পেশির খিঁচুনি বা মাসল ক্র্যাম্প তখন ঘটে যখন শরীরের এক বা একাধিক পেশি অনিচ্ছাকৃতভাবে সংকুচিত হয়। বেশ কিছু সময় ধরে এটা বজায় থাকে। এ সময় তীব্র ব্যথা অনুভব হতে পারে। পেশির খিঁচুনি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। অনেকের মধ্যেই এটা দেখা যায়। ক্লেভারল্যান্ড ক্লিনিক অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব
পেশির খিঁচুনি যেকোনো সময় যে কারও হতে পারে। বিশেষ করে কেউ যখন হাঁটেন, একটানা বসে থাকেন, অনুশীলন করেন বা ঘুমান তখন এগুলো ঘটতে পারে। তবে শারীরিক পরিশ্রমের সময় এটা বেশি ঘটে। যাদের পেশির খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে আছেন ক্রীড়াবিদ। এ ছাড়া শিশু, অন্তঃসত্ত্বা, বয়স ৬৫ বছরের বেশি এবং যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তারা পেশির খিঁচুনি সমস্যায় বেশি ভোগেন।
পেশির খিঁচুনির লক্ষণগুলো কী কী?
পেশির খিঁচুনি হালকা থেকে গুরুতর- যেকোনো ধরনের হতে পারে। হালকা ক্ষেত্রে দেখা যায়, পেশি লাফাচ্ছে, নড়াচড়া করছে। গুরুতর ক্ষেত্রে পেশি শক্ত হয়ে চাকার মতো রূপ ধারণ করে। যদি সেখানে ব্যথা হয়, তবে সেটি এক থেকে দুদিন পর্যন্ত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা বেশি সময় ধরেও বজায় থাকতে পারে।
যদি পেশির খিঁচুনি স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে তবে নানা রকম লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- পেশি ব্যথা ও পেশি দুর্বলতা। পাশাপাশি প্যারালাইসিস, অসাড়তা, ঘুমাতে অসুবিধা এবং দৃষ্টিশক্তির সমস্যা।
পেশির খিঁচুনির কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা এখনো পেশির খিঁচুনির শতভাগ নিশ্চিত কারণ খুঁজে পাননি। তবে তাদের মতে নিচের কারণে পেশির খিঁচুনি হতে পারে। যেমন- পেশি প্রসারিত হওয়া। এ ছাড়া পেশির ক্লান্তি, প্রচণ্ড গরমে ব্যায়াম করা এবং শরীরে পানিশূন্যতা থাকতে পেশির খিঁচুনির হতে পারে। পাশাপাশি ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা (দেহে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের মতো উপাদান খুব বেশি বা কম থাকা)। হতাশা, দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকা, পেশির অত্যধিক ব্যবহার, দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করা থেকেও এটা হতে পারে।
রোগ নির্ণয় এবং পরীক্ষা
পেশির খিঁচুনি নির্ণয় করার জন্য ডাক্তার কিছু প্রশ্ন করতে পারেন। যেমন- ব্যথা কতটা হয়? খিঁচুনি কতক্ষণ স্থায়ী হয়? খিঁচুনি সাধারণত কখন শুরু হয়? এসব প্রশ্নের উত্তর থেকে ডাক্তার মোটামুটি একটা ধারণা পান। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পেশির খিঁচুনি সেরে যায় এমন কোনো ওষুধ বা ইনজেকশন নেই। তবে কিছু কাজ আছে, যা করলে খিঁচুনি ছেড়ে যায়। যেমন- আক্রান্ত স্থানটিতে হাত দিয়ে ম্যাসাজ করা। এ ছাড়া উঠে দাঁড়ালে এবং হাঁটলে খিঁচুনি ছেড়ে দিতে পারে। আক্রান্ত স্থানে তাপ দিলে অথবা বরফ প্রয়োগ করলেও উপকার পাওয়া যায়। খিঁচুনি ছেড়ে দিলে প্রয়োজনে ডাক্তার ব্যথানাশক ওষুধও দিতে পারেন।
পেশির খিঁচুনি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
পেশির খিঁচুনি যেকোনো সময় হতে পারে। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকা কিছুটা কঠিন। তবে যাতে খিঁচুনি না ঘটে সেজন্য এই কাজগুলো করতে পারেন। যেমন- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম। পাশাপাশি শরীর ফিট রাখা, নিয়মিত পেশি সঞ্চালন করা, প্রচুর পানি পান করা এবং প্রচণ্ড গরমে ব্যায়াম না করা। এ ছাড়া এমন জুতা পরা যেগুলো পায়ে সুন্দরভাবে ফিট হয়ে যায়।
কলি