![জ্বর থেকে নিরাপদে থাকুন](uploads/2023/11/30/1701319630.f.jpg)
হঠাৎ করে জ্বর হওয়ার অভিজ্ঞতা কম-বেশি সবারই আছে। অনেকের জ্বর দুই বা তিন দিন পরে ভালো হয়ে যায়। অনেককে দীর্ঘদিন ভুগতে হয়। জ্বরের কারণে হাসপাতালে ভর্তির অভিজ্ঞতাও রয়েছে কারও কারও। বিবিসি অবলম্বনে জ্বর নিয়ে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম।
জ্বর কী?
শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বা উচ্চ তাপমাত্রাকে জ্বর বলা হয়। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শরীরের তাপমাত্রা এর বেশি হলেই তখন তাকে জ্বর বলা হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা বলেন, জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। ফলে জ্বর হওয়াকে শরীরের ভেতরের কোনো রোগের সতর্কবার্তা বলা যেতে পারে। অনেক সময় সেটা সর্দি-কাশির মতো সাধারণ সংক্রমণের কারণে হতে পারে, আবার অনেক সময় গুরুতর কোনো রোগের উপসর্গও হতে পারে।
জ্বর কেন হয়?
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শরীরের ভেতরে যখন কোনো জীবাণু আক্রমণ করে, সেটা ঠেকাতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভিন্ন কোষ থেকে পাইরোজেন নামক এক ধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে লড়াই করতে শুরু করে। এ কারণে জ্বরের অনুভূতি হয়। এ ছাড়া অনেক কারণে জ্বর হতে পারে। সবচেয়ে কমন হলো ঠাণ্ডা লেগে জ্বর হওয়া বা সর্দি-কাশির কারণে জ্বর।
এর বাইরে শরীরের ভেতরে কোনো কারণে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমণ হলে, অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে। প্রোটোজোয়া বা ফাঙ্গাস ইনফেকশনের কারণেও জ্বর হতে পারে। যেকোনো ধরনের ম্যালিগনেন্সি বা ক্যানসারের কারণেও জ্বর হতে পারে। টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলেও জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর আসা।
জ্বরের প্রকার ভেদ
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় জ্বরকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
কন্টিনিউড: কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে ২৪ ঘণ্টায় যখন শরীরের তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বা ১.৫ ফারেনহাইট তারতম্য হয়, কিন্তু জ্বর পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না, সেটাকে বলা হয় কন্টিনিউড জ্বর।
রেমিটেন্ট: যখন ২৪ ঘণ্টায় জ্বরের মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩ ফারেনহাইটের মধ্যে তারতম্য হয়, সেটাকে বলে রেমিট্যান্ট জ্বর।
ইন্টারমিটেন্ট: যখন জ্বর দৈনিক কয়েক ঘণ্টা করে শরীরে থাকে, আসে এবং যায়, তখন তাকে বলে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
অনেক সময় জ্বরের কারণ রোগী নিজেই বুঝতে পারেন। যেমন বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর এলে, ঋতু পরিবর্তনের সময় সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বর থাকলে- সেটা কয়েকদিন পরেই ভালো হয়ে যায়। এ ধরনের জ্বরের সঙ্গে সর্দি, কাশি বা ঠাণ্ডা থাকতে পারে। এ রকম জ্বরে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
তবে আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ ছাড়াই যদি জ্বর হয়, তখন সেটাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। কারণ সেটা গুরুতর কোনো রোগের উপসর্গ হতে পারে। যদি দেখা যায়, একটানা অনেকদিন জ্বর থাকছে অথবা শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে, তখন দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া কতটা ঠিক?
জ্বর হলে নিজে নিজে প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ অনেকেই কিনে খান। জ্বরের প্রথমদিকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ অনেক সময় চিকিৎসকরাও খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ কোনো ক্রমেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
তাপমাত্রা স্বাভাবিক কিন্তু জ্বর জ্বর ভাব কেন হয়?
অনেক সময় জ্বর জ্বর ভাব লাগে কিন্তু থার্মোমিটারে মাপলে জ্বর আসে না। এ ধরনের রোগকে ফিভারিশ ফিলিং বলা হয়। রক্তশূন্যতার কারণে এ রকম হতে পারে। উদ্বেগ বা অতিরিক্ত চিন্তার কারণে সেটা হতে পারে। আবার অনেক সময় শুধুমাত্র মানসিক কারণেও হতে পারে।
মাথায় পানি দেওয়া বা গোসল করা
শুধু মাথায় পানি দিলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আসে না। জ্বর হলে সারা শরীর সাধারণ ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। কারণ সারা শরীরের মধ্যে মাথা খুব ছোট একটি অংশ। ফলে শুধু মাথায় পানি দিলে উপকার পাওয়া যাবে না। সংক্রমণের ঝুঁকি না থাকলে সাধারণ জ্বরে গোসল করলে কোনো ক্ষতি হয় না।
জ্বরের ক্ষেত্রে পরামর্শ
যে কারণেই জ্বর হোক, চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিরাপদ রাখতে যা করতে হবে।
বিশ্রামে থাকা: জ্বর হলে শরীরের ভেতরে থাকা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা লড়াই করতে শুরু করে। এ সময় শরীরকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেওয়া উচিত।
প্রচুর পানীয় পান করা: প্রচুর পরিমাণে পানি ও ফলের রস পানের মাধ্যমে শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করা যায়। বিশেষ করে লেবুর পানি ও গরম পানি পান করা যেতে পারে।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ: জ্বরের সময় অরুচি ভাব তৈরি হলেও ফলমূল বা পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। তাহলে শরীর রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো শক্তি পায়।
উষ্ণ পরিবেশে থাকা: জ্বরের সময় শুষ্ক ও উষ্ণ পরিবেশে থাকতে হবে। এই সময় পরিষ্কার ও উষ্ণ পোশাক পরতে হবে। বিশেষ করে প্রসূতি বা অস্ত্রোপচারের পর অবশ্যই পরিষ্কার ও উষ্ণ কক্ষে থাকতে হবে।
জাহ্নবী