ঘুষ নিয়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে ৫৪ জনকে নিয়োগ দেওয়ার মামলায় রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি কার্যালয়ে পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অপর চার আসামি হলেন কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত) নুরুজ্জামান সুমন, কনস্টেবল (সাময়িক বরখাস্ত) জাহিদুল ইসলাম, মাদারীপুর জেলা পুলিশ হাসপাতালের সাবেক মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট পিয়াস বালা ও মাদারীপুরের সাবেক টিএসআই (টাউন সাব-ইন্সপেক্টর) গোলাম রহমান।
গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম খবরের কাগজকে জানান, গত রবিবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এ চার্জশিট অনুমোদন হয়। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই এ চার্জশিট সংশ্লিষ্ট আদালতে দাখিল করা হবে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১৯ সালে মাদারীপুরে ঘুষের বিনিময়ে ৫৪ জন কনস্টেবল নিয়োগ দিয়ে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঘটনা বিবরণে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২৮ মে বাংলাদেশ পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ৬ হাজার ৮০০ জন পুরুষ এবং ২ হাজার ৮৮০ জন নারীসহ মোট ৯ হাজার ৬৮০ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা রেঞ্জের অধীন মাদারীপুর জেলায় সাধারণ পুরুষ ১৬ জন ও সাধারণ নারী ৩ জন এবং বিশেষ কোটায় ১৫ জন পুরুষ ও ২০ জন নারীসহ মোট ৫৪ জন কনস্টেবল নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়।
ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন মাদারীপুর জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার। অপর দুজন সদস্য হলেন মাদারীপুর জেলার তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. নাজমুল ইসলাম ও গোপালগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর সংখ্যাসহ কোটাভিত্তিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা ছকের মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২২ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজির (রিক্রুটমেন্ট অ্যান্ড ক্যারিয়ার প্লানিং-২) কাছে পাঠায় মাদারীপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়। ছক অনুযায়ী মাদারীপুর থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রথম পরীক্ষা বা প্রথম ধাপ হিসেবে ২০১৯ সালের ২২ জুন শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ছিলেন ৯৯৩ জন। এর মধ্যে ৩৬৪ জন শারীরিক মাপ ও শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরীক্ষায় ৯৯৩ প্রার্থীর মধ্যে পুরুষ ৮৩৫ জন এবং নারী প্রার্থীর ১৫৮ জন। এদের মধ্যে ৩০৫ জন পুরুষ এবং ৫৯ জন নারী প্রার্থী উত্তীর্ণ হন। মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় পরীক্ষা বা দ্বিতীয় ধাপ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় পরদিন ২৩ জুন। এতে ইংরেজি অংশের প্রশ্ন (প্রশ্নপত্রের ৪ থেকে ৫ নম্বর ক্রমিকের প্রশ্ন) প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন সুব্রত কুমার হালদার।
একই বছর ২৬ জুন মাদারীপুর জেলা থেকে পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত ফলের ভিত্তিতে ৫৪ জন পুলিশ কনস্টেবলের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ ঘুষ লেনদেনের ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছয়টি ধাপে জব্দ করে পুলিশ বিভাগ। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর প্রাথমিক তদন্ত শেষে আদালতের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। দুদকের অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সুব্রত কুমার হালদারসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে গত বছর ৫ জুলাই মামলা করা হয়। তদন্তে উপযুক্ত তথ্য পেয়ে ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করা হয়। উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় মাদারীপুর ইদ্রিস শিকদারের বাড়ির ভাড়াটিয়া হায়দার ফরাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।