ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বিদায় নিচ্ছে ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম

প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪০ পিএম
বিদায় নিচ্ছে ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম
প্রতীকী ছবি। ইন্টারনেট

বিদায় নেবে পবিত্র রমজানুল মোবারক। আল-বিদা ইয়া শাহরু রমাদান ধ্বনিতে বেজে উঠবে রমজান মাসের বিদায় ঘণ্টা। রমজান মাসের বিদায়লগ্নে মুমিন-মুসলমানের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। ঢুকরে কেঁদে ওঠে মন। পবিত্র এ মাসের বিদায় ধ্বনিতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় একজন মুমিন। সবচেয়ে বেশি বেদনায় সিক্ত হয় রোজাদারের অন্তর। পবিত্র এ মাসের বিদায়বেলায় মুমিন-মুসলমানের মনে সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্নটি দাগ কাটে সেটা হলো, ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম চলে যাচ্ছে, কী অর্জন হলো আমার? পবিত্র এ মাসটির কতটুকু সময় আমল-ইবাদতে ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছি আমি? অতীত জীবনের গুনাহকে ক্ষমা করাতে পেরেছি তো?

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুর্ভাগা ওই ব্যক্তি এবং ধ্বংস হোক ওই মুসলমান, যে রমজানের রোজা পেল কিন্তু নিজের অতীত জীবনের গুনাহ-পাপ ক্ষমা করাতে সক্ষম হলো না।’(ইবনে হব্বিান, ৯০৭)

প্রিয় পাঠক, নীরবে একটু ভাবুন। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সতর্কবার্তাটিকে একটু গভীর মনোযোগ নিয়ে বারবার পড়ুন এবং চিন্তা করুন। পবিত্র এ মাসে কত দিন, কত রাত অতীত জীবনের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ মহানের দরবারে হাত তুলেছি? কতক্ষণ রোনাজারি করেছি মোনাজাতে জায়নামাজে? যদি করে থাকি আলহামদুলিল্লাহ। যদি না করে থাকি, তা হলে এখনই সংকল্প করুন এবং কোমর বেঁধে রমজানের বাকি সময়টুকু কাজে লাগানোর জন্য নেমে পড়ুন। 

একবার ভাবুন, আজকের রোজাটি যদি হয় আপনার জীবনের শেষ রোজা, কাল কেয়ামতের ময়দানে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে কি আপনার? আপনার আমার আশপাশে এমন অনেক মানুষই রয়েছেন গত রমজানে অথবা এই রমজানের শুরুতে এক প্লেটে ইফতার করেছি এবং একসঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেছি কিন্তু আজ আর তিনি নেই। একবার ভাবুন প্লিজ! 

আগামীকাল আপনি আমি থাকব, আগামী রমজানে আবার রোজা পালন করব— এমন নিশ্চয়তা কি আছে আপনার আমার? না, নেই। এক সেকেন্ডের গ্যারান্টি নেই মানুষের জীবনের। সুতরাং আমল-ইবাদতের স্বর্ণমৌসুম রমজানের শেষবেলার প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাতে ব্যস্ত হওয়া প্রকৃত মুমিন-মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। পবিত্র মাসের এই শেষলগ্নগুলোয় একটি মোনাজাত হোক আপনার আমার জীবনের সেরা পাথেয়। আসুন আমরা সবাই পবিত্র মাসের শেষ সময়গুলো অতীত জীবনের গুনাহ মাফের উত্তম সময় হিসেবে গ্রহণ করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুরে প্রার্থনা করি, ‘হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল! আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকেও ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, ৫/৪১৬)

এ ছাড়া রমজানের বিদায়বেলায় আরও একটি সংকল্প হোক মুমিন-মুসলামানের সংকল্প। রমজান মাসেটিকে আমরা যেমন আমল-ইবাদতে, ভালো ও কল্যাণকর কাজে কাটিয়েছি—রমজানপরবর্তী গোটা বছরটাও যেভাবে কাটানোর সংকল্প করা উচিত। আমরা রমজান মাসে যেমন আল্লাহর বান্দা ছিলাম, বছরের অন্য সময়েও আমরা আল্লাহর বান্দা থাকব। তাই তখন যেমন গুনাহ পরিহারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দিতাম, নামাজের প্রতি খেয়াল রাখতাম, জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতাম—সে ধারাবাহিকতা সব সময় অব্যাহত রাখা উচিত।

আমাদের থেকে পবিত্র রমজান বিদায় নেওয়ার পর আমরা যেন ইবাদতে গাফিলতি না করি; বরং পবিত্র রমজানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারি—মহান আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন। 

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

দানশীলতা মহৎ গুণ

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
দানশীলতা মহৎ গুণ
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দান করার ছবি

দানশীলতা একটি মহৎ গুণ। সমাজের দরিদ্র, অসহায় ও অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করাকে দানশীলতা বলা হয়। সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বসবাস করে। কেউ ধনী, আবার কেউ গরিব। ধনীদের উচিত গরিবদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সমাজের গরিব লোকদের প্রতি দানশীলতা ও বদান্যতা প্রকাশ করা একটি মহৎ কাজ।


পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছি তা হতে সেদিন আসার পূর্বেই ব্যয় করো–যেদিন কোনো ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধত্ব ও সুপারিশ নেই। আর অবিশ্বাসীরাই অত্যাচারী।’ (সুরা বাকারা, ২৫৪)


দান করা একটি ফজিলতপূর্ণ কাজ। দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা অফুরন্ত নেকি প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজের মতো; তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেকটি শীষে একশত শস্যদানা। আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা আরও বর্ধিত করে দেন, বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, ২৬১) 
দানশীলতা মানুষকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী এবং জান্নাতের নিকটবর্তী। জাহান্নামের আগুন থেকে দূরবর্তী। 


এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দানশীলতা জান্নাতের একটি বৃক্ষ। এর ডালপালা দুনিয়াতে ছড়িয়ে আছে। যে এর কোনো একটি ধারণ করবে তা তাকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দেবে। আর কৃপণতা জাহান্নামের একটি বৃক্ষ। কেউ এর কোনো ডাল ধারণ করলে তা তাকে জাহান্নাম পর্যন্ত পৌঁছে দেবে।’ (বায়হাকি) 


দানশীলতা মানুষের পাপ মোচন করে দেয়, মহান আল্লাহর ক্রোধকে মিটিয়ে দেয়। দান করলে বিপদ-আপদ দূর হয়। সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়। মানুষের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল হলেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁর দানের কোনো তুলনা করা সম্ভব নয়। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠদাতা। তাঁর কাছে কেউ কিছু চেয়েছে আর তিনি জবাবে না বলেছেন, জীবনে এমনটি কখনো হয়নি। তিনি এমন পরিমাণ দান করতেন যে, দানগ্রহণকারী বিস্মিত হয়ে যেত। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সাহাবিরাও দানশীলতার সর্বোত্তম আদর্শ দেখিয়েছেন। তাঁরা মানুষের সহযোগিতায় সামর্থ্যের সবটুকু আ়ল্লাহর রাস্তায় দান করেছেন। তাবুক অভিযানের সময় আবু বকর (রা.) তাঁর সমুদয় সম্পদ দান করে দিয়েছিলেন। তাঁর দানে অভিভূত হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘হে আবু বকর, তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য তুমি কী রেখে এসেছো? তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে রেখে এসেছি।’ আবু বকরের দানশীলতার এমন দৃষ্টান্ত ইতিহাসের পাতায় বিরল। কখন কোনো সাহায্যে প্রার্থনাকারীর সাথে খারাপ ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু দিতে না পারলেও তার সাথে হাসিমুখে কথা বলা উচিত। কেননা কারও সাথে হাসিমুখে কথা বলাও এক ধরনের সদকা।

 
আমরা দানশীলতার এই মহৎ গুণটি অর্জন করব। সব সময় সাধ্যমতো দান করব। দান করতে কখনো কার্পণ্য করব না। সমাজ থেকে অভাব-দারিদ্র্য দূর করতে ভূমিকা রাখব। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকেই কবুল করুন। 

লেখক: সহকারী শিক্ষক, নাদির হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী

অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো কবিরা গুনাহ

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:১৯ এএম
অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো কবিরা গুনাহ
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত সবজি বিক্রেতার ছবি

প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চাপে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। বাড়তি দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। চাহিদার তালিকা বহু কাটাছেঁড়ার পরও স্বস্তি মিলছে না। জীবন যেন আর চলছেই না।

 
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির নানা কারণের সঙ্গে মজুতদারি, সিন্ডিকেট এবং অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো উল্লেখযোগ্য। একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী কালোবাজারি, মজুতদার ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ী পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্য মজুত রেখে তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। ইসলামে মজুতদারি, মুনাফাখোরি ও অবৈধভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো নিষিদ্ধ। হানাফি মাজহাব মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করা মাকরুহ তাহরিমি (হারাম সমতুল্য)। 


একশ্রেণির ব্যবসায়ী খাদ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। বাজারে ওই খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। মানুষের তখন ওই খাদ্যের প্রতি চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যের দাম বাড়ে। গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা, অবৈধভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ানো পাপ। আল্লাহ এদের শাস্তি দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ২২৩৮) আরেকটি হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরি করে) খাদ্যশস্য গুদামজাত করে, সে অপরাধী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬০৫)


আল্লামা ইবনে হাজর হাইতামি (রহ.) গুদামজাত করে মূল্যবৃদ্ধি করাকে কবিরা গুনাহ বলে উল্লেখ করেছেন। (নিহায়াতুল মুহতাজ, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা ৪৫৬)।  দুনিয়ার সব কিছু আল্লাহতায়ালা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তার ভেতরে আছে। তাঁর অনুগ্রহে বেঁচে আছে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি দেখো না, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও ভূপৃষ্ঠের সব কিছু তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তোমাদের জন্য তাঁর অনুগ্রহগুলো পরিপূর্ণ করেছেন?’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ২০)  
তবে মজুতদার আল্লাহর নিরাপত্তার বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিনের খাবার মজুত রাখে, সে আল্লাহ প্রদত্ত নিরাপত্তা থেকে বেরিয়ে যায়।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস: ২০৩৯৬)


আল্লাহতায়ালা মানুষের রিজিকের ফায়সালা করেন। বান্দাদের পরীক্ষার জন্য রিজিক বৃদ্ধি বা হ্রাস করেন তিনি। রিজিক বৃদ্ধি আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রমাণ নয়; কিংবা রিজিকের সংকীর্ণতাও তার অসন্তুষ্টির কারণ নয়। রিজিকের এই হ্রাস-বৃদ্ধি পরীক্ষাস্বরূপ। তবে সৎ ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয়। আর পণ্য মজুতদার অভিশপ্ত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘খাঁটি ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুতকারী অভিশপ্ত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৭২৮)

ইসলামে ব্যবসা মহৎ পেশা। কোনোভাবেই ব্যবসাকে কলুষিত করা যাবে না; নির্ভেজাল ও ক্রটিমুক্ত রাখতে হবে। যারা সত্য ও বিশ্বস্ততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তারা আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান। মানুষও তাদের পছন্দ করেন। হাশরের ময়দানেও এমন ব্যবসায়ীকে পুরস্কৃত করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের হাশর হবে নবিগণ, সিদ্দিকগণ ও শহীদগণের সঙ্গে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৫১৫)

লেখক: আলেম ও সাংবাদিক

হাদিস গ্রহণে সতর্কতা ও যাচাই-বাছাই জরুরি

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৬ এএম
হাদিস গ্রহণে সতর্কতা ও যাচাই-বাছাই জরুরি
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত গবেষণারত গবেষকের ছবি

যুগে যুগে হাদিসের মুহাদ্দিস ও ইমামরা হাদিস গ্রহণের কিছু নীতিমালা তৈরি করেছেন। রচনা করেছেন রাবি তথা হাদিস বর্ণনাকারীদের জীবনীগ্রন্থ। যাতে আলোচিত হয়েছে বর্ণনাকারীর জীবনের নানা দিক। এর মধ্যে রয়েছে রাবিদের আমল-আখলাক, আকিদা ও আদর্শের বিবরণ। শিক্ষা–দীক্ষা, দুনিয়া ত্যাগ ও আল্লাহভীতির বর্ণনা। এমনকি তাদের মেধা ও স্মরণশক্তির ভিত্তি এবং প্রয়োজনীয় তথ্যের সম্ভার। এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি বিবেচনা করেই হাদিসের ইমামরা হাদিস সংকলন ও সংরক্ষণে মনোনিবেশ করেছেন। লিখেছেন শত হাদিসগ্রন্থ। যেগুলোর মধ্যে আমাদের কাছে বেশি প্রসিদ্ধ হচ্ছে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম। এ ছাড়া কুতুবে সিত্তা তথা ছয় কিতাবের পরিচিতিও আছে বেশ। 


বর্তমানে ইসলামি জ্ঞানার্জনের চাহিদা বাড়ছে। বাড়ছে হাদিস, কোরআন, ফিকহ, তাফসির, উলুমুল হাদিস প্রভৃতি বিষয়ে উচ্চতর ও গবেষণামূলক শিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ। বিশেষ করে এখন হাদিসের মান তথা সনদ, মতন, রিজাল ইত্যাদি পরিভাষাবিষয়ক জ্ঞানার্জন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাদিসের সঠিক মান, শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় হচ্ছে। সোনালি যুগ থেকে এই হাদিস নির্ণয়, নির্বাচন ও সংকলনের কাজ হয়ে আসছে। 


অনেক আগে থেকেই উম্মাহর মানিত, বরেণ্য হাদিসবিশারদ ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের এই স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ ও ব্যবহার করে একশ্রেণির ধূর্ত পশ্চিমা গবেষক হাদিসের নামে বিভিন্ন বানোয়াট বক্তব্য ও বর্ণনা তুলে ধরার মাধ্যমে ইসলাম বিকৃতির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। কোরআন ও হাদিসের অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। কখনো বিখ্যাত কোনো একজন রাবির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সমালোচিত করার ঘৃণ্য প্রয়াস চালাচ্ছে। তাদের ইসলাম বিদ্বেষমূলক অপব্যাখ্যা ও বিকৃতিকেই গবেষণার নামে নিজেদের মত ও আদর্শ বাস্তবায়নে কাজে লাগাচ্ছে। তারা মুসতাশরিকিন বা ওরিয়েন্টালিস্ট নামে পরিচিত। যাদের গবেষণা ইসলামের বিরুদ্ধে। বাংলায় যারা প্রাচ্যবিদ হিসেবে আলোচনায় এসেছে। 


বিশ্ববিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়েখ সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি (রহ.) বলেন, ‘প্রাচ্যবিদদের মিশনই হলো, মুসলমানদেরকে তাদের অতীত সম্পর্কে সন্দিহান বা ভীতশ্রদ্ধ করে ভবিষ্যতের ব্যাপারে হতাশ ও বর্তমান বিষয়ে নির্লিপ্ত করে দেওয়া।’ (মাসিক আলকাউসার, এপ্রিল ৫, পৃ. ১১)
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এমন কিছু হাদিস বা আয়াত সম্পর্কে তারা অতি সূক্ষ্মভাবে সন্দেহ তৈরি করে দিচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে, যার ফলে অতীতের যাবতীয় দীনি খেদমত ও মেহনত সম্পর্কেও অনেক মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, হাদিস মানা যাবে না। অনেকে দাবি করছেন, একমাত্র কোরআনই মানতে হবে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও মতভিন্নতা তৈরি হচ্ছে। মুসলমানরা দলাদলি বৃদ্ধি করছে। বিভিন্ন মতাদর্শ গড়ে উঠছে। দল মত গোত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, কোনো পাপাচারী যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে। তবে তোমরা তার সত্যতা যাচাই করো। তা না হলে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে বসবে। এরপর তোমরা যা করেছ সে জন্য তোমাদেরকেই অনুতপ্ত হতে হবে। (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ৬)


যাচাই-বাছাই না করে সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না। সংবাদের সত্যতা যাচাই ও পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা জানতে হবে। অন্যথায় মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মনে রাখতে হবে পাপাচারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী লোকদের অনুসরণ করা হারাম। এখন আমাদের মধ্যে এমন লোকও কোরআন-হাদিসের বক্তব্য তুলে ধরছেন, যাদের ইসলাম বিষয়ে কোনো একাডেমিক শিক্ষা নেই। যিনি আলেম নন। এ জাতীয় লোকদের কথা কী আদৌ কোরআন-হাদিসনির্ভর এবং সঠিক হতে পারে? এ জন্যই আলোচক ও বক্তার সম্পর্কে জেনে-বুঝে তারপর তার বক্তব্যের ওপর আমল করা উচিত। বুখারি ও মুসলিমসহ একাধিক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে কিছু বলার পরিণাম কত ভয়াবহ, তা আলোচনা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করল।’ (ইবনে মাজাহ, ৩৩)


রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামে হাদিস বানানোর পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম। এখন জেনে-বুঝে কেউ যদি হাদিস বানিয়ে বলেন, তার কী উপায় হবে? এ জাতীয় গর্হিত পন্থা অনুসরণ করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত। যেকোনো হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হাদিস শাস্ত্রজ্ঞ প্রাজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। 

লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর 

ইবাদত কবুলের ৫ শর্ত

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:০০ এএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৬ এএম
ইবাদত কবুলের ৫ শর্ত
ইন্টারনেট তেকে সংগৃহীত নামাজরত মুসল্লির ছবি

আল্লাহতায়ালা জিন ও মানবজাতিকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত বলতে শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত—এই কয়েকটি বিষয়কে বুঝায় না; বরং ইবাদত হলো, যাপিত জীবনে প্রতিটি কাজকর্মে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা। ইবাদত কবুলের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। ইবাদত কবুলের ৫টি শর্ত এখানে তুলে ধরা হলো—

ইবাদত আল্লাহর জন্য হওয়া: ইবাদত আল্লাহর জন্য হতে হবে। আল্লাহকে ভালোবেসে তাঁর কথা হৃদয়ে ধারণ করে ইবাদত করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহর ইবাদত করো ও তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৩৬)। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। অন্য কারও ইবাদত বা উপাসনা করা তাঁর অবাধ্যতার প্রমাণ। যারা আল্লাহর অবাধ্য, তাদের আমল-ইবাদত কবুল হয় না।  

ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করা: একনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করে সফলতা লাভ করা যায়। একনিষ্ঠতা না থাকলে মানুষ গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। একনিষ্ঠতা মুমিনের গুণ। আল্লাহ এমন মানুষকে ভালোবাসেন। তার ইবাদত কবুল করেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বলে দাও, আমাকে তো আদেশ করা হয়েছে, যেন আল্লাহর ইবাদত করি তাঁর জন্য আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ১১)। হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) মুয়াজ (রা.)-কে বললেন, ‘ইখলাসের (একনিষ্ঠ) সঙ্গে ইবাদত করো, অল্প আমলই যথেষ্ট হবে।’ (শুআবুল ঈমান, ৬৮৫৯)

হালাল খাওয়া: ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল খাবার গ্রহণ। হারাম খাদ্যের ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে হালাল, উৎকৃষ্ট বস্তু খাও এবং যেই আল্লাহর প্রতি তোমরা ঈমান রাখো তাকে ভয় করে চলো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৮৮)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে দেহের মাংস হারাম সম্পদে গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। হারাম সম্পদে গঠিত দেহের জন্য জাহান্নামই সমীচীন।’ (মিশকাত, ২৭৭২)

রিয়ামুক্ত হওয়া: আল্লাহকে পেতে হলে শুধু তাঁর জন্যই মনের মধ্যে ভালোবাসা পুষতে হবে। তাঁকে খুশি করার জন্য জীবনের প্রতিটি কাজ করতে হবে। লোকদেখানো কিংবা অন্যকে খুশি করার জন্য ইবাদত করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, খোটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের সদকা সেই ব্যক্তির মতো নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হুব্বুল হুজন’ থেকে তোমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, হুব্বুল হুজন কী? তিনি বললেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। এ থেকে খোদ জাহান্নামও প্রতিদিন একশবার আশ্রয় চায়। জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কার তাতে প্রবেশ হবে? তিনি বললেন, ওইসব কারি (তেলাওয়াতকারী) যারা লোকদের দেখানোর জন্য আমল করে।’ (তিরমিজ, ২৩৮৩)

সঠিক পদ্ধতিতে ইবাদত: মানুষের জীবনে উত্তম আদর্শের বাতিঘর রাসুলুল্লাহ (সা.)। তাঁকে অনুসরণ করে চলতে হবে। তাঁর আদর্শ মানতে হবে। তাঁর অনুসরণ ছাড়া ইবাদত করলে কবুল হবে না।  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখছ, সেভাবে নামাজ পড়ো।’ (বুখারি, ৬৩১)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদরাসা মধুপুর, টাঙ্গাইল

জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
জোহরের নামাজ কয় রাকাত, শুরু ও শেষ সময় কখন?
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত নামাজরত ব্যক্তির ছবি।

আল্লাহতায়ালা মানুষের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলামের বুনিয়াদ পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যথা—

  • আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা।
  • নামাজ কায়েম করা।
  • জাকাত আদায় করা।
  • রমজানের রোজা পালন করা।
  • হজ করা।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সব নামাজের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী নামাজের ব্যাপারে। আর আল্লাহর সামনে একান্ত আদবের সঙ্গে দাঁড়াও। তোমরা যদি (শত্রুর) ভয় করো, তবে দাঁড়িয়ে বা আরোহী অবস্থায় (নামাজ পড়ে নাও)। এরপর তোমরা যখন নিরাপদ অবস্থা লাভ করো, তখন আল্লাহর জিকির সেভাবে করো, যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা সম্পর্কে তোমরা অনবগত ছিলে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৮-২৩৯)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে জোহরের নামাজ অন্যতম। আল্লাহর রাসুল মিরাজ থেকে ফিরে এসে প্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেছেন। জোহরের নামাজ মোট ১০ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত। তারপর চার রাকাত ফরজ। তারপরে দুই রাকাত সুন্নত। এ ছাড়া আরও সুন্নত নামাজও পড়া যায়।  

জোহরের ওয়াক্তের শুরু ও শেষ
দ্বিপ্রহর থেকে সূর্য যখন একটু পশ্চিম দিকে হেলে যায় তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। প্রতিটি জিনিসের আসল ছায়া ছাড়া তার ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহরের সময় থাকে। জুমা আর জোহরের নামাজের ওয়াক্তও এক। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৩)

শীতকালে জোহরের নামাজ তাড়াতাড়ি পড়া ভালো। গরমের দিন একটু দেরি করে পড়া ভালো। তবে জুমার নামাজ সব মৌসুমে শুরুর সময়ে পড়া উত্তম। (বাহরুর রায়েক, ১/৪২৯)

আবু বারজা আসলামি (রা.)-কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) জোহরের নামাজ সূর্য ঢলে পড়লে আদায় করতেন।’ (বুখারি, ৫৪৭)

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক