![অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর: সমাজকর্ম প্রথম পত্র](uploads/2024/02/13/1707804416.b.jpg)
প্রথম অধ্যায়
সমাজকর্ম: প্রকৃতি ও পরিধি
সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
১। ছকটি দেখে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
(ক) সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে কোন দেশে?
(খ) সামগ্রিক কল্যাণ বলতে কী বোঝায়?
(গ) উদ্দীপকে সমাজকর্মের কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
(ঘ) উদ্দীপকে সমাজকর্মের সকল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় নাই। এ বিষয়ে মতামত দাও।
উত্তর: (ক) সমাজকর্মের উদ্ভব ঘটে ইংল্যান্ডে।
(খ) মানবজীবনের সব ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়ন ছাড়া সামাজিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করা যায় না। তাই সমাজকর্ম মানুষের আর্থিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানসিক, দৈহিক ও নৈতিক সব ক্ষেত্রের কল্যাণ সুনিশ্চিত করতে সদা তৎপর। সব ক্ষেত্রের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য সমাজকর্ম যে বহুমুখী প্রক্রিয়া গ্রহণ করে, তাই সমাজকর্মের সামগ্রিক কল্যাণ হিসেবে খ্যাত।
(গ) উদ্দীপকের ছকে সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন দিক প্রকাশ পেয়েছে।
আধুনিক বিশ্বে সমাজকর্ম পেশাদার সমাজকর্ম হিসেবে সমাদৃত। জটিল সমাজব্যবস্থার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট বহুমুখী সমস্যার সমাধানে সমাজকর্ম ব্যক্তিকে সাহায্য করে থাকে। তাই সমাজকর্ম সাহায্যকারী পেশা। আবার ব্যক্তি, দল বা সমষ্টিকে সমাজকর্ম সাহায্য করে তাদেরকে সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে। সমাজকর্মের মূল বিষয় হলো ব্যক্তিকে সক্ষম করার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা। তাই সমাজকর্ম হলো সক্ষমকারী পেশা। সমাজকর্ম বৈজ্ঞানিক জ্ঞাননির্ভর একটি পেশা। যেখানে তিন ধরনের জ্ঞান বিদ্যমান। যথা-তত্ত্বীয় জ্ঞান, অনুকল্পনির্ভর জ্ঞান এবং অনুমাননির্ভর জ্ঞান। অধিকন্তু, সেবাকর্ম হিসেবে সমাজকর্মের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিচারে বিশ্ব এটি পেশাদার সেবাকর্মের মর্যাদা পেয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান, সুনিপুণ দক্ষতা, পেশাগত প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি বিচারে সমাজকর্মের এই স্বীকৃতি অর্জিত হয়েছে।
সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের ছকে যে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে, সবগুলোই সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্যের অন্তর্গত।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে।
(ঘ) সমাজকর্মের মাত্র চারটি বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকের ছকে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই উদ্দীপকে সমাজকর্মের সব বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায় নাই।
সমাজকর্মের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- সমাজকর্ম একটি কল্যাণধর্মী পেশা হিসেবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি-লিঙ্গ নির্বিশেষ সব স্তরের মানুষের সামাজিক ভূমিকা পালনে তথা কল্যাণে কাজ করে, যা পেশাটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সমাজকর্ম একটি মূল্যবোধ নির্দেশিত পেশা। পেশাগত অনুশীলনের ক্ষেত্রে একজন সমাজকর্ম তার নিজস্ব বিশ্বাস যেমন- ধর্মীয়, জাতিগত ও রাজনৈতিক পরিচয় বা অন্য যেকোনো ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ঊর্ধ্বে উঠে শুধু সমাজকর্মের স্বীকৃত মূল্যবোধের আলোকে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ বা সমাজকর্ম শিক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। আবার সমাজকর্মী তার কাছে সাহায্য নিতে আসা সাহায্যার্থীর সাথে পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করেন, যা অন্যান্য পেশার ক্ষেত্রে বিরল। আবার সমাজকর্ম হচ্ছে সংযোগকারী কার্যক্রম, যার মাধ্যমে অসুবিধাগ্রস্ত ব্যক্তি ও দল তাদের প্রয়োজন পূরণে সমষ্টির সম্পদকে কাজে লাগাতে পারে। অন্যদিকে সমাজকর্মের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করে। ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সামঞ্জস্যপূর্ণ সুষম পরিবেশ বা অবস্থা সৃষ্টি করতে কাজ করে। এ ছাড়াও সমাজকর্মের বহু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যা উদ্দীপকের ছকে পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়নি।
২। উদ্দীপকটি পড়ে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
জনাব রফিকুল ইসলাম একজন পেশাদার কর্মী। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও মাঠপর্যায়ের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ পেশাদারত্ব গড়ে ওঠে। সামাজিক সমস্যা, সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন, সামাজিক দায়িত্ব, কর্তব্য সচেতনতা ইত্যাদি সৃষ্টিতে এ পেশার জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এ পেশা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।
(ক) NASW-এর পূর্ণরূপ কী?
(খ) সমাজকর্ম প্রশাসন বলতে কী বোঝায়?
(গ) উদ্দীপকে কোন পেশা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রয়োজনীয়তা ছাড়া সমাজকর্ম শিক্ষার আরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে-
মতামত দাও।
উত্তর: (ক) NASW -এর পূর্ণরূপ হলো National Association of Social Workers.
(খ) সামাজিক নীতিতে সমাজসেবায় রূপান্তরের একটি প্রক্রিয়ার নাম সমাজকর্ম প্রশাসন। যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার আলোকে সামাজিক নীতির মূল্যায়ন ও সংশোধন করা হয়। সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি সংগঠিত ও পরিচালিত করার মাধ্যমে যা সুসম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান, মূল্যবোধ ও নীতির পূর্ণ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(গ) উদ্দীপকে সমাজকর্ম পেশা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।
সমাজকর্ম হলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিনির্ভর এমন একটি সাহায্যকারী পেশা, যা সমাজে বসবাসরত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির বিভিন্ন সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান ও উন্নয়নে সহায়তা করে। সমাজকর্মে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও মাঠকর্ম শিক্ষার সমন্বয়ে পেশাদারিত্ব সৃষ্টি হয়। সমাজকর্ম হলো সামাজিক সমস্যা সমাধানে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতিনির্ভর সেবাকর্ম। তাই সমস্যা সমাধান করতে সমাজকর্মে সমাজের সাথে সম্পর্কিত সব কিছু যেমন- সমাজ কাঠামো, সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। এ ছাড়াও সামাজিক বিষয়াবলি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের ফলে সমাজকর্মে শিক্ষা অর্জন করলে ব্যক্তিকে সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতা সৃষ্টি হয়।
তাই বলা যায়, সামাজিক সমস্যা, সমাজ সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন, সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতা সৃষ্টি মূলত সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।
(ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রয়োজনীয়তা ছাড়া সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও বহু ক্ষেত্র রয়েছে।
প্রথমত, আমাদের পার্থিব জীবনের অসীম চাহিদা মেটানোর জন্য সসীম সম্পদের সদ্ব্যবহার শিক্ষার জন্য সমাজকর্ম শিক্ষা গ্রহণ করা আবশ্যক। কেননা সামাজিক সমস্যার মৌলিক কারণ হলো অভাব তথা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে সম্পদের ঘাটতি। আর সমস্যার সমাধানে সমাজকর্মের উদ্ভব।
দ্বিতীয়ত, সমাজকর্ম সমাজের দরিদ্র, দুস্থ ও অসহায় মানুষকে এমনভাবে সহায়তা করে যাতে তারা আত্মনির্ভরশীল হয়। তাই আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে সমাজকর্মের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তৃতীয়ত, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ছাড়া সমাজের সার্বিক কল্যাণ সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সাম্য ও ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তাই সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সমাজকর্মের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
চতুর্থত, সমাজে বিদ্যমান নানা কুসংস্কার, কুপ্রথা ও অবিশ্বাস পরিবর্তন করে সমাজকর্ম সমাজে সংস্কার ঘটায়। তাই সামাজিক সংস্কার আনয়নে সমাজকর্মের শিক্ষা প্রয়োজন।
পঞ্চমত, সামাজিক সমস্যার সমাধান ও প্রতিরোধে সমাজকর্মের শিক্ষা প্রয়োজন। কেননা সমাজকর্ম সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং অবস্থার উন্নয়ন ঘটায়।
ষষ্ঠত, আধুনিক জটিল সমাজব্যবস্থায় সামাজিক সমস্যা প্রতিরোধে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন আবশ্যকীয় বিষয়। আর এক্ষেত্রে সমাজকর্মের শিক্ষার কোনো ব্যতিক্রম হয় না।
অতএব বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও সমাজকর্ম শিক্ষার বহু প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র রয়েছে।
লেখক: প্রভাষক, সমাজকর্ম বিভাগ
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
জাহ্নবী