ভালো করে সোয়েটার, চাদর মুড়ি দিয়ে মায়ের কোলঘেঁষে টুকটুক করে লিখে চলেছে ছেলেটা।

থেকে থেকে মায়ের কাছ থেকে শুনে নিচ্ছে লেখা থামিয়ে। লিখতে লিখতে কখনো পেনসিলে হাত শক্ত হয়ে চেপে বসছে। কখনো চোখ ছলছল। ছেলেটা সেই গল্পটাই লিখছে। পাশের বাসার মানুষটা প্রায় প্রতিরাতেই বউকে মারে। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সকে তখন খুব একটা গা করে না মানুষও। যেন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মজার ছলে এ নিয়ে গল্পগুজব করে। মায়ের দুশ্চিন্তা ছেলেকে নিয়ে। এ পরিবেশ দেখে বড় হতে হতে ছেলে আবার এটাকেই স্বাভাবিক ভেবে নেবে না তো? এই ছোট্ট ছেলের মনে দাগ না ফেলে কীভাবে বিষয়টা বোঝানো যায়, তা নিয়ে মায়ের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে। কীভাবে ছোট্ট মনে দাগ না ফেলে বুঝিয়ে দেওয়া যায় যে, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ভাবতে ভাবতে বুদ্ধি এল মায়ের মাথায়।

ছেলের গল্প শোনায় খুব আগ্রহ। একই গল্প বারবার শোনাতেও আপত্তি নেই। এক সকালে ছেলেকে বললেন, অনেক তো গল্প শুনলে। এবার আমরা একটা গল্প লিখব। ঠিক আছে? অভূতপূর্ব এ প্রস্তাবে বাচ্চা ছেলে তো লাফিয়ে উঠল, কখন লিখব আম্মু? কখন? সেই আইডিয়া থেকেই শীতের সকালের ওই দৃশ্য। মা মুখে বলে দিচ্ছে আর ছেলে লিখে যাচ্ছে। গল্পের চরিত্রও তার পরিচিত। অত্যাচারিত বউটিকে নিয়ে গল্প। অত্যাচারের গল্প লিখতে লিখতে রাগে ফুঁসছে ছেলেটা কখনো। কখনো আবার বউটির দুঃখে কষ্ট পাচ্ছে। লিখতে লিখতে শেষে যখন বউটি ন্যায়বিচার পাচ্ছিল, খুশিতে আত্মহারা ছেলে। মায়ের মুখেও হাসি। ছেলের খুশি দেখে কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজটা সোজা হয় মায়ের। নিজের হাতে লেখা গল্পটা হৃদয়ে গেঁথে থাকবে। ভুলবে না এত সহজে। মায়ের ভাবনাটা ভুল নয়। সেই গল্পের শিক্ষণীয় বিষয়টা ভুলে যায়নি ছেলেটা।

এই হিম মেশানো উষ্ণ স্মৃতিটা আমার গল্প। আমার লেখার হাতেখড়ি থেকে গল্পচ্ছলে ন্যায়-অন্যায় বোধ তৈরি হওয়ার গল্প। আম্মু কখনো জোর করে কিছু চাপিয়ে দিয়ে শেখাননি। সবসময় এরকম গল্পচ্ছলে দেখিয়ে দিয়েছেন সঠিক পথটা। যে কারণে বিষয়গুলো মনে দাগ কেটে থেকে গেছে, হারিয়ে যায়নি কখনো। আম্মুর কোলে বসে গল্প শুনতে শুনতেই রূপকথার রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো শুরু। বইয়ের পাতায় হারিয়ে যেতে শেখা, তার কাছ থেকেই। লেখার হাতেখড়ি থেকে লেখার প্রেমে পড়াটাও তিনিই শিখিয়েছেন। মনের অবুঝ কথাগুলো থেকে শুরু করে আজকালের খটমটে থিসিস লেখার পথটিও আম্মুই শুরু করে দিয়েছিলেন। গল্পের মধ্যদিয়ে কখন আমাকে মানুষ করে তুলছিলেন তাও বুঝতে দেননি। মাটির পুতুল থেকে ধীরে ধীরে মানুষের আকারে গড়ে তোলা আমার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকটি আর কেউ নন, আমার মা।

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

‘দ্য আর্থ প্রাইজ’-এর ১৭ বিজয়ী

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম
‘দ্য আর্থ প্রাইজ’-এর ১৭ বিজয়ী
বর্ষসেরা উদ্ভাবক টমাস চের্মাক ও আনা পোডমানিকা। ছবি: সংগৃহীত

টিনএজারদের জন্য পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ‘দ্য আর্থ প্রাইজ।’ প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় সারা বিশ্বের টিনএজাররা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় নিজেদের বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন নিয়ে। এ বছর দ্য আর্থ প্রাইজের বর্ষসেরা উদ্ভাবক হয়েছে স্লোভাকিয়া ও চেকিয়ার দুই কিশোর-কিশোরী। এ ছাড়া বিশ্বের সাতটি অঞ্চল থেকে বিজয়ী হয়েছে মোট ১৭ জন। চলো জেনে নিই এবারের বিজয়ী ও তাদের উদ্ভাবন সম্পর্কে। 


বর্ষসেরা উদ্ভাবন ‘পুরা’
আমাদের এ পৃথিবীর প্রায় ৭০ ভাগই পানি। তবুও নিরাপদ পানির জন্য হাহাকার পৃথিবীর প্রায় সব প্রান্তেই। ‘পুরা’ এমন এক পানি পরিশোধক যন্ত্র যা আলো ও প্লাজমার শক্তি ব্যবহার করে পানি থেকে দূষিত পদার্থ আলাদা করে এবং পানি থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সরিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। পানি পরিশোধনের বিশেষ এ যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন স্লোভাকিয়ার ১৯ বছর বয়সী কিশোর আনা পোডমানিকা এবং চেকিয়ার ১৮ বছর বয়সী কিশোরী টমাস চের্মাক। উদ্ভাবক আনা পোডমানিকা স্লোভাকিয়ার একজন তরুণ বিজ্ঞানী। চেক প্রজাতন্ত্রের বাসিন্দা টমাস চের্মাক একজন অটিজম সমর্থক এবং চেক একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিক্সের গবেষক। এবারের আর্থ প্রাইজের হাজার হাজার প্রকল্পের ভেতর বর্ষসেরা উদ্ভাবন ও উদ্ভাবকের খেতাবটি তাদের ঝুলিতেই।

এশিয়ার ‘থার্মাভল্ট’
বাড়িতে শুধু খাবার সংরক্ষণ করতেই নয়। হাসপাতালে ওষুধ, রক্ত, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিভিন্ন সরঞ্জাম সংরক্ষণেও রেফ্রিজারেটর একমাত্র অবলম্বন। প্রত্যন্ত গ্রামে যেখানে আজও পৌঁছায়নি বৈদ্যুতিক সুবিধা, সেখানে চিকিৎসাসেবা মোটেই সহজ নয়। ভারতের তিন টিনএজার ধ্রুব চৌধুরী, মিথ্রান লাধানিয়া এবং মৃদুল জৈন শিশুকুঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ইন্দোরের ছাত্র। তারা উদ্ভাবন করেছে লবণচালিত এক রেফ্রিজারেটর থার্মাভল্ট। এটি চালাতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না বরং অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড এবং বেরিয়াম হাইড্রোক্সাইড অক্টাহাইড্রেট ব্যবহার করে এ রেফ্রিজারেটর চলতে পারে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। আর তাতে সংরক্ষণ করা যায় রোগীর প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। এশিয়া থেকে নির্বাচিত সেরা উদ্ভাবকের এ দল ইতোমধ্যেই ১২০টি সুবিধাবঞ্চিত হাসপাতালের জন্য ২০০টি থার্মাভল্ট ফ্রিজ তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

আফ্রিকার ‘প্রিজার্ভ আওয়ার রুটস’ 
জলবায়ুর পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী এখন প্রাণী ও মানুষের আতঙ্কের কারণ। নাইজেরিয়ার ১৭ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী আমারা সি এনওনেলি ‘প্রিজার্ভ আওয়ার রুটস’ প্রকল্পের উদ্যোক্তা। এ প্রকল্পের মধ্যদিয়ে এনওনেলি  নাইজেরিয়ার পরিত্যক্ত জিনিস ব্যবহার করে শহরের দূষিত স্থানে গড়ে তুলেছে অসংখ্য পরিবেশবান্ধব ছোট পার্ক। কীভাবে একটি ডাস্টবিনকে খেলার মাঠে রূপান্তর করা যায়- এমন ভাবনা থেকেই এই কিশোরী গড়ে তোলে এমন প্রকল্প। প্রাণ, প্রকৃতি ও সবুজায়ন ফিরিয়ে আনতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন দেশে সাড়া ফেলেছে তার এ উদ্যোগ। আর সেই সঙ্গে জিতে নেয় আফ্রিকার সেরা আর্থ প্রাইজ বিজয়ীর খেতাব।

মধ্যপ্রাচ্যের ‘সাসটেইনেবিলিটি হিরো’
মধ্যপ্রাচ্যের আরব আমিরাতের চার কিশোরী উদ্ভাবক ইসরা আশরাফ, আলমাহা আলমানসুরি, ফাতমা হুসেন এবং জৌরি আব্দুল্লাহর দল ‘সাসটেইনেবিলিটি হিরো।’ পরিবেশ রক্ষায় এআই-নির্ভর অ্যাপ ‘ইকোমাইন্ড একাডেমি’ তৈরি করে এ বছর আর্থ প্রাইজের সেরা উদ্ভাবকের তালিকায় নাম লিখিয়েছে তারা। তাদের এ অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই বর্জ্যব্যবস্থাপনা এবং পুনর্ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে বর্জ্য পোড়ানো হ্রাস করা এবং টেকসই পরিবেশ গঠন সম্ভব। এ এআই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভার্চুয়াল সহকারীর সাহায্যে শিক্ষার্থীরা পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে।

ওশেনিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘কুলটিবাদো’ অ্যাপ
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি কৃষিনির্ভর দেশ ফিলিপিন্স। তবে দেশটিতে খাদ্য, কৃষিপণ্য সরবরাহ এবং শৃঙ্খলাজনিত অদক্ষতার কারণে প্রায় ৩০ ভাগ কৃষিপণ্যই নষ্ট হয়। এর ফলে শুধু খাদ্যসংকট ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনই হয় না, মিথেন নির্গমন হয়ে পরিবেশদূষণের ঘটনাও ঘটে।  কৃষি, অর্থনীতি এবং পরিবেশ বাঁচাতে ফিলিপাইনের দুই কিশোরী হেইলি এবং ইউম তৈরি করেছে কুলটিবাদো নামে একটি বিশেষ অ্যাপ। এ অ্যাপের মাধ্যমে কৃষক, ভোক্তা এবং সমবায়কে সহজেই একসঙ্গে যুক্ত করা যায়। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণকারী মধ্যস্থতাকারীদের ছাড়াই কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে গুছিয়ে খাদ্য সরবরাহ করতে পারে। এবার ওশেনিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চল থেকে সেরা উদ্ভাবকের স্বীকৃতি পেল হেইলি এবং ইউম।

উত্তর আমেরিকার ‘কিরিবোর্ড’
প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার শোষণ করে চলছে পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু। কীভাবে প্লাস্টিকের ব্যবহার আরও একটু কমানো যায় এমন ভাবনা ছিল নিউইয়র্কের স্টুইভেসান্ট হাইস্কুলের তিন টিনএজার ঝি হান, ফ্লিন্ট এবং জেমসের মাথায়। অবশেষে তারা সেই উপায় খুঁজে পায় জাপানের কাগজশিল্প কিরিগামি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে। পোর্টেবল কার্ডবোর্ড শিটকে কিরিগামি শিল্পের মতো জ্যামিতিক ভাঁজ দিয়ে তৈরি করে বিশেষ এক প্যাকেজিং পন্থা ‘কিরিবোর্ড।’ এর ফলে প্যাকেজিংয়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ফিলারের প্রয়োজন হয় না। জৈব ও পচনযোগ্য এ পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং উদ্ভাবন করে উত্তর আমেরিকার সেরা আর্থ প্রাইজ উদ্ভাবকের খেতাব অর্জন করে নিয়েছে এই তিন টিনএজার।

মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ‘ইকো অ্যাকশন’ 
ব্রাজিলের ইসাক কারভালহো ‘ইকোঅ্যাকশন’ নামক প্রকল্পের জন্য বিজয়ী হয়েছে। সে এআই এবং উপগ্রহভিত্তিক ডেটা বিশ্লেষণ করে পরিবেশের সবুজায়ন এবং পরিবেশ শীতল করতে প্রকল্প তৈরি করেছে। তার প্রকল্পটি নগর জলবায়ু বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে। চরম তাপ প্রশমনে উদ্ভিদের জন্য সবচেয়ে কৌশলগত অবস্থানগুলো চিহ্নিত করে, যাতে পরিবেশ শীতল করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার তা জানা যায়। পরিবেশকে বাসযোগ্য করতে কাজ করে যাচ্ছে হাইস্কুল পড়ুয়া ইসাক।

এখন মায়ের বন্ধু হবার সময়

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৫, ১২:০৫ এএম
এখন মায়ের বন্ধু হবার সময়
মডেল: তাহিয়া ও তার মা রায়হান কাওসার। ছবি: খবরের কাগজ

নবজাতকের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে জন্ম হয় একজন নতুন মায়ের। আবার সন্তান বড় হতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে মায়েরও বয়স বাড়তে থাকে। আমরা যখন টিনএজার তখন সাধারণত মায়েদের জীবনে চলে মধ্যম পর্যায়। এসময় শারীরিক, মানসিক, হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে তারাও নানারকম ক্লান্তিকর অনুভূতি, একাকীত্ব বা নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এসময়টাই কিন্তু মায়ের বন্ধু হয়ে উঠার চমৎকার সময়।

মায়ের কর্মজীবন সহজ করা
সন্তান জন্মদান, লালন-পালনের মূল দায়িত্বটা থাকে মায়ের উপর। সন্তানকে শৈশবে দেখাশোনা করতে গিয়ে অনেকে চাকরি জীবনের অনেক সম্ভাবনা, অর্জন ছাড় দেন। কেউ কেউ আবার চাকরি ছেড়ে পুরো সময়টাই ব্যয় করেন সন্তানের জন্য। কৈশোরে এসে কিন্তু সেই ত্যাগের প্রতিদান দেওয়ার অনেকটাই সুযোগ পাওয়া যায়। একইসঙ্গে ঘর ও বাইরের কাজ সামলানো অনেকাংশেই কঠিন হয়ে পড়ে মায়েদের জন্য। তাই সন্তান ছেলে বা মেয়ে হোক বাড়ির কাজে সাহায্য করলে মায়ের জন্য কর্মস্থলে মনোযোগ দেওয়া কিংবা মেধা বিকাশের চর্চা করা অনেকটা সহজ হয়ে যায়।

কথা বলার সঙ্গী
বয়স বৃদ্ধি, সাংসারিক চাপ, ব্যস্ততা বিভিন্ন কারণে মধ্য বয়সে মায়েরা একা অনুভব করতে শুরু করেন। জীবনের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মায়ের ঝুলিতে জমে যায় নানান সুখ-দুঃখের কথা, না বলা কথা, নানান অভিজ্ঞতা। শৈশবে মায়ের ব্যক্তিগত আলাপ বুঝার মতো হয়তো বয়স থাকে না। তবে কৈশোর থেকে আমরা যত বড় হতে থাকি ততই মায়ের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগের বয়সের ব্যবধানটা কমে আসতে থাকে। তাই কৈশোর থেকেই মায়ের সঙ্গে গল্প করার ও কথা ভাগাভাগি করার সম্পর্ক গড়ে তুলো।

মেনোপজ সম্পর্কে সচেতন হওয়া
মায়ের পিরিয়ড বা মাসিক চক্রের সঙ্গে রয়েছে গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদান তথা নাড়ির সম্পর্ক। আবার মধ্য বয়সেই যখন মায়ের মাসিক বন্ধ হয়ে যায় বা মেনোপজ ঘটে তখন শরীরে হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মায়েদের মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শরীর দূর্বল অনুভব করা, বিষণ্ন বোধ করার মতো সমস্যা দেখা দেয়। শৈশবে যেমন আমাদের সার্বক্ষণিক মায়ের সহাচার্য প্রয়োজন হয় তেমনি এসময়টাতেও মায়ের মানসিক মনোবল ও শরীরের প্রতি বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়। এসময় মায়ের পছন্দ মতো খাবার খাওয়ানো, মন-মেজাজ খারাপ থাকলে পাশে থাকা, একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার মতো কাজ করলে তিনিও নতুন এই পরিস্থিতি সহজে সামাল দিতে পারেন।

শরীরের যত্ন নেওয়া
মধ্য বয়স থেকেই বেশিরভাগ মায়েরা হাড় ক্ষয়জনিত রোগে ভুগতে থাকেন। এজন্য শরীর ব্যাথা, ক্লান্ত অনুভব করা, চলাচলে কিছু সমস্যা তৈরি হতে পারে। জানো কি হাড় ক্ষয়ের এই রোগের সঙ্গেও রয়েছে সন্তান জন্মদানের সম্পর্ক? এসময় মায়ের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়ার মধ্য দিয়েই জানানো যেতে পারে কৃতজ্ঞতা।

 

ছেলেবেলার মজার গল্প

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ০৪:৪৩ পিএম
আপডেট: ০৮ মে ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
ছেলেবেলার মজার গল্প
কৈশোরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত

আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন। রবীন্দ্রনাথের নাম শুনলেই হয়তো তোমাদের চোখে ভাসে লম্বা সাদা দাঁড়ি, শান্ত চোখের এক আলোকজ্জ্বল মুখ। শৈশব-কৈশোরেও রবীন্দ্রনাথ দেখতে ছিলেন কিন্ত বেশ সুদর্শন। তবুও মা সারদা দেবী আক্ষেপ করে বলতেন, অন্যসব ছেলে-মেয়ে থেকে আমার রবি ই কেবল কালো হল! পনেরো জন ভাই-বোনের ভেতর রবীন্দ্রনাথ ছিলেন চৌদ্দতম। সবার ভেতর রবি কে আলাদা করা যেত তার ভাবুক স্বভাবের কারণে। শৈশবেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কৌতুহলী, সৃজনশীল ও মুক্ত স্বভাবের। রবীন্দ্রনাথের শৈশব-কৈশোরের কিছু মজার গল্প নিয়ে আজকের লেখা।

বাড়ি থেকে পালিয়ে হিমালয়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত জমিদার পরিবারের সন্তান। বাড়িতে ছিল পড়াশোনা আর জীবন যাপনের কঠোর নিয়ম। স্বাধীনচেতা রবির মোটেই ভালো লাগত না এমন ধরাবাঁধা নিয়ম। ১২ বছর বয়সে একবার ঠিক করলেন বাড়ি থেকে পালিয়ে সোজা চলে যাবেন হিমালয়। সাধু-সন্ন্যাসীদের মতো প্রকৃতির মাঝে শান্তির জীবন কাটাবেন সেখানে। তবে কিভাবে যাবেন এতদূর পথ? ঠিক করলেন বাড়ি থেকে হেঁটে হেঁটেই পৌঁছে যাবেন হিমালয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। কিছু জমানো টাকা-পয়সা, শুকনো খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন হিমালয়ের উদ্দেশ্যে। তবে কিছু পথ যেতেই গঙ্গার ঘাটে তাকে দেখে ফেলেন ঠাকুর বাড়ির দারোয়ান। অগত্যা সে যাত্রায় আর হিমালয় পৌঁছানো হয়নি বালক রবির!

আকাশের তারা নিয়ে পরীক্ষা
শৈশবে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বেশ শান্ত স্বভাবের। তবে কৌতুহলী স্বভাবের কারণে কখনো কখনো দূর্ঘটনা ঘটিয়ে দুশ্চিন্তায় ফেলতেন বাড়ির বড়দের। রবির বয়স তখন ৮ কি ১০ বছর। তখন থেকেই আকাশের তারা-নক্ষত্রের সঙ্গে তার গভীর বন্ধুত্ব। একদিন রাতের আকাশের তারা দেখতে দেখতে তার মনে পড়ল পাঠ্যবইয়ে পড়েছিলেন, ‘তারা আগুনে পুড়ে না, জলে ডুবে না।’ রবির মনে প্রশ্ন এল, সবকিছুই তো আগুনে পুড়ে তাহলে তারা কেন নয়? এর উত্তর জানতে চাইলে হাতের মুঠোয় চাই আকাশের তারা। তা তো আর সম্ভব নয়। তাই তারার মতো দেখতে ছোট কাচের টুকরোতে আগুন ধরিয়ে শুরু করলেন পরীক্ষা। কাচ পোড়ার শব্দে ছুটে এসেছিলেন বাড়ির সবাই।

স্কুল ফাঁকির গল্প
স্কুল পালালেই রবীন্দ্রনাথ হওয়া যায় না এই প্রবাদটি তোমরা শুনেছ নিশ্চই। একথা যেমন সত্যি তেমনি রবির স্কুল পালানোর গল্পও মিথ্যে নয়। শৈশবে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় একদম আগ্রহ ছিল না রবীন্দ্রনাথের। তবুও বাবার আদেশে স্কুলে যেতে শুরু করেন তিনি। তবে স্কুল ফাঁকি দিতে তাঁর ছিল নানা উপায়। কখনো স্কুলের পুকুরে জুতা ভিজিয়ে রাখতেন তারপর সেই জুতা সারাদিন পায়ে রেখে জ্বর বাঁধাতেন। কখনো বদহজম এর ভান করে পড়ে থাকতেন বিছানায়। কখনো নানা ছুঁতো ধরে স্কুলে যাবার আগে লুকিয়ে পরতেন মায়ের আঁচলের নিচে। অগত্যা স্কুল থেকে ছুটি দিয়ে বাড়িতেই পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হয় তাঁর জন্য! 

/ তাসনিম তাজিন