চট্টগ্রামে আমন মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও নেই জেলা খাদ্য অধিদপ্তর। এ বছর ৬ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকারের এই দপ্তরটি। অপরদিকে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩.৩৫ শতাংশ আতপ ও ৬৩ শতাংশ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে।
২০২৩-২৪ আমন মৌসুমে চট্টগ্রাম জেলা থেকে ৬ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন ধান, ১৫ হাজার ৮০৭ মেট্রিক টন আতপ চাল, ৮০৬ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন আতপ চাল, ৫১১ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ৬২ মেট্রিক টন ধান সংগৃহীত হয়েছে। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ শতাংশ ধান, ১৩.৩৫ শতাংশ আতপ চাল ও ৬৩ শতাংশ সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি।
চট্টগ্রাম জেলা থেকে সংগৃহীত ধান ও চাল ১৩টি সরকারি খাদ্য গুদামে (সিএসডি ও এলএসডি) রাখা হবে। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর থেকে ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করেছে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। সংগ্রহ অভিযান চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ বছর প্রতি কেজি ধান ৩০ টাকা, সেদ্ধ চাল ৪৪ টাকা ও আতপ চাল ৪৩ টাকা কেজি দরে কিনছে সরকার। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় আতপ চাল সংগ্রহের জন্য ১১৫টি ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহের জন্য ৪টি মিলের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেওয়ানহাট সিএসডিতে ১২০ মেট্রিক টন, হালিশহর সিএসডিতে ২৪০ মেট্রিক টন, মিরসরাই এলএসডিতে ৫০ মেট্রিক টন, নাজিরহাট এলএসডিতে ১৬০ মেট্রিক টন, হাটহাজারী এলএসডিতে ৮০ মেট্রিক টন, রাউজান এলএসডিতে ১২০ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়া এলএসডিতে ৭০৬ মেট্রিক টন, পটিয়া এলএসডিতে ১৬৭ মেট্রিক টন, চানপুরঘাট এলএসডিতে ১৪১ মেট্রিক টন ও আনোয়ারা এলএসডিতে ৩২৫ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড এলএসডিতে ৫০ মেট্রিক টন, নাজিরহাট এলএসডিতে ৪১৬ মেট্রিক টন ও পটিয়া এলএসডিতে ৪৫ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে। তা ছাড়া নাজিরহাট এলএসডিতে ৩৩ মেট্রিক টন ও বোয়ালখালী এলএসডিতে ২৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ধান-চালের সংগ্রহের মাত্রা কম। বিশেষ করে ধান সংগ্রহের হার একেবারেই কম। কৃষকরা সরকার নির্ধারিত দরে ধান বিক্রি করতে চান না। ফলে আমাদের ধান সংগ্রহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
কৃষকরা সরকারি ৩০ টাকা কেজিতে ধান বিক্রি করতে চান না। কারণ তারা মিলারদের কাছে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন। সে হিসাবে মিলারদের কাছে বিক্রি করে কৃষক প্রতি কেজি ধানে পাচ্ছেন ৪০ থেকে ৪১ টাকা।
নওগাঁ জেলায় নবান্ন অটো রাইস মিলের মালিক মোহাম্মদ সজিব খবরের কাগজকে বলেন, কৃষক পর্যায়েই ধানের দাম বেড়ে গেছে। আগে আমরা প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৬০ টাকা দিয়ে কিনতাম। বর্তমানে ধানের ভরা মৌসুমে সে ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬৫০ টাকায়।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. ফখরুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নির্দেশনা আছে। ধান পুষ্ট কি না, কত ভাগ চিটা আছে, এসব বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেখানে লাভ বেশি হয় সেখানেই ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি আমরা আতপ ও সেদ্ধ চাল সর্বোচ্চ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এবারও হয়তো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। তবুও ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা আছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯০১ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। এসব জমিতে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৮৪৯ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশে ৪৩০ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৭১৮ মেট্রিক টন, ডবলমুরিং এলাকায় ১১০ হেক্টর জমিতে ৩৭৫ মেট্রিক টন ও পতেঙ্গায় ২৩ হেক্টর জমিতে ৯২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে মিরসরাইয়ে ১৯ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ৬০ হাজার ৪২৯ মেট্রিক টন, সীতাকুণ্ডে ৫ হাজার ৯৫৫ হেক্টর জমিতে ১৬ হাজার ৪৭৬ মেট্রিক টন, ফটিকছড়িতে ২২ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে ৬৫ হাজার ৪৯২ মেট্রিক টন, হাটহাজারীতে ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে ২৫ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন, রাউজানে ১২ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে ৩৬ হাজার ১২৯ মেট্রিক টন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ৫১ হাজার ৬৮৭ মেট্রিক টন, বোয়ালখালীতে ৪ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে ১৩ হাজার ৯৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে।