বিদায় নেবে পবিত্র রমজানুল মোবারক। আল-বিদা ইয়া শাহরু রমাদান ধ্বনিতে বেজে উঠবে রমজান মাসের বিদায় ঘণ্টা। রমজান মাসের বিদায়লগ্নে মুমিন-মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। ঢুকরে কেঁদে ওঠে মন। পবিত্র এ মাসের বিদায় ধ্বনিতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় একজন মুমিন। সবচেয়ে বেশি বেদনায় সিক্ত হয় রোজাদারের অন্তর। পবিত্র এ মাসের বিদায়বেলায় মুমিন-মুসলমানের মনে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি দাগ কাটে সেটা হলো, ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম চলে যাচ্ছে, কী অর্জন হলো আমার? পবিত্র এ মাসটির কতটুকু সময় আমল-ইবাদতে ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছি আমি? অতীত জীবনের গুনাহকে ক্ষমা করাতে পেরেছি তো?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুর্ভাগা ওই ব্যক্তি এবং ধ্বংস হোক ওই মুসলমান, যে রমজানের রোজা পেল কিন্তু নিজের অতীত জীবনের গুনাহ-পাপ ক্ষমা করাতে সক্ষম হলো না।’(ইবনে হব্বিান, ৯০৭)
প্রিয় পাঠক, নীরবে একটু ভাবুন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবার্তাটিকে একটু গভীর মনোযোগ নিয়ে বারবার পড়ুন এবং চিন্তা করুন। পবিত্র এ মাসে কত দিন, কত রাত অতীত জীবনের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ মহানের দরবারে হাত তুলেছি? কতক্ষণ রোনাজারি করেছি মোনাজাতে জায়নামাজে? যদি করে থাকি আলহামদুলিল্লাহ। যদি না করে থাকি, তা হলে এখনই সংকল্প করুন এবং কোমর বেঁধে রমজানের বাকি সময়টুকু কাজে লাগানোর জন্য নেমে পড়ুন।
একবার ভাবুন, আজকের রোজাটি যদি হয় আপনার জীবনের শেষ রোজা, কাল কেয়ামতের ময়দানে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে কি আপনার? আপনার আমার আশপাশে এমন অনেক মানুষই রয়েছেন গত রমজানে অথবা এই রমজানের শুরুতে এক প্লেটে ইফতার করেছি এবং একসঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছি কিন্তু আজ আর তিনি নেই। একবার ভাবুন প্লিজ!
আগামীকাল আপনি আমি থাকব, আগামী রমজানে আবার রোজা পালন করব— এমন নিশ্চয়তা কি আছে আপনার আমার? না, নেই। এক সেকেন্ডের গ্যারান্টি নেই মানুষের জীবনের। সুতরাং আমল-ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম রমজানের শেষবেলার প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে ব্যস্ত হওয়া প্রকৃত মুমিন-মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। পবিত্র মাসের এই শেষলগ্নগুলোয় একটি মোনাজাত হোক আপনার আমার জীবনের সেরা পাথেয়। আসুন আমরা সবাই পবিত্র মাসের শেষ সময়গুলো অতীত জীবনের গুনাহ মাফের উত্তম সময় হিসেবে গ্রহণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুরে প্রার্থনা করি, ‘হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল! আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকেও ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, ৫/৪১৬)
এ ছাড়া রমজানের বিদায়বেলায় আরও একটি সংকল্প হোক মুমিন-মুসলামানের সংকল্প। রমজান মাসেটিকে আমরা যেমন আমল-ইবাদতে, ভালো ও কল্যাণকর কাজে কাটিয়েছি—রমজানপরবর্তী গোটা বছরটাও যেভাবে কাটানোর সংকল্প করা উচিত। আমরা রমজান মাসে যেমন আল্লাহর বান্দা ছিলাম, বছরের অন্য সময়েও আমরা আল্লাহর বান্দা থাকব। তাই তখন যেমন গুনাহ পরিহারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতাম, নামাজের প্রতি খেয়াল রাখতাম, জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতাম—সে ধারাবাহিকতা সব সময় অব্যাহত রাখা উচিত।
আমাদের থেকে পবিত্র রমজান বিদায় নেওয়ার পর আমরা যেন ইবাদতে গাফিলতি না করি; বরং পবিত্র রমজানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি—মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক