![ফ্যাটি লিভার রোগ: এখনই সতর্ক হোন](uploads/2024/01/25/1706166338.a1.jpg)
লিভার আমাদের শরীরের বৃহত্তম অঙ্গগুলোর একটি। এটা খাবার হজম করতে, আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং বিষ অপসারণ করতে এবং আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করে। আমাদের লিভারে স্বাভাবিকভাবে কিছু চর্বি আগে থেকেই থাকে এবং এটা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে এই চর্বির বাইরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে থাকলে এক সময় ফ্যাটি লিভার রোগ সৃষ্টি হয়।
ফ্যাটি লিভার দুই ধরনের হয়। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সাধারণত যাদের অ্যালকোহল পান করার করার অভ্যাস আছে নিয়মিত, তাদের হয়ে থাকে৷
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ, অতিরিক্ত চিনি, কার্বোহাইড্রেট, প্রসেসড ফুড, মুখরোচক খাবার বা অতিরিক্ত মসলাদার খাবার গ্রহণের ফলে হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ডায়াবেটিক বা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলেও ফ্যাটি লিভার হতে পারে৷ আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর অনেকে বংশগত কারণেও ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন।
আমাদের দেশের মানুষের নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। বেশির ভাগ মানুষ বুঝতে পারেন না যে লিভারে চর্বি জমলে তা গুরুতর আকার নেয়। ফ্যাটি লিভার থেকে প্রথমে হেপাটাইটিস বা লিভারের প্রদাহ হয়। এরপর তা লিভার সিরোসিসের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তবে শুরুতেই ফ্যাটি লিভারের লক্ষণগুলো জানতে পারলে অনেক গুরুতর সমস্যার সমাধান হতে পারে।
ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন যারা
ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। তবে যাদের টাইপ টু ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া মেনোপজ শুরু হয়েছে এমন নারী, যাদের ওজন অস্বাভাবিক বেশি, শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা যাদের বেশি, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন যারা, তারা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ
ফ্যাটি লিভারের সব চেয়ে বড় লক্ষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোমরের মাপ বা ভুঁড়ি। পেট স্বাভাবিকের চেয়ে বড় হলে ফ্যাটি লিভার রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
লিভারে চর্বি জমলে স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। খাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়, খাবারে অরুচি হয়, দ্রুত ওজন কমা, বমি বমি ভাব, বমিও হওয়া, খুব দুর্বল লাগা ও কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। ফ্যাটি লিভার হলে মাথাব্যথা, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন, আচমকা কাঁপুনিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। নখ ও চোখ হলদেটে হতে পারে। এ ছাড়া হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি হতে পারে।
যে ধরনের খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারে যারা আক্রান্ত আছেন, তাদের প্রথমেই অ্যালকোহল গ্রহণ করা বন্ধ করতে হবে। আপনার যদি দুধ-চা খাওয়ার অভ্যাস থাকে বা কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে তৈরি চা বা কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে সেই অভ্যাস পরিহার করতে হবে। ঘন দুধের তৈরি খাবার বা ফুলক্রিম মিল্ক খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
ফ্যাটি লিভার দূর করতে খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার হজমে সাহায্য করবে, ক্ষুধাটাকে দমিয়ে রাখবে এবং পেট অনেক বেশি সময় পর্যন্ত ভরা থাকবে।
বিভিন্ন রঙের শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। যেমন- বিটরুট, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, শিম, বরবটি, ব্রকোলি ইত্যাদি। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি দেশীয় শাক রাখতে হবে। অনেকেই ভেবে থাকেন ফ্যাটি লিভার হলে প্রোটিন গ্রহণ একদমই কমিয়ে দিতে হবে। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা।
অবশ্যই উন্নতমানের প্রোটিন খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। তবে কিছু বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন- যে মাছটি খাচ্ছেন, সেই মাছের একেবারে চর্বির অংশটি বাদ দিয়ে খেতে হবে। অনেকেই মুরগির চামড়া খেতে পছন্দ করেন, তবে ফ্যাটি লিভার হলে অবশ্যই মুরগি চামড়া ছাড়িয়ে খেতে হবে। মাঝে মধ্যে গরুর মাংস খাওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে চর্বির অংশটি বাদ দিয়ে শুধু সলিড ১ বা ২ টুকরো মাংস খেতে পারবেন এক বেলা।
প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় একটি সিদ্ধ ডিম রাখতে পারেন। ডেইরি প্রোডাক্টের মধ্যে খেতে পারেন টক দই, নন-ফ্যাট মিল্ক। এ ছাড়া দেশি মৌসুমি বিভিন্ন ফল খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন। খাবার তৈরিতে তেলের ব্যবহার কমাতে হবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও মসলাজাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
লেখক: রেসিডেন্ট চিকিৎসক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
জাহ্নবী