ঢাকা ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫
English

সব জাতের সাপের বিষের অ্যান্টিবডি আবিষ্কার

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১১:৪০ এএম
সব জাতের সাপের বিষের অ্যান্টিবডি আবিষ্কার

বর্তমানে বাজারে প্রচলিত একেকটি অ্যান্টিভেনম নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে হয়। সম্প্রতি আমেরিকার গবেষণা সংস্থা স্ক্রিপস রিসার্চ বেশির ভাগ সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর একটি অ্যান্টিবডি আবিষ্কার করতে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে। সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই অ্যান্টিবডি সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ওপর এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে সাফল্য পেয়েছেন। তারা দেখেছেন কিং কোবরা, ব্ল্যাক মাম্বারের মতো সাপের বিষের বিরুদ্ধে এটি কাজ করছে। 

স্ক্রিপস রিসার্চের বিজ্ঞানী জোসেফ জার্ডিন জানিয়েছেন, ‘নতুন অ্যান্টিবডি অসংখ্য সাপের প্রজাতির বিষের বিরুদ্ধে কাজ করে। প্রতিবছর এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ১ লাখের বেশি মানুষ সাপে কাটার বিষক্রিয়ায় মারা যান।

বর্তমান একেকটি অ্যান্টিভেনম নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে বিভিন্ন প্রজাতির সাপের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা আলাদা অ্যান্টিভেনম তৈরি করতে হয়। তাদের রক্ষায় নতুন অ্যান্টিবডিটি কাজ করবে।’ জার্ডিন ও তার দল অ্যান্টিবডিটি আবিষ্কারের সময় সাপের বিষের ইলাপিড থেকে প্রোটিনকে বিচ্ছিন্ন করে প্রথমে থ্রি-ফিঙ্গার টক্সিন বা থ্রিএফটিএক্স নামের এক ধরনের প্রোটিনের খোঁজ পান। বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষে থাকা এই প্রোটিন খুবই বিষাক্ত। এই প্রোটিনের কারণে মানুষের পুরো শরীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আর তাই এই প্রোটিনকে দুর্বল করার জন্য কাজ শুরু করেন তারা। ‘নাইনটি ফাইভ ম্যাট ফাইভ’ নামে একটি অ্যান্টিবডি আবিষ্কারে সক্ষম হন, যা সব প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। অ্যান্টিবডি সম্পর্কে সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে একটি গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে অ্যান্টিবডিটির মাধ্যমে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সব জাতের সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিভেনম তৈরির কাজ চলছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, নতুন অ্যান্টিবডিটি আফ্রিকা, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে সমানভাবে কাজ করে। আশা করা হচ্ছে খুব শিগগিরই এটি দিয়ে সব জাতের সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিভেনম তৈরি করা সম্ভব হবে। 

সূত্র: টেকনোলজি নেটওয়ার্কস

জাহ্নবী

প্রতিকূলতা জয় করে বিজ্ঞানে অমর ম্যারি কুরি

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ০২:৪১ পিএম
প্রতিকূলতা জয় করে বিজ্ঞানে অমর ম্যারি কুরি
গবেষণাগারে কর্মরত ম্যারি কিুরি। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের এক ঠাণ্ডা শীতের সকাল। প্যারিসের ইকোল সুপেরিওর দে ফিজিকের এক ছোট্ট টিনশেড ঘরে তখন শোঁ শোঁ করে ঢুকছে হিমেল বাতাস। চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যন্ত্রপাতি, ফ্লাস্ক আর কাচের সিলিন্ডার। টিনশেডের ওয়ার্কশপে এক রাসায়নিকের ওপর মনোযোগী এক নারী। নাম ম্যারি কুরি। বিজ্ঞানমনস্ক এই নারীর জীবনকাহিনি কেবল গবেষণার গল্প নয়, তা সংগ্রামেরও ইতিহাস।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে ম্যারি কুরি এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি কেবল প্রথম নারী হিসেবে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জয় করেননি, পরবর্তী সময়ে রসায়নেও নোবেল জয় করে গড়েন অনন্য নজির। ম্যারি কুরি এমন এক নারী, যিনি তার স্বামী পিয়েরে কুরির সঙ্গে যৌথভাবে প্রথম নোবেল জিতেছিলেন। তার কন্যা আইরিন কুরিও পরে নোবেল পুরস্কার পান। তার জীবন ছিল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রামের এক উপাখ্যান, যা আজও অগণিত মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।

নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরি ও ম্যারি কুরি। ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডের ওয়ারশ শহরে ১৮৬৭ সালে রুশ শাসনের অধীনে জন্ম হয় মারিয়া সালোমিয়া স্কেলাদস্কার, যিনি পরে ম্যারি কুরি নামে পরিচিত হন। ম্যারির ডাকনাম ছিল মানিয়া। পরিবারে পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। মাত্র ৯ বছর বয়সে বড় বোনকে হারান এবং ১১ বছর বয়সে মাকে। এই শোক ও প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠা ম্যারি পড়াশোনার মাঝে খুঁজে নিতেন সান্ত্বনা ও শক্তি।

অসুস্থতা ছিল তার জীবনসঙ্গী। অপুষ্টিজনিত দুর্বলতায় ১৫ বছর বয়সে একবার জ্ঞান হারান। তখন বড় বোন ব্রনিয়া তাকে নিজের কাছে এনে যত্নে সুস্থ করে তোলেন। মানিয়া সব সময় পড়ালেখায় মগ্ন ছিলেন। বইয়ে ডুবে থেকে নিজেকে পুনরুদ্ধার করেছেন বারবার।

তৎকালীন পোল্যান্ডে নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই ১৮৯১ সালে বড় বোনের অনুপ্রেরণায় মানিয়া পাড়ি জমান প্যারিসে। সেখানে ইউনিভার্সিটি অব প্যারিসে (সরবোন) ভর্তি হন পদার্থবিদ্যায়। সীমাহীন আর্থিক কষ্ট ও কঠোর অধ্যবসায়ের মধ্যে তিনি পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে দ্য সিটি অব প্যারিস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিজিকস অ্যান্ড কেমিস্ট্রি হায়ার এডুকেশন ইনস্টিটিউটে ডক্টরাল স্কলার হিসেবে বৃত্তি পান।

তার ইস্পাতে চৌম্বকত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার কথা থাকলেও এতে তেমন আগ্রহ ছিল না। তিনি তখন ইউরোপের বিজ্ঞান বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেন। জেনেছেন উইলহেলম রন্টজেনের এক্স-রে আবিষ্কারের খবর। সে সময় রন্টজেন তার স্ত্রীর হাতের আংটিসহ একটি এক্স-রে ফিল্ম প্রচার করে পপ সংস্কৃতিতেও নিজের স্থান করে নেন। তবে পরমাণুর গঠন নিয়ে যে গবেষণা চলছিল আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ও হেনরি বেকেরেলের গবেষণাগারে, তা মানিয়াকে আকৃষ্ট করে। তিনি বেকেরেলের ইউরেনিয়াম থেকে নির্গত রশ্মি আবিষ্কারে চমকিত হন এবং এ বিষয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন।

প্যারিসে তার পরিচয় হয় বিজ্ঞানী পিয়েরে কুরির সঙ্গে, যিনি পরে তার জীবনসঙ্গী হন। এই দম্পতি একসঙ্গে শুরু করেন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা। উনিশ শতকের শেষদিকে পরমাণুর গঠন নিয়ে নানা মতের উদ্ভব হয়। এই বিতর্কের ভেতর ১৮৯৮ সালে ম্যারি কুরি দাবি করেন, পরমাণুর ভেতরে পরিবর্তন ঘটছে। বেকেরেলের ধারণা পরিমার্জন করে ম্যারি বলেন, কেবল ইউরেনিয়াম থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পারমাণবিক রশ্মি নির্গত হয় না, অন্যান্য পরমাণু থেকেও তা হতে পারে।

তিনি বেকেরেলের ইউরেনিয়াম রশ্মির নাম পরিবর্তন করে একে ‘রেডিওঅ্যাকটিভ রেডিয়েশন’ বলেন। ম্যারি কুরি প্রথম ‘রেডিওঅ্যাকটিভিটি’ বা তেজস্ক্রিয়তা শব্দটি ব্যবহার করেন। প্রায় একই সময়ে রাদারফোর্ড বলেন, রেডিওঅ্যাকটিভ পরমাণু বিকিরণের পর নিজেই রূপান্তরিত হয়। ম্যারি কুরি ও রাদারফোর্ডের এই ধারণা ছিল সাহসী ও যুগান্তকারী। তিনি দৃঢ়ভাবে দাবি করেন, পরমাণুর অভ্যন্তরে পরিবর্তন ঘটছে, যা ছিল তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত ধারণার পরিপন্থি।

ম্যারি ১৯০০ সালে আন্তর্জাতিক পদার্থবিদ্যা কংগ্রেসে বলেন, ‘দ্য স্পন্টেনিটি অব রেডিয়েশন ইজ অ্যান এনিগমা, আ সাবজেক্ট অব প্রোফাউন্ড অ্যাস্টোনিশমেন্ট।’ অর্থাৎ পরমাণুর স্বতঃস্ফূর্ত বিকিরণ অবাক করা এক রহস্য। পদার্থের এই বিস্ময়কর গুণের পেছনের কারণ তাকে জানতেই হবে। 

তিনি বিস্তর পড়াশোনার মাধ্যমে জানতে পারেন, ১৪ শতকে চেক-জার্মান সীমান্তে রুপার খনিতে ‘পিচব্লেন্ড’ নামের একটি খনিজ পাওয়া গেছে। সে খনিজে ইউরেনিয়াম রয়েছে বলে ধারণা করা হতো। ম্যারি কুরি বোহেমিয়া থেকে প্রায় ৫ হাজার কেজি পিচব্লেন্ড নিয়ে এলেন নিজ গবেষণাগারে। তিনি ও পিয়েরে কুরি এই খনিজ থেকে ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য পারমাণবিক পদার্থ আলাদা করার কাজে লেগে পড়েন। এতে তারা ‘ফ্র্যাকশনাল ক্রিস্টালাইজেশন’ নামক এক নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে রেডিয়াম আলাদা করতে সক্ষম হন। এই পারমাণবিক পদার্থ পর্যায় সারণিতে ৮৮ নম্বর উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়। এই আবিষ্কার পারমাণবিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।

১৯০৩ সালে ম্যারি কুরি, পিয়েরে কুরি ও হেনরি বেকেরেল তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ম্যারি তার পিএইচডি ডিগ্রিও অর্জন করেন। এটি ছিল নারী বিজ্ঞানীদের জন্য এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।

পরে ১৯১১ সালে রেডিয়াম ও পোলোনিয়াম আবিষ্কার এবং রেডিয়ামের বিশুদ্ধীকরণ ও বৈশিষ্ট্য নির্ণয়ের জন্য তিনি এককভাবে রসায়নে নোবেল পুরস্কার পান। এই মহীয়সী বিজ্ঞানী ইতিহাসের প্রথম ব্যক্তি, যিনি দুটি ভিন্ন বিজ্ঞানে নোবেল পান এবং একমাত্র মা, যার কন্যা আইরিন কুরিও পরবর্তী সময়ে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।

সাফল্যের পাশাপাশি তার জীবনে নেমে আসে গভীর শোক। ১৯০৬ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী পিয়েরে কুরির মৃত্যু হয়। স্বামীকে হারানোর পরও তিনি গবেষণার কাজ এবং দুই কন্যার প্রতিপালন নিষ্ঠার সঙ্গে চালিয়ে যান। তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে দীর্ঘসময় কাজ করার ফলে তার স্বাস্থ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার পরও থেমে যাননি তিনি। ম্যারি কুরি বিশ্বাস করতেন, পরমাণুর গভীর রহস্য বিজ্ঞানের এক অমীমাংসিত ধাঁধা।

ম্যারি কুরির জীবন কেবল বৈজ্ঞানিক সাফল্যের কাহিনি নয়, বরং প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থেকে অদম্য ইচ্ছা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জ্ঞানার্জন যে মানুষকে শোক ও হতাশা থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং কোনো বাধাই যে অদম্য সাহসের কাছে হার মানে, ম্যারি কুরির জীবন তারই এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ইউক্যালিপটাস সম্ভাবনা ও পরিবেশগত সংকটের দ্বন্দ্ব

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
সম্ভাবনা ও পরিবেশগত সংকটের দ্বন্দ্ব
ইউক্যালিপটাস গাছ। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্যালিপটাস ‘ম্যার্টেসিআই’ (Myrtaceae) গোত্রের ‘ইউক্যালিপটাস’ (Eucalyptus) গণের লম্বা ও মসৃণ বাকলবিশিষ্ট বৃক্ষ। এরা কষ্টসহিষ্ণু, অযত্নে বেড়ে উঠতে পারে। এটি অস্ট্রেলিয়া, তাসমানিয়া ও নিউগিনির স্থানীয় উদ্ভিদ। এর কাণ্ড সোজা ও দীর্ঘ হয়। এই গাছ ১২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। ধারণা করা হয়, ৩৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর আগে এ গাছের উৎপত্তি হয়েছে। ইউক্যালিপটাস দ্রুতবর্ধনশীল হওয়ায় ১৭৭০ সালে স্যার জোসেফ ব্যাংকস নামের এক উদ্ভিদবিজ্ঞানী সারা বিশ্বের মানুষের সামনে গাছটি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ও উপমহাদেশে ইউক্যালিপটাস জনপ্রিয়তা পাওয়ার অন্যতম কারণ- কৃষক ও বিনিয়োগকারীরা দ্রুত বৃদ্ধি ও উচ্চ মুনাফা চান। এই প্রবণতা পানির ব্যবহার ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সহজেই এর পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে চলমান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পরিবেশবাদী, নীতিনির্ধারক ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে এটির পরিবেশগত টেকসই ও অর্থনৈতিক ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

ইউক্যালিপটাস গাছের ৭০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এর কাঠ বেশ মূল্যবান। বাংলাদেশে ইউক্যালিপটাস বাগানগুলো বনায়ন এবং গ্রামীণ জীবিকা নির্বাহে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

ইউক্যালিপটাস দ্রুতবর্ধনশীল গাছ হিসেবে বছরে ৮ থেকে ১০ ফুট বাড়তে পারে, যা এটিকে কৃষক ও শিল্পের জন্য বিশেষভাবে লাভজনক করেছে। ইউক্যালিপটাস কাঠ শক্তি ও স্থায়িত্বের জন্য পরিচিত। এটি নির্মাণ কাজের জন্য আদর্শ। সেই সঙ্গে জ্বালানি কাঠ ও কাঠকয়লার আকারে জ্বালানির একটি মূল্যবান উৎস এটি।

ইউক্যালিপটাসের পাতা প্রয়োজনীয় তেলের জন্য সংগ্রহ করা হয়, যা অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন। এই গাছ কাগজ উৎপাদন ও টেক্সটাইল শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে। ইউক্যালিপটাস গাছপালা বায়ুমণ্ডল থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে গ্রিনহাউস প্রভাব কমাতে এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বকে উন্নীত করতে সহায়তা করে।

ইউক্যালিপটাস গাছ প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে পাঁচ লিটার পর্যন্ত পানি শোষণ করতে পারে। ফলে, আশপাশের জলস্তর দ্রুত নিচে নেমে যায়। যখন এই গাছ কৃষিজমিতে রোপণ করা হয়, তখন আশপাশের আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস পায়, যা ফসলের উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। ইউক্যালিপটাস পাতায় অ্যালোপ্যাথিক রাসায়নিক থাকে, যা অন্যান্য উদ্ভিদের জন্য বিষক্রিয়া তৈরি করে। ফলে গাছের নিচে বা আশপাশে অন্য কোনো গাছ জন্মাতে পারে না।

ইউক্যালিপটাস পাতার ধীরে পচনের ফলে মাটিতে কম হিউমাস বা জৈব পদার্থ তৈরি হয়, যা মাটির স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। গাছে ফল বা ফুল কম হওয়ার কারণে ইউক্যালিপটাস পাখি বা অন্যান্য প্রজাতির জন্য ভালো আবাসস্থল নয়। ফলে বনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। ইউক্যালিপটাস গাছের কাঠ স্থিতিস্থাপক বা নরম নয়। ঘূর্ণিঝড় এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই গাছ ভেঙে পড়ার এবং ক্ষতি করার প্রবণতা থাকে।

আশি থেকে নব্বই দশকে বাংলাদেশ বন বিভাগের বেশ কয়েকটি প্রকল্পে ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এই গাছ কাছাকাছি জমি ও পানির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। বন বিভাগ ২০০৫ সালে ইউক্যালিপটাস গাছ না লাগানোর জন্য নিরুৎসাহিত করে। তবে বেসরকারি খাতে এখনো ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ করা হচ্ছে, এতে পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে রাস্তার পাশে বা কৃষিজমির ধারে এই গাছ রোপণ করায়।

সর্বশেষ চলতি বছরের ১৫ মে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমনি গাছের চারা রোপণ, উত্তোলন ও বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন-১ অধিশাখা থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে ও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পূরণে এ দুটি প্রজাতির গাছের চারা তৈরি, রোপণ এবং বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং পরিবেশগত সতর্কতার প্রয়োজনীয়তার কারণে ইউক্যালিপটাস গাছকে ‘দ্বিমুখী প্রকৃতির’ গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই জলবায়ু সংকটে আমাদের অবশ্যই এমন গাছ বেছে নিতে হবে, যা অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ। ইউক্যালিপটাসের মতো গাছ যদি রোপণ করতেই হয়, তবে তা অবশ্যই গবেষণা ও পরিবেশসম্মত পরিকল্পনার আলোকে করতে হবে।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে অগ্রগতি

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী চুম্বক তৈরিতে অগ্রগতি
ছবি: রয়টার্স

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর (আইটিইআর) প্রকল্প অবশেষে অগ্রগতি করেছে। এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী চুম্বক তৈরি করা, যার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফিউশন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যে এটি একটি বড় পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত আইটিইআর প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও রাশিয়াসহ ৩০টিরও বেশি দেশ। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো পারমাণবিক ফিউশনের মাধ্যমে উচ্চ তাপমাত্রায় পারমাণবিক কণাগুলোর সংঘর্ষ ঘটিয়ে শক্তি উৎপাদন করা। এতে প্রচণ্ড উত্তপ্ত প্লাজমা কণাকে একটি ‘অদৃশ্য খাঁচা’য় আবদ্ধ করে রাখা হবে। এই অদৃশ্য খাঁচা তৈরির জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী চৌম্বকীয় ব্যবস্থা।

গত বুধবার আইটিইআর জানিয়েছে, এই চুম্বক ব্যবস্থার সর্বশেষ উপাদান ‘সেন্ট্রাল সোলেনয়েড’ যুক্তরাষ্ট্রে সফলভাবে তৈরি ও পরীক্ষিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এখন চূড়ান্ত সংযোজন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। 

মূলত ২০২১ সালের মধ্যেই এই চুম্বকের নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে একাধিক জটিলতায় প্রকল্পটি চার বছর পিছিয়ে পড়ে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পারমাণবিক ফিউশন বিষয়ক লেখক চার্লস সাইফ বলেন, ‘১০ বছরের প্রচেষ্টার পর চার বছর পিছিয়ে থাকাটা দেখায়, এই প্রকল্প কতটা সমস্যায় জর্জরিত।’

আইটিইআরের মহাপরিচালক পিয়েত্রো বারাবাসচি বলেন, ‘এটি এক বোতলের মধ্যে আরেক বোতল রাখার মতো। হ্যাঁ, বোতলের ভেতরের মদ হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে মদ রাখার জন্য তো বোতল প্রয়োজন।’

বারাবাসচি আশ্বস্ত করেছেন, সংকট এখন কেটে গেছে। এখন নির্মাণ কাজ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুতগতিতে চলছে। ২০৩৩ সালে এই প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে প্লাজমা উৎপাদন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ভৌগোলিক উত্তেজনার মধ্যেও দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বজায় রয়েছে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর লক্ষ্য অত্যন্ত স্পষ্ট এবং এখন পর্যন্ত কেউ প্রকল্প থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়নি।’

বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক ফিউশন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বেড়েছে। বহু বেসরকারি উদ্যোগ আগামী দশকের মধ্যে বাণিজ্যিক ফিউশন রিঅ্যাক্টর তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। তবে বারাবাসচি এই বিষয়ে আশাবাদী হলেও কিছুটা সংশয় প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জানি যে ফিউশন সম্ভব। প্রশ্ন হলো, এটি কি এমনভাবে সম্ভব যে, তা খরচ সাশ্রয়ী হবে। আমার ধারণা, আগামী এক বা দুই দশকে তা অর্জন সম্ভব নয়। খোলাখুলি বললে, এতে আরও সময় লাগবে।’ সূত্র: রয়টার্স

চন্দ্রযানের চাকা কী দিয়ে তৈরি?

প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১০:১১ এএম
চন্দ্রযানের চাকা কী দিয়ে তৈরি?
ছবি: সংগৃহীত

অর্ধশতাব্দী পর আবার চাঁদের পথে মানুষ। এবার শুধু অবতরণ নয়, রয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনাও। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত চাকা তৈরি করা। ফলে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে যানবাহনের চাকা নিয়ে। কারণ, চাঁদ কিংবা মঙ্গলে গেলে পথের মাঝে চাকা ছিদ্র হলে মেরামতের সুযোগ নেই।

ফরাসি টায়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিশেলিনের প্রধান নির্বাহী ফ্লোরেন্ট মেনেগক্স বলেন, ‘একটি জিনিস একেবারে হওয়া উচিত না, তা হলো চাকা পাংচার।’

২০১২ সালে মঙ্গলে অবতরণকারী নাসার রোবট ‘কিউরিওসিটি’ এই চ্যালেঞ্জের বাস্তব উদাহরণ। অবতরণের এক বছরের মধ্যে এর ছয়টি অ্যালুমিনিয়াম টায়ারে ছিদ্র ও ফাটল দেখা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের আর্টেমিস মিশনের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে নভোচারীদের চাঁদে পাঠানো। পরবর্তী আর্টেমিস মিশনগুলো ২০৩০ সালের মধ্যে হবে। ‘আর্টেমিস-৫’ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অনুসন্ধানের জন্য একটি চন্দ্র রোভার ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

অ্যাপোলোর নভোচারীরা ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ছয়বার অবতরণ করেন চাঁদের পৃষ্ঠে। তবে সেই সময় যাত্রা সীমিত ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে।

মিশেলিনের ‘লুনার এয়ারলেস হুইল’ প্রোগ্রামের প্রধান সিলভাইন বারথেট বলেন, ‘লক্ষ্য হলো ১০ বছরে ১০ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা।’ নাসার জন গ্লেন রিসার্চ সেন্টারের প্রকৌশলী ড. সান্তো পাডুলা বলেন, ‘আমরা স্বল্প সময়ের জন্য, সপ্তাহব্যাপী ব্যবহারের কথা বলছি না, বরং কয়েক দশকের ব্যবহারের কথা বলছি।’

চাঁদের প্রযুক্তির উদ্ভাবনের বড় চ্যালেঞ্জ হলো সেখানকার চরম তাপমাত্রা। চাঁদের মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে যেতে পারে, যা পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি। এটি টায়ারের জন্য একটি বড় সমস্যা। এই পরিস্থিতিতে রাবারজাতীয় পদার্থের স্থিতিস্থাপকতা থাকে না। ফলে প্রচলিত টায়ার টিকবে না।

ড. পাডুলা ব্যাখ্যা করেন, ‘পরমাণুর গতি না থাকলে উপাদানের বিকৃতি এবং স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখা কঠিন।’ টায়ারগুলোকে পাথর অতিক্রম করার সময় আকার পরিবর্তন করে আবার আগের আকারে ফিরে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি আমরা স্থায়ীভাবে একটি টায়ারকে বিকৃত করি, তবে এটি সঠিকভাবে ঘুরবে না এবং শক্তির অপচয় হবে।’

এ ছাড়া ভবিষ্যতের যানগুলো আরও ভারী ও বড় হবে, যার জন্য আরও শক্তিশালী চাকার প্রয়োজন। মঙ্গলে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ চাঁদের দ্বিগুণ।

অ্যাপোলো যুগে ব্যবহৃত রোভারগুলোর চাকা তৈরি হয়েছিল দস্তা দিয়ে মোড়ানো পিয়ানো তারের জাল দিয়ে, যা ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারত। চরম তাপমাত্রা এবং মহাজাগতিক রশ্মি রাবারকে ভেঙে ফেলে বা ভঙ্গুর কাচের মতো করে তোলে। তাই এখন ধাতব সংকর ও উচ্চ কার্যকারিতাসম্পন্ন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে এয়ারলেস চাকা।

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির (ইএসএ) রোজালিন্ড ফ্র্যাংকলিন মিশনের টিম লিডার পিয়েত্রো বাগলিয়ন বলেন, ‘সাধারণত ধাতব অথবা কার্বন ফাইবারভিত্তিক উপকরণ এই চাকাগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়।’ ২০২৮ সালের মধ্যে এই মিশনে মঙ্গল গ্রহে নিজস্ব রোভার পাঠানোর লক্ষ্য রয়েছে।

একটি উদ্ভাবনী পদার্থ হলো ‘নাইটিনল’, যা নিকেল এবং টাইটানিয়ামের একটি সংকর। দ্য স্মার্ট টায়ার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আর্ল প্যাট্রিক কোল বলেন, ‘এই দুটিকে একত্রিত করলে রাবারের মতো নমনীয় ধাতু তৈরি হয়, যা বিভিন্ন দিকে বাঁকতে পারে এবং সর্বদা আবার আসল আকারে ফিরে আসে।’ তিনি নাইটিনলের নমনীয়তাকে দেখা সবচেয়ে অবিশ্বাস্য জিনিসগুলোর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করেন। এটি তাপ ও ঠাণ্ডার প্রয়োগেও শক্তি শোষণ ও নির্গত করতে পারে। এমনকি এটি হিটিং ও রেফ্রিজারেশনের ক্ষেত্রেও সমাধান দিতে পারে।

মিশেলিনের বারথেট মনে করেন, চাঁদে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে নাইটিনলের চেয়ে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্লাস্টিকজাতীয় পদার্থ বেশি উপযোগী হবে।

অন্যদিকে, জাপানি টায়ার নির্মাতা ব্রিজস্টোন বেছে নিয়েছে প্রাণী অনুকরণ পদ্ধতি। তারা উটের পায়ের গঠন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করছে অনুভূমিক ধরনের চাকা। এতে স্পোক বা ধাতব পাতাগুলো নমনীয়ভাবে বেঁকে রোভারকে চাঁদের ধূলিময় পাথুরে পৃষ্ঠে আটকে না গিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

মিশেলিন, ব্রিজস্টোন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভেঞ্চুরি অ্যাস্ট্রোল্যাবসহ একাধিক সংস্থা চলতি মে মাসে নাসার জন গ্লেন রিসার্চ সেন্টারে তাদের প্রযুক্তি উপস্থাপন করেছে। বছরের শেষ নাগাদ নাসা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা হয়তো একটি প্রস্তাব বেছে নিতে পারে অথবা একাধিক প্রস্তাবের উপাদান গ্রহণ করতে পারে।

এদিকে ফ্রান্সের এক আগ্নেয়গিরির ধূলিময় এলাকায় মিশেলিন তাদের চাকা পরীক্ষা করছে। ব্রিজস্টোন পরীক্ষা চালাচ্ছে জাপানের তোত্তোরি বালিয়াড়িতে। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সিও নিজস্ব রোভার নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।

চাঁদের জন্য তৈরি হওয়া এই প্রযুক্তির ব্যবহার হতে পারে পৃথিবীতেও। নাইটিনল দিয়ে তৈরি বাইসাইকেলের টায়ার শিগগিরই বাজারে আসছে। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও টেকসই হবে অনেক। এবার লক্ষ্য মোটরসাইকেলের জন্যও এমন চাকা তৈরি করা, বিশেষ করে দুর্গম ও পাথুরে এলাকায় ব্যবহারের উপযোগী করে। সূত্র : বিবিসি

স্টিভ জবস, বিল গেটস ও জাকারবার্গের সাফল্যের রহস্য উন্মোচন

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১০:৩০ এএম
স্টিভ জবস, বিল গেটস ও জাকারবার্গের সাফল্যের রহস্য উন্মোচন
বাম থেকে মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটস ও স্টিভ জবস। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে সফল প্রধান নির্বাহীদের (সিইও) সাফল্যের রহস্য নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। স্টিভ জবস, বিল গেটস এবং মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের সাফল্যের পেছনে শক্তিশালী নেতৃত্ব, কৌশলগত দূরদর্শিতা বা কার্যকর যোগাযোগের মতো গুণাবলি মনে হতে পারে। তবে গবেষকরা মনে করছেন, তাদের সাফল্যের পেছনে এক অপ্রত্যাশিত কারণ কাজ করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড জি কস্টেলো কলেজ অব বিজনেসের গবেষকরা বলছেন, বিষয়টি আরও সাধারণ ও চমকপ্রদ। তারা প্রত্যেকে বাঁহাতি।

গবেষক দলটি ৪৭২টি কোম্পানির এক হাজার জনেরও বেশি প্রধান নির্বাহীর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁহাতি প্রধান নির্বাহীদের অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন উদ্ভাবনে এগিয়ে থাকে। বাঁহাতি প্রধান নির্বাহীদের মধ্যে ইউনিক পেটেন্ট ও উচ্চ আয়ের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট যোগসূত্র রয়েছে।

গবেষণার সহলেখক অধ্যাপক লং চেন বলেন, ‘একজন সিইওর সিদ্ধান্ত গ্রহণে পারিবারিক অভিজ্ঞতা, জিনগত বৈশিষ্ট্য, শিক্ষাগত ও পেশাগত পথচলা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। প্রকৃতপক্ষে, তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা রাখে সামগ্রিক জীবনের অভিজ্ঞতা।’ এর মধ্যে হাতের ব্যবহারও হতে পারে নতুন এক মাত্রা।

এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় বাঁহাতি হওয়ার সঙ্গে বিভিন্ন গুণাবলির সংযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২০১৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, বাঁহাতি ব্যক্তিদের মৌখিক দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো হয়। ২০১৭ সালের অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁহাতিরা দ্রুতগতির খেলাধুলায় তুলনামূলকভাবে বেশি পারদর্শী। তবে প্রধান নির্বাহীদের সাফল্য এবং তাদের হাত ব্যবহারের পছন্দের মধ্যকার সম্পর্ক এতদিন অস্পষ্ট ছিল।

২০১৩ সালে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের বাঁহাতি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি না। বাঁহাতিদের প্রতিভায় উত্থান-পতনের মাত্রা বেশি দেখা যায়। তবে এর কারণ কখনো ব্যাখ্যা করা হয়নি।’

এই রহস্যের গভীরে পৌঁছাতে গবেষকরা প্রথমে গুগল থেকে প্রধান নির্বাহীদের লেখালেখি, খেলাধুলা, খাওয়া কিংবা ঘড়ি পরার ছবি ও ভিডিও দেখে নিশ্চিত হন- কে বাঁহাতি, কে ডানহাতি। সন্দেহ হলে গবেষকরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ই-মেইল বা ফোনের মাধ্যমে যাচাই করেছেন।

সব মিলিয়ে গবেষকরা ৪৭২টি কোম্পানির ১ হাজার ৮ জন প্রধান নির্বাহীর হাত ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে সক্ষম হন। এদের মধ্যে ৯১.৪ শতাংশ ছিলেন ডানহাতি, ৭.৯ শতাংশ বাঁহাতি এবং ০.৭ শতাংশ উভয় হাতে সমান পারদর্শী ছিলেন। তাদের হাত ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গবেষকরা ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পেটেন্ট ও উদ্ভাবনী কার্যক্রম বিশ্লেষণ করেন। সেখানে দেখা যায়, অনন্য ও সৃজনশীল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বাঁহাতি সিইওরা ডানহাতি সিইওদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, এসব প্রতিষ্ঠান সম্পদের ওপর আয় ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ভালো ফল করেছে।

গবেষণার আরেক সহলেখক অধ্যাপক জুন উ পার্ক বলেন, ‘বাঁহাতি সিইওদের নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ডানহাতি সমসাময়িকদের তুলনায় ভালো ফল করেছে। বিনিয়োগকারীরা উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হন।’

স্টিভ জবস, বিল গেটস এবং মার্ক জাকারবার্গ ছাড়াও আরও অনেক বিখ্যাত ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা বাঁহাতি। আমেরিকান ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রধান সম্পাদক স্টিভ ফোর্বস, অপরাহ উইনফ্রে এবং আইবিএমের ল্যু গার্স্টনার বাঁহাতি ছিলেন। জন ডি. রকফেলার, হেনরি ফোর্ড ও ভারতের রতন টাটাও বাঁহাতি ছিলেন।

এই গবেষণা বাঁহাতি ব্যক্তিদের মধ্যে লুকানো প্রতিভা এবং নেতৃত্বের সম্ভাবনা সম্পর্কে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যদিও বাঁহাতি হওয়ার সঙ্গে সাফল্যের সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করা কঠিন, তবে এই গবেষণা নিঃসন্দেহে করপোরেট জগতে বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করে। সূত্র: ডেইলি মেইল