![সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ](uploads/2024/03/25/1711351343.BAsabo-Ifter.jpg)
বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে ইফতারি নেওয়ার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন কিছু নারী-পুরুষ। তাদের অবয়বজুড়ে নিদারুণ ক্লান্তির ছাপ। এরা কেউ গৃহকর্মী, কেউ শ্রমিক, কেউবা আবার কর্মহীন, নিঃস্ব। সারা দিন রোজা রাখার পর বিনামূল্যে একটু ইফতারির আশায় এখানে ভিড় জমান তারা।
২৩ মার্চ এমনই দৃশ্যের দেখা মিলল রাজধানীর বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরের ভেতর। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্য। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ যেন এই বৌদ্ধ মন্দির। গৌতম বুদ্ধের আদর্শের ধারক-বাহক এই উপাসনালয় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষসহ সব প্রাণিকুলের সেবায় অবিরাম নিজেদের নিয়োজিত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পবিত্র রমজান মাসের ৩০ দিনই অসহায়, হতদরিদ্র ও নিঃস্ব মুসলিম রোজাদারদের বিনামূল্যে ইফতারি বিতরণ করেন তারা।
ইফতারের আয়োজনে থাকে খেজুর, ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনিসহ নানা কিছু। যা দিয়ে দুজন মানুষ অনায়াসে ইফতার করতে পারেন। তবে সাহরির জন্য কোনো আয়োজন করা হয় না।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের উদ্যোগে প্রথম ইফতারসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৯ সাল পর্যন্ত রোজার মাসে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জনের জন্য ইফতারির আয়োজন করা হতো। ঈদ উপলক্ষে বিতরণ করা হতো শাড়ি ও লুঙ্গি। পরে করোনা মহামারির সময় এ কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ছিল। করোনার পর কার্যক্রম আবার চালু হলেও আর্থিক সমস্যার কারণে তা কিছুটা সীমিত করে ফেলা হয়। কিন্তু মানবিক এসব কাজের জন্য বাইরের কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা নেন না তারা। এমনকি সরকারের কাছ থেকেও পান না কোনো অনুদান। সব কার্যক্রমই চলে কেবল সংগঠনের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায়।
এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বুদ্ধপ্রিয় মাহাথেরোর সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের উদ্যোগে প্রথম ইফতারি বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। ঈদ উপলক্ষে বিতরণ করা হতো শাড়ি ও লুঙ্গি। পরে করোনা মহামারির সময় এ কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ছিল। করোনার পর কার্যক্রম আবার চালু হলেও আর্থিক সমস্যার কারণে তা কিছুটা সীমিত করে ফেলা হয়েছে। আগামী বছর থেকে আরও বড় আকারে এ আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংগঠনটির সহসভাপতি বদন্ত স্বরূপানন্দ ভিক্ষু বলেন, বৌদ্ধ ধর্ম মানবতার ধর্ম। গৌতম বুদ্ধের আদর্শে দীক্ষিত হয়ে আমরা এই মানবসেবার সামান্য প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকি। গৌতম বুদ্ধ আজীবন অসাম্প্রদায়িকতার লালন করেছেন, আমরাও বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছড়িয়ে দিতে চাই। কিন্তু আগের মতো আয়োজন করতে না পারায় মনে কষ্ট থেকে যায়।
বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের যুব বিভাগের সভাপতি ব্রহ্মাণ্ড প্রতাপ বড়ুয়া জানান, ২০১৯ সাল পর্যন্ত রোজার মাসে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জনের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হতো। মানবিক এসব কাজের জন্য বাইরের কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের কাছ থেকে কোনো রকম সহযোগিতা নেওয়া হয় না। সব কার্যক্রমই চলে কেবল সংগঠনের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতায়।
কেবল ইফতারি নয়, শীতবস্ত্র বিতরণ, বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণসহ বছরব্যাপী বিভিন্ন মানবিক কর্মসূচি চলে এই সংগঠনের উদ্যোগে। মানুষ মানুষের জন্য সর্বদা এগিয়ে আসবে- গৌতম বুদ্ধের এই শিক্ষাই সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান তারা।