চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে নেই ধান-চাল সংগ্রহ । খবরের কাগজ
ঢাকা ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে নেই ধান-চাল সংগ্রহ

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছে নেই ধান-চাল সংগ্রহ
ছবি : খবরের কাগজ

চট্টগ্রামে আমন মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই জেলা খাদ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৬ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকারের এই দপ্তরটি। অপরদিকে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩.৩৫ শতাংশ আতপ ও ৬৩ শতাংশ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে। 

২০২৩-২৪ আমন মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলা থেকে ৬ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ধান, ১৫ হাজার ৮০৭ মেট্রিক টন আতপ চাল, ৮০৬ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন আতপ চাল, ৫১১ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ৬২ মেট্রিক টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ ধান, ১৩.৩৫ শতাংশ আতপ চাল ও ৬৩ শতাংশ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। 

চট্টগ্রাম জেলা থেকে সংগৃহীত ধান ও চাল ১৩টি সরকারি খাদ্য গুদামে (সিএসডি ও এলএসডি) রাখা হবে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। সংগ্রহ অভিযান চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ বছর প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা ও আতপ চাল ৪৩ টাকা কেজি দরে কিনছে সরকার। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় আতপ চাল সংগ্রহের জন্য ১১৫টি ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহের জন্য ৪টি মিলের সঙ্গে চুক্তি করেছে। 

জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেওয়ানহাট সিএসডিতে ১২০ মেট্রিক টন, হালিশহর সিএসডিতে ২৪০ মেট্রিক টন, মিরসরাই এলএসডিতে ৫০ মেট্রিক টন, নাজিরহাট এলএসডিতে ১৬০ মেট্রিক টন, হাটহাজারী এলএসডিতে ৮০ মেট্রিক টন, রাউজান এলএসডিতে ১২০ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়া এলএসডিতে ৭০৬ মেট্রিক টন, পটিয়া এলএসডিতে ১৬৭ মেট্রিক টন, চানপুরঘাট এলএসডিতে ১৪১ মেট্রিক টন ও আনোয়ারা এলএসডিতে ৩২৫ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। 

সীতাকুণ্ড এলএসডিতে ৫০ মেট্রিক টন, নাজিরহাট এলএসডিতে ৪১৬ মেট্রিক টন ও পটিয়া এলএসডিতে ৪৫ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে। তা ছাড়া নাজিরহাট এলএসডিতে ৩৩ মেট্রিক টন ও বোয়ালখালী এলএসডিতে ২৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান-চালের সংগ্রহের মাত্রা কম। বিশেষ করে ধান সংগ্রহের হার একেবারেই কম। কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দরে ধান বিক্রি করতে চান না। ফলে আমাদের ধান সংগ্রহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। 

কৃষকরা সরকারি ৩০ টাকা কেজিতে ধান বিক্রি করতে চান না। কারণ তারা মিলারদের কাছে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন। সে হিসাবে মিলারদের কাছে বিক্রি করে কৃষক প্রতি কেজি ধানে পাচ্ছেন ৪০ থেকে ৪১ টাকা। 

নওগাঁ জেলায় নবান্ন অটো রাইস মিলের মালিক মোহাম্মদ সজিব খবরের কাগজকে বলেন, কৃষক পর্যায়েই ধানের দাম বেড়ে গেছে। আগে আমরা প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৬০ টাকা দিয়ে কিনতাম। বর্তমানে ধানের ভরা মৌসুমে সে ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফখরুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে। ধান পুষ্ট কি না, কত ভাগ চিটা আছে, এসব বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেখানে লাভ বেশি হয় সেখানেই ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি আমরা আতপ ও সেদ্ধ চাল সর্বোচ্চ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবারও হয়তো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। তবুও ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। 

চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯০১ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। এসব জমিতে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশে ৪৩০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৭১৮ মেট্রিক টন, ডবলমুরিং এলাকায় ১১০ হেক্টর জমিতে ৩৭৫ মেট্রিক টন ও পতেঙ্গায় ২৩ হেক্টর জমিতে ৯২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে মিরসরাইয়ে ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ৬০ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন, সীতাকুণ্ডে ৫ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৪৭৬ মেট্রিক টন, ফটিকছড়িতে ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ৬৫ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন, হাটহাজারীতে ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন, রাউজানে ১২ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৫১ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন, বোয়ালখালীতে ৪ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। 

শিং মাছের জিনোম উন্মোচন

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:১১ পিএম
শিং মাছের জিনোম উন্মোচন
ছবি : খবরের কাগজ

জলবায়ু পরিবর্তন, বন্যা, অতিরিক্ত আহরণ ও প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে দেশীয় শিং মাছ বর্তমানে হুমকির সম্মুখীন। তাই এই প্রজাতিকে টিকিয়ে রেখে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রথমবারের মতো এই মাছের জিনোম সিকোয়েন্স (জীবনরহস্য) উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। বাকৃবির ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম ও তার গবেষক দল এটি উন্মোচন করেন। একই সঙ্গে এই মাছের পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্ত করেছেন তারা। 

বুধবার (১৫ মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে গবেষণার ফলাফল সবার সামনে তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গবেষক দল।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ, সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আফরিনা মুস্তারি, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম এবং গবেষণাকাজে সাহায্যকারী মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ, স্বর্ণা, হালিমা, জেসমিন, কানিজ এবং সারা উপস্থিত ছিলেন।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম জানান, ২০২০-২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী স্বাদু পানির মোট উৎপাদিত মাছের ২ দশমিক ৫২ শতাংশ আসে শিং ও মাগুর মাছ থেকে। স্ত্রী শিং মাছের বৃদ্ধি পুরুষ শিং মাছ অপেক্ষা ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। তাই এই মাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়ানোর জন্য মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদন অন্যতম একটি উপায়। সফলভাবে মনোসেক্স শিং মাছ উৎপাদনের জন্য লিঙ্গ নির্ধারণকারী জিন শনাক্তকরণ অত্যন্ত জরুরি। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে শিং মাছের জিন নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে সংগৃহীত দেশীয় শিং মাছের নমুনা দিয়ে অধ্যাপক তাসলিমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ, জাপান ও সুইডেনের এক দল গবেষক গবেষণাকাজ শুরু করেন।

তিনি আরও জানান, পরবর্তী সময়ে ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশীয় শিং মাছের আটটি ফ্যামিলির প্রায় ৮০০টি পোনার নমুনা নিয়ে জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সিকোয়েন্সিং ও জিন শনাক্তকরণের কাজ করা হয়। সর্বাধুনিক সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তি ও সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করে বায়োইনফরমেটিক অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে ওই জিনোম সিকোয়েন্স সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সময়কালে গবেষণাকাজে অর্থায়ন করে জাপান সোসাইটি ফর দ্য প্রমোশন অব সায়েন্স (জেএসপিএস)।

গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে অধ্যাপক ড. তাসলিমা খানম বলেন, গবেষণায় উদ্ভাবিত ড্রাফট জিনোম (প্রথমবার শনাক্তকৃত জিনোম) দিয়ে পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করা সম্ভব, যা যেকোনো দেশীয় সব প্রজাতির মাছের ক্ষেত্রে এই প্রথম। এর মাধ্যমে শুধু স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে করে প্রাকৃতিক জলাশয় ছাড়াও কৃত্রিম পদ্ধতিতে অধিক ফলনশীল স্ত্রী শিং মাছ চাষ করা সম্ভব হবে। শিং মাছের জিনোম থেকে শুধু পুরুষ ও স্ত্রী শিং মাছ নির্ধারণকারী জিন ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য দায়ী জিন শনাক্তকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রচলিত হরমোন প্রয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তে মার্কার অ্যাসিসটেড সিলেকশনের (এমএএস) মাধ্যমে স্বল্প সময়ে স্ত্রী শিং মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে, যা অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব। গবেষণাকাজের ফলাফল চলতি বছরের মার্চে জাপানিজ সোসাইটি অব ফিশারিজ সায়েন্স আয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং ওই বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে ‘কনফারেন্স পেপার’ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, হৃদরোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য শিং মাছ অনেক উপকারী। বিশেষ করে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য এটি বিশেষভাবে সমাদৃত। দেশীয় মাছের অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় ভিন্নধর্মী এ প্রজাতিতে স্ত্রী মাছের উৎপাদন বেশি। আর পুরুষ ও স্ত্রী মাছ নির্ধারণকারী সম্ভাব্য জিন শনাক্তকরণের এই গবেষণার ফলাফল স্ত্রী শিং মাছ শনাক্ত করে শিং মাছের উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় এ মাছটি সংরক্ষণেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

দেশীয় শিং মাছ বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের একটি জনপ্রিয় ও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতি। প্রতি ১০০ গ্রাম শিং মাছে রয়েছে ২২০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লৌহ উপাদান, যা লোহিত রক্ত কণিকার প্রধান উপাদান। এ ছাড়া এতে রয়েছে উন্নত মানের আমিষ ও ক্যালসিয়াম। পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণের পাশাপাশি খেতে সুস্বাদু, কম কাঁটা ও স্বল্প চর্বিযুক্ত হওয়ায় মাছটি বিশেষভাবে সুপরিচিত।

সাতক্ষীরায় লবণাক্ত জমিতে অভাবনীয় সাফল্য

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৯:২৪ পিএম
সাতক্ষীরায় লবণাক্ত জমিতে অভাবনীয় সাফল্য
ছবি : খবরের কাগজ

গত কয়েক দশক ধরেই লবণাক্ততার কারণে জমিতে ফলে না ফসল। মিঠাপানির আধারগুলো গেছে শুকিয়ে। গ্রামের পাশ দিয়ে খাল প্রবাহমান থাকলেও পানির অভাবে শস্য আবাদ করতে পারেন না উপকূলের কৃষকরা। শুষ্ক মৌসুমে দিগন্তজুড়ে দেখা দেয় খরা। এরই মাঝে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছে এই এলাকার কৃষকরা। পতিত থাকা ফসলি জমির কোণায় পুকুর করে মিঠাপানির সংস্থান করছেন তারা। সেই পানি দিয়ে এখন ফলানো হচ্ছে শস্য। দিগন্তজুড়ে শস্যের খেতগুলো ভুট্টা ও সবজির আবাদে সবুজ হয়ে গেছে। এক ফসলি জমিগুলো এখন তিন ফসলে রূপান্তর হচ্ছে। 

সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার কাশিমারি ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রাম। আগে এখানকার কৃষকরা কেবল আমন ধান আবাদ করতে পারতেন। এখন সেই লবণাক্ত জমিতে লাউ, কুমড়া, পেঁপে, ঢেঁড়স, পুঁইশাক, শশা, লাল শাক, করলা, সূর্যমুখীসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করে সফল হয়েছেন তারা। সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আশপাশের কৃষকদের। পতিত জমি এখন আশা দেখাচ্ছে তাদের। স্বপ্ন বুনছেন আগামীর জন্য। 

খুটিকাটা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নির্মল সরকার, রবীন্দ্রনাথ সরকার ও নিহার সরকার জানান, লবণাক্ততার কারণে তাদের গ্রামের শত শত হেক্টর কৃষিজমি পতিত থাকে। ফসল ফলে না ঠিকমতো। তা ছাড়া মিঠাপানির আধারগুলো শুকিয়ে গেছে। গত বছর সিনজেনটার সহযোগিতায় লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন করে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে তারা। গ্রামের অধিকাংশ কৃষককে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর খনন করে দিয়েছে সিনজেনটা। এ ছাড়া আবাদের জন্য ভার্মিকম্পোস্ট সার প্ল্যান্ট, শস্যবীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করেছে। 

তারা আরও জানান, কৃষকরা লবণাক্ত জমিতে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে নানা প্রকার ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে একেকজন কৃষক ৩০-৫০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। আরও অধিকসংখ্যক পুকুর খনন এবং গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো পুর্নখনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে বারো মাসই সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

এ বিষয়ে সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক (বিজনেস সাসটেইনেবিলিটি ও এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে কৃষকদের শস্য আবাদে পুকুর খনন কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিনজেনটা। এতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে লবণাক্ত জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন তারা।’

তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় অধিকসংখ্যক পুকুর খননের পাশাপাশি উন্মুক্ত জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। যাতে করে কৃষকরা বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতে পারেন। সিনজেনটা কৃষকদের পুকুর খননের পাশাপাশি বীজ, ভার্মিকম্পোস্ট , সোলার ইরিগেশন ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। বীজ ও কীটনাশকের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে ফসলের সর্বোচ্চ উৎপাদনের বিষয়ে কার্যকর পরামর্শ দিচ্ছে সিনজেনটা। সব মিলিয়ে এ অঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে টেকসই কৃষি ব্যবস্থার পাশাপাশি রিজেনারেটিভ এগ্রিকালচার পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে।’ সফলভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এসডিজির অনেকগুলো লক্ষ্য পূরণ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

জানা গেছে, খুটিকাটা গ্রামে শস্য আবাদের মাধ্যমে কৃষিকে টেকসই রূপান্তর করতে গো গ্রো প্রকল্প গ্রহণ করেছে সিনজেনটা। গত বছর শুরু হওয়া এ প্রকল্পে জড়িত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বিনা, ডিএইর এসএসি প্রকল্প এবং এসআরডিআই। শুরুতে পুকুর খননের মাধ্যমে মিঠাপানির সংস্থান করা হয়। খুটিকাটা গ্রামের ৪০ জন কৃষক দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। সেসব কৃষক জমির কোণায় কয়েকটি পুকুর খনন করেন। এক একটি পুকুর ১০-১৫ ফুট গভীর। খননে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়। আর সেই পুকুর মিঠাপানির আধার হিসেবে কাজ করে। সবজি ও শস্য আবাদের সময় পুকুরের পানি দিয়ে সেচ দেওয়া হয়। তবে মিঠা পানির সরবরাহ বাড়াতে এই ধরনের পুকুর খননেন পাশাপাশি বিদ্যমান খালের পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে এ অঞ্চলে আরও বেশি উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘উপকূলে বসবাসরত মানুষদের বারো মাসই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হয়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও খরার কারণে তাদের টিকে থাকা মুশকিল। সেখানে জমি পতিত থাকলে অর্থনৈতিকভাবে তারা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। তাদের টিকে থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার উপায় বের করতে হবে আমাদের। কারণ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা বন্ধ করা তো কারও পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে এমন পরিবেশে টিকে থাকতে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সিনজেনটার এ প্রযুক্তি জেলার অন্যান্য গ্রামে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। মিঠাপানি সরবরাহের লক্ষ্যে খালে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

সালমান/

সিংড়ায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্র বিতরণ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
সিংড়ায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্র বিতরণ
ছবি: খবরের কাগজ

নাটোরের সিংড়ায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে চারটি কম্বাইন হারভেস্টার, ১০টি মেইজ শেলার, সাতটি পাওয়ার স্প্রেয়ার ও ছয়টি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকাল ৯টায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২৭টি কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়।

কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) শামীমা হক রোজী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ খন্দকার ফরিদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন।

চলনবিলের কৃষকদের উন্নয়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকদের পাশে রয়েছে দাবি করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, চলনবিলের কৃষি ও কৃষকদের সহায়তার অংশ হিসেবে  ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে ওই ২৭টি কৃষিযন্ত্র বিতরণ করা হয়।

কামাল মৃধা/ইসরাত চৈতী/অমিয়/

সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০২:২২ পিএম
সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক
ছবি : খবরের কাগজ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। আর সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) সকালে উপজেলা পরিষদ ভবনের সামনে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। 

উপজেলা প্রশাসন, খাদ্য বিভাগ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সজীব কাউসারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া আক্তার। 

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদ হাসান, সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাজারুল ইসলাম, খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. মশিউর রহমান প্রমুখ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় মোট ৫৪৩ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি কেজি ধানের মূল্য ধরা হয়েছে ৩২ টাকা। ৭৬৬ জন কৃষকের থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ করা হবে। প্রত্যেক কৃষক তিন টন করে ধান দিতে পারবেন।

ধান দিতে আসা কৃষক তোতা মিয়া খবরের কাগজকে জানান, তিনি বেশ খুশি। খুব সহজেই সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে পেরেছেন। দামও ভালো।

জুটন বনিক/জোবাইদা/অমিয়/

কৃষককেই উৎপাদিত ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে: বিনা মহাপরিচালক

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪, ০৪:২৪ পিএম
কৃষককেই উৎপাদিত ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে: বিনা মহাপরিচালক
ছবি: খবরের কাগজ

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)-এর মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেছেন, কৃষককেই উৎপাদিত ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য ভালো বীজ ও ভালো জাত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। গুণগত মানসম্পন্ন বীজ কৃষকের সম্পদ।

বুধবার (১ মে) সাতক্ষীরায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে বিনা উদ্ভাবিত বোরো ধানের বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ কৌশলবিষয়ক কৃষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

হাওর, চরাঞ্চল, লবণাক্ত জমিতে অভিযোজন প্রকল্পের আওতায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বিনা।

কৃষকের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে হাইব্রিড বীজ রাখা যায় না। বাজারে কিনতে গেলেও এর দাম বেশি। তাই নিজের বীজ নিজে সংরক্ষণ করতে হবে।’

ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেশে ৩০টির মতো জেলা আছে লবণাক্ত। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় লবণাক্ততার প্রকোপ খুবই বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে অভিযোজনের জন্য সবাইকে নিজ নিজ জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে।’

প্রশিক্ষণে প্রকল্প পরিচালক ও বিনা ধান ২৫-এর উদ্ভাবক ড. সাকিনা খানমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ, বিনা সাতক্ষীরা উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিলন কবীর প্রমুখ।

কর্মশালায় বিনা ধান ২৫ চাষের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন কালিগঞ্জের তাপস ঘোষ, দেবহাটার আব্দুল খালেক প্রমুখ।

নাজমুল শাহাদাৎ/সাদিয়া নাহার/