![ডেইলি স্টারের সাংবাদিকের বাসার গৃহকর্মীর মৃত্যু : কারণ জানতে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ](uploads/2024/02/11/1707626250.Daily-star.jpg)
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বহুতল ভবনের নবম তলার বারান্দা থেকে পড়ে গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের (১৫) মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে থাকা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, গত ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় তাদের কাছে একই ঘটনা কেন বারবার হচ্ছে এর কারণ জানতে চেয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, গত ৬ ফেব্রুয়ারি গৃহকর্মী প্রীতি উরাং নবম তলা থেকে পড়ে মারা যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই ঘটনার ছয় মাস আগে আরেক গৃহকর্মী সাত বছর বয়সী ফেরদৌসী একইভাবে আট তলা থেকে পড়ে যাওয়ার রহস্য উদ্ঘাটন করতেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিলেন আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদন্তসূত্র জানান, কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই বাসায় বারবার কেন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং এর নেপথ্যে কী কারণ, তা বের করার জন্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তা ছাড়া, মারা যাওয়া প্রীতি উরাংকে কেন হাত বেঁধে বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল তা জানতে চাওয়া হয়েছে আশফাক ও তানিয়া দম্পতির কাছে।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর ধারায় মামলা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তদন্তে সরাসরি হত্যার প্রমাণ বা অন্য কিছু পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া চালানো হবে।
কারণ, বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। বাসা থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে কি না, এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় গত ৬ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন দুপুর ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন নিহত প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং। মামলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক (৬৫), তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে (৪৭) আসামি করা হয়। পরে তাদের আদালতে সোপর্দ করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। আটক অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওইদিন (৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্পসংলগ্ন একটি ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে মারা যায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫)। পড়ে যাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল প্রীতি। এরপর ওই ভবন থেকে নিচে পড়ে যায়। মেয়েটা পড়ার পর অনেক লোক ভিড় করেন। দ্রুত ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা প্রথমে দরজা খুলতে চাননি। যখন ওপর থেকে মেয়েটা পড়ে যায়, পাশের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনাসসহ আরও কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ মেয়েটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
এই ঘটনার পর স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে পুলিশ আশফাক, তানিয়াসহ তাদের পরিবারের ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায়।
আলোচিত এ ঘটনায় প্রীতির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাদিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, পড়ে গিয়ে শরীরের অবস্থা এমন হয়েছে যে সাধারণভাবে এসব দাগ আলাদা করে নির্ণয় করা কঠিন। ময়নাতদন্তে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
প্রীতির গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গায়। অভাবের কারণে দুই বছর আগে মিন্টু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিক আশফাকুল হকের বাসায় ছোট মেয়েকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছিলেন বলে জানান প্রীতির বাবা। কাজে পাঠানোর পর থেকে গত দুই বছরেও মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি আশফাকুল হকের পরিবার। মাসে দু-একবার গৃহকর্তার মোবাইলে যোগাযোগ করে কথা বলিয়ে দিতেন তারা।
ঘটনা প্রসঙ্গে গত ৬ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা জানিয়েছিলেন, গত বছরের ৬ আগস্ট একই গৃহকর্তার বাসা থেকে ফেরদৌসী নামে এক গৃহকর্মী রহস্যজনকভাবে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন সে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিল। এ ঘটনায় আহত গৃহকর্মীর মা জোছনা বেগম তিনজনের নাম উল্লেখ করে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার আসামি ছিলেন সৈয়দ আশফাকুল হক, তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার শিল্পী নামের আরেকজন।
ওসি মাহফুজুল হক বলেন, একটি জায়গা থেকে বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটছে, বিষয়টি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। এর আগে ফেরদৌসী নামে ওই গৃহকর্মী প্রাণে বেঁচে গেলেও আজ প্রীতি নামের ওই গৃহকর্মী একই কায়দায় নিচে পড়ে যায় এবং সে মারা যায়। নিহত প্রীতি দুই বছর ধরে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার শাশুড়ির বাসায় কাজ করত।
পূর্ববর্তী মামলাটির আসামিরা বাদীর সঙ্গে আদালতে আপস করেছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা সেই সময় আপসনামার ভিত্তিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আরও পড়ুন:
> ডেইলি স্টারের সাংবাদিকের বাসার গৃহকর্মীর মৃত্যুতে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ
> মোহাম্মদপুরে গৃহকর্মী মৃত্যু : ডেইলি স্টারের সাংবাদিক ও তার স্ত্রীর রিমান্ড আবেদন
> মোহাম্মদপুরে বহুতল ভবন থেকে পড়ে গৃহকর্মীর মৃত্যু, আটক ৬
অমিয়/