উত্তরাঞ্চলের বড় বড় হাট-বাজারগুলোয় কমতে শুরু করেছে ধান-চালের দাম। তার মধ্যে জাত ও মানভেদে ধানের দাম মণে কমেছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া চালের দাম মণে কমেছে ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা জানান, প্রশাসনিক উদ্যোগের পাশাপাশি অটোরাইচ মিলগুলো হঠাৎ ধান কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় বাজার বগুড়ার নন্দীগ্রামের রণবাঘা হাট। গতকাল শুক্রবার হাটের ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ করে চাল কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা অর্থাৎ মণে ৮০-১২০ টাকা কমে যায়। এর প্রভাব পড়ে ধানের দামে। জাত ও মানভেদে ধানের দাম মণে কমেছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। ধানের দাম কমে যাওয়ায় গতকাল ওই হাটে যেমন কম ছিল পাইকারি ক্রেতা, তেমনি কম ছিলেন ক্ষুদ্র চাষিরা।
রণবাঘা হাটে বহু বছর ধরেই ধান পাইকারি কেনা-বেচা করেন আলহাজ জহুরুল ইসলাম। তিনি জানান, গতকাল মান ও জাতভেদে প্রতিমণ চিকন ধান তিনি কিনেছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৭০ টাকা দরে। এই দরে তিনি গতকাল কিনেছেন মোট ১ হাজার ৪২৩ মণ ধান।
অথচ গত সপ্তাহের হাটে (শুক্রবার) তিনি একই জাত ও মানের ধান কিনেছেন ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। আলহাজ জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন ধান মণে কমেছে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।’
আরেক পাইকারি ক্রেতা হাবিবুর রহমান হাবিব গত সপ্তাহে এই হাট থেকে ৯০ জাতের চিকন ধান কিনেছিলেন ২ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত। এখন একই মানের ধানের দাম কমে হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ মণে কমেছে ৩৫০ টাকা।
হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘পাইকারি বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করায় ৯০ জাতের চিকন ধান মণে কমেছে ৩৫০ টাকা।’
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বড় ধান উৎপাদনকারী এলাকা নাটোরের সিংড়া উপজেলা। গতকাল সিংড়া উপজেলার ছড়র ইটালি গ্রাম থেকে ৫ মণ ধান নিয়ে রণবাঘা হাটে আসেন ক্ষুদ্র চাষি নজরুল ইসলাম। তিনি প্রতিমণ ধান ১ হাজার ৩১০ টাকা দরে বিক্রি করেন। গত সপ্তাহে তিনি এ হাটেই একই জাতের ধান বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩৬০ টাকা দরে। নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারে চালের দাম কমে যাওয়ায় পড়ে গেছে ধানের দর।’ তার আশঙ্কা ধানের দাম আরও কমবে।
একই এলাকার আরেক চাষি নওশের প্রামাণিক ৮ মণ আনেন রণবাঘা হাটে। ক্রেতা কম থাকায় তিনি ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেন।
এ হাটে দেখা হয় আরেক চাষি মো. আনিছুর রহমানের। তিনি এনেছেন ২২ মণ ধান। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় তিনি তা বিক্রি করেননি।
মোটা ধানের পাইকারি ক্রেতা মো. সাদেকুর রহমান জানান, গত শুক্রবার রণবাঘা হাট থেকে তিনি ৪৯ জাতের ধান কিনেছিলেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। আর সেই মানের ধান এক সপ্তাহ পর গতকাল কিনেছেন ১ হাজার ৩০০ টাকায়।
এদিকে গতকাল দিনাজপুরের বির উপজেলার ‘ওরিয়েন্টাল এগ্রো’ নামে এক প্রতিষ্ঠানের গুদামে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। তাদের গুদামে জব্দ করা হয় ৬৫ কেজি ওজনের ৫ হাজার বস্তা ধান।
জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন জানান, অবৈধ ভাবে মজুত করায় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দিনাজপুরে ধানের দাম কমেছে মণে মান ও জাতভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
বগুড়ায় নন্দীগ্রামে ‘মায়ামানির’ অটো রাইস মিল মালিক মিজানুর রহমান জানান, প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ায় বাজারে ধানের দাম কমেছে। তিনি বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।