সরকারি উদ্যোগে আমদানি করা পেঁয়াজ বীজের মান নিয়ে প্রশ্ন অনেক দিনের। অভিযোগ রয়েছে, কম দামের পেঁয়াজ বীজ দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে তা কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। নিম্নমানের বীজে আশানুরূপ ফলন হয় না। বীজ সেক্টরে কাজ করা বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, বীজের ক্রয় প্রক্রিয়াতেও নানাভাবে কারসাজি করা হয়। আবার বিতরণেও রয়েছে অনিয়ম। সব মিলিয়ে কৃষকরা সরকারি বীজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। তারা বাজার থেকে বেশি দামে বীজ কিনে তা ব্যবহার করছেন।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ফরিদপুরের ৩৬ হাজারের ওপরে পেঁয়াজ চাষি রয়েছেন। এর মধ্যে আমরা ১৮ শ কৃষককে পেঁয়াজ বীজ দিতে পেরেছি। এ ছাড়া ফরিদপুরের কৃষকরা বেসরকারিভাবে পেঁয়াজ বীজ কিনে সেগুলো রোপণ করেন। আমরা তাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফরিদপুরের একজন পেঁয়াজ চাষি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের পেঁয়াজ বীজ কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয় না। কাদের দেওয়া হয় তা অনেকে জানেন না। কৃষকরা সাধারণত খোলাবাজার থেকে পেঁয়াজ বীজ কেনে সেগুলোই জমিতে রোপণ করেন। সরকারি বীজের তুলনায় বাজার থেকে কেনা বীজে উৎপাদন ভালো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে যে পেঁয়াজ বীজ বিতরণ করে তার বেশির ভাগ থেকেই চারা ওঠে না। শুধু পেঁয়াজই নয়, সূর্যমুখী ও ভুট্টার ক্ষেত্রেও ঘটে একই ঘটনা। গত বছরও পেঁয়াজ বীজ প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। নির্দিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠান তা সরকারকে সরবরাহ করে। কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের বীজ বিভাগের একটি চক্র নামে-বেনামে নিজেরাই এই বীজ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে বীজ কেনা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে এই চক্রের বিরুদ্ধে।
পেঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে পেঁয়াজ নিয়ে কিছুদিন পরপরই ঘটা লংকাকাণ্ডের নেপথ্যে এই বীজকারসাজি চক্রের হাত থাকতে পারে। কাগজে কলমে যত বীজ সরবরাহ বা চাষ হয়েছে বলে দেখানো হয় সেটা বাস্তবে কার্যকর হয় কি না তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দিয়েছেন কেউ কেউ।
ওই বিশেষজ্ঞরা জানান, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা কেন সরকারের পেঁয়াজ বীজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সরকারের উচিত এদিকে নজর দেওয়া। তা না হলে সামনে পেঁয়াজের সংকট আরও ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে। পেঁয়াজ আমদানি করেও সমস্যার সমাধান হবে না। যদি বীজের মান ভালো হয়, যদি চাষিরা এই ভালো বীজ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে তবে বাস্তবে উৎপাদন আরও বাড়বে, সংকট কেটে যাবে।
বীজ নিয়ে কারসাজির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের পরিচালক (বীজ) মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘একটি চক্র আমার ও আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অপপ্রচার চালাচ্ছে। যারা আমাদের এখানে বীজ সরবরাহ করতে পারে না তারাই নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা সম্পূর্ণ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন-বিধি মেনে বীজ সংগ্রহ করে থাকি। কোনো অনিয়মের সুযোগ নেই।’