![চট্টগ্রামে মেধাবীদের কলেজে ফলাফলে খরা](uploads/2023/11/27/1701095188.Ctg HSC result.jpg)
এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া এবং ভালো নম্বরধারী ছাত্র-ছাত্রীরা চট্টগ্রামের সেরা কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পায়। কিন্তু ভর্তির সুযোগ পাওয়া অর্ধেকেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় সে ফলাফল ধরে রাখতে পারেনি।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের তথ্যমতে, সরকারি কলেজের মধ্যে চট্টগ্রাম হাজী মোহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে এবার ১ হাজার ৬৫২ পরীক্ষা দিলেও পাস করেছে ১ হাজার ৬১৯ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৮৬৮ জন। চট্টগ্রাম কলেজে ১০২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ১৯ জন পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪৬ জন। চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজ থেকে ২ হাজার ২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৯৮৪ জন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৬৭৬ জন। সরকারি কমার্স কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ৮৭০ জন। এরমধ্যে পাস করেছে ৮৬৬ জন এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৬৬ জন। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের ১ হাজার ৩২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ২৮৭ জন। এর মধ্যে মাত্র ৩৫৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
এদিকে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে ১ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে জিপিএ- পেয়েছে ২৪৮ জন। চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৭৭৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৭২৪ জন। এরমধ্যে মাত্র ১৩২ জন পেয়েছে জিপিএ-৫। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১১১ জন পরীক্ষার্থীর সবাই পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫২ জন। গাছবাড়িয়া সরকারী কলেজ থেকে ১ হাজার ১৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১ হাজার ৪৯ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩৮ জন।
অপরদিকে চট্টগ্রামের ভালো বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের মধ্যে ১ হাজার ৬৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০৫৭ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪০৫ জন। হাজেরা তোজু ডিগ্রী কলেজে ১ হাজার ৬শ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৫৬৭ জন। এরমধ্যে ৩৫৫ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বায়েজিদ এলাকার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৩২৬ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫৯ জন। খুলশী এলাকার ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৫৫৩ জনের মধ্যে ৫৪৫ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৬ জন। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজের ৫৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৩৫ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮০ জন। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর কলেজ থেকে ৩০৯ জনের মধ্যে ৩০৮ জন পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৬৮ জন। কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ থেকে ১ হাজার ১৩২ জনের মধ্যে ১ হাজার ৫১ জন পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ জন। বিএফএফ শাহীন কলেজ থেকে ৫২৩ জন পাস করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩২ জন এবং বাংলাদেশ মহিলা সমিতি গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৮২৬ জনের মধ্যে ৭৯২ জন পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৭৩ জন।
বেশি খারাপ ফলাফল ৫ বিষয়ে
চট্টগ্রামে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা- এই পাঁচ বিষয়ে ফলাফল বেশি খারাপ করেছে।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে বাংলা প্রথম পত্রে ৬ হাজার ৬০৭ জন, বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ২ হাজার ২৭১ জন, ইংরেজি প্রথম পত্রে ৭ হাজার ৭৮৪ জন, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে ১৩ হাজার ৮৯৭ জন, অর্থনীতি প্রথম পত্রে ৭ হাজার ৯৫৯ জন, অর্থনীতি দ্বিতীয় পত্রে ৪ হাজার ২৪১ জন, সমাজত্ত্ব প্রথম পত্রে ৩ হাজার ২৮৭ জন, সমাজত্ত্ব দ্বিতীয় পত্রে ১ হাজার ৩৫ জন, যুক্তিবিদ্যা প্রথম পত্রে ৫ হাজার ২০৪ জন ও যুক্তিবিদ্যা দ্বিতীয় পত্রে ২ হাজার ৮৩২ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে বারবার সিলেবাস পরিবর্তন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাস থেকে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে পরীক্ষা গ্রহণসহ নানা কারণে চট্টগ্রাম এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হযেছে। পাশাপাশি শহরের শিক্ষার্থীদের তুলনায় গ্রামের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে পড়াও খারাপ ফলাফলের আরেকটি কারণ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, গতবারের তুলনায় এবার পাশের হার বা জিপিএ-৫ এর হার কমেছে। শিক্ষার্থীদের সিলেবাসে পুনর্বিন্যাসের কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের উপর একটা প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি শহরের শিক্ষার্থীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় গ্রাম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সেটা কিন্তু পাচ্ছে না। এটাও ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণ। তবে শিক্ষার্থীদেরও একটা দায় আছে। তাদের ঠিকমত লেখাপড়া করা উচিত ছিল ভালো ফলাফলের জন্য। সামনের বছর কীভাবে ভাল ফলাফল করা যায়, দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেভাবে কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল আসেনি। এটার জন্য কয়েকটা কারণ আছে। এরমধ্যে প্রধান কারণ হলো যে কলেজগুলোতে তারা পড়েছে সেখানে ভালো মানের শিক্ষক বা শিক্ষার মান আছে কিনা, এটা একটা বড় প্রশ্ন। নতুন শিক্ষা কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মত ক্যাপাসিটি (সক্ষমতা) তাদের আছে কিনা। আর কলেজে ভর্তি হবার পর আমাদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি আর কঠোর বা যত্নশীল থাকেন না। তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে কিনা এসব তত্ত্বাবধান করা প্রয়োজন। এসব কারণে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ভালো ফলাফল করতে পারছে না। শিক্ষক, অভিভাবকরা সচেতন না হলে সামনের অবস্থা আরও খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে যাবে।
তারেক মাহমুদ/এআর