জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চর, হাওর, পাহাড় ও উপকূলীয় এলাকায় ১৭.১ শতাংশ কৃষকের চাষাবাদের ধরন বদলে গেছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) এক জরিপে বিষয়টি উঠে এসেছে।
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ওই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
সুইডিশ দূতাবাসের সহায়তায় এমজেএফ চার বছরব্যাপী ‘কমিউনিটিভিত্তিক জলবায়ু সহনশীলতা ও নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচি (ক্রিয়া)’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটির আওতায় ১৪টি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জেলার ২৮টি উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর বর্তমান আর্থসামাজিক অবস্থা এবং বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশুদের যেকোনো প্রয়োজনে সরকারি সংস্থাগুলো কীভাবে সাড়া দেয়, তা মূল্যায়নের জন্য অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এআইআরডি) লিমিটেডের সহযোগিতায় এই বেসলাইন জরিপ পরিচালিত হয়। এই জরিপে ৩৫৩ জন পুরুষ ও ৬৫৭ জন নারী ও ১২ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ অংশ নেন।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৫.৭ শতাংশ বিবাহিত। তাদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ২৬ ও নারীদের ১৬। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের ৩০.৭২ শতাংশ (২২৭ জন নারী, ৮৩ জন পুরুষ ও ৫ জন তৃতীয় লিঙ্গের) গত এক বছরে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার (শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন) শিকার হয়েছেন। কিন্তু অভিযোগ জমা দিয়েছেন ১৫.৬ শতাংশ। চর এলাকায় অভিযোগ করার হার সর্বোচ্চ এবং পাহাড়ি এলাকায় সহিংসতার শিকার হলেও কেউ অভিযোগ জমা দেননি।
গুণগত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গ্রামীণ নারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা ও করণীয় সম্পর্কে সচতেনতার ঘাটতি আছে। তারা সহিংসতার শিকার হলে সামাজিক অপবাদের ভয়ে ঘটনাগুলো প্রকাশ করেন না। অনেকেই মনে করেন, এ ধরনের সহিংসতা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।
ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব লুবনা ইয়াসমীন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ধরনের প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। এর জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় দীর্ঘমেয়াদি কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেমন: জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি), মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান। জলবায়ুর পরিবর্তন ঠেকাতে আমরা আমাদের পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিজ্ঞা করেছি।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘আমাদের এই বেসলাইন সার্ভেতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এই প্রসঙ্গে আমরা বারবার হোঁচট খাই। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বেশ কিছু বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। যেমন: আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন, নারীদের দক্ষতা বাড়ানো, তার অবদান স্বীকার করা। এভাবেই নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’