![নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলুন](uploads/2023/12/02/1701494909.Editorial.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বেড়েই চলছে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা। মিছিল-শোডাউন, সভা-সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে নির্বাচনী এলাকাগুলোয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোস্টার-ব্যানার টানিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার পরও তারা সেগুলো অপসারণ করেননি। এ ব্যাপারে সম্প্রতি কমিশনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হলেও তাতে কোনো ফল মিলছে না। দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে মিছিল ও শোডাউন নিয়ে রাজপথ কাঁপাচ্ছেন অনেকে, যা নির্বাচনী আচরণের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর, যা চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। সরেজমিনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আসনের প্রার্থীরা গণসংযোগ করছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আমলে ২০০৮-এ প্রণীত এই বিধিমালা ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় নির্বাচনপূর্ব সময় বলতে চিহ্নিত করা হয়েছে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশিত হওয়ার আগ পর্যন্ত।
আচরণবিধির ৮ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি (ক) কোনো ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, নৌযান, ট্রেন বা অন্য কোনো যান্ত্রিক যানবাহনসহ মিছিল কিংবা মশাল মিছিল বের করতে পারবেন না বা কোনোরূপ শোডাউন করতে পারবেন না। (খ) মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় কোনো প্রকার মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না।’
এই বিধিমালার ১২ ধারায় স্পষ্টভাবে প্রচারের সময় সুনির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত দিনের তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে পারবেন না।
ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের এক ওয়েবিনারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই কমিশন নিজেদের থেকে তফসিল দিয়েছে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে। যেভাবে আচরণবিধি ভাঙা হচ্ছে, সে বিষয়ে কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তখন ইসির অধীনে গেছে কি না, সেটা জানা যায়নি।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কমিশনের উচিত হবে, প্রার্থীদের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করতে সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়িয়ে তাদের শাস্তির ভয়ভীতি দেখানোর ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে সব দলের প্রার্থীদের অংশগ্রহণে ভোটের আমেজ ও উৎসবের পরিবেশ নিশ্চিত করা।’ এ বিষয়ে কমিশনের ভূমিকা সম্পর্কে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা এসব ঘটনা আমরাও প্রত্যক্ষ করছি। আইনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীর অপরাধের ধরন অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা ছয় বছরের জেল হতে পারে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে।’
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, দলীয় সরকারের অধীনে পরিচালিত প্রশাসনের ওপর ইসির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রধান উপায় হচ্ছে আচরণবিধি প্রতিপালনে কঠোর অবস্থান গ্রহণ। এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে ইসি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সবার মধ্যে ফুটিয়ে তুলতে পারে। শুরুতেই আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকানোর বিষয়ে শিথিল মনোভাব প্রদর্শন করা পুরো নির্বাচনব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বর্তমানে প্রার্থীদের আচরণবিধি ভঙ্গ করার মতো ঘটনা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের আগে এ ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দায়িত্বরত রিটার্নিং অফিসারের এগুলো দেখা উচিত। নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বিধিবিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। প্রার্থীদের আচরণবিধি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পত্রপত্রিকা, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা বাড়িয়ে প্রার্থীদের সচেতন করতে হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই প্রার্থী এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন।’