অনেক দিনের স্বপ্ন নিজের একটা গাড়ি হবে। একদিন স্বপ্নটা পূরণ হয়ে গেল। অনেক শখের গাড়িটি কিনে ফেললেন। এবার মনের মতো করে শখের গাড়িটি সাজানোর পালা। বর্তমান সময়ে যানজটে গাড়িতে অনেক সময় কাটাতে হয়। চলমান পথে এই ভ্রাম্যমাণ নীড়কে রুচিশীল উপায়ে সাজানো যায়। গাড়ির ভেতরে জায়গা কম থাকে, কথাটি মাথায় রেখে সাজসজ্জা করতে হবে। এই সীমিত জায়গার জন্য এমন সব জিনিস কিনতে হবে যা ভেতরের জায়গা কমাবে না, বরং গাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি কাজেও লাগবে। জানাচ্ছেন আবরার জাহিন
সিট কভার
নিয়মিত গাড়ি ব্যবহারের জন্য সিট কভার লাগানো অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গাড়ির ভেতরের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে গাড়ির সিট কভারের ওপর। সিট কভার দেখতে নান্দনিক হলে গাড়ির ভেতরের পরিবেশ বহুগুণে মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। সিট কভার পছন্দ করার সময় ময়লার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। এমন রঙের সিট কভার বাছাই করতে হবে যা দ্রুত ময়লা হয় না। ময়লা হলেও চোখে পড়বে না। পছন্দের সঙ্গে মানানসই রং, ভালো মানের কাপড় দিয়ে সিট কভার বানান।রেডিমেড বা নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নিতে পারেন।
ফ্লোর ম্যাট
গাড়ির যত্নে ফ্লোর ম্যাটের গুরুত্ব অনেক। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ফ্লোর ম্যাট পাওয়া যায়। এর মধ্যে পছন্দমতো ফ্লোর ম্যাট বেছে নিন। এটি ব্যবহারে গাড়ির ভেতর সরাসরি কাদা, পানি ও ময়লা পড়ে না। বাজারে কার্পেট, রাবার, থ্রি-ডি, প্রিমিয়াম ফ্যাব্রিক ফ্লোর ম্যাটসহ নানা ধরনের ফ্লোর ম্যাট পাওয়া যায়।
স্টিয়ারিং কভার
গাড়ি চালোনায় স্বাচ্ছন্দ্য থাকা জরুরি। আর এই গাড়ি চালানোকে আরামদায়ক করতে পারে স্টিয়ারিং কভার। এই স্টিয়ারিং কভার গাড়ি চালানোয় স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। বাজারে চামড়ার বা সিনথেটিকের দেশি-বিদেশি নানা রকম স্টিয়ারিং কভার পাওয়া যায়। মান ও ডিজাইন ভেদে বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। নিজের পছন্দ, আরাম ও সামর্থ্য অনুযায়ী স্টিয়ারিং কভার কিনুন।
মোবাইল স্ট্যান্ড/হোল্ডার
গাড়ি চালানোর সময় কল বা মেসেজ আসে। এ সময় বারবার পকেট বা ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করা ঝামেলা মনে হয়। আর গাড়ি চালানোর সময় অন্য দিকে নজর দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণও বটে। এতে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ড্যাশবোর্ড বা উইন্ডোতে সুন্দর একটি মোবাইল স্ট্যান্ড বা হোল্ডার যুক্ত করে এর সমাধান করা যায়। এ ছাড়া গাড়ি চালানোর সময় জিপিএস বা গুগল ম্যাপ দেখার জন্য মোবাইল হোল্ডার বেশ কাজে দেয়। সহজে কল কেটে দেওয়া বা ড্রাইভ করার সময় জরুরি কথা বলতে গাড়িতে সুন্দর মোবাইল স্ট্যান্ড বা হোল্ডার প্রয়োজন। যদিও গাড়ি চালানোর সময় যথাসম্ভব মোবাইলে কথা বলা বাদ দেওয়া উচিত।
কি ফাইন্ডার
অনেক সময় চাবি খুঁজে পাওয়া যায় না। খুব সহজে চাবির রিং খুঁজে পাওয়ার জন্য রিংয়ের সঙ্গে কি ফাইন্ডার যুক্ত করুন।
সিট বেল্ট কভার
নিরাপত্তার জন্য সিটবেল্ট ব্যবহার করতে হয়। তবে সিটবেল্ট বারবার ব্যবহারের নোংরা হয়ে যায়। এটি পরিষ্কার করা একটু কষ্টকর হয়। তাই সিটবেল্টে কভার ব্যবহার করুন। বিভিন্ন ডিজাইনের সিটবেল্ট কভার পাওয়া যায়।
কার সান শেড
অনেক সময় গাড়িতে চলাফেরার সময় সূর্যের আলো চোখে পড়ে। তীব্র আলোয় গাড়ি চালানো কঠিন হয়ে যায়। গাড়িতে বসে থাকতেও ভালো লাগে না। এ জন্য সান শেড ব্যবহার করতে পারেন।
কার চার্জার
গাড়িতে চলাচলের সময় মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া অসুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। গাড়িতে উঠে দেখলেন মোবাইলে চার্জ শেষ। অথচ মোবাইল চার্জ করার অন্য কোনো উপায়ও নেই। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সমাধান করবে কার চার্জার। এটি ইউএসবি পোর্ট আছে এমন যেকোনো গাড়িতেই ব্যবহার করা যায়। এর মাধ্যমে মোবাইল, ট্যাব, পাওয়ার ব্যাংকসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জ করার জন্য ব্যবহার করা যায়। এটি ছোট আকারের ও হালকা ওজনের হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন দামের কার চার্জার পাওয়া যায়।
কার পারফিউম
গাড়ির ভেতরের পরিবেশকে সুগন্ধযুক্ত ও সতেজ রাখার জন্য গাড়িতে সুগন্ধির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে স্প্রে কর যায় এমন সুগন্ধি ব্যবহার করুন। এ ছাড়া ড্যাশবোর্ডে, এসি ভেন্টে আটকে রাখলে সুগন্ধ ছড়ায় এমন কার পারফিউমও ব্যবহার করা যায়। এগুলো বিভিন্ন রং, ফুল, ফল, পশুপাখিসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় আকারের পাওয়া যায়। যা সুগন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি শোপিসের মতো শোভাও বাড়ায়। বিভিন্ন ধরনের কার পারফিউম পাওয়া যায়। স্প্রে বোতল ব্যবহার করা সহজ ও দ্রুত সুগন্ধ ছড়ায়। এছাড়া জেলও ব্যবহার করা যায়।ল দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে স্প্রের তুলনায় কম সুগন্ধ ছড়ায়। এ ছাড়া ভেন্ট ক্লিপ এসি ভেন্টে আটকে রাখা যায়। দীর্ঘস্থায়ী সুগন্ধের জন্য জেল বা ডিফিউজার ব্যবহার করুন। পছন্দ অনুযায়ী তীব্র বা হালকা সুগন্ধের পারফিউম কিনুন। অ্যালকোহলমুক্ত পারফিউম ব্যবহার করুন। বিকল্প সুগন্ধি হিসেবে গাড়ির ভেতরে প্রাকৃতিক ফুল রাখুন। যা সুবাসের সঙ্গে গাড়ির ভেতরে শোভা বাড়াবে।
নেক পিলো
দীর্ঘ যাত্রায় বসে থেকে অনেকের ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে। এই সমস্যার দারুণ সমাধান নেক পিলো। এটি ঘাড়ের স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রাখে। এই বালিশ দেখতে ঘোড়ার খুরের আকৃতির হয়। বেশি নরম বা শক্ত না হয় এমন বেছে নিন। এটি ঘাড়ে জড়িয়ে ঘুমালে অপ্রস্তুত অবস্থায় ঘাড় বেঁকে ব্যথা পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না। বিভিন্ন দাম ও মানের নেক পিলো বাজারে পাওয়া যায়।
টিস্যু বক্স কভার
গাড়িতে টিস্যু বক্স থাকা অত্যাবশ্যক। তবে সাধারণ কাগজের টিস্যু বক্স গাড়ির ভেতরে নকশার সঙ্গে মানানসই নাও হতে পারে। এ জন্য টিস্যু বক্স কভার ব্যবহার করুন। ফ্যাশনেবল টিস্যু বক্স কভার ভেতরের পরিবেশ আকর্ষণীয় করে তোলে। আবার ময়লা থেকে টিস্যুগুলোকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন রং, ডিজাইনে এটি পাওয়া যায়। গাড়িতে ভিতরের নকশার সঙ্গে মানানসই টিস্যু বক্স কভার রাখুন। চামড়া, কাপড়, কাঠসহ নানা ধরনের, নানা দামের টিস্যু বক্স কভার কিনতে পাওয়া যায়।
ব্যাকপেইন রিলিফ কুশন
বেশি সময় গাড়ি চালালে পিঠে ও কোমরে ব্যথা হতে পারে। আর যাদের আগে থেকেই ব্যথার সমস্যা আছে, তাদের জন্যও দীর্ঘ সময় গাড়ি চালানো বেশ কষ্টকর হয়। এরকম সমস্যায় আরাম পেতে গাড়িতে রাখতে পারেন ব্যাকপেইন রিলিফ কুশন। এটি দেখতে জালিযুক্ত ও পিঠের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাঁকানো হয়। এটি রাবারের সাহায্যে গাড়ির সিটের সঙ্গে আটকে রাখা যায়।
মিরর হ্যাঙ্গিং
গাড়ির সামনের আয়না নানা ধরনের অনুষঙ্গ দিয়ে সাজানো যায়। কারে ঝুলানো যায় এমন জিনিসপত্রও বাজারে পাওয়া যায়। অনেকে আবার নিজের পছন্দের জিনিসও ঝুলিয়ে রাখতে ভালোবাসেন। সুন্দর চাবির রিং, ছোট পুতুল, শোপিস, প্রিয়জনের ছবি, ধর্মীয় নাম, উক্তি কিংবা তসবিহ দিয়েও সাজানো যায় গাড়ির সামনের এই অংশ।
সফট টয়
ছোট প্রাইভেট কারের পেছনের ব্যাক উইন্ডোর সামনের ছোট্ট খালি অংশে অনেকে ছোট বালিশ, কুশন বা সফট টয় রাখতে পছন্দ করেন। এগুলো গাড়ির সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়। এগুলো মাথা বা পিঠের পেছনে রেখে আরাম করা যায়। গাড়ির আকার ও পেছনে জায়গার বিষয় মাথায় রেখে এসব কিনুন।
সিটব্যাক স্টোরেজ
সাধারণত গাড়ির সামনের দুই সিটের পেছনেই একটি করে কোনো কিছু রাখার ব্যবস্থা থাকে। তবে মাত্র দুটি পকেট অনেকের কাছে কম মনে হতে পারে। আবার জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখাও কষ্টকর হতে পারে। এক্ষেত্রে কিনে নিতে পারেন বেশি পকেটসহ সিটব্যাক স্টোরেজ।
নিজের গাড়ি মনের মতো সাজাতে পারলে যেমন বেশ ভালো লাগে, তেমনি উন্নত রুচির পরিচয় দেয়। রাজধানী ঢাকার বাংলামোটর, মগবাজার, মহাখালীর কার পার্টস মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় এসব জিনিস পাবেন। চাইলে অনলাইন থেকেও এসব কিনতে পারবেন।
জাহ্নবী