শনিবার দুপুর দেড়টা। তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন ভোলা সদরের ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্তমুন্সী গ্রামের বাদশা মিয়া। এবার তিনি ১২ শতাংশ জমিতে বোরোর আবাদ করবেন। হালচাষ দিয়ে প্রথম ধাপ শেষ করলেও পানির অভাবে জমিকে পুরোপুরি চাষের উপযোগী করতে পারেননি। ধারদেনা করে বীজতলা বানালেও পানি না থাকায় তা শুকিয়ে গেছে। এ নিয়ে তার কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়ে রয়েছেন শঙ্কায়। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেচ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। পানির অভাবে সৃষ্টি হয়েছে এ পরিস্থিতির।
বাদশা মিয়া বলেন, ‘পাশের গ্রামে বোরোর আবাদ শুরু হয়ে গেছে। অথচ গুপ্তমুন্সী গ্রামের গাজুনিয়ার বিল এলাকায় এখনো সবাই পানির আশায় বসে আছেন। বোরোর বীজতলা শুকিয়ে গেছে। ধানের চারা মরে যাচ্ছে। আমরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘১২ শতাংশ জমির জন্য আমার ২৫ হাজার টাকারও বেশি খরচ হয়ে গেছে। পানির অভাবে আর কিছুই করতে পারছি না।’
শুধু বাদশা মিয়াই নন, তার মতো একই অবস্থা গুপ্তমুন্সী গ্রামের অন্তত ১৫০ কৃষকের। তাদের মধ্যে খবরের কাগজের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় মানিক মোল্লা, মো. হারুন ও মোসলেউদ্দিনের সঙ্গে। ওই গ্রামে অন্তত ১০০ একর জমিতে এবার বোরোর আবাদ হওয়ার কথা।
কৃষক মোসলেউদ্দিন বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বোরো আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছি। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সব শেষ হয়ে গেছে। চাষ করতে না পারলে ঋণের টাকা তুলতে পারব না। ধান না পেলে সারা বছর খাব কী? কবে বিদ্যুৎ পাব সেই আশায় দিন পার করছি।’
একই গ্রামের কৃষক মো. হারুন বলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বোরো আবাদের উপযুক্ত সময়। কিন্তু এ বছর আমাদের গ্রামের অন্তত ১০০ একর জমির আবাদ পানির কারণে আটকে আছে। সবাই খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।’
স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ রাস্তার ওপর ব্রিজ নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেয়। তিন মাস আগে ব্রিজ বানানো হয়ে গেলেও বিদ্যুতের খুঁটি আর বসানো হয়নি। খালে পর্যাপ্ত পানি রয়েছে, কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় পাম্প চালানো যাচ্ছে না। সেচ প্রকল্পের পরিচালক ও স্থানীয়দের পক্ষে গত তিন মাস ধরে চেষ্টা করেও এর সমাধান করা যায়নি।
তবে সেচ পাম্পের ম্যানেজার আব্দুর রহমান বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএমের খামখেয়ালির জন্য এই গ্রামের কৃষকরা বোরো উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত বছর ভোলা-বরিশাল মহাসড়কের গুপ্তমুন্সীর কোব্বাত আলী হাওলাদার বাড়ির দরজার ব্রিজটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ সময় তারা বিদ্যুতের একটি খুঁটি সরিয়ে নেয়। পরে ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ হলেও বিদ্যুতের খুঁটি বসানো হয়নি। এতে ওই এলাকার সেচকাজের সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বর্তমানে বোরো (ইরি) চাষাবাদের মৌসুম শেষের দিকে। অথচ কৃষকরা তাদের সেচ প্রকল্পে পানি দিতে পারছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় কৃষকরা সম্মিলিতভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগে গেলে তারা পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। অন্যদিকে গত তিন মাস ধরে কৃষকরা বিদ্যুৎ অফিসে ধরনা দিয়ে আসলেও পল্লী বিদ্যুৎ বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। ফলে বন্ধ হয়ে আছে সেচ কার্যক্রম।’
সেচ কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সুপারিশের আশ্বাস দিয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ বি এম মোস্তফা কামাল। তবে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়ানোকে কেন্দ্র করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে সড়ক অফিসের মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। তার খেসারত দিতে হচ্ছে নিরীহ কৃষকদের।
বৈদ্যুতিক খুঁটি কবে বসানো সম্ভব হবে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পরানগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আশিকুর ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘সড়ক বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে খুঁটি বসানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ তিনি এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি।