বহুমুখী প্রতারণার অভিযোগে অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার। গত বুধবার গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানার মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল মৃত্যু সনদ তৈরির অভিযোগে করা মামলায় তার বিরুদ্ধে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এই আদেশ দেন।
মিরপুর মডেল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা ও পুলিশের উপপরিদর্শক জালাল উদ্দীন বৃহস্পতিবার (২ মে) এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মোহাম্মদ কামাল হোসেন গতকাল মিল্টনকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করেন। তবে তার আইনজীবীরা রিমান্ড আবেদনের বিরোধিতা করে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মিল্টনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেপ্তারের পরই তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি পুলিশ। তবে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মিল্টন। তার পেছনে কারা ত্রাতা হয়ে কাজ করেছেন তাদেরও নাম বলেননি তিনি। তার টাকার হিসাবেও রয়েছে যথেষ্ট গরমিল। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে মিল্টন সমাদ্দারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, পুলিশ মিল্টনের কাছে জানতে চেয়েছে- তার পাঁচটি ফেসবুক পেজে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১৬টি নম্বর দেওয়া ছিল। এ ছাড়া আরও তিনটি বেসরকারি ব্যাংকে চলতি হিসাব খোলা ছিল। সেসব অ্যাকাউন্টে দেশে এবং বিদেশ থেকে যে মোটা অঙ্কের টাকা আসত, সেই টাকা তিনি কোথায় ব্যয় করেছেন? এর উত্তরে মিল্টন জানিয়েছেন, সাভারে তার আশ্রম ও মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ চালাতে তিনি ওই টাকা ব্যয় করেছেন। এরপর ডিবির জানতে চায়, সেখানে যতজনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে, সেই হিসাবে বেশি টাকা খরচ হওয়ার কথা নয়। তাহলে বাকি টাকা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
তবে ডিবি পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে মিল্টন এ তার পরিবারের একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে। সেসব ব্যাংকের লেনদেনের নথি সংগ্রহ করছে পুলিশ। হারুন অর রশীদ বলেন, ‘লাশ দাফনের বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। তার এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আরও যারা জড়িত রয়েছেন, তাদের ধরতে ডিবি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন।’
ডিবি প্রধান জানান, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলোতে জাল মৃত্যু সনদ তৈরি, আশ্রমের টর্চার সেলে মারধর করা ও মানব পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। রিমান্ডে তাকে এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি আরও জানান, রাতের আঁধারে মিল্টন লাশ দাফন করতেন। লাশ দাফনের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সনদ নিত না, নিজেই লিখে সই করত। সিলসহ সেই কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। মিল্টনের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না, জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘মিল্টনকে রিমান্ডে আনার পর তার স্ত্রীকেও ডাকা হবে। তবে কোনো ভুক্তভোগী যদি মামলা করেন, তাহলে তার স্ত্রীকেও আমরা গ্রেপ্তার করব।’
মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, মিল্টন সমাদ্দারের নানা বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পুলিশ বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তে মিল্টনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি টিম সাভারের কমলাপুর এলাকার বাহেরটেকে মিল্টনের আরেকটি আশ্রমে যায়। সেখানকার এলাকাবাসীও তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করছেন। এসব বিবেচনায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি)। এ ছাড়াও তার লাঠিয়াল বাহিনীর একাধিক সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে পুলিশ।