![কিয়ামতের নিদর্শনের মধ্যে পার্থক্য আছে?](uploads/2023/11/29/1701269480.35-ok.jpg)
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কিয়ামত সম্পর্কে—কখন তা ঘটবে? এর আলোচনার সঙ্গে তোমার কী সম্পর্ক? এ সংক্রান্ত জ্ঞান তোমার প্রতিপালক পর্যন্তই শেষ।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪২-৪৪)
প্রখ্যাত তাফসিরবিশারদ আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আপনার কাছে তার কোনো জ্ঞান নেই এবং নেই কোনো সৃষ্টির কাছেও। বরং এর উদ্দেশ্য ও প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকে। তিনিই তা সংঘটিত হওয়ার নির্ধারিত সময় জানেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ৩১৮)
কোরআন ও হাদিসে কিয়ামতের নিদর্শনাবলি উন্মুক্তভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের বোঝার সুবিধার্থে আলেমরা কিয়ামতের নিদর্শনাবলি নানা প্রকারে ভাগ করেছেন। নানাভাবে বিন্যস্ত করে এগুলোর ওপর আলোচনা করেছেন। এর মাঝে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিভাজন হচ্ছে কিয়ামতের নিদর্শনগুলো দুই প্রকারে ভাগ করা—এক. ছোট নিদর্শন। দুই. বড় নিদর্শন।
ছোট নিদর্শন
ছোট নিদর্শনগুলোর সঙ্গে কিয়ামতের সম্পর্ক দূরবর্তী, পরোক্ষ। এগুলো কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার অনেক আগ থেকেই প্রকাশ পাবে। অত্যধিক ফিতনা ও বিপর্যয়ের কারণে মানুষের কাছে এগুলো স্বাভাবিক মনে হবে। যেমন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন ও বিদায়। জ্ঞানগত ও আধ্যাত্মিক পূর্ণতা (তথা সালাফে সালিহিনের) যুগের সমাপ্তি। পাপ ও অপরাধ বৃদ্ধি। অন্যায়-অশ্লীলতার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার। ওহির ইলম তথা বিশুদ্ধ জ্ঞানের বিলুপ্তি। গান-বাজনা, মদ্যপান ও ব্যভিচার বৃদ্ধি। সুদ ও ঘুষের ব্যাপক প্রচলন ইত্যাদি।
বড় নিদর্শন
এগুলো হচ্ছে সেসব যুগান্তকারী ঘটনা—যা গোটা পৃথিবী নাড়িয়ে দেবে। বিশ্বজগতের স্বাভাবিক গতিপথ বদলে দেবে। যেগুলো প্রকাশিত হলে গোটা পৃথিবী কেঁপে উঠবে। পৃথিবীবাসী নড়েচড়ে বসবে। পৃথিবীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে। যেমন দাজ্জালের উদ্ভব, ঈসা (আ.)-এর পুনরাগমন, ইয়াজুজ-মাজুজের প্রাদুর্ভাব, অস্তাচল থেকে সূর্যোদয় ইত্যাদি। এগুলো মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবে না। এগুলো প্রকাশিত হওয়ার পরে মানুষ আগের মতো জীবনযাপন করতে পারবে না; বরং গোটা পৃথিবী এগুলোর মাধ্যমে ইতিবাচক ও নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হবে।
উক্ত প্রকারভেদের বাইরেও আলেমরা তাদের গ্রন্থাবলিতে নানা প্রকারভেদ উল্লেখ করেছেন। যেমন, শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার আসকালানি ও মুহাম্মাদ ইবনে রাসুল আল-বারজানজি (রহ.) কিয়ামতের নিদর্শনগুলো ৩ ভাগে ভাগ করেছেন—
এক. যা সংঘটিত হয়ে গেছে। দুই. যার অংশবিশেষ সংঘটিত হয়েছে এবং এখনো চলমান। তিন. যা এখনো পর্যন্ত সংঘটিত হয়নি, তবে ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে।
আবার কেউ এসব নিদর্শন প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনুসারে বিন্যস্ত করার চেষ্টা করেছেন। নুয়াইম ইবনে হাম্মাদের কিতাবুল ফিতান গ্রন্থ এই প্রকারের ধারাক্রমের উদাহরণ। তবে এগুলো সবই ইজতিহাদি (তথা গবেষণালব্ধ) বিষয়। কারণ কোরআন-সুন্নাহয় সুস্পষ্টভাবে এসব প্রকার ও মূলনীতি বলা হয়নি। তাই আলেমরা নিজ নিজ জ্ঞান-গবেষণা অনুসারে এগুলো তৈরি করেছেন। ফলে সবগুলোই নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে সঠিক। বিশেষ কোনো প্রকারকে সঠিক বলে অন্যগুলো ভ্রান্ত বলার উপায় নেই।
লেখক: আলেম ও গবেষক