ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ তুলে ধরেন কাওসার চৌধুরী

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০১:০১ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০১:০১ পিএম
প্রামাণ্যচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ তুলে ধরেন কাওসার চৌধুরী
প্রামাণ্যচিত্র শুটিংয়ের একপর্যায়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত নির্মাতা কাওসার চৌধুরী। ছবি : সংগৃহীত

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে ধরতে হয়নি বটে; কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য জোগান দিয়ে অনন্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সেদিনের ১৬ বছর বয়সী এক তরুণ। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মুক্তির অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা কাওসার চৌধুরীর সে লড়াই এখনো অব্যাহত। প্রামাণ্যচিত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা সংরক্ষণ করে তা রেখে যেতে চান নতুন প্রজন্মের জন্য, যে প্রজন্ম শতবর্ষ পর এ ইতিহাস পাঠে ব্রতী হবে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন কাওসার চৌধুরী এসেছিলেন খবরের কাগজ কার্যালয়ে। আলাপচারিতায় তার মুক্তিযুদ্ধে যোগদান, প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হয়ে ওঠা আর অভিনয় জীবন নিয়ে বিস্তারিত উঠে আসে।

তার বয়ানে প্রথমে উঠে আসে একাত্তরের স্মৃতিকথা। একাত্তরে ছিলেন আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। পরিবারের সঙ্গে চট্টগ্রামের মোগলটুলীর নবী কলোনিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২৫ মার্চের ভয়াল কালরাত, ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত সাড়ে ৮টা। জানা গেল, যুদ্ধজাহাজ ‘বাবর’ থেকে চট্টগ্রামে গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সে রাতে ঘরহারা মানুষের আর্তনাদ শুনলেন রাতভর। আগ্রাবাদ হোটেলের কাছে তৎকালীন জিন্নাহ রোডে রাত দেড়টার দিকে বেবিট্যাক্সি করে কে যেন বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করতে শুরু করলেন। ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম আক্রমণ করে পাকিস্তানি আর্মি, শুরু হয় গণহত্যার নৃশংসতম অধ্যায়।

কাওসার চৌধুরীর পরিবারসহ আরও অনেক পরিবার তখন কর্ণফুলী পাড়ি দিয়ে প্রথমে শিকলবাহা, পরে আনোয়ারা হয়ে চলে যান মাতারবাড়ী, নিজ বাড়িতে। বড় ভাই মাহবুব কামাল চৌধুরী তখন নন-কমিশনড র্যাংকে ফ্লাইট সার্জেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। মার্চের শেষভাগে বাড়ি ফিরে আসেন। গ্রামের তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন তিনি। কাওসার বয়েজ স্কাউটের সদস্য ছিলেন, তা ছাড়া বাবার টু-টু বোর রাইফেলও নিয়মিত চালাতেন। তবে মুক্তিযুদ্ধে তাকে অস্ত্র ধরতে হয়নি। 

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আক্রান্ত হয় ১৯৭১ সালের ৬ মে। প্রথমে আক্রমণ হয় মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে। সেখানে আশ্রিত অনেক হিন্দু পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়, লুণ্ঠিত হয় ধনসম্পদ। সেদিন মাতারবাড়ীর উল্টো দিকে ঝাপুয়া এলাকা থেকে মর্টার শেল নিক্ষেপ করা হয় মাতারবাড়ীর দিকে। আতঙ্কে দ্বীপ ছেড়ে পালাতে হয় অনেক গ্রামবাসীকে। 

চট্টগ্রামে ফিরে এসে কাওসার চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয় চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি তোহা গাজীর সঙ্গে। তার সঙ্গে খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতের সাব্রুম এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রামগড়ে পৌঁছানোর পর আমাদের কাজ হলো শরণার্থীদের পথ চিনিয়ে সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আমি যেদিন পার হব সীমান্ত, সেদিন প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু হলো। আমাকে আবার চট্টগ্রামে ফিরে যেতে হলো।’ 

চট্টগ্রামে ফিরে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে ইনফরমার হিসেবে যুক্ত হলেন। পাশাপাশি নানা অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী হিসেবে গোলাবারুদও বহন করেছেন। কোনো যোদ্ধার ম্যাগজিনে গুলি ফুরিয়ে গেলে তা আবার লোড করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তার। অস্ত্র হাতে না নিয়েও রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা লড়াই করে গেছেন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেদিন মুক্ত হয় বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। 

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর কাওসার চৌধুরী নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যুক্ত হন। নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। আলোকচিত্রের প্রতি ছিল তার দারুণ দুর্বলতা। তিনি তখন অত্যাধুনিক সব ক্যামেরা ব্যবহার শুরু করেন। তবে তার প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের হাতেখড়ি হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবীরের হাত ধরে। তার প্রতিষ্ঠান থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে ঘটে যায় নাটকীয় পটপরিবর্তন। 

সামরিক শাসক এরশাদ ক্ষমতা দখল করে নিলেন, তখন গণতন্ত্র মুক্তির দাবিতে উত্তাল জনতার নানা অধ্যায় কাওসার চৌধুরীকে আকৃষ্ট করল। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নিউজ এজেন্সির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ মিলেছিল তখন। পরে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে ক্যামেরাপারসন হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান তিনি।

বিবিসির হয়ে কাজের মাঝেই কাওসার চৌধুরী একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, বীরাঙ্গনাদের স্মৃতিকথা নিয়ে তিনি একে একে নির্মাণ করলেন ‘সেদিনের কথা বলতে এসেছি’, ‘বধ্যভূমিতে একদিন’। নব্বইয়ের দশকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল সময়ের গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘গণ আদালত’। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ের জন্য তিনি এ বছর রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক উৎস আর বধ্যভূমি খুঁজে বেড়ানোর কাজটি এখনো করে চলেছেন ৬৯ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাওসার চৌধুরী। এখনো ক্যামেরা, সহকারী, প্রোডাকশন ইউনিট নিয়ে তিনি ছুটে বেড়ান দেশের নানা প্রান্তে। 

একাত্তরের বধ্যভূমিগুলো যখন একে একে আবাসন প্রকল্পের ভিড়ে হারিয়ে যায়, তা ভীষণ পীড়া দেয় তাকে। আলাপচারিতায় বললেন, ‘বাহাত্তরে যে বধ্যভূমিগুলো শনাক্ত করা হয়েছিল, তার অধিকাংশ এখন ভরাট হয়ে গেছে। রায়েরবাজার বধ্যভূমির পাশে ছিল ডিম্বাকৃতির ইটভাটা। তার পাশে খাল, পরে বসিলা গ্রাম। সেই ইটভাটার একটি পিলার তো অন্তত রাখা যেত। তাহলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারত, তখন কেমন ছিল রায়েরবাজার।’

বেশ কিছু বধ্যভূমি দখলের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, ধর্মীয় অনুভূতির কারণে সেখানে সাংঘাতিক কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। ঢাকার মুসলিম বাজারে যে বধ্যভূমি পাওয়া গিয়েছিল, তার ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল মসজিদ। পরে তার পাশে একটি কুয়া খুঁড়তে গিয়ে সেখানে কঙ্কাল আর হাড়গোড় পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টিরা সেদিন সোচ্চার হয়েছিলেন বলে এ বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিস্মারক নির্মাণ করা গেছে। জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম রংপুরের ঘাঘট নদীর তিরে যে স্থানে গণহত্যা করেছিলেন, সেখানে বাড়িঘর হয়ে গেছে। অনেক বধ্যভূমি শনাক্ত করার পর জমির মালিকানা দাবি করে কেউ কেউ এসে বলে এ জমি তার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। যেহেতু এই মামলাগুলো ফৌজদারি মামলা না, তাই এসব মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলতেই থাকে।’

একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪০ এএম
একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন
ড. মাহবুবুল হক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত, ভাষাবিদ, গবেষক ও প্রাবন্ধিক ড. মাহবুবুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের ৩ নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। তবে শৈশব থেকে বেড়ে ওঠেছেন চট্টগ্রামে। 

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। ১৯৯৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকতা করেছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে।

শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রায়োগিক বাংলা ও ফোকলোর চর্চা, গবেষণা, সম্পাদনা, অনুবাদ ও পাঠ্যবই রচনা করে পরিচিতি লাভ রয়েছে ড. মাহবুবুল হকের।

প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। গবেষণায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেন।

অমিয়/

কথায় গানে বাতিঘরের ২০ বছর

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫২ এএম
কথায় গানে বাতিঘরের ২০ বছর
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: খবরের কাগজ

গল্প, কবিতা, উপন্যাস, অনুবাদ- সাহিত্যের সব শাখার বরেণ্য লেখকরা জড়ো হলেন বিকেলে। এসেছিলেন এ প্রজন্মের সব নন্দিত কবি, গল্পকার, অনুবাদকরা। শুভেচ্ছা আশীর্বাদ জানাতে এসেছিলেন অগ্রজ প্রকাশকরা। লেখক, প্রকাশকের অভূতপূর্ব মিলনমেলা হয়ে উঠেছিল চেইন বুক শপ বাতিঘরের ২০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান।

ঢাকার বাংলামোটরে চেইন বুক শপ বাতিঘরের ‘মুক্ত আলাপ ও গান’ আয়োজনে মুখর ছিল শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে। 

আয়োজনের মধ্যমণি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটা ভয়ংকর জায়গা। এখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়ালে তাকে পালিশ করতে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে লাইব্রেরি করা তো খুবই কঠিন।’

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে লাইব্রেরি থাকলেও সেগুলো কেন চলে না, তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘শহরে শহরে লাইব্রেরিগুলো চলছে না। কারণ পাঠক হেঁটে গিয়ে বই পড়তে চায় না। আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে যখন বই পড়া কর্মসূচি শুরু করেছিলাম, তখন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মানুষের হাতে বই ধরাব। ইতোমধ্যে দুই কোটি পাঠকের হাতে বই ধরিয়েছি। কিন্তু এর পেছনেও অনেক লোক লেগে গেছে। মানুষ এত ক্ষুদ্রমনা!’

সারা দেশে ২০০টি বইমেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে একটি বড় বইমেলা হয়, সেটি ঢাকায়। কিন্তু সারা দেশকে বঞ্চিত রেখে শুধু রাজধানীকে বৈভবপূর্ণ করে জাতি সম্পূর্ণ হতে পারে না। এই বইমেলা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।’

প্রকাশকদের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘যারা বইয়ের দোকান করে, তাদের প্রকাশক হওয়ার দরকার নেই। আবার যারা প্রকাশক, তাদের বইয়ের দোকান করার দরকার নেই। চেইন বুক শপকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলেই তারা যেন প্রকাশনায় যুক্ত হয়।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বইয়ের দোকান পরিচালনা করা বিশ্বব্যাপী চ্যালেঞ্জ। সেখানে ২০ বছর ধরে বুক শপ পরিচালনা ও প্রকাশনার মাধ্যমে বইপ্রেমীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাতিঘরকে অভিনন্দন জানাতে হয়। তবে বাতিঘরকে শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। বাতিঘর একটি সামাজিক উদ্যোগ, এটিকে সামাজিক ব্যবসা হিসেবে মূল্যায়ন করতে হবে। এটি জ্ঞানপিপাসু মানুষের আকর্ষণের জায়গা হয়ে থাকুক।’ 

লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বাতিঘর বই বিক্রেতা, নাকি প্রকাশনা এ নিয়ে দ্বিধা রয়েছে। কখনো মনে হয়, বাতিঘরে প্রকাশনা কম গুরুত্ব পাচ্ছে। আসলে প্রকাশক হিসেবে টিকে থাকা খুব চ্যালেঞ্জের। সে চ্যালেঞ্জ বাতিঘর একা মোকাবিলা করবে, নাকি আরও সব প্রকাশনার সঙ্গে মিলে করবে, তাও দেখার বিষয়। কথা হলো, পাঠক যদি থাকে তাহলে লেখকও থাকবে, প্রকাশকও থাকবে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, এই কংক্রিটের শহরে বাতিঘর হলো মরূদ্যান। ওয়াটারস্টোনের মতো একটি চেইন বুক শপ হবে এই ঢাকায়, সেখানে বই পড়ার অভ্যাস ফিরে আসবে, বইয়ের জন্য এত টাকা বিনিয়োগ হবে, এটিই তো ছিল অবিশ্বাস্য।

কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান, আলতাফ পারভেজ, কবি ও প্রাবন্ধিক এজাজ ইউসুফী, ইফতেখারুল ইসলাম, মোহিত কামাল, লেখক কিযী তাহনিন, কবি-সাংবাদিক সোহরাব হাসান, লেখক-অনুবাদক মোজাফফর হোসেন, লেখক অরুণ বিশ্বাস শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ, অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন কান্তি নাথ, ভাষাচিত্র প্রকাশক খন্দকার সোহেল এই মিলনমেলায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। 

‘নানা প্রভাববলয়ে আত্মসমর্পণ করছে সাহিত্য’, অভিমত সাহিত্যিক-প্রকাশকদের

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৯ পিএম
আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
‘নানা প্রভাববলয়ে আত্মসমর্পণ করছে সাহিত্য’, অভিমত সাহিত্যিক-প্রকাশকদের
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পরিবর্তিত সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সাহিত্য নানাভাবে প্রভাববলয়ের কাছে আত্মসমর্পণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী ও প্রকাশকরা। প্রভাবাচ্ছন্ন প্রক্রিয়া-সৃষ্ট সাহিত্যকে তারা উল্লেখ করছেন হলুদ সাহিত্য নামে। এমন সাহিত্যকে তারা সমাজ ধ্বংসের অন্যতম উপকরণ হিসেবেও চিহ্নিত করেন।

শুক্রবার (১২ জুলাই) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সময় প্রকাশন আয়োজিত হুমায়ূন কবিরের প্রবন্ধ ‘হলুদ সাহিত্যের ছলচাতুরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানে লেখক হুমায়ূন কবিরের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আলম খোরশেদ, দীপু মাহমুদ, মোহিত কামালসহ আরও অনেকে।  

হুমায়ূন কবিরের  ‘হলুদ সাহিত্যের ছলচাতুরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ’ প্রবন্ধগ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠায় ৪টি বিষয়ে ৮টি নিবন্ধ সংকলিত হয়েছে। 

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘হলুদ সাহিত্য বলতে আমি বুঝি, যেখানে উদ্দেশ্যমূলক প্রচার আছে। যার মধ্যে সত্য নেই কিন্তু সত্যের ভান আছে। সেখানে আলোচ্য বিষয় হলো সাহিত্য ও সত্যের মধ্যে সম্পর্ক কী? চিন্তার মধ্যে যে দুর্বলতা রয়েছে, সে প্রশ্নও রয়েছে হলুদ সাহিত্যে। আমরা বিশেষ করে বিশ্বসাহিত্য উচ্চারণ করছি। এই বিশ্বসাহিত্যের কত আনা সবুজ, কত আনা হলুদ, কত আনা কালো? এসব আলোচনা করলে অনেক সমস্যা বেরিয়ে আসবে।’

মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘বইটিতে ৮টি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রবন্ধগুলোর মধ্যে বর্তমানময়তা রয়েছে। প্রতিটি প্রবন্ধ যাপিতজীবন ও স্থান-কালের সঙ্গে নিজের অবস্থান বাস্তবতার কাঠামোতে বর্ণনা করেছেন প্রাবন্ধিক।

প্রাবন্ধিক হুমায়ূন কবির পেশায় চিকিৎসক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বিপ্লবোত্তর ইরানে কাটিয়েছেন দুই বছর। ওই সময়ে তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘পারস্য পরবাসে’ ইতোমধ্যেই বিপুলভাবে আলোচিত।

জয়ন্ত/এমএ/

প্রবর্তিত হচ্ছে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৩ পিএম
আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম
প্রবর্তিত হচ্ছে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’
ছবি: সংগৃহীত

বহুমাত্রিক লেখক প্রয়াত শান্তনু কায়সারের স্মৃতিতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য’ এবং ‘শান্তনু কায়সার স্মৃতি পাঠাগার ও চর্চা কেন্দ্র, সাজনমেঘ’-এর যৌথ উদ্যোগে প্রবর্তিত হতে যাচ্ছে ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’। শান্তনু কায়সারের সাহিত্যচর্চার পাঁচটি ক্ষেত্র- কবিতা, কথাসাহিত্য (গল্প/ উপন্যাস), প্রবন্ধ-গবেষণা, নাটক এবং অনুবাদ বিষয়ে উদ্ভাবনাময়, মৌলিকতামণ্ডিত এবং প্রতিশ্রুতিবান বাংলা ভাষায় রচিত পাণ্ডুলিপির জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হবে।

গত ২৮ মে ২০২৪ তারিখ পুরানা পল্টনস্থ ঐতিহ্য কার্যালয়ে ঐতিহ্য’র প্রধান নির্বাহী আরিফুর রহমান নাইম এবং শান্তনু কায়সারের পরিবারের পক্ষে তার কনিষ্ঠ পুত্র রাসেল রায়হানের মধ্যে এ সংক্রান্ত যৌথ আলোচনায় ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার’ প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 

ঐতিহ্য’র কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রতি বছর পাঁচটি বিষয়ে জমাকৃত পাণ্ডুলিপির মধ্যে পুরস্কারের জন্য গঠিত বিচারকদের বাছাই করা সেরা তিনটি পাণ্ডুলিপির (পাঁচটি ক্ষেত্রের যে কোনও ক্ষেত্রের তিনটি সেরা পাণ্ডুলিপি) লেখককে প্রতিটি ৫০ হাজার টাকা অর্থমূল্যের এ পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ প্রদান করা হবে। সেরা তিনটি পাণ্ডুলিপি পরবর্তী বছর অমর একুশে বইমেলায় ‘ঐতিহ্য’ থেকে বই আকারে প্রকাশিত হবে।

রাকিবুজ্জামান জানান, প্রতি বছর অধ্যাপক শান্তনু কায়সারের জন্মদিন ৩০ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদান করা হবে। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট নবীন বা প্রবীণ লেখক ‘শান্তনু কায়সার স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করবেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর তারিখে সর্বোচ্চ ত্রিশ বছর অথবা এর নিম্নে যে কোনও বয়সী জন্মসূত্রে বাংলাদেশি কবি-লেখককরা এ পুরস্কারে জন্য আবেদন করতে পারবেন। ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর জন্য ১৫ জুলাই থেকে পাণ্ডুলিপি আহ্বান করেছেন আয়োজকরা। পাণ্ডুলিপি জমাদানের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর। পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা বা শব্দসংখ্যার কোনো সীমারেখা নেই। [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় ‘ঐতিহ্য-শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪-এর জন্য পাণ্ডুলিপি জমা দেওয়া যাবে। পাণ্ডুলিপি ওয়ার্ড ফাইল বা ও পিডিএফ ফরমেটে মেইল করতে হবে অথবা ডাকযোগে হার্ডকপি পাঠাতে হবে ঐতিহ্য শান্তনু কায়সার সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪, ঐতিহ্য, ৩/১-এইচ পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০)। 

ইতোমধ্যে বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে এমন রচনা পাণ্ডুলিপি আকারে জমা দেওয়া যাবে না। কোনো ধরণের চৌর্যবৃত্তি বা প্ল্যাজারিজম আশ্রয় নিলে পুরস্কার ঘোষিত হলেও অভিযোগ পাওয়া মাত্র বাতিল হবে। পুরস্কারের জন্য যেকোনো ধরনের সুপারিশ বা অনুরোধ পুরস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।

জয়ন্ত/এমএ/

কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন
কবি মাকিদ হায়দার

কবি মাকিদ হায়দার মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

বুধবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে আটটায় উত্তরার নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন সত্তর দশকের অন্যতম এই কবি।

তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
 
মাকিদ হায়দারের ছেলে আসিফ হায়দার সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, কবি দীর্ঘদিন নানা রোগে ভুগছিলেন। তাকে বিকেলে পাবনায় পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।

মাকিদ হায়দার ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার দোহারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাকিমউদ্দিন শেখ ও মা রহিমা খাতুন। তারা সাত ভাই ও সাত বোন। তিনি ছেলেদের মধ্যে ষষ্ঠ। তার ভাই রশীদ হায়দার, জিয়া হায়দার, দাউদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, আবিদ হায়দার ও আরিফ হায়দার সবাই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত।

তার উল্লেখযোগ্য লেখার মধ্যে রয়েছে, ‘রোদে ভিজে বাড়ি ফেরা’ ‘আপন আঁধারে একদিন’ ‘রবীন্দ্রনাথ: নদীগুলা’ ‘বাংলাদেশের প্রেমের কবিতা’ ‘যে আমাকে দুঃখ দিলো সে যেনো আজ সুখে থাকে’ ‘কফিনের লোকটা’ ‘ও প্রার্থ ও প্রতিম’ ‘প্রিয় রোকানালী’ ‘মমুর সাথে সারা দুপুর’।

মাকিদ হায়দার ২০১৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়া বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি।

অমিয়/