![সংকটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় : ছুটিতে ৯৪ শিক্ষক](uploads/2023/11/28/1701158668.5.-cummila-varsity-photo.jpg)
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টির মধ্যে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ অন্যতম। এই বিভাগের আট শিক্ষকের মধ্যে চারজন শিক্ষা ছুটি এবং একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। বাকি তিন শিক্ষক দিয়ে চলছে বিভাগটির সব কার্যক্রম। প্রায় একই অবস্থা বাকি ১৭ বিভাগেও। শুধু আইন ছাড়া বাকি বিভাগের দুই কিংবা দুইয়ের বেশি শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ফলে শিক্ষকসংকট নিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম।
শিক্ষকরা বলছেন, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটি নিয়ে বিধি থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। ক্যাম্পাস প্রশাসনের শিক্ষক ব্যবস্থাপনায় গলদের কারণে এ অবস্থা্ তৈরি হয়েছে। আর উপাচার্যের দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, ইউজিসি থেকে পদ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই এ সংকট লাঘব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী মোট শিক্ষকের সংখ্যা ২৬৬ জন। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে আছেন ৯৩ জন এবং একজন রয়েছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। এর মধ্যে গণিত বিভাগে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে ৬ জন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৬ জনের মধ্যে ৮ জন, পরিসংখ্যান বিভাগের ১৪ শিক্ষকের মধ্যে ৫ জন, রসায়ন বিভাগে ৯ জন, ফার্মাসি বিভাগে ৬ জন, ইংরেজি বিভাগে ১৭ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জন, বাংলা বিভাগের ২ জন ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগে ২ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন।
এ ছাড়া অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চারজন শিক্ষক, মার্কেটিং বিভাগের পাঁচজন, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তিনজন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৯ জন, আইসিটি বিভাগের পাঁচজন, লোকপ্রশাসন বিভাগের পাঁচজন, অর্থনীতি বিভাগের চারজন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ছয়জন, প্রত্মতত্ব বিভাগের তিনজন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে একজন মাতৃত্বকালীন এবং বাকি চারজন শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা (সাধারণ) ২০২২ অনুযায়ী একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা হবে ৪০ ঘণ্টা। এই কর্মঘণ্টা কন্টাক্ট আওয়ার এবং নন-কন্টাক্ট আওয়ার সমন্বয়ে পরিপূর্ণ হবে। ৪০ ঘণ্টার মধ্যে একজন শিক্ষক গড়ে ১৩ ঘণ্টা ব্যয় করবেন কন্টাক্ট আওয়ার হিসাবে। এ ছাড়া বিভাগ/ইনস্টিটিউটের প্রধানের সাপ্তাহিক কন্টাক্ট আওয়ার হবে ছয় ঘণ্টা।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ছুটির বিষয়ে নির্ধারিত বিধি থাকলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এ ছাড়া কর্মস্থলে থাকা অন্য শিক্ষকদের ওপর চাপ বেশি পড়ছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শিক্ষক ব্যবস্থাপনার সমস্যা।’
রসায়ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এ কে এম রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কাছে বিভাগের জন্য শিক্ষক নিয়োগ চেয়েছি। কিন্তু ইউজিসি পদ না দেওয়ায় প্রশাসনও কোনো নিয়োগ দিতে পারছে না। ইউজিসি থেকে পদ পেলে শিক্ষকসংকট অনেকটাই কেটে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষক ভালো স্কলারশিপ পেয়ে থাকেন। বিভাগ থেকেও সুপারিশ যায়। তখন শিক্ষকসংকটের কথা বলে সুপারিশ না দিলে শিক্ষকের মধ্যেও এক ধরনের ক্ষোভ কাজ করে। কাজ করতে চান না। প্রশাসন কিংবা আমাদের কারও-ই উপায় নেই। এখন নতুন পদ দরকার সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে শিক্ষকসংকট রয়েছে। এর মধ্যে এই বছর আরও কয়েকজন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। যেসব শিক্ষক উচ্চশিক্ষার পরেও ফিরে আসছিলেন না, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফিরে আসতে বলি। যারা আসেননি তাদের অনেকের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি করে তাদের ধরে রাখা পদগুলো শূন্য করা হয়েছে, আর বাকিদের দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিসহ পদ শূন্য করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি পদ চেয়ে ইউজিসিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি চলতি মাসে আমাদের সাতটি পদ দিয়েছে। আরও কিছু পদ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আশা করি, সংকট অনেকখানি লাঘব হবে।’